বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা আয়োজিত সেমিনার ইউজিসি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনভিত্তিক বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস,যা সরকারি নিরীক্ষাধীনে শিক্ষাঙ্গনের শীর্ষ মুখপত্র হিসেবে সুদীর্ঘ ৩০ বছর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে। দেশ গঠন ও জাতি জাগরণে প্রকাশনা কার্যক্রমের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে ক্যাম্পাস পত্রিকা;আয়োজন করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার ও কর্মশালা।
বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের লক্ষ্যে ইতঃপূর্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত ৬টি সেমিনার আয়োজন করেছে ক্যাম্পাস পত্রিকা।
সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাথে তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ইউজিসি’র সহযোগিতা অধিকতর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে একটি বিশেষ সেমিনার আয়োজন করে ক্যাম্পাস পত্রিকা। ২৫ জুলাই সকাল ১১টায় ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে ইউজিসি’র পক্ষে মুখ্য বক্তা ছিলেন ইউজিসি’র সদস্য প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পক্ষে ডেজিগনেটেড স্পীকার হিসেবে ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার ভাইস-চ্যান্সেলর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. এম ফরাস উদ্দিন। মডারেটর ছিলেন ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল।
সেমিনারের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার বিষয়ে ইউজিসি’র নয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে সময় ও সম্মতি নিয়ে সেমিনার আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এমনকি সেমিনারের দিনও তাঁর পিএস জানিয়েছেন যে-চেয়ারম্যান মহোদয় আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে এ সেমিনারে আসছেন। সেভাবেই সেমিনারের শুরুতে উপস্থিতদেরকে অবগত করা হয়েছিলএবং বক্তৃতার ধারাবাহিকতা রাখা হয়েছিল। কিন্তু শেষতক তিনি উপস্থিত হতে পারেননি বলে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ হতাশবোধ করেন।
আলোচনায় অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী,নর্দান ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম শামসুল হক,এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ এইচ এম সাদেক,স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মজিবর রহমান,সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এএনএম মেশকাত উদ্দিন,স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার প্রফেসর এম লুৎফর রহমান,ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নেসার আহমেদ,আমেরিকার অবার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া,গাজীপুর ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি (প্রস্তাবিত) -এর পরিচালক ড. সোহেল আল বেরুনি,ইউজিসি’র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহেল বাকী,নিউ এরা ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর সালেহা রহমান,অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ,ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্যামিলি লাভ মুভমেন্টের চেয়ারপারসন তাজকেরা খায়ের,কেন্দ্রীয় কচি কাঁচার মেলার উপদেষ্টা মোহাম্মদ মোস্তফা,বিশিষ্ট সমাজসেবী তানভীর ভূঁইয়া,বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সহঃসাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জাহিদ প্রমুখ।
সেমিনারে সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্য থেকে বিটিভি’র রিপোর্টার মোহাইমেন ফারুকী,মাই টিভি’র ফখরুল,সময় টিভি’র রিপোর্টার শফিক মোহাম্মদসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিগণ এতে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কামরুল আহমেদ।
সংবাদপত্র প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক সকালের খবর’র নিজস্ব প্রতিবেদক দেলোয়ার জাহান,ডেইলী সান’র স্টাফ রিপোর্টার শরীফ মাসুম,ভোরের ডাক’র তুহিন,বার্তা টুয়েন্টি ফোর -এর স্টাফ রিপোর্টার তানভীর আহমেদ,বাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কম -এর ফটো জার্নালিস্ট অনুরাগ,দৈনিক বাংলা বাজার’র আসাদুল হক,বাংলাদেশ নিউজ’র শফিকুল ইসলাম,বাংলাদেশ প্রতিদিন -এর নিবারণ বড়ুয়াসহ আরো অনেকে।
সেমিনার আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতায় ছিলেন ইউনিক গ্রুপ ও দি ওয়েস্টিন ঢাকার ফাউন্ডার এমডি,দেশপ্রেমী-সমাজসেবী ও কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব জনাব মোহাঃ নূর আলী এবং মডার্ণ হারবাল গ্রুপের ফাউন্ডার এমডি প্রখ্যাত হারবাল গবেষক ও চিকিৎসক ডাঃ আলমগীর মতি।
ক্যাম্পাস থীম সং পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সৈয়দা শামছুন্নাহারের উপস্থাপনায় সেমিনারের মূল আলোচনা পর্ব শুরু হয়।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী সকলেই সময়োপযোগী এরূপ সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। বক্তাদের বক্তৃতায় উঠে আসে বিষয়ভিত্তিক নানা গুরুত্বপূর্ণ দিক। ধারাবাহিকভাবে সেসব বক্তৃতা সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করা হল।
ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন
সেমিনারে ডেজিগনেটেড স্পীকার হিসেবে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার ভাইস-চ্যান্সেলর এবং বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন,অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণীত হয়েছে,এ আইনের প্রয়োগও চলছে। এতে বলা হয়েছে-পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১৬০ এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুপাত যদি ৩০,৪০ কিংবা ৫০ হয় -এ গুণগত পার্থক্য অবশ্যই আমাদের নজরে আনতে হবে। সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্য করছে,লাভ করছে-ঢালাওভাবে এটা বলা ঠিক নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন,তারা ব্যবসায়িক লক্ষ্য থেকে করেছেন,এ ধারণা সমর্থনযোগ্য নয় -এটা ইউজিসি কিংবা সরকারকে মনে রাখতে হবে। এ বিষয়টা কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলে শিক্ষামন্ত্রী এবং ইউজিসি কর্তৃপক্ষ বলেছেন-আমাদের চোখে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। যদি ভেদাভেদই না থাকে,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিকেও কমিটির পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে মনোনীত করার জোর আবেদন জানাচ্ছি। বলা হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বেতন এবং শিক্ষক-বেতন ইউজিসি’র সুপারিশ মোতাবেক হবে। কিন্তু এটাও ভেবে দেখতে হবে যে,আমি শিক্ষার্থীদের ঘষে-মেজে দেশের উপযোগী করে,বিশ্ব প্রতিযোগিতার উপযোগী করে গড়ে দেবো;আর তাদের কাছ থেকে সবচেয়ে কম বেতন ও ফি নেবো এবং ইউজিসি সে বেতন নির্ধারণ করে দেবে -এটাও নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য নয়।
ড. ফরাস উদ্দিন বলেন-নেলসন মেন্ডেলার একটি বিখ্যাত উক্তি এখানে উদ্ধৃত করছি,তিনি বলেছেন-Education is the most powerful weapon to change the world. উচ্চশিক্ষা ছাড়া দেশ এগুতে পারে না। রিপাবলিক অব কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আছে। অথচ শিল্প-সমৃদ্ধ জাপান উচ্চশিক্ষাকে অবহেলা করেছে। তাই তাদের অর্থনীতিতে অগ্রগতি নেই,স্থবির হয়ে আছে। উচ্চশিক্ষাকে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। যে প্রতিষ্ঠানে বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে,তাকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে;তাকে যথাযোগ্য সমাদর দিতে হবে। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়েছিল-তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না,কনসেপ্টও ছিল না। কাজেই ইউজিসি আইনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজরদারির কোন অবকাশ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় আইন কেন যে সংশোধন হয় না,এটা আমার বোধগম্য নয়। এটি সংশোধন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরদারিকে আইনসিদ্ধ করতে হবে।
সদাশয় সরকার এবং ইউজিসি’র কাছে আমরা ২০০২ সালে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিটিউট আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দিয়েছিলাম। এখন ঢালাওভাবে বলা হচ্ছে,আজ অবধি কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্ট্যাটিটিউট জমা দেয়নি। আমরা এ ধরনের কথা মেনে নিতে পারি না,এরূপ মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার।
অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্বল্প পরিমাণ জায়গার ওপর নির্মিত ভবনে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে,তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। ইউজিসি ও সরকারের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত যে,যদি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০/১২ বছরেও একখন্ড জমি না কেনে -তাহলে তার সদিচ্ছা সম্পর্কে সন্দীহান না হয়ে উপায় নেই।
গত দু’বছরে খুব জোরে-শোরে বলা হচ্ছে নিজস্ব ক্যাম্পাসে ওঠার কথা। কিন্তু এরপরও যারা গরজ করছেন না,তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে ইতোমধ্যে সেসব প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তি হয়ে গেছে,তারা যেন অকূল সাগরে নিমজ্জিত না হয়,সেটিও লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারকে এসব শিক্ষার্থীর ব্যাপারে সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব শিক্ষার্থীকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনঃভর্তির ব্যবস্থা করে যদি শিক্ষাবর্ষ সমাপ্তির সুযোগ দেয়া হয়,তাহলে সেটি মানবিক আচরণ বলে গণ্য হবে।
২০০৩ সালে ইউজিসি’র তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর আসাদুজ্জামানের মেয়াদে আমি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক্রেডিটেশন কাউন্সিল করার প্রস্তাব করেছিলাম;সেসময় পাবলিক ইউনিভার্সিটির সদস্যরা পাল্টা প্রস্তাব করেছিলেন যে-এক্রেডিটেশন কাউন্সিল শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য,সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজন নেই। আমরা এখনও সে যুক্তিতে একমত নই। দ্বিতীয় অসংগতি হলো-এক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন ইউজিসি’র চেয়ারম্যান,এটিও যুক্তিসংগত নয়। যথোপযুক্তভাবে এক্রেডিটেশন কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হবে না।
ড. ফরাস উদ্দিন বলেন-বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যা পরিবর্তন করা দরকার,তা হলো- যেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় বিভাগসহ ফ্যাকাল্টি আছে,অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলী আছে,যথেষ্ট শিক্ষার্থী আছে -সেসব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পাঠক্রম তৈরি করা হবে,তার কপি তারা সরকার ও ইউজিসি’র কাছে পাঠাবে;যা তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদন করতে পারবেন। একাডেমিক কাউন্সিল হবে অত্যন্ত শক্তিশালী,যাদের নির্ধারিত ক্ষমতা থাকবে। তাদের পাঠক্রম তারা যদি অনুমোদন না করতে পারেন,তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাবে ইউজিসি’র সাব-ব্রাঞ্চ। ইউজিসিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। শক্তিমান একটি জাতীয় শিক্ষা কমিশন আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন।
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ -এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে,আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। আমাদের সদস্যদের মধ্যে কেউ যদি মানহানিকর,অপমানজনক কোন কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকে -তাহলে তাদেরকে সংশোধন করে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা করব।
আমরা জানি,আমলা নিয়ন্ত্রিত ইউজিসি অনেক ক্ষেত্রেই নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারে না। তাই এখনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে,তবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় থাকায় নয়া চেয়ারম্যান স্বাধীনভাবে অনেকটা হস্তক্ষেপমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারবেন বলে আমরা আশা করছি। এসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ -এর পক্ষ থেকে আমরা ইতঃপূর্বে প্রস্তাব করেছিলাম যে-ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশনের নাম পরিবর্তন করে উচ্চশিক্ষা কমিশন রাখা হোক। কারণ এখান থেকে আমরা কোন গ্র্যান্ট পাই না। আমাদের আরও প্রস্তাব ছিল-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এসোসিয়েশনকে নিজস্ব অফিস দেয়ার জন্য যাতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো ইউজিসি’র কাছাকাছি যেতে পারে এবং উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ইউজিসি’র সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম,শৃংখলা-পরিপন্থী কর্মকান্ডের যে অভিযোগ উঠছে -তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। যদি কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে,এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন না করে -তাহলে তাদের এমনিতেই পতন হয়ে যাবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন,উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ ভাগই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করছে। কাজেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেভাবেই গুরুত্ব দেয়া উচিত। ইউজিসিতে সরকার প্রণীত কাউন্সিলের ১৫ জন সদস্য রয়েছে;৬ জন স্থায়ী,৯ জন খন্ডকালীন। এগুলোর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা বাঞ্ছনীয়। ট্রাস্টি বোর্ড এবং এডমেনিস্ট্রেটিভ বোর্ডে–দু’টো বডির মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হলে,তা নিরসনের জন্য একটা মেকানিজম থাকা প্রয়োজন -যা বর্তমানে নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যেসব ধারা সংযোজিত হয়েছে,তা মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা কঠিন।
বর্তমানে যেসব ছাত্র-ছাত্রী পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য আসছে,তাদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এজন্য আরো ১৭৫টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণিত যে-উচ্চশিক্ষা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
প্রফেসর মান্নান চৌধুরী আরো বলেন,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লাল-সবুজ-হলুদ এমন কোন বিভাজন করা হয়নি,এটি মিডিয়ার কাজ। দেখা গেছে সবুজ বলে কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য উপচে পড়া ভিড়;হলুদ কিংবা লালে ভর্তির সংখ্যা কমে গেছে। ভর্তি-বাণিজ্যের কথা উঠেছে;বাজারে যে জিনিসটার দাম বাড়ে ক্রেতারা সেটির দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমাদের কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফিসহ অন্যান্য খাতে টাকার অংক যতই বাড়াচ্ছেন-অভিভাবকগণ সেখানেই যাচ্ছেন;ভাবছেন,এটাই সবচেয়ে ভাল বিশ্ববিদ্যালয়। সরকার যদিও ছাত্র ভর্তির সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন,কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানছে না। এখন যদি ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়,তাহলে দেশ-জাতি এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ড. এ এইচ এম সাদেক
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ -এর ভাইস-চ্যান্সেলর ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক বলেন-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কনসেপ্ট বাংলাদেশে নতুন হলেও এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বেশ দাপটের সাথেই চলছে।
University -এর অর্থ হলো Universality of education,শিক্ষার বিশ্বায়ন। সেখানে শুধু Market given সাবজেক্টগুলো অন্তর্ভুক্ত না করে national involvment সাবজেক্টসমূহ সংযুক্ত করার পদক্ষেপ ইউজিসিকে নিতে হবে। ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গ্র্যান্ট দিয়ে থাকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয় না। সেই প্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কর্মের স্বাধীনতা দেয়া উচিত বলে মনে করি।
প্রফেসর ড. এম শামসুল হক
নর্দান ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডার ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম শামসুল হক বলেন-আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় দু’লাখের ওপর ছাত্র-ছাত্রী,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় দেড় লাখের মত। জাতিসংঘ সনদের হিউম্যান রাইটস-ক্লজে বলা আছে-Higher education is also a fundamental human rights for those, who have merit. হায়ার এডুকেশন না হলে কোন জাতি এগুতে পারবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভ করছে,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলে তারা কোথায় যেতো-সবার পক্ষেত’বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কে উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করার সুযোগ হয়েছিল আমার। সম্মেলনে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্য থেকে বেরিয়ে এসেছে যে,higher education is a bridge to future. বিশ্বমাঝে শান্তি-সংহতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যম হচ্ছে উচ্চশিক্ষা।
কিছুদিন আগে আমরা একটা সার্কুলার পেলা,যাতে বলা আছে-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,উপ-উপাচার্য,ট্রেজারার নিয়োগ দিতে হলে ৩ জনের নাম দিতে হবে;যারা কেউ ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার থাকতে পারবে না। এর পেছনে কি কারণ,কি যুক্তি-আমরা কেউই জানি না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েশনকে গুরুত্ব না দিয়ে,কাউকে না ডেকে একটা আইন বা রেজুলেশন করা মোটেও যুক্তিসংগত বা গ্রহণযোগ্য নয়।
উচ্চশিক্ষা আন্দোলনকে সফল করতে হলে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের ফাউন্ডেশন যত বেশি শক্ত হবে,তত বেশি মেধাবী শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পিএইচডি ডিগ্রি দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়,তাহলে সেটি হবে জাতির জন্য কল্যাণকর। আমাদের সব প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার এ কর্মসূচি পালন করতে পারে। এজন্য আগে শিক্ষকদের তৈরি করতে হবে। ইউজিসি যদি এ সিস্টেমটা চালু করে,তাহলে জাতির জন্য তা হবে কল্যাণকর।
প্রফেসর ড. এএনএম মেশকাত উদ্দীন
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এএনএম মেশকাত উদ্দীন বলেন,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সাথে ইউজিসি’র সহযোগিতা বৃদ্ধি -এ নিয়ে ভাববার অবকাশ আছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নিয়ে যে বিতর্ক বাংলাদেশসহ অনেক দেশে আছে,তা আমেরিকায় নেই। সেখানে ইউনিভার্সিটি মানে ইউনিভার্সিটি,পাবলিক বা প্রাইভেট ভেদাভেদ নেই। আমাদের দেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোকে সরকারি অনুমোদন দেয়ার আগে চিন্তা-ভাবনা করে নেয়া দরকার। অনুমতি দেয়ার পর বৈষম্যমূলক আচরণ করা উচিত নয়। প্রাইভেট হোক আর পাবলিক হোক,বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করে আমাদের সন্তানরা;আমরা যদি সততা ও দায়িত্বশীলতার সাথে তাদের skill develop করতে না পারি,তাহলে তারা জাতির সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হবে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার এত বছর পরও এসব ইউনিভার্সিটির প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টি দেয়া হয় না। এজন্যই আজ সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রশ্ন এসেছে।
নতুন আইনে বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করতে গিয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। শিক্ষক নির্বাচন কমিটিতে প্রত্যেক বিষয়ের দু’জন বহিঃস্থ বিশেষজ্ঞ সদস্যকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এতে একদিকে কমিটির আকার অনেক বেড়ে যাবে,অন্যদিকে অনেক সভায় অপ্রাসঙ্গিক সদস্যরা কোন ভূমিকা পালন ছাড়াই উপস্থিত থাকবেন।
নতুন আইনে প্রত্যেক বিভাগে সিলেবাস কমিটি রাখা এবং দু’জন বিশেষজ্ঞ রাখার কথা বলা হয়েছে। আগের আইনে কেন্দ্রীয় কারিকুলাম কমিটি ছিল যা বর্তমান আইনে নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি থাকলে আন্তঃবিভাগীয় সামঞ্জস্য রাখার ব্যাপারে অনেক সুবিধা হতো। শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে একজন বোর্ড মেম্বারকে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকলে কমিটির ফলপ্রসূতা আরও বাড়তো।
ড. মেশকাত আরো বলেন-বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নাম যদি পরিবর্তনযোগ্য হয়,তাহলে এটি তাড়াতাড়ি করা উচিত।
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো দেশের ৫০% ছাত্র-ছাত্রীদের মানুষ করছে,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে ৯০%। কেন এই বৈষম্যমূলক চিত্র? যদিও আমরা সরকারের কাছ থেকে দান-অনুদান চাইছি না,তবু balanced development -এর খাতিরে balanced way-তে অগ্রসর হওয়া উচিত।
কারিকুলাম approval নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে কারিকুলাম দিতে হবে,নতুন একটা ডিপার্টমেন্ট খুলতে প্রথমেই লাগবে কারিকুলাম। এটি তৈরি হলে এক্সপার্টের কাছে যাবে,সেখান থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে ফিরে আসতে ছয় মাস,এক বছর সময় লেগে যায়। এজন্য আমার প্রস্তাব হলো-ইউজিসি একটা কারিকুলাম তৈরি করবে,সেখানে ইউনিভার্সিটিগুলো প্রয়োজনে তা অর্থের বিনিময়ে কিনে নেবে;এতে তাদের সময়ের সাশ্রয় হবে,বিড়ম্বনার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।
ড. মজিবর রহমান
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মজিবর রহমান বলেন-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যে এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে,তা ভাল উদ্যোগ। এতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে একাধিক মেম্বার নেয়া উচিত। ডক্টরেল,পোস্ট ডক্টরেল প্রোগ্রামগুলো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া উচিত।
তিনি বলেন-প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনেকগুলোই এখনও একটা স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছতে পারেনি,কোন কোন প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের ঘটনা ঘটে,সার্টিফিকেট-সর্বস্ব বা সনদ-বাণিজ্য বলে অভিযোগ ওঠে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম থাকবে না,সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে এটি পরিচালিত হবে,উচ্চশিক্ষা প্রসারের দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করবে। এজন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পরস্পরের যেমন সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন,তেমনি এর ওপর ইউজিসি’র নিয়ন্ত্রণও থাকা দরকার।
প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী
ইউজিসি’র পক্ষে সেমিনারের মুখ্য বক্তা হিসেবে সারগর্ভ বক্তৃতা করেন এবং পূর্ববর্তী বক্তাগণের বিভিন্ন প্রস্তাবের জবাব দেন প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী। তিনি সেমিনারে উপস্থিত ভিসি,প্রো-ভিসি,চেয়ারম্যান,ট্রেজারার,শিক্ষাদ্যোক্তা,বুদ্ধিজীবী,মিডিয়া কর্মীগণসহ সকলকে খোলামেলা ও প্রাণবন্ত আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ এরূপ সেমিনার আয়োজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকেও অভিনন্দন জানান।
ড. শিবলী বলেন-ইউজিসি’র সদস্য হিসেবে আমি দায়িত্বলাভ করেছি আড়াই বছর হলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে আমার বিশেষ আগ্রহ আছে। আমি এগুলোর উন্নয়নে সর্বদা সচেতন।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নাম পরিবর্তন করে একে উচ্চশিক্ষা কমিশন রাখার প্রস্তাব এসেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আমরা আলোচনা করেছি,সেখানে আলোচনায় ইউজিসি’র নাম উচ্চশিক্ষা কমিশন করার কথা এসেছিল। এছাড়া ইউজিসি’র সদস্যদের বৈঠকেও এর নাম পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। ইউজিসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর;প্রধানমন্ত্রী,শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে দেখা করে উচ্চশিক্ষা কমিশনের ব্যাপারে নাম পরিবর্তন প্রস্তাবনার কথা ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। নয়া চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী দায়িত্ব গ্রহণের পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে দেখা করার সময় উচ্চশিক্ষা কমিশন নামকরণের প্রস্তাব করলে তিনি তাতে সম্মতি দেন। এর ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি।
প্রস্তাব এসেছে উচ্চশিক্ষা কমিশনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি রাখা। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো-যেহেতু ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং মঞ্জুরি কমিশনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখ ছিল না,সেজন্য ইউজিসিতে তাদের সদস্যপদ লাভের সুযোগ ছিল না। এখন যখন ইউজিসি’র বদলে উচ্চশিক্ষা কমিশন হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে আমরা কাজও করে যাচ্ছি -তখন উচ্চশিক্ষা কমিশনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি সদস্য অবশ্যই থাকবে।
এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করার কথা সবাই বলেছেন,এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন এজন্য যে-এটি হলে অনেক অনিয়ম সংশোধন হয়ে যাবে,বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এবং একাডেমিক কার্যক্রমের উন্নয়ন হবে। আমিও মনে করি,এক্রেডিটেশন কাউন্সিল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম বন্ধ হবে এবং যেসব বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট স্কোর পূরণ করতে পারবে না, তাদের natural death হয়ে যাবে। সে অবস্থায় সরকার,মন্ত্রণালয়,ইউজিসি কারোরই কিছু করতে হবে না।
তবে এক্রেডিটেশন কাউন্সিলে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান ও সরকারের প্রতিনিধি থাকার কথাটি ঠিক নয়। আমরা সরকারের কাছে যে এক্রেডিটেশন কাউন্সিল খসড়া আকারে জমা দিয়েছি-সে কাউন্সিলে ইউজিসি বা সরকারের কোন প্রতিনিধি থাকার ব্যবস্থা নেই,সেটি হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংস্থা। এখানে সরকার বা ইউজিসি’র হস্তক্ষেপের প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। আমরা সেভাবে প্রস্তাবও করিনি। ক্যাম্পাস পত্রিকার আয়োজনে আজকের আলোচনায়ও এটি পরিষ্কার হয়েছে যে,স্বাধীন এক্রেডিটেশন কাউন্সিল হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ১৯৯২ ও ’৯৩ সালের পর ২০১০ সালে নতুন আইন হলো,কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এ ধরনের কোন Act নেই। আমরা যখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন করি,তখন সরকারি-বেসরকারি উভয়কে একই এ্যাক্টের আওতায় আনার চিন্তা করেছি;কিন্তু টেকনিক্যাল কারণে তা সম্ভব হয়নি। সেটি করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পুরোটাই পরিবর্তন করতে হয়। তাছাড়া প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে আইনের আওতায় রয়েছে। সংসদে আইনের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা পাবলিক ইউনিভার্সিটিকেও এক্রেডিটেশন কাউন্সিলের আওতায় আনার সুপারিশ করেছি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র স্থান সংকুলানের কথাও উঠেছে। দেখা গেছে-এখন অনেক ছাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করে না,তারা সরাসরি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে আসে। কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এখন এমন স্ট্যান্ডার্ডে পৌঁছেছে যে,অভিভাবকগণ সন্তানদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে সরাসরি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অভিভাবকগণ বুঝতে পেরেছেন,সন্তানদের শিক্ষার জন্য এখানে বিনিয়োগ বিফলে যাবে না। উদ্যোক্তাগণ একটি লক্ষ্য নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করছেন,বাণিজ্য নয়-তারা শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করেছেন। আমেরিকা,ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ধনিক শ্রেণী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বিনিয়োগ করেন,তাতে সরকারের উৎসাহ ও সহযোগিতা থাকে। এখানে একজন শিক্ষাদ্যোক্তা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্থাপন করতে চান,কোয়ালিটি এডুকেশন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন -সেখানে তার শিক্ষকের বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইউজিসি ভাববে কেন! পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের তুলনায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনেক বেশি। এক্ষেত্রে শিক্ষাদ্যোক্তা যদি কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করেন,সেক্ষেত্রে শিক্ষক-বেতন এবং অনুরূপভাবে ছাত্র-বেতন বেশি নির্ধারণ করলে তাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। ২০১০ সালের আইনে শিক্ষক-বেতন,ছাত্র-বেতন নির্ধারণ করে ইউজিসিকে জানানোর কথা বলা হয়েছে,ইউজিসি এখানে হস্তক্ষেপ করছে না। যদি বেতন-ভাতা অযৌক্তিক মনে হয়,সেক্ষেত্রে ইউজিসি সাজেশন দেবে এবং এটুকু থাকা বাঞ্ছনীয়। এটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইউজিসি’র সহযোগিতা বলতে হবে। এটাকে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা মোটেই উচিত হবে না।
সিলেবাস অনুমোদনের ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে,তা অবশ্য ঠিক। আমি ইউজিসিতে জয়েন করে দেখি,সিলেবাস পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে ফিরে আসতে ৬ মাস বা ১ বছর লেগে যায়। এ ব্যাপারে আমি বিভিন্ন উদ্যোগ নেই,যার ফলে সেই প্র্যাকটিস এখন বন্ধ হয়েছে এবং গত এক বছরে সিলেবাস নিয়ে কোন কমপ্লেন ইউজিসিতে নেই।
ঢাকায় স্থাপিত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে নেয়া। যারা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কর্ণধার,তাঁরা প্রায় সবাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এসেছেন। ইউজিসি’র কোন এক্সপার্ট সদস্য নেই। ৬ জন সদস্য নিয়ে ইউজিসি কমিটি। কোন ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা ইউজিসি’র পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদেরকে পাবলিক ইউনিভার্সিটির সম্মানিত শিক্ষকদের কাছেই যেতে হয়। অনেকে কাজ নেন,সময়মত করেন না,ফেরতও দেন না। এজন্য আমরা মনিটরিং করে কাজটা অন্যজনকে দিয়ে করিয়ে নিই।
আজকের সেমিনারের প্রস্তাবনা অনুযায়ীই সিলেবাস অনুমোদনের সমাধান হতে পারে। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ডিপার্টমেন্ট আছে,একাডেমিক কমিটি আছে;সেখানে প্রথমে সিলেবাস তৈরি করা হয়। এরপর ৩ জন এক্সপার্ট মেম্বার নেয়া হয় বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারা ৩ জন এটি দেখেন,ঠিকঠাক করেন। এরপর সেটি যায় ফ্যাকাল্টিতে। অতঃপর একাডেমিক কাউন্সিলে সেটি approve হয়। এভাবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতেও সিলেবাস অনুমোদনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এটি কি ধরনের স্বাধীনতা-পড়ানোর স্বাধীনতা? শিক্ষক নিয়োগের স্বাধীনতা? নাকি সার্টিফিকেট দেয়ার স্বাধীনতা? ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে-সিন্ডিকেটে সরকারের একজন নমিনী থাকবে,একজন ইউজিসি’র নমিনী (সদস্য ছাড়া) থাকবে। এ দু’জন ছাড়া থাকবেন-ভাইস-চ্যান্সেলর,প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর,ট্রেজারার,তিনজন মেম্বার,একজন ফ্যাকাল্টির ডিন। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কাঠামোর মধ্যে সবাই আছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রশাসন সম্পর্কে ইউজিসি আগে ওয়াকিবহাল ছিল না। আইনে বলা আছে-যেকোন তথ্য,যেকোন বিষয় সরকার চাইতে পারে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হবার পর সঙ্গে সঙ্গে ৫১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ইউজিসি সদস্যের নাম দিয়েছি। ২০১০ সালে যে বিশ্ববিদ্যালয় আইন হয়েছে এটির অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে-সঠিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এটি সংসদে গিয়ে আইনে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এটিকে নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ নেই। এটি মাত্র শুরু হয়েছে। কোন অসঙ্গতি থাকলে,সমস্যা থাকলে অবশ্যই সংশোধন করা যাবে এবং সেক্ষেত্রে এটিকে নিয়ে সংসদে যেতে হবে।
অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও সিন্ডিকেট তৈরি করেনি,একাডেমিক কাউন্সিল করেনি,এমনকি ট্রাস্ট-বোর্ডও গঠন করেনি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছে এ তথ্য প্রেরণের অনুরোধ করা হয়েছে,কিন্তু এখনও তা পাঠাননি।
আজকের সেমিনারে ডিজিটাল লাইব্রেরীর কথা বলেছেন কেউ কেউ। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে ইতঃমধ্যেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি কমপোনেন্ট আছে,তার একটি হলো-বাংলাদেশ রিসার্চ নেটওয়ার্ক। এদের সাথে চুক্তি হয়েছে-তারা পাবলিক-প্রাইভেট সব লাইব্রেরীর ডিজিটাল কানেকশান স্থাপন করবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ ব্যাপারে কোন খরচ করতে হবে না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকায় সব হয়ে যাবে। এতে শুধু ইউনিভার্সিটিগুলোর সাথেই নয়,সারা বিশ্বের সাথে কানেকশন স্থাপিত হবে। আপনারা গবেষণার সুযোগের কথা বলেছেন,তার অনেকটা লাভ করা যাবে ডিজিটাল লাইব্রেরী স্থাপনের পর।
আজকে আপনারা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কথাও বলেছেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে,সেখানে গ্র্যাজুয়েট টিচারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। তবে এটি পর্যাপ্ত নয়। তাই ইউজিসি’র পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে সেখানে ফ্যাকাল্টি টিচারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ চলছে।
এমসিসি প্রোগ্রাম সম্পর্কে বলা যায়-বর্তমানে যেটি আছে,এটি কোন আইনের আওতায় নেই। সরকার থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি,এমফিল করা যাবে না। আমি থাকাবস্থায় ইউজিসি’র সাথে এ ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি। তবে ইউজিসি মনে করে ঢালাওভাবে পথ রুদ্ধ করে না দিয়ে এভাবে বলা যায়-যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক,সমৃদ্ধ লাইব্রেরী,মানসম্মত ফ্যাকাল্টি রয়েছে কেবলমাত্র সেসমস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি,এমফিল কোর্স চালু করা যাবে। বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে;তবে ঢালাওভাবে এ ব্যাপারে অনুমোদন দেয়া যাবে না।
সরকারের উক্ত প্রজ্ঞাপন জারির সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে সরকারের কোন বৈঠক বা আলোচনা হয়নি। আমরা সংবাদপত্রে এ প্রজ্ঞাপন দেখেছি,আমাদেরকে এ খবর ফ্যাক্স করে পাঠানো হয়েছে। আমরা তা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জানিয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে বক্তব্য থাকলে আপনারা সরকারকে জানাতে পারেন;সে বৈঠকে আপনাদের সাথে আমরাও আলোচনায় বসতে পারি।
আজকের সেমিনারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি আবারও বলি,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ইউজিসি সচেতন,আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে গভীর আগ্রহী। এটা স্বীকার করতে হবে যে,কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। ইতোমধ্যে তারা তার প্রমাণও দিয়েছেন। তাদের মত অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি নিজেদের উন্নত করতে পারে,গুণগত মান সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারে,তাহলে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
ড. শিবলী আরো বলেন,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে যারা পাস করে বেরিয়েছে,তারা কে কোথায় কি কাজ করছে তার পরিসংখ্যান ইউজিসি’র কাছে নেই বলে সেমিনারে অভিযোগ উঠেছে। যারা এভাবে ডিগ্রি নিয়ে চাকরি করছে,তারা চাকরির জন্যই ডিগ্রি নেয়,কোয়ালিটি ইমপ্রুভ করার জন্য নয় -এটি হয়েছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।
মিডিয়ারও জানা দরকার-কিছু কিছু ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আছে,যারা ভিসি’র কাছে সার্টিফিকেট এনে বলেন-এখানে সই করেন। ভাইস-চ্যান্সেলর শক্ত মনের অধিকারী হলে তিনি সই করবেন না,তার বিদায় হয়ে যায়;অন্য ভিসি দায়িত্ব নিয়েও সই করলেন না অবৈধ কাগজপত্রে,তারও বিদায় হয়ে যায়। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর এসব বদনাম সম্পর্কে আমাদেরকেও শুনতে হয়। এজন্য আমি বলব-আপনারা নিজেদের ভুল-ত্রুটি-অনিয়ম সংশোধন করে নিন। যারা ভাল করছেন,অনিয়মকারীদের জন্য তাদের সুকর্ম ঢাকা পড়ে যায়;বদনামের ভাগীদার সবাইকে হতে হয়। এজন্য সুকৃতির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের উচিত অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করা,তাদেরকে মূল ধারায় নিয়ে আসার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং ইউজিসিকেও সহযোগিতা করা।
প্রফেসর শিবলী আরো বলেন-ইউজিসিতে যে গ্র্যান্টগুলো আছে,তা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের;প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তা দেয়া যাচ্ছে না -এটা ঠিক। আমরা ১০০ জনকে পিএইচডি এবং ৫০ জনকে এমফিল -এর জন্য গ্র্যান্ট দিই। এ গ্র্যান্ট এত সীমিত যে ১০০ জনকেও দিতে পারি না,৫০ জনকেও দিতে পারি না। যারা পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক,যারা এমসিসি প্রোগ্রামে থেকেছে মূলত তারাই এ গ্র্যান্ট পাচ্ছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ফান্ড আছে। কিন্তু ১০০ জনের মধ্যে একজন কি দু’জন আসেন। এমসিসি করার সময় স্কলারশীপ না পেলে ফুল স্টাডি ফি দেয়া হয় না। যখন ইউজিসি স্কলারশীপ ঘোষণা করা হয়,তখনই তারা পড়ার পূর্ণ খরচ পায়। আমাদের টাকা-পয়সা খুবই অপর্যাপ্ত। অগত্যা শিক্ষকরা বলেন-আমাদের টাকা-পয়সার দরকার নেই;আপনারা শুধু বলেন যে,আমরা স্কলারশীপ হোল্ডার। তাহলে আমরা ফুল-পেমেন্ট সুবিধাটা পাবো। ইউজিসি চেয়ারম্যানও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে একবার বলেছিলেন-আপনারা এত টাকা আয় করেন,আপনারা সহজে দু’একজন শিক্ষককে এমসিসি প্রোগ্রামে পাঠাতে পারেন;প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পারমানেন্ট ফ্যাকাল্টির শিক্ষকদের সহজে পিএইচডি,এমফিল কোর্স করাতে পারেন।
সম্পূর্ণরূপে বিষয়ভিত্তিক,গঠনমূলক ও স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনার জন্য সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং সবার সু-স্বাস্থ্য কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন প্রফেসর ড. আতফুল হাই শিবলী।
আলোচনা-পর্ব সমাপ্তির পর সম্পূরক বক্তব্য রাখেন আমেরিকার অবার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া,স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার প্রফেসর লুৎফর রহমান,সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. নেসার আহমেদ প্রমুখ।
শেষ পর্বে প্রফেসর শিবলী উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর আতফুল হাই শিবলী বলেন,সরকারের সিদ্ধান্ত হলো-যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,কয়েক বছর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে,তারা এ বছরে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাবে। ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে,যাদের কেউ কেউ জমি কিনেছে,কেউ কেউ জমির বায়না করেছে এবং দলিল প্রাপ্তি প্রসেসে রয়েছে। অবশ্য ঐ দলিলগুলো জাল দলিল বলেও কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করেছেন। আমরা সেগুলো ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে দেখব। যারা জমি কিনেছেন কিংবা এ ব্যাপারে অগ্রসর হয়েছেন,তাদের যদি কোয়ালিটি এডুকেশন কার্যক্রম থাকে,তাহলে তাদের জন্য আরও কিছু সময় বাড়ানোর সুপারিশ করা যেতে পারে। কিন্তু সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রজ্ঞাপন এখনও বহাল আছে।
সেমিনারের উপসংহারে মডারেটর এম হেলাল প্রশ্নোত্তর পর্বের কিছু বিষয় স্পষ্ট করেন এবং গঠনমূলক,যৌক্তিক ও ফলপ্রসু আলোচনার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন-আজকের সেমিনারের রিপোর্ট অবিলম্বে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে পাঠানো হবে এবং ক্যাম্পাস পত্রিকায় সবিস্তারিত ছাপানো হবে।
[রেকর্ডকৃত বক্তব্য অনুলিখনঃ মোহাম্মদ মোস্তফা;কম্পিউটার কম্পোজঃ মনিরুজ্জামান;সম্পাদনায়ঃ উম্মে সালমা রনি]