বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আয়োজিত সেমিনার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের
নীতিনির্ধারক ও নির্বাহীদের আন্তঃসম্পর্ক

১ আগস্ট ’০৬ তারিখে ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় ‘বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক ও নির্বাহীদের আন্তঃসম্পর্ক’ শীর্ষক সেমিনার। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনমূলক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউ জি সি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম আসাদুজ্জামান। মনোনীত বক্তা ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র ভারপ্রাপ্ত ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম আর কবির। অংশগ্রহণকারী অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়’র ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম শমশের আলী, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান স্থপতি এ এইচ এম শাহজাহান, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি মেম্বার মোঃ মোহসিন, গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলী, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’র ভিসি প্রফেসর ড. খলিলুর রহমান, স্টেট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. ইলিয়াস ধামী, ইউআইটিএস’র ভিসি প্রফেসর মোঃ আব্দুল আজিজ, এআইইউবি’র উপদেষ্টা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিঃ’র চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য এ টি এম আলমগীর, এআইইউবি’র প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. তফাজ্জল হোসেন, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর এম শাহ্জাহান মিনা, প্রাইম ইউনিভার্সিটির ডীন প্রফেসর ড. এম এ জলিল, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার সফিকুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. নেছার আহমেদ, এআইইউবি’র প্রফেসর এম এ কাইউম ও পরিচালক (জনসংযোগ) মোঃ লুৎফর রহমান, দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার সম্পাদক কে এম বেলায়েত হোসেন, ডেবটেক’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফেরদৌসী বেগম, বি আই ডি এস-এর রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’র অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আছাদ উল্যা, মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটির ইংরেজী-প্রভাষক প্রবীর সাহা প্রমুখ। সেমিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল।
বক্তাগণ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সময়োপযোগী এ সেমিনার আয়োজন করার জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। সেমিনারের সূচনা করে জনাব এম হেলাল আশা প্রকাশ করেন যে, এই সেমিনারের মাধ্যমে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক ও নির্বাহীদের আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন সমাধান বেরিয়ে আসবে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ সেমিনার সম্পর্কিত বিষয় ছাড়াও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়েও বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্য সংক্ষিপ্তকারে উপস্থাপিত হলো।

প্রফেসর ড. এম আর কবিরঃ
সেমিনারের মনোনীত বক্তা ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আর কবির বলেন, বেসরকারী খাতে উচ্চ শিক্ষা প্রসারে উদ্যোক্তা বা নীতিনির্ধারকগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও এর জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় বেসরকারী খাতে উচ্চশিক্ষা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এরপরও এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যা স্বার্থসংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এক্ষেত্রে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, নীতি নির্দেশনার ক্ষেত্রে এ ধরনের শূন্যতাজনিত কারণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক এবং প্রশাসনিক অঙ্গসংগঠনগুলো পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। নীতিনির্ধারকরা তাদের ভূমিকা সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা না থাকায় প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। তাই তাঁর মতে, একাডেমিক বা প্রশাসনিক এবং নীতিনির্ধারণী বিষয়সমূহের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকা উচিত। এক্ষেত্রে একাডেমিক বা প্রশাসনিক বিষয়গুলো নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া উচিত। নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারণ করা যেতে পারে।
তাঁর মতে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে নীতিনির্ধারক এবং নির্বাহীগণের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন-
ক) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার্থে প্রদেয় প্রাথমিক জামানত ব্যতিত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন;
খ) সিন্ডিকেট গঠন এবং এর ভূমিকা;
গ) একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিলেকশন বোর্ড গঠন ও এর ভূমিকা;
ঘ) অর্থ কমিটি এবং ক্রয় কমিটি গঠন;
ঙ) সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া;
চ) আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা কমিটির ভূমিকা।
তাঁর মতে, উপরোক্ত বিষয়গুলোর সফল সমাধান বেসরকারী পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সম্প্রসারণ ও প্রবৃদ্ধি বয়ে আনবে। ফলশ্র“তিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে উত্তীর্ণ স্নাতকদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং প্রতিভা দ্বারা আমাদের দেশ, ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এটা আশা করা যায় যে, ভবিষ্যতে গবেষণা, জ্ঞান সৃষ্টি এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, নীতিনির্ধারক এবং প্রধান নির্বাহীর মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তি হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং আস্থার। বিশ্ববিদ্যালয়কে পেশাগত দক্ষতার সাথে পরিচালনা এবং শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য প্রধান নির্বাহী এবং তাঁর সহযোগিদের পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামাজিক মূলধন সৃষ্টিতে সহযোগিতা করাই হবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মূল দায়িত্ব এবং এ চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে তাঁরা গর্বিত হতে পারেন।

প্রফেসর ড. এম শমশের আলীঃ
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম শমশের আলী বলেন, সেমিনারের আলোচ্য বিষয় অনুসারে বক্তব্যের পরিধি হচ্ছে প্রোগ্রাম এবং এডমিনিস্ট্রেশন। এখানে দু’জন প্লেয়ার, একজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা এবং অন্য জন হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা। কিন্তু যদি ভাল একোমডেশন হয় এবং গুড স্পিরীট অব কো-অপারেশন হয় তবে টিম একটিই হবে। এই টিম হবে ফাউন্ডার এন্ড এক্সিকিউটিভস্। দু’পক্ষ দু’রকম চিন্তা করলে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দু’পক্ষেরই চিন্তা-ভাবনার বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডেশন যারা চালাচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই শিল্পপতি আছেন। এই ইউনিভার্সিটির ফাউন্ডাররা ইউনিভার্সিটিকে কোন ইনভেস্টমেন্টের জায়গা মনে করেন না। এই ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তারা কমিটিতে বসেন, এমনকি সিলেকশন কমিটিতেও তাদের দু’ একজন বসেন, কিন্তু তজ্জন্য কোন অর্থ তারা গ্রহণ করেন না। উদ্যোক্তাদের একটিই কথা, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ভাল চলুক।
প্রফেসর শমশের আলী বলেন, নতুন প্রোগ্রাম চালুর ক্ষেত্রে ভাইস-চ্যান্সেলরদের উচিৎ, উদ্যোক্তাদের অবশ্যই জানানো। কিন্তু ভাইস-চ্যান্সেলর যদি উদ্যোক্তাদের এড়িয়ে নতুন নতুন প্রোগ্রাম চালু করেন তবে এটা ন্যায়সংগত হবে না। ভাইস-চ্যান্সেলরদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, উদ্যোক্তারা অর্থ বিনিয়োগ করেন, তাই উদ্যোক্তাদের জানাতে হবে কি করা হচ্ছে, কিন্তু কিভাবে করতে হবে, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহীদের ব্যাপার। ভাইস-চ্যান্সেলরদের অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এটা করবেন।
তাছাড়া প্রোগ্রাম চালুর ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সবসময় অর্থকরী দিক বিচার করলে চলবে না। তবে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়কেই অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হতে হবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যত তাড়াতাড়ি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা যায়, সেদিকে উদ্যোক্তা ও নির্বাহীদের লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য ইউজিসি’র সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি দরকার। প্রয়োজনে ইউসিজি ভাইস-চ্যান্সেলরদের প্রদত্ত প্রোগ্রাম পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করে দিবেন। কারণ প্রোগ্রাম ঠিকমতো চললে বা ভাইস-চ্যান্সেলরগণ প্রোগ্রাম ভালভাবে সম্প্রসারণ করলে ফাউন্ডারগণ বুঝবেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাদের দরদ আছে। শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য ভাইস-চ্যান্সেলরগণ এখানে আসেননি। তাদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা যায়, তাহলে তাঁরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারবেন এটা তাদের ইউনিভার্সিটি। এই পরিবেশ যদি ভাইস-চ্যান্সেলর সৃষ্টি করতে পারেন তবে উদ্যোক্তারা ইউনিভার্সিটির উন্নয়নে আরো বেশি উদ্যোগী হবেন। এর ফলে ভাইস-চ্যান্সেলর এবং ফাউন্ডারদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল হবে। অর্থাৎ প্রোগ্রাম এবং কোয়ালিটি যদি ভাল হয়, তবে এর মাধ্যমেই উদ্যোক্তা ও ভাইস-চ্যান্সেলরদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
ইউনিভার্সিটির প্রশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দায়বদ্ধতা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক কম অর্থ নেয়া হয়, কিন্তু এজন্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভাইস-চ্যান্সেলরের যে ক্ষমতা এবং যতখানি সম্পৃক্ততা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও একই রকম। সুতরাং নতুন আইনে ভাইস-চ্যান্সেলরকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, এটা যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে। কারণ ভাইস-চ্যান্সেলর হচ্ছেন ‘কিং-পিন অব দ্যা ইউনিভার্সিটি’। একেবারে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পর্যন্ত প্রতিটি জিনিসের জবাবদিহিতা করতে হয় ভাইস-চ্যান্সেলরকে। সুতরাং ভাইস-চ্যান্সেলরকে ক্ষমতাও দেয়া উচিৎ এবং একই সাথে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও তাকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বডিতে ফাউন্ডারদের প্রতিনিধি অবশ্যই থাকবেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য যে পাঁচ কোটি টাকা জমা রাখতে হয় তার বাইরেও ইউনিভার্সিটি পরিচালনায় উদ্যোক্তাদের প্রাথমিক ফান্ড দিতে হবে। তবে ইউনিভার্সিটি পরিপূর্ণভাবে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত এই প্রাথমিক ফান্ড আস্তে-ধীরে এমনভাবে ফেরৎ নেয়া যেতে পারে, যাতে করে ইউনিভার্সিটির উপর চাপ না পড়ে। তাছাড়া প্রত্যেকটি কাজ যদি উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলররা আলাপ-আলোচনা করে করেন, প্রোগ্রাম যদি আন্তরিকতার সাথে পরিচালিত হয় এবং ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন হয়, তবে উদ্যোক্তা ও ভাইস-চ্যান্সেলরদের সম্পর্ক ভাল থাকবে। প্রফেসর শমশের আলী বলেন, যেহেতু দিন দিন ইউনিভার্সিটির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেহেতু ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ইউজিসি, ফাউন্ডার এবং ভাইস-চ্যান্সেলরগণ যদি সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারেন তবে প্রাইভেট ইউনিভর্সিটি তার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফল করতে পারবে।

ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীঃ
গণ বিশ্ববিদ্যালয়’র ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাইভেট কোন উদ্যোক্তা অর্থ বিনিয়োগ করেননি। এজন্য অর্থ যোগান দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র পাবলিক চ্যারিটেবল ট্রাস্ট। এই ট্রাস্ট অর্থ ফেরৎ চায় না, তারা চায় বিশ্ববিদ্যালয় ভালভাবে চলুক। ইতোমধ্যে দশ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। সরকারের কাছেও পাঁচ কোটি টাকা জমা আছে। এসবই গরিব মানুষের অর্থ। তিনি বলেন, পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এই জন্যে প্রয়োজন ফুল টাইম শিক্ষক। উদ্যোক্তাদের বিবেচনায় একজন ফুলটাইম শিক্ষকের বেতন ৪০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা হলেই চলে। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষক তাতে খুশি নন। দেখা গেছে অধ্যাপনা করতে এসে তাঁরা জিজ্ঞেস করেন ব্যবসায়ীরা কত আয় করেন। কিন্তু অঢেল অর্থ চাইলে শিক্ষকতা না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কনসালটেন্ট হতে হবে এবং থানা এডুকেশন অফিসার হলে বা থানা পরিদর্শক হলে আয় অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কাকে ভর্তি করা হবে এটা মন্ত্রণালয়ের দেখা উচিৎ নয়। ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা যদি গরিব বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানকে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন, তবে তাকে ভর্তি করানো প্রয়োজন। গরিব ও মধ্যবিত্তের সন্তানদের জন্য উচ্চ শিক্ষার দ্বার খুলে দিতে হবে। এখানে কোন রকম প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিৎ নয়। আর এজন্যেই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠা। তবে তাকে পাস করিয়ে দেয়া যাবে না। তাকে একই মানদন্ডে এনে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে গরিব ও মেধাবীদের জন্য ৫০% আসন রাখা হয়েছিল, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী তেমন পাওয়া যায়নি। গরীবদের জন্য সবকিছুই ফ্রি ছিল। এর কারণ হচ্ছে গরিবের সন্তানকে প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়ানো সম্ভব নয়, কিংবা একজন বিত্তবানের সন্তানের ন্যায় গরিবের সন্তান নিজকে গড়ে তুলতে পারে না। তাই তার পক্ষে সব সময় মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পক্ষে বিজ্ঞানে পড়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, গরিব আর মেধাবী এক সাথে পাওয়া যায় না। অতএব ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ভেবে দেখতে হবে দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের এই সুযোগ থাকবে কিনা? সুতরাং কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি যদি ‘বি’ গ্রেড বা ‘সি’ গ্রেড প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীও ভর্তি করে তবে আপত্তি করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে ইউজিসিকে মনিটরিং করতে হবে তার পরীক্ষার মানটা ঠিক আছে কিনা, পড়াশোনার মান ঠিক আছে কিনা, তা না হলে ভবিষ্যতে দাবি আসবে ইউজিসি দুটো হোক। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী করার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রয়োজনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইউজিসি অর্থ নিতে পারে, কিন্তু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে হয়রানি করা উচিৎ নয়।
ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, বর্তমানে ইউজিসি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কারণ কোন ইউনিভার্সিটি যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন সাবজেক্ট পড়াতে চায় তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। অথচ সকল ইউনিভার্সিটির অনুমোদন প্রদান করে ইউজিসি, মনিটরিং করে ইউজিসি। তিনি বলেন, মৎস্য পড়াতে যদি মৎস্য মন্ত্রণালয়ের এবং আইন পড়াতে যদি আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয় তবে চলবে না। এসব কিছুরই অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা ইউজিসি’র থাকতে হবে। প্রয়োজনে ইউজিসিকে এজন্য অধিকার আদায় করতে হবে, কর্তৃত্ব আদায় করতে হবে। সুতরাং ইউজিসিকে আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হতে হবে এবং অভিন্ন ইউজিসি থাকবে। ইউজিসি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে মনিটরিং করবে, মূল্যায়ন করবে। তিনি বলেন, ইউজিসি শুধু পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের স্কলারশীপ দিবে এটা ঠিক নয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদেরও স্কলারশীপ দিতে হবে। উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। এখানে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সমতা চায়। শুধু তাই নয়, পাবলিক ইউনিভার্সিটির ন্যায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকেও ইউজিসি’র অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।

প্রফেসর ড. খলিলুর রহমানঃ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের জন্য ইউনিক এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যতটা সম্ভাবনা রয়েছে, পাবলিক ইউনিভার্সিটিতেও তত সম্ভাবনা নাই। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইচ্ছে করলে যুগের চাহিদা পূরণে ইউনিভার্সিটিতে নতুন নতুন সাবজেক্ট চালু করতে পারে। প্রফেসর খলিলুর রহমান বলেন, জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যথেষ্ট নয়।
তিনি বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকেই করতে হবে যারা মানুষকে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র তৈরি করে দিবেন, কিছু পাওয়ার জন্যে নয়। বেশির ভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারাই এই উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে শিক্ষকদের, কর্মচারীদের, ছাত্রদের এবং উদ্যোক্তাদের খুশি রাখার মূলে হচ্ছেন ভাইস-চ্যান্সেলরগণ। সুতরাং ভাইস-চ্যান্সেলরের উপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। তিনি বলেন, ভাইস-চ্যান্সেলরদের উচিৎ উদ্যোক্তাদের দেখে-শুনে যোগদান করা। তাহলে উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকবে। তাছাড়া ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলরগণ কি করতে চান, তা পূর্বেই উদ্যোক্তাদের জানানো প্রয়োজন এবং উভয়ের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হওয়া দরকার।

প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলীঃ
গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলী বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরদের মধ্যে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে ভাইস-চ্যান্সেলরগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে যেসব উদ্যোগ নিবেন উদ্যোক্তাগণ সেই উদ্যোগের গুরুত্ব বিচার করে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিবেন। যে কোন উন্নয়নেই ভাইস-চ্যান্সেলরগণ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগুবেন। যদি এভাবে এগিয়ে যান তবে অবশ্যই সার্থক হবেন। তিনি বলেন, ইউজিসি যথার্থভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম মনিটরিং করবেন এবং কোথাও কোন সমস্যা দেখা দিলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশোধনে উদ্যোগী হবেন। যদি এটি সম্ভব হয় তবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কনসেপ্ট বাস্তবায়িত হবে।

স্থপতি এ এইচ এম শাহজাহানঃ
পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির চেয়ারম্যান স্থপতি এ এইচ এম শাহজাহান বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি ইতঃপূর্বে তদন্ত করে ৮টি ইউনিভার্সিটির নাম উল্লেখ করে বলেছিল, এগুলোর ইউনিভার্সিটি করার গ্রহণযোগ্যতা নেই। এগুলোর মধ্যে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটিরও নাম উল্লেখ করা হয়। তখন অনেকগুলো ইউনিভার্সিটির বয়স ছিল ১৮/১৯ বছর। আর পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। অথচ কোন প্রতিযোগিতায় যেতে হলে একটি ক্রাইটেরিয়া করতে হয়। ৫ বছরের ইউনিভার্সিটির সাথে ৩ বছরের ইউনিভার্সিটির তুলনা করা যেতে পারে। কিন্তু ১৯ বছরের ইউনিভার্সিটির সাথে ২ বছরের ইউনিভার্সিটির তুলনা করলে কিছুই সেখানে পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ভুল-ত্র“টি থাকতে পারে, তবে তা সংশোধনের সুযোগ দিয়ে তারপর বন্ধের সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত হতে পারে। তাছাড়া পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির বিষয়ে কি করা হয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। পত্র-পত্রিকায় প্রচার হওয়ায় আশানুরূপ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে না। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ একটি অবহেলিত এলাকা। সেখানে সাড়ে চার কোটি মানুষের বসবাস। সব মানুষকে কেন ঢাকায় এসে পড়তে হবে। যদি ঢাকায় এসে পড়তে হয় তাহলে তো বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে না এবং রাজধানী ঢাকার উপর চাপ পড়বে। যেহেতু বিকেন্দ্রীকরণ বর্তমান সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য দিক, সুতরাং যারা ঢাকার বাইরে বা বিভাগীয় পর্যায়ে ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করতে চান সরকারের উচিৎ তাদেরকে সহযোগিতা করা। তিনি বলেন, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির ভুল-ত্র“টি সংশোধনের সময় দিয়ে তারপর এই ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন এবং যত দ্রুত সম্ভব সরকার এটি করলে পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির জন্যে মঙ্গল হবে। এম শাহজাহান বলেন, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটির নীতিনির্ধারক ও নির্বাহীদের আন্তঃসম্পর্ক অত্যন্ত ভাল। তাছাড়া সকল ইউনিভার্সিটির অর্থই জনগণের কাছ থেকে আসে। এর হিসাব সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা ইউজিসি’র দেখা উচিৎ। ইউনিভার্সিটি সঠিকভাবে নিয়মকানুন মেনে চলছে কিনা, সার্টিফিকেট ঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে কিনা- এই বিষয়গুলো ইউজিসি মনিটরিং করলেই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হবে।

প্রফেসর ড. তফাজ্জল হোসেনঃ
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. তফাজ্জল হোসেন বলেন, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে ধনী-গরিব বিবেচনা না করে মেধাকে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। তাছাড়া ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরদের মধ্যে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকতে হবে, কেননা ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, ডীন, শিক্ষক সকলকেই উদ্যোক্তাগণ নিয়োগ দিয়ে থাকেন এবং অর্থ বিনিয়োগ করেন। তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটিতে অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা বা অনিয়ম হচ্ছে কিনা- এই বিষয়ে ইউজিসি মনিটরিং করবে। এছাড়া বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালুর ব্যাপারে ইউজিসি’র কাছে আবেদন করে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন সাবজেক্ট খুলতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়, এক্ষেত্রে ইউজিসি কিছু করতে পারে না। সুতরাং ইউজিসিকে আরো শক্তিশালী এবং গতিশীল করতে হবে।

প্রফেসর ড. ইলিয়াস ধামীঃ
স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. ইলিয়াস ধামী বলেন, ইথিক্স এবং মর্যালটি অত্যন্ত জেন্রালাইজ ইস্যু। তিনি বলেন, কিভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক, উদ্যোক্তা, প্রশাসক ও ইউনিভার্সিটির কাছ থেকে ইথিক্স এবং মর্যালটি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে সেই বিষয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। প্রফেসর ধামী বলেন, ইউনিভার্সিটির কারিকুলাম চাহিদাভিত্তিক হওয়া উচিৎ।

প্রফেসর এম শাহ্জাহান মিনাঃ
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর এম শাহ্জাহান মিনা বলেন, বেশির ভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট কমিটি, ফাইন্যান্স কমিটি, একাডেমিক কাউন্সিল নেই। তাঁর জানা নেই কতগুলো ইউনিভার্সিটিতে একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং হয়। তিনি মনে করেন সব ইউনিভার্সিটিতে একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেক ইউনিভার্সিটিই একাডেমিক মিটিং, সিন্ডিকেট মিটিং করতে পারে না। কারণ ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরদের দ্বন্দ্বের জন্য তারা এসব কমিটি গঠন করতে পারেননি। আর এসব দ্বন্দ্বের কারণে যেহেতু কমিটিগুলো কাজ করতে পারছে না, সেজন্য ইউনিভার্সিটিগুলোও সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। প্রকৃত পক্ষে এটা জানা নেই যে, কোন্ কোন্ ইউনিভার্সিটিতে এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। সুতরাং প্রথমত এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, কোন্ ইউনিভার্সিটিতে এই সমস্যা বিরাজ করছে এবং সে অনুযায়ী ইউজিসিকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকদেরকে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়া হয়, কিন্তু শিক্ষকরা এটা মানতে চান না। প্রফেসর মিনা এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ন্যায় মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে সমাজের অন্য কেউ যদি এর চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন তাহলে তাদের ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? তাছাড়া একই বাজার অর্থনীতির আওতায় সবাইকে বসবাস করতে হয়, জীবনধারণ করতে হয়; তাহলে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য থাকবে কেন? তিনি আশা করেন, ইউজিসি এসব সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর এটি যদি সম্ভব হয় তবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সঠিকভাবে পরিচালিত হবে এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সার্থক হবে।

ড. ফেরদৌসী বেগমঃ
ডেবটেক’র নির্বাহী পরিচালক এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়’র পার্টটাইম শিক্ষক ড. ফেরদৌসী বেগম বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যা ইউনিভার্সিটিতে ‘ক্যাম্পাস পরিবেশ’ বিরাজ করে না। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় বসে আড্ডা দেয়, ফাস্ট ফুডে বসে আড্ডা দেয়। এখানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কও ভালভাবে গড়ে ওঠে না। কারণ শিক্ষকরা দ্রুত আসেন এবং এসেই পড়িয়ে দ্রুত চলে যান। ফলে ছাত্রদের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। তাঁর মতে, রাজনীতিতে যেমন ব্যবসায়ীদের কারণে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা কোণঠাসা হয়ে আছেন, তেমনি শিক্ষাক্ষেত্রেও ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কাছে প্রকৃত শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা ছাত্রদের কোন নৈতিক শিক্ষা দেন না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হলে থাকার যে ভালবাসা, বন্ধুবান্ধবের প্রতি যে ভালবাসা, ক্যাম্পাস সংস্কৃতি- এগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে গড়ে ওঠছে না। সবাই স্বতন্ত্রভাবে গড়ে ওঠছে। জাতি কোথায় যাচ্ছে তার খোঁজ কেউ রাখছেন না। অথচ এসব সংস্কৃতি একজন সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠতে সাহায্য করে। অভিভাবক হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে সবাইকে এই বিষয়গুলো ভেবে দেখতে হবে। ড. ফেরদৌসী আরও বলেন, যে জনবল নিয়ে ইউজিসি পূর্বে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছে, এখন সেই জনবল দিয়ে এত অধিক সংখ্যক ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলামঃ
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আমিনুল ইসলাম বলেন, ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, শুধুমাত্র গরিব নয়, গরিব-মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের এবং ন্যূনতম জিপিএ ২.৫ প্রাপ্তদের ভর্তির বিধান রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা উচিৎ।

প্রফেসর ড. এম আসাদুজ্জামানঃ
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের সেমিনারে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিত্বরা বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু তাঁর মতে কেউই তাদের মনের কথা ব্যক্ত করেননি। কারণ উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে অনেক ভাইস-চ্যান্সেলরই তাঁর কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছেন, কিন্তু এই সেমিনারে তা উপস্থাপন করেননি। এমনও বলেছেন, তাঁরা চাকরি ছেড়ে দিবেন, অথচ আজকে তা উল্লেখ করেননি। প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে দ্বন্দ্ব রয়েছে। উদ্যোক্তাদের ধারণা ভাইস-চ্যান্সেলরগণ তাদের কর্মচারী। তিনি বলেন, ভাইস-চ্যান্সেলরগণ কারো কর্মচারী হতে পারেন না। ভাইস-চ্যান্সেলররা ইউনিভার্সিটির মূল চালিকা শক্তি এবং তাদেরকে ঘিরেই সকল কিছু পরিচালিত হবে।
প্রফেসর আসাদুজ্জামান বলেন, ইউজিসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২ এবং ১৯৯৮-এর যে সংস্কার করেছে, সেখানে ভাইস-চ্যান্সেলরের কি ভূমিকা, একাডেমিক কাউন্সিলের কি ভূমিকা, সিন্ডিকেটের কি ভূমিকা, ফাইন্যান্স কমিটির কি ভূমিকা এবং ট্রাস্টি বোর্ডের কি ভূমিকা, এসবই রয়েছে। তিনি বলেন, আজকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি একটি পদ্ধতির মধ্যে এসেছে, যেটা আগে ছিল না। এটা হয়েছে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে। অভিভাবকরা সচেতন, ছাত্ররা সচেতন, তারা জানেন কোথায় কি হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, আর শিক্ষকরা শিক্ষার মেরুদন্ড। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর, জাতির হাতিয়ার, জাতির বিবেক। তিনি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’র শিক্ষক উল্লেখ করে বলেন, কারো সাথে তাঁর কোন দ্বন্দ্ব নেই। সুতরাং সবারই উচিৎ সঠিক কথা বলা এবং সঠিক কাজ করা।
তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন ইউজিসি মানে অনেক লোক দিয়ে কাজ করা, এটা ভুল ধারণা। ইউজিসিতে যাঁরা আছেন তাঁরা পন্ডিত ব্যক্তি। তাঁরা কাজ করতে পছন্দ করেন। প্রফেসর আসাদুজ্জামান বলেন, ইউজিসি কাজ করে না এটা ঠিক নয় এবং লোকবল নেই একথাও ঠিক নয়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটি ইউনিভার্সিটিতে হয়তো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রাম খোলার অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা আছে সেজন্য উক্ত ইউনিভার্সিটি সেই প্রোগ্রাম চালু করেছে। কিন্তু দেখা গেছে তার দেখাদেখি অন্য একটি ইউনিভার্সিটিও একই প্রোগ্রাম চালু করতে চাচ্ছে, অথচ সে ইউনিভার্সিটিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই, এটি একটি বড় সমস্যা। দেখা গেছে সেখানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নেই। যদি ইউজিসি শিক্ষকের নাম দিতে বলে তবে হয়তো নাম দিল, কিন্তু যখন ল্যাবরেটরিতে কি কি আছে দেখাতে বলা হলো তখন দেখা গেল, দুই-তিন বছর আর তাদের দেখা নেই। আবার কোন ইউনিভার্সিটি হয়তো ফার্মেসী সাবজেক্ট খুলতে চাচ্ছে, তাকে বলা হলো শিক্ষকদের নাম দিতে। দেখা গেছে মাইক্রোবায়োলজি কিংবা বায়োকেমিস্ট্রির শিক্ষকের নাম দিয়ে দিয়েছে। ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষক নেই। যখন ল্যাব দেখার কথা বলা হলো তখন আর ইউজিসিকে ডাকা হয় না। তিনি বলেন, ইউজিসি’র টিম রয়েছে এবং এই টিমগুলোর প্রত্যেকেই এক্সপার্ট। সিলেবাস দেখে যারা সঠিক মতামত দিতে পারেন তাদের কাছেই পাঠানো হয়। তাঁরা অনেক সময় দেরি করার কারণে এই প্রক্রিয়ায় সময় লেগে যায়। প্রফেসর আসাদুজ্জামান বলেন, এমনও দেখা গেছে, যে সমস্ত কোর্স বাংলাদেশের কোথাও নেই সেই সমস্ত কোর্স প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি চালু করতে চায়। বাজারে চাহিদা আছে, কিন্তু পড়াবেন কারা। ল্যাব নেই, ল্যাবরেটরী নেই, বই নেই লাইব্রেরীতে। মাত্র দুই শ’ আড়াই শ’ বই নিয়ে লাইব্রেরী চলে না। সুতরাং এসব অসম্পূর্ণ থাকার কারণেই ইউজিসি অনুমোদন দেয় না। অথচ দেখা গেছে অনেক সময় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো ইউজিসিতে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েই ছাত্র ভর্তি করে ফেলে। কিন্তু আইনে আছে ইউজিসি’র অনুমোদন ছাড়া কোন কোর্স কোন আউটার ক্যাম্পাস খোলা যাবে না। কোর্স খোলার জন্য আবেদনের পর ৬০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। ৬০ দিন পর যদি ইউজিসি অনুমোদন না দেয়, তাহলে চ্যান্সেলরের কাছে পাঠাতে হবে। এই আইন না মেনেই অনেক ইউনিভার্সিটি পত্রিকায় এ্যাড দিয়ে ছাত্র ভর্তি করে ফেলে এবং মন্ত্রীদের মাধ্যমে ইউজিসিকে চাপ দিতে থাকে, এটা ঠিক নয়।
প্রফেসর ড. আসাদুজ্জামান বলেন, অনেক সময়ই দেখা যায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ পাবলিক ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে বিষোদাগার করেন। এটা ঠিক নয়, কারণ এখনও পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যথেষ্ট নামী-দামী শিক্ষক রয়েছেন। বরং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার ফলে পাবলিক ইউনিভার্সিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে বেশি টাকার বেতন দেখে শিক্ষকগণ সেখানে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে যে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা রয়েছে, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে তা নেই।ড. আসাদুজ্জামান বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলরগণ যদি নিজেদের মানসম্মান সম্পর্কে সচেতন না হন, তাহলে আইন করে কিছু করা যাবে না। এমনও ঘটনা রয়েছে এক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আরেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নিয়ে গেছে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা ব্যতিত দ্বিতীয় বর্ষে উঠার অনুমতি না দেয়ায় তারা অন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হয়। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত পক্ষে এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নষ্ট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ট্রাস্টি বোর্ড কোন খোঁজ নেয় না, ভাইস-চ্যান্সেলর ইউনিভার্সিটি পরিচালনা করেন। বিদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রফেসর আসাদুজ্জামান বলেন, ইউনিভার্সিটি হচ্ছে জ্ঞান আহরণ এবং বিতরণের জায়গা। এখানে কোন গোজামিল থাকলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সার্থক হবে না।
তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা উচিৎ নয়। যারা উচ্চ শিক্ষা ধারণ করতে পারবে তাদেরই শুধু ভর্তি করতে হবে। সবাইকে বিবেকের মুখোমুখি হতে হবে। সম্মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। শুধু ইউজিসি’র উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে হবে না। যার যার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে। প্রফেসর আসাদুজ্জামান বলেন, এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে, ইউজিসি একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান। ইউজিসিতে অনেক যোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন। ইউজিসি কখনই কারো উপর বৈরী মনোভাব পোষণ করে না। কারণ এদেশের দরিদ্র মানুষের ট্যাক্সের অর্থে ইউজিসি পরিচালিত হয়। ড. আসাদুজ্জামান বলেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়া আউটার ক্যাম্পাস খোলার নিয়ম নেই। সুতরাং প্রত্যেকের অবস্থান, ক্ষমতা এবং অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সুস্থ পরিবেশে ইউনিভার্সিটিগুলো বিকশিত হতে হবে। তিনি মনে করেন, মানবদেহের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ও সমাজের দেহ। এই সমাজ-দেহের দু’টি হাত। একটি পাবলিক ইউনিভার্সিটি এবং অন্যটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি। সুতরাং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে যেমন সমৃদ্ধ করতে হবে তেমনি পাবলিক ইউনিভার্সিটিকেও সমৃদ্ধ করতে হবে। এদেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। কিন্তু এই ইমেজ নষ্ট হতে দেয়া ঠিক নয়। কারণ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের জন্য ইমেজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং ইমেজ ধরে রাখতে হবে এবং উদ্যোক্তা ও ভাইস-চ্যান্সেলরদের মধ্যে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদঃ
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বর্তমান সরকারের শিক্ষানীতি মোটামুটিভাবে একটি সফল শিক্ষানীতি, যদিও এর মধ্যে কিছু দুর্বলতা আছে। তবে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশের বর্তমান যে শিক্ষানীতি, শিক্ষার যে পরিবেশ, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাংলাদেশের যে ভর্তির হার এটা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, এটি একটি বড় অর্জন। এছাড়া জেন্ডার ইকোয়ালিটিও অর্জিত হয়েছে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা অনেক বেশি। যদিও শিক্ষার মান ততটা সন্তোষজনক নয়। কিন্তু এটা জাতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আজকে উচ্চ শিক্ষার প্রসার এবং অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্ব অপরিসীম ও অনস্বীকার্য। মন্ত্রী বলেন, ইউজিসি’র চেয়ারম্যান যেসব সমস্যার বিষয় সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এগুলো সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে দূর করতে হবে। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নামের জন্য সমগ্র বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া উচিৎ নয়। সব সেক্টরেই কম-বেশি এই অবস্থা রয়েছে। প্রশাসনে সবাই দুর্নীতিপরায়ন নয়। নিম্ন আদালতে যে দু-চারজন দুর্নীতি করেন তাদের কারণে পুরো বিচার ব্যবস্থাকে দুর্নীতিপরায়ন হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি বলেন, এই ধরনের ঢালাও সমালোচনা করে মূলত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি করা হচ্ছে।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এজন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে এবং এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও জোরদার করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে দুর্বলতা রয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা দূর করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং এসবক্ষেত্রে কোন আপোষ করা যাবে না। তিনি আশা করেন, এসব বিষয়ে ইউজিসি কোন আপোষ করবে না এবং মন্ত্রীরাও যদি অসংগত অনুরোধ করেন তবে তা এড়িয়ে যেতে হবে। তাহলে দেখা যাবে যে, ইউজিসি অনেক কিছু করতে সমর্থ হচ্ছে। যেমন ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজে মন্ত্রীর ফোনেও কোন লাভ নেই। কারণ তারা ভর্তির ব্যাপারে কোন আপোষ করেন না। এ রকম আরও কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটির অভিজ্ঞতা আরও অনেক দিন থাকবে। এ কথা ঠিক যে, আমাদের সামাজিক খাতে, রাজনৈতিক খাতে ও অর্থনৈতিক খাতে যে অবদান তা পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকেই এসেছে এবং এই প্রক্রিয়া নানা কারণে আরও অনেক দিন চলবে। তিনি বলেন, ড. ফেরদৌসী পাবলিক ইউনিভার্সিটি এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ‘ক্যাম্পাস পরিবেশ’ সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ‘ক্যাম্পাস পরিবেশ’ এখনও মোটামুটি বজায় রয়েছে এবং নানা কারণে পাবলিক ইউনিভার্সিটি দেশের সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, মেধার অবশ্যই দরকার, মেধার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু সমাজে মেধাবীদের সংখ্যা কত? যদি ধরা হয় ‘বি+’ পর্যন্ত, তবে এর সংখ্যা অনেক। কিন্তু আজকে ‘এ+’, বা ‘এ’ প্রাপ্তদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ হয় না। এমনকি ‘এ+’ প্রাপ্তরাও ভাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সুযোগ পায় না। সেটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি হোক বা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিই হোক। কারণ ভর্তিযোগ্য আসন সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু সেখানে এভারেজ স্টুডেন্টদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, মেধাবীদের খুব বেশি পরিচর্যা করতে হয় না। কোন শিক্ষকের আলাদা গাইডেন্স প্রয়োজন হয় না। যার মেধা আছে সে স্ফূলিংগের ন্যায় ফুটে উঠবেই, তা সে যেখানেই থাকুক না কেন। সে যদি খেলে তাহলে ভাল খেলবে, যদি কম্পিউটারে হাত দেয় তাহলেও ভাল করবে। কিন্তু মেধাবী ছাত্রদের ব্যর্থতাও অনেক। সামাজিক জীবনে এভারেজ স্টুডেন্টদের তুলনায় মেধাবীদের অবদান অনেক কম এবং সমগ্র বিশ্বেই এটা হয়ে আসছে। ‘এভারেজ ইজ সাপ্স টু গর্ভমেন্ট রুল দ্যা কান্ট্রি, রুল দ্যা গর্ভমেন্ট। ডেমোক্রেসী মানেই হচ্ছে রুল অব এভারেজ। নট রুল অব ব্রিলিয়ান্টস’। পৃথিবীর কোথাও এরূপ নেই। সুতরাং আদর্শ মেইনটেন করার জন্য মেধাবী ছাত্রদের অবশ্যই পরিচর্যা করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে এভারেজ স্টুডেন্টদের শিক্ষা দেয়ার জন্য। অর্থাৎ জাতীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই এভারেজ স্টুডেন্টদের শিক্ষা দিতে হবে। কারণ যাদেরকে গিফটেট চিলড্রেন বলা হয় তাদেরকে কিছু না করলেও চলবে। কিন্তু ‘এ-’ কিংবা ‘বি+’ এদেরকে যদি গুণগত শিক্ষা দেয়া যায়, তাহলে তারা মেধাবীদের চেয়ে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো পাবলিক ইউনিভার্সিটির অতীত প্রেক্ষাপট থেকে শিক্ষা নিয়ে উন্নত ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারী ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। আইন করে এটা কার্যকর করতে হবে। ইউনিভার্সিটি শিক্ষকদের দলাদলি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের বিভিন্ন নির্বাচন এবং ভাইস-চ্যান্সেলর নিয়োগে দলীয় মনোবৃত্তি দূর করতে হবে। নতুন ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রে পাবলিক ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইউজিসি’র অনুমোদন নিয়ে চাহিদাভিত্তিক নতুন নতুন কোর্স চালু করতে হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সেশনজট যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। গুণগত শিক্ষা দিতে হবে, ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। জাতীয় পর্যায়ে, সামাজিকভাবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের অবদান কতটুকু সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ক্যাম্পাস পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, প্রকাশনা থাকতে হবে, লাইব্রেরী সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। ইউনিভার্সিটি প্রশাসনে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তা এবং নির্বাহীদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। এক্ষেত্রে যারা ভাইস-চ্যান্সেলর হতে চান তাদের উচিৎ উদ্যোক্তাদের সাথে পূর্বেই আলাপ-আলোচনা করে জেনে নেয়া। উদ্যোক্তাদের সাথে ভাইস-চ্যান্সেলরদের খাপখাবে কিনা, এটা নিশ্চিত হওয়া খুব প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদেরও দেখতে হবে, যাকে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন তিনি তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা। আর তাকে নিয়োগ দেয়া হলে অবশ্যই স্বাধীনতা দিতে হবে। যদি ভাইস-চ্যান্সেলরকে স্বাধীনতা না দেয়া হয় তবে এই সম্পর্ক কোন দিন সুস্থ অবস্থায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে না। সুতরাং উভয়েরই উচিৎ উভয়কে ভালভাবে জেনে নেয়া। তিনি বলেন, ভাইস-চ্যান্সেলরকে লিডারশীপ দিতে হবে। উদ্যোক্তারা শুধু পলিসি তৈরিতে সম্পৃক্ত থাকবেন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে উদ্যোক্তাদের হস্তক্ষেপ করার দরকার নেই। কারণ এটা কর্পোরেট কালচারের অংশ। সুতরাং উদ্যোক্তারা যত কম হস্তক্ষেপ করবেন, ইউনিভার্সিটি তত ভাল চলবে।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে যেসব ইউনিভার্সিটি ভাল সেগুলো রেখে খারাপগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ দু-চারটি ইউনিভার্সিটির জন্য পুরো সেক্টরের বদনাম হওয়া উচিৎ নয়। যারা টপ পজিশনে আছে তারা নিজেদের মধ্যে কোড অব কনডাক্ট তৈরি করতে পারে যে, তারা এই এই নিয়মগুলো অনুসরণ করবে। উদ্যোক্তারাও নিজেদের মধ্যে কোড অব কনডাক্ট করতে পারেন এবং সেখানে অন্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। সুতরাং সঠিকভাবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পরিচালনার জন্য উদ্যোক্তা এবং নির্বাহীদের মধ্যে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারক ও নির্বাহীদের আন্তঃসম্পর্ক
শীর্ষক সেমিনারের সুপারিশসমূহ

১। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা এবং ভাইস-চ্যান্সেলরগণের উচিৎ, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে নিজেদের কাজের পরিধি, দায়িত্ব ও কর্তব্য স্থির করা;
২। ইউনিভার্সিটি পরিচালনায় উদ্যোক্তা ও নির্বাহীগণকে নিজ নিজ অবস্থান, ক্ষমতা ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে;
৩। ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী কমিটিতে ফাউন্ডারদের অংশগ্রহণ থাকতে পারে। তবে নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের হস্তক্ষেপ বাঞ্ছনীয় নয়। নির্বাহী বিষয়ে বা দৈনন্দিন কার্যক্রমে উদ্যোক্তাগণের হস্তক্ষেপ যত কম হবে, ইউনিভার্সিটি তত ভাল চলবে;
৪। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ এবং উপাচার্যদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের ভারসাম্যতা রক্ষার লক্ষ্যে নির্বাহীদের নিকট পর্যাপ্ত স্বায়ত্তশাসন থাকা উচিৎ;
৫। ভাইস-চ্যান্সেলরগণের সাথে উদ্যোক্তাদের আচরণ কোনক্রমেই কর্মচারীসুলভ হবে না;
৬। ভাইস-চ্যান্সেলরদের উচিৎ উদ্যোক্তাদের জানিয়ে নতুন প্রোগ্রাম চালু করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভাইস-চ্যান্সেলরগণ যেসব উদ্যোগ নিবেন, উদ্যোক্তাদের উচিৎ সেগুলোর গুরুত্বানুসারে বাস্তবায়নের অনুমতি দেয়া ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা;
৭। ইউনিভার্সিটি প্রশাসনে দক্ষতা বাড়াতে এবং দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উদ্যোক্তা ও নির্বাহীদের কাজের মধ্যে সুসমন্বয় থাকতে হবে। ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম ও কোয়ালিটি ভাল হলে উদ্যোক্তা ও ভাইস-চ্যান্সেলরের মধ্যে সম্পর্ক ভাল থাকবে;
৮। কোন্ কোন্ ইউনিভার্সিটিতে উদ্যোক্তা ও নির্বাহীর মধ্যে কিরূপ দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা চিহ্নিত করা এবং এসব অন্তর্দ্বন্দ্বের সমাধানের উপায় খুজে বের করার লক্ষ্যে ইউজিসি’র উদ্যোগ নেয়া উচিৎ ; এক্ষেত্রে ইউজিসি’র জনবলের সমস্যা থাকলে অথবা বর্তমানে কাজের চাপ বেশি থাকলে নিরপেক্ষ কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে গবেষণাকর্ম পরিচালনার মাধ্যমে উক্ত অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকারের জন্য ইউজিসি সুপারিশমালা তৈরি করাতে পারে। প্রয়োজনে এ সেমিনারের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকেও এ দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে;
৯। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অর্থ কমিটি ও ক্রয় কমিটির কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে, যাতে উদ্যোক্তাগণ আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন এবং নির্বাহীদের উপর আস্থাশীল হতে পারেন;
১০। নিজেদের মধ্যে কোড অব কনডাক্ট তৈরি করে উদ্যোক্তা ও নির্বাহীগণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করতে পারেন;
১১। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সিন্ডিকেটের ভূমিকা ও কৌশল সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন, যাতে উদ্যোক্তা ও নির্বাহীগণের আন্তঃসম্পর্কে ভারসাম্য বজায় থাকে;
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক নিম্নোক্ত প্রাসঙ্গিক সুপারিশও উক্ত সেমিনারে পেশ করা হয়-
১২। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের লক্ষ্য ও ভূমিকা হওয়া উচিৎ সামাজিক মূলধন সৃষ্টি। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি অথবা নিজ আর্থিক স্বার্থ সংরক্ষণের কোন সুযোগ রাখা বাঞ্ছনীয় নয়;
১৩। ছাত্র-বেতন ছাড়াই প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক মূলধন থাকতে হবে;
১৪। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা-বিজ্ঞানসহ যেকোন বিভাগ বা বিষয় খোলার অনুমতি দানের ক্ষমতা অবশ্যই ইউজিসি’র হাতে থাকা উচিৎ;
১৫। ছাত্র-ভর্তির ক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিল ও সিলেকশন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হওয়া উচিৎ;
১৬। এভারেজ স্টুডেন্টদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে উদ্যোগী হতে হবে। তাছাড়া বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসচ্ছল ও মধ্যবিত্ত সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ অবশ্যই থাকতে হবে;
১৭। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ক্যাম্পাস পরিবেশ’ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা সহায়ক এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চায় সহায়ক কার্যক্রম ও পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া গবেষণা কর্মকান্ড, নৈতিক শিক্ষা ও ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্কের সুযোগ থাকাও অত্যাবশ্যক;
১৮। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকতে হবে;
১৯। একই বাজার অর্থনীতির আওতায় সমাজের অন্যান্য পেশার সাথে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য থাকা উচিৎ নয়;
২০। ঢাকার বাইরে বা মফস্বলে স্থাপিত ইউনিভার্সিটিসমূহকে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা করা উচিৎ;
২১। পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের ন্যায় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদেরও স্কলারশীপ ও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন;
২২। গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নামের জন্য সমগ্র বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পারস্পরিক মানের উপর প্রতি ৫ বছরে গ্রেডিং নির্ধারণ করা যেতে পারে;
২৩। ইউজিসি ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে অধিকতর গতিশীলতা আনয়ন সম্ভব। এলক্ষ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও নির্বাহীদের সাথে ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের খোলামেলা আলোচনা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠান বা সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে।