বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আয়োজিত সেমিনার

সেমিনার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি’র পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি

গত ১৩ আগস্ট ২০০৭ ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি-এর পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনার। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আয়োজিত এ সেমিনারে মুখ্য বক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম, মডারেটর ছিলেন ক্যাম্পাস’র সম্পাদক এম হেলাল।
বিশেষ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন ইউএসটিসি’র প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ও জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম, বুয়েট’র সাবেক ভিসি ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল মতিন পাটওয়ারী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. বজলুল মোবিন চৌধুরী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়’র ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভিসি প্রফেসর ড. এম শমশের আলী, ইউজিসি’র সাবেক সদস্য ও দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর মনিরুল হক, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’র ভিসি প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম শামসুল হক, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর আমিনুল ইসলাম , ইউআইটিএস-এর ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ এ আজিজ, গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলী ও রেজিস্ট্রার সৈয়দ শহিদুল বারী, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. কোরবান আলী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এম আর কবির ও রেজিস্ট্রার এয়ার কমোডর ইসফাক এলাহী চৌধুরী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. নুরুল মোমেন, দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ভিসি প্রফেসর বি এম চৌধুরী, উত্তরা ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. এম আজিজুর রহমান, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. মোস্তফা এম কামাল, দারুল ইহসান ট্রাস্টের সচিব ইশারফ হোসেন ও ট্রেজারার এম এ রশিদ খান, ইউজিসি’র পরিচালক (বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ) মোঃ খালেদ, সহকারী পরিচালক ফকরুল ইসলাম ও জেসমিন পারভীন, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী মফিজুর রহমান, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আবুল বাশার খান, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি’র রেজিস্ট্রার জাফরুল করিম, প্রাইম ইউনিভার্সিটির ডীন প্রফেসর ড. এম এ জলিল, ইউআইটিএস’র সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার এফ এম এ সালাম, ইউএসটিসি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আহমেদ ইফতেখারুল ইসলাম, টিএমইউ’র রেজিস্ট্রার প্রফেসর মাহবুব উল্যাহ ও লেকচারার শরিফুল আনোয়ার প্রমুখ।
সেমিনারে সাংবাদিকদের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। অন্যান্যের মধ্যে দৈনিক জনকণ্ঠ’র স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাক আহমেদ, দৈনিক সমকাল’র স্টাফ রিপোর্টার সাব্বির নেওয়াজ, যায়যায় দিন’র স্টাফ রিপোর্টার হাবিবুর রহমান, দৈনিক দেশবাংলার স্টাফ রিপোর্টার এম এ মান্নান, আমার দেশ’র স্টাফ রিপোর্টার দিলরুবা সুমি, নয়া দিগন্ত’র স্টাফ রিপোর্টার মইনউদ্দিন খান, দৈনিক ভোরের ডাক’র স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ শামীম, দৈনিক ডেসটিনি’র স্টাফ রিপোর্টার উৎপল দাস, দৈনিক সংবাদ’র স্টাফ রিপোর্টার সোহাগ, দি নিউ নেশন’র স্টাফ রিপোর্টার তানিয়াতুন্নেসা, দৈনিক সংগ্রাম’র স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল আজিজ ফারুকী, দৈনিক আমাদের সময়’র স্টাফ রিপোর্টার সালাম ফারুকী, দৈনিক ভোরের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার বিভাস বারই, ডেইলী স্টার’র স্টাফ রিপোর্টার সুরঞ্জিৎ দেবনাথ, দৈনিক সংবাদ’র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ সাংবাদিকগণ উপস্থিত থেকে ইউজিসি’র চেয়ারম্যান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি ও ভাইস-চ্যান্সেলরদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এ সেমিনার আয়োজনে আর্থিক সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, মডার্ণ হারবাল গ্র“প, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিঃ।
বিভিন্ন বক্তা সময়োপযোগী এ সেমিনার আয়োজন করায় ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস’ কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। আলোচনার সূচনায় মডারেটর জনাব এম হেলাল আশা প্রকাশ করেন যে, এই সেমিনারের মাধ্যমে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি’র পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন সমাধান বেরিয়ে আসবে। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বক্তাগণ সেমিনার সম্পর্কিত বিষয় ছাড়াও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন। বক্তার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী তাদের বক্তব্য সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপিত হলো।

প্রফেসর মনিরুল হকঃ
দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর মনিরুল হক বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস বা কোর্স অনুমোদনের জন্য ইউজিসি কর্তৃক নির্ধারিত সময় দেয়া থাকলেও এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। এ বিষয়ে ইউজিসিকে আরো যতœশীল হওয়ার এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে অনুমোদন দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি ‘ল’ বিভাগের সিলেবাস অনুমোদনের জন্য ইউজিসি’র কাছে ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল আবেদন করে ২০০৭ সালের ২০ জুলাই অনুমোদন লাভ করে। অর্থাৎ একটি বিষয়ে ইউজিসি’র অনুমোদন পেতে ২ বছর সময় লেগেছে। এক্ষেত্রে এক্সপার্টের অভাবেও অনেক সময় বিলম্ব হয়। সুতরাং এক্সপার্টদের জন্য যাতে বিলম্ব না হয় সে লক্ষ্যে ইউজিসি’র একটি এক্সপার্ট প্যানেল থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় মনিটরিং করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সিলেবাস অনুমোদনের জন্য ২ বছর বা আড়াই বছর অপেক্ষার কারণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য ইউজিসি’র বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সেলের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

প্রফেসর ডাঃ নুরুল ইসলামঃ
ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম’র প্রতিষ্ঠাতা ভাইস-চ্যান্সেলর ও জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসের অনুমোদন প্রদানে ইউজিসিকে একটি এক্সপার্ট প্যানেল তৈরি করতে হবে এবং এক্সপার্টদের সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি মনে করেন ইউজিসি এক্সপার্টদের একটি গাইড লাইন দিবে, তাঁরা সে অনুযায়ী কাজ করবেন। প্রফেসর নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যায়নের পদ্ধতি হতে হবে সহজতর এবং দেশের স্বার্থেই ইউজিসি ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে কাজ করতে হবে।

প্রফেসর ড. বজলুল মোবিন চৌধুরীঃ
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. বজলুল মোবিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯২ সালে যখন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয় তখন তা করা হয়েছিল সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে সামনে রেখে। বিশ্বজুড়ে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিভাবে পরিচালিত হয় সেই আইন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণেতাদের সামনে ছিল না। এটি এ আইনের প্রথম দুর্বলতা বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এ আইন প্রণয়নে যারা বিদেশী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন বা যাদের অভিজ্ঞতা আছে তাদের একজনেরও মতামত নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে যখন এর সংশোধন করা হয় তখনও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কারো কোন মতামত নেয়া হয়নি। এছাড়া বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যে এ্যাক্ট রয়েছে সেই এ্যাক্টকে রেগুলারাইজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কখনও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাথে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়নি। তিনি বলেন, ইউজিসিতে যখন সিলেবাস অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় তখন বলা হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৪/৫ জন শিক্ষকের নাম দেখাতে হবে। উল্লেখ্য যে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সরকারী কোষাগার থেকে আসে না এবং কোন বিষয় চালু করার আগে ৪/৫ জন শিক্ষককে কোন কাজ ছাড়াই নিয়োগ দিয়ে রাখারও যৌক্তিকতা নেই। কারণ শিক্ষকদের বেতন ছাত্রদের বেতন থেকেই দিতে হয়। এ অবস্থায় বিষয় না খুলে, ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি না করে বছরের পর বছর ঐ শিক্ষকদের বেতন দিয়ে যেতে হবে -এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি বলেন, সাবজেক্ট খোলার আগে ল্যাবরেটরী আছে কিনা ও ঐ সাবজেক্টে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে কিনা, এসব বিষয় বিবেচনা না করে সাবজেক্ট এক্সপার্টস কারা ছিলেন, কোর্সেস কমিটিতে কারা ছিলেন ও একাডেমিক কাউন্সিলে কারা ছিলেন -এসব দেখে ইউজিসি অনুমোদন দিতে পারে। এরপর গুণগতভাবে এটা কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল দেখবে। প্রফেসর মোবিন বলেন, ভবিষ্যতে যেহেতু এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হচ্ছে, সুতরাং এর আলোকে যদি ইউজিসি নীতি-নির্ধারণ তৈরি করে তাহলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কাজ করা সহজ হবে। বর্তমানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৬০ দিনেও ইউজিসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোন মতামত পায় না। চ্যান্সেলরের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ করা যায় না এবং অভিযোগ করলেও ৬০ দিনে অনুমোদন পাওয়া যায় না। কিন্তু সাবজেক্ট বা সিলেবাসের অনুমোদনে যদি ২ বছর অপেক্ষা করতে হয় তবে আর যা-ই হোক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

প্রফেসর নজরুল ইসলামঃ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম তাঁর সূচনা বক্তব্যে এ সেমিনারের বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এ সেমিনারের মাধ্যমে ইউজিসি’র নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সমস্যা শোনা ও জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের একটি আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, মাত্র ১৫ বছর পূর্বে বাংলাদেশে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে, ইতোমধ্যে এক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এ পর্যায়ে অনেক কিছু ভাল হবে আবার কিছু কিছু ভাল নাও হতে পারে -এটাই স্বাভাবিক। তিনি আশা করেন, নানা রকমের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, ঘাত-প্রতিঘাত ও দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু, সুন্দর উচ্চ শিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা কার্যক্রম লাভ করা সম্ভব হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভূমিকা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ভূমিকা হবে পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ, অর্থাৎ একটি আরেকটির পরিপূরক হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, আমাদের দেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় ৮৬ বছর ধরে চলে আসছে এবং ক্রমান্বয়ে সেই ধারাটি আরো অগ্রসর হবে, সাথে সাথে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ধারার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষাঙ্গনের আরো উন্নতি হবে এবং সমাজ আরো এগিয়ে যাবে।

প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরীঃ
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলরদের অনেকেই সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন এবং ইউজিসি’র চেয়ারম্যান মহোদয়ও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুমোদনের জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না। এমনকি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুমোদনের জন্য বাইরের কোন এক্সপার্টের কাছেও দিতে হয় না এবং এজন্য কোন ফিও জমা দিতে হয় না। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এসব প্রক্রিয়া উঠিয়ে দিয়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে সিলেবাস অনুমোদনের সুযোগ দিতে হবে। প্রফেসর মান্নান চৌধুরী বলেন, এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হলে এই কাউন্সিলই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারবে।
তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ইউজিসি’র সম্পর্ক চুক্তিভিত্তিক, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা কোন আইনগত চুক্তি নয়। কারণ ইউজিসি’র আইনের মধ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কোন কথাবার্তাই নেই। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করার জন্য ইউজিসিকে সেফটি বাল্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ইউজিসি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয় এবং সেই অর্থের হিসাব নেয়। প্রফেসর মান্নান চৌধুরী বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি অর্থ দেয় সেসব ইউনিভার্সিটি কিন্তু ইউজিসিতে সিলেবাস অনুমোদনের জন্য পাঠায় না এবং অনুমোদনের জন্য অর্থ প্রদানের কথাও নয়। অন্যদিকে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুমোদনের জন্য যেহেতু ইউজিসিকে অর্থ নিতে হয় সেহেতু লক্ষ্য রাখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন বিক্ষুব্ধ না হন এবং বিষয়টি বন্ধুসুলভ হয়। তিনি বলেন, ইউজিসিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিনিধিত্ব নেই। ইউজিসিতে যে ৫ জন সম্মানীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন তাদের সবাই সরকারী কিংবা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন। আরো যে ৯ জন খন্ডকালীন সদস্য রয়েছেন তাঁরাও এসেছেন সরকারী কিংবা স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইউজিসিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রতিনিধিত্ব না থাকা সত্ত্বেও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি’র সকল কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনে থাকে। কিন্তু ইউজিসিতে যদি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকে তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ উপস্থাপনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব। প্রফেসর চৌধুরী বলেন, ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর খুব বেশি কড়াকড়ি আরোপ করলে চলমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সরকারকে অনেক কিছু দিয়ে থাকে। সুতরাং সরকার ও ইউজিসি’র কাছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত যত আইনই হোক সেগুলো যেন আন্তরিকতাপূর্ণ হয়।

এয়ার কমোডর ইসফাক এলাহী চৌধুরীঃ
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র রেজিস্ট্রার এয়ার কমোডর ইসফাক এলাহী চৌধুরী বলেন, পাবলিক এবং প্রাইভেট সকল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমেই স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ ইউজিসি’র কাছ থেকে কি ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা বলা এবং ইউজিসি’র উচিত কিভাবে সহযোগিতা করতে পারবে তা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকতে হবে এবং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইনকানুন মেনে চলতে হবে। এয়ার কমোডর ইসফাক চৌধুরী বলেন, গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আপোষ করার অভিযোগ রয়েছে। গুটিকয়েক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে লাভবান হতে চায়। এ ধরনের চিন্তা- চেতনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগতমানের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। সুতরাং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ ইউজিসি’র নীতিমালা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশ রয়েছে কোনভাবেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা যাবে না। অন্যদিকে সরকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে ইনকাম ট্যাক্স দিতে বলছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যাক্স দেয়ার বিধান চালু করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া ইউজিসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন প্রকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে না। এয়ার কমোডর ইসফাক চৌধুরী বলেন, ঢাকা শহরে এক সাথে ৩ একর বা ২ একর জমি পাওয়াও খুব দুষ্কর। এজন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সহসা নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদেরও ইউজিসি’র স্কলারশীপ দেয়া উচিৎ।

প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলীঃ
গ্রীন ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম ইউসুফ আলী বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি’র মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্বন্দ্ব হচ্ছে সিলেবাস অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে। তিনি আশা করেন, ইউজিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান মহোদয় সিলেবাস অনুমোদন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য একটি সেল গঠন করবেন।

প্রফেসর ড. এম এ আজিজঃ
ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সাইন্সেস’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর এম এ আজিজ বলেন, সময়ের দাবি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ইউনিভার্সিটি লেভেলের এডুকেশন দেয়া। তাদেরকে যুগোপযোগী শিক্ষা দিতে না পারলে বিত্তবানদের সন্তানরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য অন্যদেশে চলে যাবে। শিক্ষার্থীরা সবসময় চায় কিছু শিখতে। এজন্য দেশে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিদেশে শিক্ষকতা ও চাকরির সুবাদে তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অন্যদেশের ছেলেমেয়েদের চেয়ে কম মেধাবী নয়। এদেরকে সুযোগ ও সময় দিলে তারা জ্ঞান আহরণ করতে পারবে। এসব কিছু বিবেচনা করতে হবে জাতীয় স্বার্থে। তিনি প্রশ্ন করেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটির সিলেবাসের জন্য যদি কোন জটিলতায় ভুগতে না হয় তবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিলেবাস অনুমোদনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হবে কেন। প্রফেসর আজিজ বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও উচ্চ শিক্ষিত। সুতরাং প্রয়োজনে তাঁরাও সিলেবাস অনুমোদনের কাজে ইউজিসিকে সহযোগিতা করতে পারে। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গুণগত মানও খারাপ নয়। তারাও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ। তিনি মত প্রকাশ করেন, যে দেশে ভাল কাজের প্রশংসা হয় না এবং খারাপ কাজের জন্য শাস্তি দেয়া হয় না সেদেশে কোন সুস্থ সমাজ গড়ে ওঠতে পারে না। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই তাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অথচ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় দেশে উচ্চ শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য কাজ করে আসছে। তিনি বলেন, এদেশের ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষা নিতে চায়, কিন্তু তাদের উচ্চ শিক্ষা দিতে না পারা সমাজের ব্যর্থতা, দেশের ব্যর্থতা। সুতরাং সকলের উচিৎ বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের বিশ্বমানের শিক্ষা দেয়া। তা না হলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো।

প্রফেসর ড. কোরবান আলীঃ
বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কোরবান আলী বলেন, ইউজিসি’র চেয়ারম্যান মহোদয় ইতঃপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সাক্ষাৎকারে বলেছেন একটি ইউনিফরম সিলেবাস তৈরি করবেন। এটি একটি ভাল উপায় এবং এই সিলেবাস স্বল্প সময়ের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হলে ভাল হয়। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ইমপ্র“ভ করতে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে তা পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে ইউজিসি’র অনুমোদন নেয়ার বিধান থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সিলেবাস অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতার অবসান হবে।

প্রফেসর ড. এম আর কবিরঃ
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. এম আর কবির বলেন, ইউজিসি’র দীর্ঘসূত্রতার কারণে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৩/৪ বছর পর সিলেবাসের অনুমোদন পেতে হচ্ছে। ফলে এই দীর্ঘ সময় পর অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ আর থাকেন না। কিন্তু ইউজিসি’র একটি নিয়ম আছে কোনভাবেই ঐ শিক্ষক পরিবর্তন করা যাবে না এবং একান্তই পরিবর্তন করতে হলে ইউজিসিকে জানাতে হবে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া থেকেই প্রতীয়মান হয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
প্রফেসর কবির বলেন, দেশে বর্তমানে ২৬টি সরকারী ও ৫২টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখভালের জন্য ইউজিসিতে পর্যাপ্ত জনবল দেখা যাচ্ছে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউজিসিতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মহোদয় উদ্যোগ নিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যেন ক্লারিক্যাল লোকজনের প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন না হতে হয়। তাছাড়া দীর্ঘ সময় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণকে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধরে রাখবেন সে বিষয়ে কোন দিক-নির্দেশনা ইউজিসি দিচ্ছে না। তিনি বলেন, সময়ক্ষেপনের পথ পরিহারে ইউজিসি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। কোর্সেস ও কারিকুলাম কমিটিতে ইউজিসি’র প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। এর ফলে তাঁরা জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে কি আছে। সেভাবে অনুমোদন দিলে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, তাঁর জানা মতে কোন পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিলেবাস অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠায় না। সুতরাং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি এ ধরনের বিমাতাসুলভ আচরণ করা উচিৎ নয়। এক্ষেত্রে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কেন এই বৈরী আচরণ তা বোধগম্য নয়। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন সময় ও সুযোগ দিলে এ অবস্থা অতিক্রম করা যাবে।

প্রফেসর চৌধুরী মফিজুর রহমানঃ
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র প্রো-ভিসি প্রফেসর চৌধুরী মফিজুর রহমান বলেন, পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য ইতঃপূর্বে অভিন্ন ক্রেডিট পলিসির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এটা কোন স্ট্যান্ডার্ড স্ট্যাটাস অনুসরণ করে না। তিনি মনে করেন, এ বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কারণ এ অবস্থায় ট্রান্সক্রীপ্ট দেশের বাইরে পাঠালে সমস্যা হবে। এক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা উচিৎ।
প্রফেসর মফিজুর রহমান বলেন, আগামীতে যে এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হবে সেখানে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। এ বিষয়ে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ এসোসিয়েশন নির্ধারণ করতে পারে কতজন মনোনীত প্রার্থী প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর ফলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্বার্থরক্ষা হতে পারে। তিনি বলেন, ইতঃপূর্বে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির র্যাংকিং করা হয়েছিল অবকাঠামো দেখে। পরবর্তীতে দেখা গেছে অবকাঠামোর ভিত্তিতে র্যাংকিং করা ঠিক হয়নি। এছাড়া এসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজের উচিৎ নিজেদের কোড অব কনডাক্ট ঠিক করা, যার আলোকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, এটাও ঠিক যে, সব উদ্যোক্তারা সৎ উদ্দেশ্যে ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেননি। কিন্তু যাঁরা সৎ উদ্দেশ্যে ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তাঁরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। প্রফেসর মফিজুর রহমান বলেন, ইউজিসি যদি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিলকে সিলেবাস অনুমোদনের সুযোগ দেয় ও যথাযথভাবে মনিটরিং করে তবে এক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন হতে পারে।

প্রফেসর ড. লোকমান পাটওয়ারীঃ
ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম’র ঢাকা ক্যাম্পাসের প্রধান প্রফেসর ড. লোকমান পাটওয়ারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা আয়োজিত সেমিনারটি ইউজিসি কর্তৃক আয়োজিত হলে তিনি অধিকতর আনন্দিত হতেন। এর ফলে আলোচিত বিষয়সমূহ সম্পর্কে ইউজিসি’র সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হতো এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও সুখকর হতো। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে অবগত হয়েছেন যে, সরকার সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রফেসর লোকমান আশা প্রকাশ করেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস সরকারের অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং যারা অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে যথাযথভাবে আবেদন করেছেন সরকার তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে আউটার ক্যাম্পাস পরিচালনার সুযোগ দিবে।

প্রফেসর ড. এম এ জলিলঃ
প্রাইম ইউনিভার্সিটির কলা-সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. এম এ জলিল বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা পেতে হলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং যথার্থ শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে এসব শিক্ষকদের জন্য সরকার বা ইউজিসি স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদী স্কলারশীপের ব্যবস্থা করতে পারে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মান উন্নয়নে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ একটি শাখাও চালু করতে পাবে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে ডিগ্রি অর্জন করে আমাদের সমস্যা সমাধান করতে হবে এমন নয়। আমাদের দেশের সমস্যা আমাদেরকেই চিহ্নিত করতে হবে এবং গবেষণার মাধ্যমে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে।

মোহাম্মদ মবিনুল ইসলামঃ
নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’র ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও রাজশাহী ক্যাম্পাসের ইনচার্জ মোহাম্মদ মবিনুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রয়েছে। খুলনা ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে কোন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নেই। কিন্তু ঐ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদেরও উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে। নর্দান ইউনিভার্সিটি সরকারের অধ্যাদেশের সকল নিয়মকানুন মেনে রাজশাহীতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি বলেন, যেসব ইউনিভার্সিটি গুণগত মান নিশ্চিত করছে সেসব ইউনিভার্সিটিকে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া উচিৎ। তিনি আশা করেন, ইউজিসি’র মাধ্যমে দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন হবে, কিন্তু কোনভাবেই যেন দুষ্টের দমনের সাথে সাথে শিষ্টের দমন না হয়।

সৈয়দ শহিদুল বারীঃ
গ্রীন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার সৈয়দ শহিদুল বারী বলেন, প্রায়শঃই নতুন ছাত্র-ছাত্রীরা ইউনিভার্সিটিতে আসে বিভিন্ন সাবজেক্ট সম্পর্কে জানার জন্য এবং কিছু তথ্য নিয়ে চলে যায় ইউজিসিতে। এ অবস্থায় ইউজিসি থেকে যদি ছাত্র-ছাত্রীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথ্য না দেয় তবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের জন্য সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ইউজিসি থেকে অনেক সময় এমন কিছু আনুষঙ্গিক বিষয় চাওয়া হয় যা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন বলা হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিক অবস্থায় ৫ হাজার বই নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু নতুন ইউনিভার্সিটি হিসেবে ৫ হাজার বইয়ের ব্যাপারটি নিশ্চিত করা কতটা যুক্তিসঙ্গত এ বিষয়টি ইউজিসি কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করে দেখার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।

ইশারফ হোসেনঃ
দারুল ইহসান ট্রাস্টের সচিব ইশারফ হোসেন বলেন, ইউজিসি’র পক্ষ থেকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য সত্যিকারভাবে কাজ করার সুযোগ আছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। ইতঃপূর্বে ইউজিসি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল তা রক্ষা করা হয়নি। তিনি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিলেবাস অনুমোদনের বিষয়টি ইউজিসি’র কাছে না রেখে ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিলের কাছে ছেড়ে দেয়ার জন্য ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের কাছে সুপারিশ রাখেন। এক্ষেত্রে ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিলে ইউজিসি’র প্রতিনিধি থাকতে পারে। জনাব ইশারফ বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ ভাইস-চ্যান্সেলর আন্তরিক, সৎ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। সুতরাং সরকারের এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ হবে না যাতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে ইউজিসি মুখোমুখি দাঁড়ায়। তাছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে ও আন্তরিকতার সাথে যারা এদেশের শিক্ষা প্রসারে কাজ করছেন তাদের ওপর এমন কোন শর্ত বা বিধি আরোপ করা ঠিক নয় যাতে ইউজিসি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অভিভাবক বা বন্ধু না হয়ে একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও ভাইস-চ্যান্সেলরদের সাথে ইউজিসি’র চেয়ারম্যানকে একটি বিশেষ বৈঠক করার আহ্বান জানান।

ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীঃ
গণ বিশ্ববিদ্যালয়’র ট্রাস্টি ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইউজিসি মঞ্জুরী দিবে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে আর খবরদারি করবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর, তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, খবরদারি করলেও সময়মতো রিপোর্ট দিতে হবে। তিনি বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সগুলো ইউজিসি দেখবে এতে কোন আপত্তি নেই। তবে বৈমাত্রেয় মনোভাব কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। তিনি বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটি কোন কিছুর অনুমোদনের জন্য ইউজিসি’র কাছে যাবে না, অন্যদিকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি দুই মাসেও কোন চিঠির উত্তর পাবে না, সেটা কাম্য নয়। ডাঃ জাফরুল্লাহ প্রস্তাব রাখেন, যখনই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি কোন ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রি কোর্স নিয়ে ইউজিসিতে যাবে তখন প্রথম বৈঠকেই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণ করে বলে দিবেন কোথায় কোন সমস্যা আছে, কোন্টি পূরণ করে আনতে হবে। তা না হলে পরবর্তী দিন থেকে দুই মাসের গণনা শুরু হয়ে যাবে। দুই মাস পর ধরে নেয়া হবে এটার অনুমোদন হয়ে গেছে এবং এ নিয়ে কোন আপত্তি করা চলবে না। তখন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ অনুমোদনের চিঠি চার মাস পর দেন বা ৬ মাস পরই দেন কোন আপত্তি নেই। তিনি মনে করেন, এটা হলে ইউজিসি’র সাথে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সহযোগিতা অনেক ভাল হবে।
ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্সের বিষয়ে ইউজিসি’র চিন্তাভাবনা বা নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ নয়। তিনি মনে করেন ইউজিসি’র এত লোকবলও নেই। তিনি বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয় চায় কর্মদক্ষ লোকদের দেশ-বিদেশে পাঠাতে, এদেশের নবীনদেরকে সারা পৃথিবীর দ্বার খুলে দিতে। তিনি বলেন, যদি কারো একটি সার্টিফিকেট থাকে তবে সেই ব্যক্তি ইউরোপ, আমেরিকাসহ সকল দেশেই কাজ-কর্মে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সার্টিফিকেট তার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। সুতরাং তিনি মনে করেন, ইউজিসি এ বিষয়ে উদার মনোভাব পোষণ করবে। তিনি বলেন, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মান দেখা ও জবাবদিহিতায় ইউজিসি’র দায়িত্ব রয়েছে। কোন ইউনিভার্সিটি যেন সার্টিফিকেট বিক্রি না করে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ডাঃ জাফরুল্লাহ বলেন, কোন্ কোন্ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সার্টিফিকেট বিক্রি করেছে তা তাঁর জানা নেই। তবে পাবলিক ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। কারণ ৫২ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম শ্রেণী দিয়ে দেয়াও এক ধরনের সার্টিফিকেট বিক্রি বটে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউজিসি কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, পাবলিক ইউনিভার্সিটির সহযোগিতা ছাড়া প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অগ্রগতি সম্ভব নয়। তাই বলে পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকগণ ৪/৫টি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিবেন আর নিজ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন কিংবা সপ্তাহে একটা-দুটো ক্লাস পাচ্ছেন না বলে অজুহাত দেখাবেন -এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এর ফলে কারোই উন্নতি হবে না। পাবলিক ইউনিভার্সিটির অবনতি হবে এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অগ্রগতিও ব্যাহত হবে। এজন্য ইউজিসি একটি নিয়ম করতে পারে যে, পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকগণ সর্বোচ্চ দু’টি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিতে পারবেন। এছাড়া যে শিক্ষক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিবেন সেই শিক্ষক ঐ ইউনিভার্সিটিতে এক্সটারনাল হতে পারবেন না।
ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সাবজেক্ট খোলার বিষয়ে ইউজিসি একে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার বলে মত প্রকাশ করে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কোন ইউনিভার্সিটি যদি এগ্রিকালচার পড়াতে চায় তাহলে কি সেই ইউনিভার্সিটি ইউজিসিতে যাবে না; মহিলা বিষয়ক সাবজেক্ট পড়ালে কি অনুমোদনের জন্য মহিলা মন্ত্রণালয়ে যেতে হবে? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনেকগুলো বিষয়কে নিজেদের অধীনে রেখে দিয়েছে। কারণ এর সাথে আর্থিক লেনদেন জড়িত রয়েছে। একটি মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন নিতে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা দিতে হয়। অথচ ফার্মেসী বা মাইক্রোবায়োলজির অনুমোদনের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাথা ঘামায় না। তিনি বলেন, এটা কোনভাবে হতে পারে না এবং হওয়া উচিতও নয়। মাস্টার্স অব পাবলিক হেল্থের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দেয়া উচিৎ সারা বিশ্ব যেভাবে চলে আমাদেরকেও সেভাবে চলতে হবে। আজকে যেহেতু ডব্লিউটিও এর যুগ সেহেতু ইউজিসি-ই এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষার বিশেষ মান দেখার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিএমডিসি রয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কোন প্রয়োজন নেই। আর মন্ত্রণালয় মানেই হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাছাড়া নতুন বিষয় খোলার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে হলে ইউজিসি’র প্রয়োজনীয়তা থাকে না। তিনি বলেন, ইউজিসি’র কাছে অবশ্যই প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জবাবদিহিতা থাকবে। কিন্তু ইউজিসি যদি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির হাত-পা বেঁধে দিয়ে সাঁতার কাটতে বলে সেটা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। ইউজিসি’র জন্য নয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্যও নয় এবং দেশের জন্যতো নয়ই। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ছাড়া কোন উন্নয়ন সম্ভব নয়। পাবলিক ইউনিভার্সিটির ছাপানো জিনিস প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অনুসরণ করলে সেটা দেশের জন্য মঙ্গল হবে না। কিছুটা ভিন্নতার অবকাশ থাকতে হবে, বিকল্প চিন্তা-ভাবনাও থাকতে হবে। সুতরাং আধুনিক শিক্ষার প্রসারে অনেকটা স্বাধীনতা দিতে হবে। তিনি বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধ, নারী উন্নয়ন, বাংলা এবং ইংরেজীও পড়ানো হয়। তিনি মনে করেন, অন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিরও এসব বিষয় পড়ানোর ইচ্ছে আছে। তিনি বলেন, ইউজিসি’র সহযোগিতা পেলে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন হবে। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এমন কিছু করা উচিৎ হবে না যার জন্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসমূহ পিছিয়ে পড়ে।

প্রফেসর ড. এম শমশের আলীঃ
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম শমশের আলী বলেন, এটা দুঃখজনক যে, গত ৫ বছরে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা ও ভাইস-চ্যান্সেলরদের সাথে ইউজিসি অন্তত একবারও বৈঠক করেনি। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যকে অনুসরণ করে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইউজিসি গঠন করা হয়েছিল। আজ ইংল্যান্ডে ইউজিসি’র সেই স্ট্রাকচার নেই, পাকিস্তানেও ইউজিসি নেই, সেখানে হায়ার এডুকেশন কমিশন হয়েছে। তিনি আশা করেন, ইউজিসি অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকায় নামবে, দেশে হায়ার এডুকেশন কমিশন হবে এবং অন্য দেশের মতো এর চেয়ারম্যানকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা দেয়া হবে। তিনি আশা করেন কমিশনকে সবাই মিলে সাহায্য করবে এবং একটি টিম হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমেরিকাতে হাজার হাজার বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয় হাতেগোনা মাত্র ১০/১২টি। কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হয়। প্রফেসর শমশের আলী বলেন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ জার্নাল করা হয়েছে, কিন্তু পিএইচডি প্রোগ্রাম করা যায়নি। পিএইচডি প্রোগ্রাম করা ছাড়া দেশের বা আন্তর্জাতিক কোন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমেরিকাতে পিএইচডি প্রোগ্রামের উপর ভর করেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয় এবং নতুন নতুন আবিষ্কার হয়। তিনি আশা করেন, ইউজিসি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোকে পিএইচডি প্রোগ্রাম করার সুযোগ দিবে, এতে আইনের দিক দিয়ে কোন বাধা নেই এবং মনস্তাত্বিক দিক দিয়েও কোন বাধা থাকার কথা নয়। কোন সমস্যা হলে ইউজিসি সংশ্লিষ্ট প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ভুলের ব্যাপারে অবগত করে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দিতে পারে।
প্রফেসর শমশের আলী আশা করেন, ইউজিসি পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য একটি এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করে দিবে। তিনি বলেন, বিশ্বের সকল দেশে প্রাইভেট ও পাবলিক ইউনিভার্সিটির জন্য একটিই এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল থাকে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় প্রাইভেট ও পাবলিক ইউনিভার্সিটিসমূহের কোন্টি এগিয়ে যাচ্ছে এবং কোন্টি পিছিয়ে পড়ছে। তিনি আশা করেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সমস্যাগুলো ইউজিসি’র বর্তমান চেয়ারম্যান সমাধান করে দিবেন। প্রফেসর ড. শমশের আলী ইউজিসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

প্রফেসর ড. আবদুল মতিন পাটওয়ারীঃ
বুয়েট’র সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক’র বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আবদুল মতিন পাটওয়ারী মত প্রকাশ করেন যে, ইউজিসি যে উদ্দেশ্যে হয়েছিল সে উদ্দেশ্য থেকে এখন অনেক দূরে সরে গেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইউজিসি’র কি কাঠামো হওয়া উচিৎ তা পুনরায় নির্ধারণ হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, ইউজিসি’র কাছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অনেক কিছু চাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সময়মতো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে ইউজিসি’র রিপোর্ট দেয়া। কিন্তু রিপোর্ট দেয়ার মতো সেই কাঠামো ইউজিসি’র নেই। তিনি বলেন, ইউজিসি যাদেরকে মঞ্জুরী দেয় তাঁরা ইউজিসি’র কথা মেনে চলেন না। প্রফেসর মতিন বলেন, ইউজিসি পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে কাজ করে, কিন্তু ইউজিসি’র এ নিয়ন্ত্রণ হতে হবে বন্ধু ভাবাপন্ন।
প্রফেসর মতিন আশা করেন, ইউজিসি’র নয়া চেয়ারম্যান প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির নিয়মকানুন সহজ করে দেবেন, ইউজিসি’র সাথে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির যাতে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি প্রস্তাব করেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইউজিসিতে প্রতিনিধিত্ব রাখার। প্রাথমিকভাবে ২/৩ জনকে খন্ডকালীন সদস্য হিসেবে হলেও অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। এর মাধ্যমে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সুবিধা-অসুবিধা ইউজিসিকে জানানো সহজ হবে। তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই ইউজিসি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রফেসর মতিন বলেন, সাবজেক্ট অনুমোদনে যে দীর্ঘ সময় লাগে এর সহজ সমাধানের লক্ষ্যে ইউজিসি জাতীয় পর্যায়ের এক্সপার্টদের নিয়ে একটি তালিকা করতে পারে। সাবজেক্ট অনুমোদনের সময় ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিলের ২/৩ জন সদস্যের উপস্থিতিতে এক্সপার্টগণ একটি সুপারিশমালা তৈরি করে প্রেরণ করেন তবে ৩০ দিনের মধ্যেই সমাধান সম্ভব।
প্রফেসর মতিন বলেন, পিএইচডি গবেষণা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থই হচ্ছে নতুন নতুন জ্ঞান আহরণ করা। তিনি বলেন, এদেশের সমস্যা নিয়ে বিদেশীরা চিন্তাভাবনা করবে এটা কখনও ভাবা যায় না। দেশের সমস্যা নিয়ে নিজেদেরই কাজ করতে হবে। এজন্য ইউনিভার্সিটিগুলোকে গবেষণার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে নিজস্ব ল্যাবরেটরী গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেখানে গবেষণা হচ্ছে। এসব গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোকে পিএইচডি গবেষণার সুযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের বিষয়ে ইউজিসিকে সহযোগিতা করতে হবে।
প্রফেসর মতিন বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের উপর ট্যাক্স বসানো ঠিক হয়নি। কারণ শিক্ষার্থীরা এদেশেরই নাগরিক এবং এদের পড়াশোনার দায়িত্ব সরকারেরই। তিনি মনে করেন, ইউজিসি এ বিষয়ে গুরুত্ব দিবে। প্রফেসর মতিন আশা করেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সমস্যাসমূহ নয়া চেয়ারম্যান আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে দিবেন।

প্রফেসর ড. এ কে এম আজহারুল ইসলামঃ
ইন্টারন্যাশানাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে এম আজহারুল ইসলাম তাঁর লিখিত বক্তব্যে জানান, দেশে উচ্চ শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষা কার্যক্রম মনিটরিংয়ে ইউজিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ চেক পোস্ট। উপযুক্ত উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং যথার্থ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইউজিসি’র তাৎপর্র্যপূর্ণ ভূমিকা রাখার অবাধ সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সার্বিক সমৃদ্ধি অর্জনে সরকারের আবশ্যকীয় ও অপরিহার্য আনুকূল্য প্রদানে ইউজিসি সেতুবন্ধন রচনাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারে। পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর সীমিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে ব্যাপক চাহিদাপূরণে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর অবদানকে প্রথমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। তিনি বলেন, সংখ্যাবাচক মূল্যায়ন নয়, গুণবাচক মূল্যায়নকে প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইউজিসি’র ভূমিকা মুখ্য।
প্রফেসর আজহারুল ইসলাম বলেন, ঢালাওভাবে সকল ইউনিভার্সিটির আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়ার পূর্বে সেসব ইউনিভার্সিটির অনুমোদিত ক্যাম্পাস সম্পর্কে খোঁজখবর ও সুষ্ঠু তদন্ত করা সমীচীন। তদন্ত ছাড়া নেয়া পদক্ষেপ আইনী হবে না। তিনি বলেন, শুধু নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিও ইউজিসিকে ভাবতে হবে এবং এসব ইউনিভার্সিটির প্রাপ্য মর্যাদার দিকটিও ইউজিসিকে নিশ্চিত করতে হবে।

মুখ্য বক্তা প্রফেসর নজরুল ইসলামঃ
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’র চেয়ারম্যান ও সেমিনারের মুখ্য বক্তা প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, আজকের এই সেমিনারটি মঞ্জুরী কমিশনেই হওয়া উচিৎ ছিল বলে আমিও আপনাদের সাথে একমত, অনুরূপ চিন্তাও করছিলাম যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর ভিসিদেরকে নিয়ে একটি বৈঠক করার। কিন্তু ক্যাম্পাস তার আগেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
তিনি এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, ক্যাম্পাস সম্পাদক শিক্ষার কল্যাণে নিরংকুশ দক্ষতার সাথে যে কাজ করছেন, তা তাঁর আজকের সফল ও সমৃদ্ধ আয়োজন থেকে এবং মডারেটর হিসেবে দক্ষতার সাথে সেমিনার পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল থেকে প্রতীয়মান। সেমিনার পরিচালনায় জনাব হেলাল’র দক্ষতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখে তিনি মত প্রকাশ করেন যে, আগামীতে ইউজিসি কর্তৃক এরূপ আলোচনানুষ্ঠান পরিচালনার জন্য তিনি ক্যাম্পাস-এর সম্পাদককেই দায়িত্ব দেবেন। একটি সেমিনারে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের একত্রিত করার মাধ্যমে ফলপ্রসু আয়োজনের জন্য তিনি ক্যাম্পাস’র সংশ্লিষ্ট সকলকে ইউজিসি’র পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান।
প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। ইউজিসি’র ৪ জন সদস্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগাম পদত্যাগ করে ওই সদস্যগণ গণমাধ্যমে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে কমিশন ও সরকার সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, নতুন সদস্য নিয়োগের ফলে কমিশনে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। নতুন টিম নিয়ে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যারা ইউজিসিতে আছেন তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি করাই হবে তাঁর প্রচেষ্টা।
প্রফেসর ইসলাম বলেন, পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মধ্যে অনেক ধরনের পার্থক্য রয়েছে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পরিচালনার ধরন ভিন্ন রকম। তিনি পাবলিক ইউনিভার্সিটির কিছু কিছু কাজের সমালোচনা করে বলেন, স্বায়ত্তশাসনের সুযোগে তাঁরা এমন সব অবাস্তব প্রস্তাব নিয়ে আসেন, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে অনুসরণ করার জন্য পাবলিক ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে ইউজিসিতে সঠিক তথ্য জমা দিতে হবে। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিলেবাস অনুমোদনে ৮ হাজার টাকার স্থলে আগামীতে ২০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। কারণ পূর্বের ফি দিয়ে যোগ্য এক্সপার্ট পাওয়া যায় না। গ্রহণযোগ্য সিলেবাস ও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকলে ৭ দিনের মধ্যেই কোর্স চালুর অনুমতি দেয়া হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে যাতে ইউজিসিতে দীর্ঘসূত্রতা না হয় সেদিকেও বিশেষ নজর দেয়া হবে।
প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, শুধু বাণিজ্যিক বিষয় নয় মানসিক বিকাশ ঘটে এ ধরনের বিষয়ও প্্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে হবে। শর্তপূরণ সাপেক্ষে বাংলা সাহিত্যের মতো গ্রহণযোগ্য কোন কোর্স বা বিভাগের প্রস্তাব নিয়ে এলে অনুমোদন প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা হবে না। তাঁর মতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে না বলে দেশী-বিদেশী স্কলারশীপে এসব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাচ্ছে না। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদেরকে কমনওয়েলথ স্কলারশীপ প্রদানের বিষয়টি ইউজিসি আলোচনা করবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, সবার পরামর্শ নিয়ে উচ্চতর গবেষণা ও পিএইচডি করার অনুমোদন দেয়া হবে।
ইউজিসি’র চেয়ারম্যান বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিল যাতে সিলেবাস অনুমোদন করতে পারে এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। তিনি বলেন, সিলেবাস অনুমোদনের পূর্বে যাতে শিক্ষক নিয়োগ না দিতে হয় এখন থেকে সেই ব্যবস্থা করা হবে। তাঁর মতে, এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল হলে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের জন্য ভাল হবে এবং ইউজিসি’র অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে। প্রফেসর ইসলাম বলেন, বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬টি শাখার স্থানীয় এজেন্টদের সঙ্গে আগামী ২০ আগস্ট কমিশন আলোচনা করবে। তবে অনেকেরই ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির আউটার ক্যাম্পাস সম্পর্কে অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযোগ আসছে। এত বেশি অভিযোগ আসে যে এখন তদন্ত কমিটি করে হবে না, কমিশন বসিয়ে তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি দেশ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কাজ করছে। এসব ইউনিভার্সিটি নানাভাবে ছাত্র ও অভিভাবকদের ঠকাচ্ছে, শিক্ষার নামে বাণিজ্য করছে। এতে করে উচ্চ শিক্ষার কার্যক্রম ও মানের ক্ষতি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সকল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ইমেজ নষ্ট হচ্ছে, এটা হতে পারে না। তিনি প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর হয়ে গেছে এমন ইউনিভার্সিটিগুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, যে শর্ত জেনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেসব শর্ত মেনে চলতেই হবে। তিনি আবাসিক এলাকায় স্থাপিত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো সরিয়ে বাণিজ্যিক এলাকায় নেয়ার আহ্বান জানান এবং এখন থেকে আবাসিক এলাকায় আর কোন নতুন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস খোলার অনুমোদন দেয়া হবে না বলেও জানান। প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাথে বিমাতা সুলভ আচরণ করার তাঁর কোন ইচ্ছে নেই। জাতীয় স্বার্থেই তিনি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসি’র পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি
শীর্ষক সেমিনারের সুপারিশমালা

১। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।
২ ক) সিলেবাস, সাবজেক্ট ও কোর্স অনুমোদনে ইউজিসি’র দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করতে হবে; খ) সিলেবাস অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইউজিসি’র এক্সপার্ট প্যানেল থাকতে হবে; গ) সিলেবাস অনুমোদনে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকগণও যাতে ইউজিসিকে সহযোগিতা করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে; ঘ) সিলেবাস অনুমোদনের পূর্বেই শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে হবে; ঙ) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য ইউজিসি ইউনিফরমড সিলেবাস তৈরি করতে পারে; চ) সিলেবাস ও কোর্স অনুমোদনের বিষয়টি ইউনিভার্সিটির একাডেমিক কাউন্সিলের উপর ছেড়ে দেয়া যেতে পারে; ছ) সিলেবাস অনুমোদনের জন্য ইউজিসি একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারে।
৩। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় সেজন্য ইউজিসিতে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি সংক্রান্ত আলাদা সেল থাকতে হবে।
৪। পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির জন্য অভিন্ন এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করতে হবে।
৫ । ক) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্টে এমন কোন বিধিমালা থাকা উচিত নয়, যাতে করে চলমান ইউনিভার্সিটিসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা বন্ধ হয়ে যায়;
খ) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এ্যাক্ট পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে ইউজিসি’র উচিৎ এসব ইউনিভার্সিটির প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা।
৬। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসমূহের মূল্যায়ন পদ্ধতি সহজতর হওয়া উচিৎ।
৭। ক) অনুমোদিত আউটার ক্যাম্পাস সম্পর্কে সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে; খ) যেসব ইউনিভার্সিটির আউটার ক্যাম্পাস গুণগত মান নিশ্চিত করেছে সেসব ক্যাম্পাসকে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের সুযোগ দেয়া উচিত।
৮। ক) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের গুণগত মান বৃদ্ধিতে পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের ন্যায় স্কলারশীপ দিতে হবে; খ) প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ইউজিসি একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ শাখা চালু করতে পারে।
৯। ইউজিসি কর্তৃক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রদেরও শিক্ষাবৃত্তি দিতে হবে।
১০। ইউনিভার্সিটিসমূহের একাডেমিক কাউন্সিলে ইউজিসি’র প্রতিনিধি থাকতে পারে।
১১। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিসমূহের চেয়ারম্যান ও ভিসিদের সাথে ইউজিসি’র বিভিন্ন সময়ে মতবিনিময় করা প্রয়োজন।
১২। প্রাইভেট ইউনিভার্র্র্র্র্র্র্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দিতে হবে।
১৩। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে স্বাস্থ্য বিষয়ক ফ্যাকাল্টির অনুমোদন দিতে হবে ইউজিসিকে।
১৪। ইউজিসি’র উচিত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনায় সহযোগিতা করা।
১৫। কোন ইউনিভার্সিটি যাতে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রি না করতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইউজিসি’র।
১৬। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সঠিক তথ্য দেয়ার জন্য ইউজিসিতে সেল থাকতে হবে।
১৭। পাবলিক ও প্রাইভেট উভয় ইউনিভার্সিটির কার্যক্রমেই স্বচ্ছতা থাকা আবশ্যক।
১৮। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর উচিত ইউজিসি’র নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করা।
১৯। যে আইনে ইউনিভার্সিটি অনুমোদিত, সে আইন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোকে মানতে হবে।
২০। জনবল বৃদ্ধিসহ ইউজিসি’র মৌলিক সংস্কার করা প্রয়োজন।
২১। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সাথে ইউজিসি’র ভূমিকা হতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক।