অফিস-আচরণ, ন্যায়নিষ্ঠা, দেশপ্রেম, নেতৃত্ব-প্রশিক্ষণের পাশাপাশি
সমাজসেবা ও জ্ঞানার্জনের অবসরে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে
শিক্ষানবিশ কর্মসূচি
নীতিমালা
জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ সংস্থা শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনভিত্তিক নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও দেশের শিক্ষা-যুব ও সমাজ উন্নয়নে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় ক্যাম্পাস’র ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘শিক্ষানবিশ কর্মসূচি’।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
কর্মমুখী বা জীবনমুখী শিক্ষা-ব্যবস্থার অভাবে আমাদের ছাত্র-যুবকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরির বা কর্মজীবনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কিছুই পায় না। সে কারণেই অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে চাকরি জীবনে প্রবেশ বিলম্বিত হয় এবং বছরের পর বছর জুতার সুখতলা ক্ষয় করেও চাকরি নামের ‘সোনার হরিণ’ -এর নাগাল পায় না। তাই চাকরির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতালাভে ক্যাম্পাস ছাত্র-যুবকদেরকে শিক্ষানবিশ-কর্মের সুযোগ দিয়ে থাকে। এতে তারা শিক্ষা জীবনেই অফিস-আচরণ, শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ, নিয়মানুবর্তিতা ও ন্যায়নিষ্ঠা, নেতৃত্বের গুণাবলী, দলভিত্তিক কার্যক্রম বা টিম ওয়ার্ক, শেয়ারিং, স্মার্টনেস, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন-পর্যবেক্ষণ ও সম্পাদিত কাজের রিপোর্টিং ইত্যাকার বিষয়ে সম্যক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সমর্থ হয়। তাছাড়া আত্ম-উন্নয়নের পাশাপাশি দেশ ও সমাজ গঠনমূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, দেশপ্রেম-সমাজসেবা ও মানব কল্যাণে নিবেদিত হওয়ার মাধ্যমে তারা হতাশামুক্ত উচ্ছল-উজ্জ্বল জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে।
শিক্ষানবিশদের সুযোগ-সুবিধা
১ । অফিসিয়াল বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকরা অফিস-আচরণ, নিয়মানুবর্তিতা ও ন্যায়নিষ্ঠা, নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন, দলভিত্তিক কার্যক্রম ও টিম স্পিরিটে বিকশিত হওয়া, দেশপ্রেম-সমাজসেবা ও মানব কল্যাণসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকে; যা চাকরিলাভ ও কর্মজীবনে সাফল্যের পাশাপাশি সুনাগরিক ও উন্নততর মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য অত্যাবশ্যক।
২। প্রথম পর্বে শিক্ষানবিশকে -
ক) পূর্ণদিবস কাজের ক্ষেত্রে টিএ/ডিএ, লাঞ্চ ও বিকেলের নাস্তা দেয়া হয়;
খ) অর্ধদিবস কাজের ক্ষেত্রে কেবল লাঞ্চ ও বিকেলের নাস্তা অথবা দৈনিক টিএ/ডিএ দেয়া হয়।
৩। দ্বিতীয় পর্বে মাসিক বেতনলাভ। এক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় যে, মাসিক বেতন বা সম্মানী গ্রহণের পর কোনো শিক্ষানবিশ যদি সততাবশে ডিক্লেয়ার করতে পারে যে, তাকে তার ন্যায্য প্রাপ্যের অতিরিক্ত টাকা/অর্থ প্রদান করা হয়েছে - তাহলে সে আরো ১,০০০ টাকা অথবা গৃহীত সম্মানীর দ্বিগুণ (যেটি অধিক হবে, সেটি) পুরস্কার হিসেবে পেতে পারে।
৪। শিক্ষানবিশ কর্মসূচির সফল সমাপ্তির পর চাকরির অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সনদলাভ এবং স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা।
৫। ক্যাম্পাস পরিচালিত ফ্রি বেসিক কম্পিউটার কোর্স ও এডভান্সড কোর্স, আত্ম-উন্নয়নমূলক ক্লাস, সম্মিলিত ধ্যান, ইয়োগা ইত্যাকার বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ।
৬। ক্যাম্পাস আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়া, ওয়ার্কশপ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগলাভ।
৭। শিক্ষানবিশ কর্মী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ক্যাম্পাস পত্রিকার ফোরাম-সদস্য করতে পারলে নির্ধারিত ফি’র ১৫% কমিশন পায়। অনুরূপভাবে ক্যাম্পাস পত্রিকার জন্য বিজ্ঞাপন বা ওয়েব পোর্টালের জন্য Web Advt. সংগ্রহ করলে নির্ধারিত বিজ্ঞাপন হারের ২০% কমিশন পায়।
শিক্ষানবিশি-মেয়াদ
১। শিক্ষানবিশ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীকে পূর্ণ দিবসের ক্ষেত্রে ৬ মাস এবং অর্ধদিবসের ক্ষেত্রে ১ বছর একনাগাড়ে কাজ করতে হয়, যা দুই পর্বে বিভক্ত।
২। শিক্ষানবিশি মেয়াদের ১ম পর্বে পূর্ণ দিবসের ক্ষেত্রে ২ মাস এবং অর্ধ দিবসের ক্ষেত্রে ৪ মাস। এ পর্বে তাকে অন্যের সহকারী হিসেবে কাজ করতে হয়।
৩। ২য় পর্বে পূর্ণ দিবসের ক্ষেত্রে ৪ মাস এবং অর্ধ দিবসের ক্ষেত্রে ৮ মাস অন্যের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও সে কাজের পাশাপাশি তাকে কিছু কিছু দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এরূপ কর্ম ও দায়িত্ব পালনে সফল হলে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষানবিশ হিসেবে সনদপত্র বা সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
৪। ২য় পর্বের সফল সমাপ্তির পর ক্যাম্পাস পত্রিকায় বা ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি) -এ স্থায়ী চাকরির সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের নিয়ম ও অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া
শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে চাইলে আগ্রহীকে ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) - এর মহাসচিব বরাবর আবেদন করতে হয়। স্বহস্তে লিখিত আবেদনপত্রের সাথে ২ কপি পিপি ছবি, পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত ও সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের সনদ সংযুক্ত করতে হয়। আবেদনপত্রের বিবেচনায় শিক্ষানবিশ হিসেবে নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাস’র নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়।
শিক্ষানবিশির ১ম পর্ব শুরুর পূর্বে ১৫ পূর্ণ দিবস অথবা ৩০ অর্ধদিবস ‘পর্যবেক্ষণ শিক্ষানবিশ’ বা Test Apprenticeshipহিসেবে আসা-যাওয়া করতে হয়। অংশগ্রহণকারীর আগ্রহ প্রমাণে এবং প্রতিষ্ঠানের আদর্শ-উদ্দেশ্য ও কাজের ধরন বুঝতে এটি আবশ্যক। তাই এ সময়ের জন্য কোন আর্থিক-সুবিধা প্রযোজ্য নয়। তবে স্মার্ট ও দক্ষ ব্যক্তি বিশেষে এবং পূর্ণ দিবস আসা-যাওয়া করলে পর্যবেক্ষণ পর্ব ১ সপ্তাহেই সমাপ্ত হতে পারে, কিন্তু অর্ধদিবসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৫ দিন আসা-যাওয়া করতেই হয়।
শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার নিয়মাবলী
১। পূর্ণ দিবসের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে অপরাহ্ন ৬টা পর্যন্ত এবং অর্ধদিবসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫ ঘন্টা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়।
২। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হতে না পারলে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করা যায় না। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিতিতে কোন শিক্ষানবিশের ব্যর্থতার কারণে যেহেতু তার সংশ্লিষ্ট কাজের ক্ষতি হয় সেহেতু ঐ দিনের পকেটমানি প্রদেয় হয় না, তবে তাকে সেদিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে হয়।
৩। কর্মস্থলে কোনদিন অনুপস্থিত থাকতে চাইলে তজ্জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্রের মাধ্যমে পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হয়। পূর্বানুমতি গ্রহণ না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে পূর্ববর্তী দিনগুলোর প্রাপ্য অর্থ বা সুবিধা বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
৪। নো-ওয়ার্ক নো-পে ভিত্তিতে কাজ হয়।
৫। ক্যাম্পাস’র অন্যান্য শিক্ষানবিশ ও কর্মকর্তাদের সাথে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করতে হয়। ঊর্ধ্বতনদের সাথে শ্রদ্ধাপূর্ণ এবং অধঃস্তনদের সাথে স্নেহসুলভ আচরণ করতে হয়।
৬। সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দায়িত্বে অবহেলা ও কর্ম সম্পাদনে কোন প্রকার অনিয়ম বা শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়।
৭। প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায় ও কাজের গোপনীয়তা রক্ষায় সচেষ্ট থাকা বাঞ্ছনীয়।
৮। অফিস চলাকালীন অর্পিত কাজ ও দায়িত্ব সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা ছাড়া ব্যক্তিগত বা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা নিষিদ্ধ।
৯। অফিসের স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে প্রণীত ও প্রণীতব্য নিয়মাবলী নির্দ্বিধায় মেনে চলতে হয়।
১০। ১ম পর্ব চলাকালীন প্রতি মাসের ৫ ও ২০ তারিখে পূর্ববর্তী দু’সপ্তাহের পকেটমানি বা টিএ/ডিএ দেয়া হয়। ২য় পর্ব চলাকালীন প্রতি মাসের ২০ তারিখে পূর্ববর্তী মাসের বেতনলাভ।
১১। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ নিয়মাবলী ভঙ্গ করলে তা অপরাধ বলে পরিগণিত হয় এবং এরূপ অপরাধের জন্য কর্তৃপক্ষ যেকোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।