ক্যাম্পাস’র দর্শন
স্বচ্ছতা-জবাবদিহি-সুশাসন-আধুনিকতা
ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি বিরল। ফলে সততা ও নিষ্ঠার নিদারুণ দুর্ভিক্ষে হতাশ গোটা জাতি। তবু এ অমানিশার মাঝেও ড. মোহাম্মদ ইউনূস, ফজলে হাসান আবেদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রসহ কোনো কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে যাচ্ছে আশার আলোকবর্তিকা।
ন্যায়ভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র। কেবলমাত্র স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আলোকিত জাতি গঠন সম্ভব এ সত্যকে উপজীব্য করে প্রাথমিকভাবে নিজ প্রতিষ্ঠানে, এরপর স্টাফ, প্রশিক্ষণার্থী ও শিক্ষানবিশদের মাঝে এবং ক্রমান্বয়ে সমাজে ও জাতিতে এসবের নিরন্তর চর্চা ক্যাম্পাস’র সুদূরপ্রসারী কর্মপ্রয়াস। সমাজে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আদর্শ প্রতিষ্ঠার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে ক্যাম্পাস এসব চর্চা করে আসছে। ক্যাম্পাস’র প্রতিটি কর্মসূচি ও পরিকল্পনায় অনুসৃত হয় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন; থাকে দক্ষতা, সততা, সত্য ও সুন্দরের অনুরণন।
ক্যাম্পাস’র স্টাফ-সভায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও ন্যায়নীতি শিক্ষা
ক্যাম্পাস’র স্বচ্ছতার অন্যতম আকর্ষণ সাপ্তাহিক স্টাফ ও শিক্ষানবিশ সভা। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি ছাড়াও জীবনের এমন কোনো দিক বা দর্শন নেই, যে সম্পর্কে এ সভায় আলোচনা হয় না। ব্যক্তিগত-পারিবারিক- সামাজিক-প্রাতিষ্ঠানিক সকল ক্ষেত্রে নিজকে দায়িত্ববান, সৎ, স্বচ্ছ, সফল ও সুউন্নত মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার পুঙ্খানুপুঙ্খ দিকনির্দেশনা দেয়া হয় এ সভায়।
এ সভার মূল উদ্দেশ্য প্রত্যেককে Superior Human Being হিসেবে গড়ে তোলা। নিজ ধর্মের যথার্থ অনুসারী হওয়া, সর্বক্ষেত্রে প্রকৃত ও প্রাকৃত হওয়া, ক্ষমাশীল হওয়া, ধন্যবাদার্হ ও সকৃতজ্ঞ হওয়া, নিজ দায়িত্বের প্রতি ও অন্যের অধিকারের প্রতি সচেতন হওয়া, সকল ক্ষেত্রে যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচার-আচরণে অভ্যস্ত হওয়ার মাধ্যমে বিচারিক যোগ্যতা অর্জন ইত্যাকার গুণাবলি চর্চার শিক্ষা ক্যাম্পাস কর্মীগণ এই স্টাফ-সভা থেকেই পেয়ে থাকে।
উন্মুক্ত সমালোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চর্চা
স্টাফ ও শিক্ষানবিশদের জন্য আয়োজিত ক্যাম্পাস’র নিয়মিত সভার পারস্পরিক সমালোচনা-পর্ব অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এখানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে আত্মসমালোচনা করে থাকে এবং সম্মুখ আলোচনায় অংশ নেয়। সবাই কলিগের দোষ-ত্রুটি এমনকি ঊর্ধ্বতনদের দোষ-ত্রুটি সম্পর্কেও খোলামেলা আলোচনা করতে পারে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠান-প্রধান তাঁর নিজ সমালোচনা করতে অধঃস্তনদের উদ্বুদ্ধ করেন। প্রতিবছর দু’বার উন্মুক্ত স্টাফ সভার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতনের এরূপ সমালোচনার সেশন অনুষ্ঠিত হয়; যেখানে ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদকের সম্মুখ সমালোচনার জন্য তিনি নিজেই আহ্বান জানান প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় প্রত্যেক স্টাফকে। এটি ক্যাম্পাস’র শীর্ষ পর্যায়ে সততা, ন্যায়নিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা চর্চার অনন্য সাধারণ ও নৈমিত্তিক বিষয়।
এখানে স্টাফদের জন্য রয়েছে একদিকে পুরস্কার-তিরষ্কার পদ্ধতি, অন্যদিকে রয়েছে পারস্পরিক মূল্যায়নপত্র যেখানে আচার-ব্যবহার, কাজে-কর্মে উদ্যম ও উদ্যোগ, দায়িত্ববোধ, কমিটমেন্ট, নিয়ম-শৃঙ্খলা, সহজ-সরল কথার অভ্যাস, দ্রুত বোঝা, শারীরিক সক্ষমতা, সত্য বলা, পরচর্চা পরিহার ইত্যাকার নানা বিষয়ে প্রত্যেকে অন্য সকল কর্মীকে নাম্বারিংয়ের মাধ্যমে মূল্যায়ন করে থাকে। পারস্পরিক গঠনমূলক সমালোচনায় স্টাফ ও শিক্ষানবিশদের দোষত্রুটি চিহ্নিতকরণ ও সংশোধনের এরূপ নজির বিরল। এতে যেমনি জানা যায় কার কোন্ পয়েন্টে দুর্বলতা আছে, তেমনি ঐ বিষয়ে তার সংশোধনের সুযোগও রয়েছে। এখানেও অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্যাম্পাস একেবারেই ব্যতিক্রম। অন্যের পেছনে বা আড়ালে নয় বরং সামনাসামনি ভালো-মন্দ আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের দর্শন লালন ও আত্মোন্নয়নের এক অনন্য নিদর্শন ক্যাম্পাস।
লেনদেনের ক্ষেত্রেও ক্যাম্পাস অত্যন্ত স্বচ্ছ
ক্যাম্পাস’র স্বচ্ছতার জ্বলন্ত প্রমাণ এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ক্যাম্পাস’র কাছে টাকা প্রাপ্য হলে তা অবিলম্বেই পরিশোধিত হয়। এজন্য কখনই কারুর ধরনা দিতে হয় না ক্যাম্পাস’র নিকট। অর্থাৎ প্রাপককে ক্যাম্পাস অফিসে এসে টাকার জন্য বসে থাকতে হয় না, ক্যাম্পাস কর্মীরাই প্রাপকের প্রাপ্য অর্থ পৌঁছে দেয় তার কাছে। এজন্য প্রাপকদের কাছে ক্যাম্পাস’র রয়েছে ব্যাপক সুনাম।
এখানে কারুর দেনা বাকি থাকলে সে সম্পর্কে কারণ দর্শাতে হয় হিসাব বিভাগকে। এমনও বহু নজির আছে যে দেনা পরিশোধে গাফিলতি কিংবা গড়িমসি করার কারণে ক্যাম্পাস’র হিসাব কর্মকর্তাকে জরিমানা গুনতে হয়েছে কিংবা ঝড়ৎৎু বলতে হয়েছে। ক্যাম্পাস যত না সিরিয়াস নিজের পাওনার ব্যাপারে, তারচে’ বেশি সিরিয়াস দেনা পরিশোধের বিষয়ে। এ কারণে সুদূর অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাস কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বহু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে অথচ দেনা নেই কারুর কাছে।
ক্যাম্পাস’র প্রতিটি লেনদেনই নথিভুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রতিদিন হিসাব সংক্রান্ত কাগজপত্র আপডেট করতে সচেষ্ট। প্রশ্নাতীত স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য রয়েছে নিয়মিত ইন্টারনাল অডিট এবং এক্সটারনাল অডিট সিস্টেম।
ক্যাম্পাস’র নীতি-নৈতিকতা স্বচ্ছ, গোঁড়ামিমুক্ত ও বিজ্ঞানসম্মত
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ক্যাম্পাস ধূমপানমুক্ত; এ প্রতিষ্ঠানের কোনো স্টাফ ধূমপান করে না এবং মিথ্যা বলে না। এমনকি তারা কৃত্রিম ও অস্বচ্ছ কথা বা আচরণ থেকে বিরত থাকায়ও প্রয়াসী। তারা নৈতিক গুণাবলি সমৃদ্ধ এবং কাজে-কর্মে স্বচ্ছ, সৎ ও কর্মঠ। সমাজ সেবামূলক বহুমুখী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত এই কর্মীবৃন্দ প্রোএকটিভ এটিচিউড ধারণের ফলে কোনো বাধাকেই বাধা মনে করে না। অন্যের সমালোচনা বা গঞ্জনায়ও রিএক্ট করে না। ক্যাম্পাস এ কাজের পরিবেশটাই এমন যে, এখানে কিছুদিন কাজ করলে স্পেশাল হয়ে যেতে হয়; ক্যাম্পাস’র যেকোনো কর্মী নিজেই বুঝতে পারে যে, সে অন্যের চেয়ে আলাদা।
এখানে নারী-পুরুষের নামাজের জন্য রয়েছে পৃথক জায়গা; ধ্যানচর্চার জন্য রয়েছে নির্ধারিত স্থান। ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে গোঁড়ামি নেই। এখানে মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এককথায়, ক্যাম্পাস পরিবার সর্বদা ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্যে বিশ্বাসী।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গণতন্ত্র চর্চার নিশ্চয়তায়
ট্রেইনী ও শিক্ষানবিশদের কর্তৃক ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম নিয়মিত মূল্যায়ন
ট্রেইনী ও শিক্ষানবিশ হিসেবে যারা ক্যাম্পাস এ আসে তাদের স্বাধীন মতামত, মূল্যায়ন ও পরামর্শ প্রদানের সুব্যবস্থা রয়েছে। এ বিষয়ে তাদেরকে কোর্স-পূর্ব ও কোর্স-পরবর্তী মূল্যায়নপত্র পূরণ করতে হয়। এসব গোপনীয় মূল্যায়নপত্রে প্রশিক্ষকের যোগ্যতা-সহযোগিতা-সহমর্মিতা এবং ক্যাম্পাস’র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে।
ক্যাম্পাস’র কার্যক্রমে উৎকর্ষ আনয়নে এবং স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় এটি ক্যাম্পাস’র অনন্য ও দূরদর্শী পদক্ষেপ হিসেবে সুধীজন সমাদৃত। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও পরিদর্শক কর্তৃক ক্যাম্পাস’র এই মূল্যায়ন পদ্ধতি বহুল প্রশংসিত।
দক্ষতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা
ক্যাম্পাস অফিসে স্টাফ ও শিক্ষানবিশদের জন্য রয়েছে বিশেষ কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। এখানে স্টাফদেরকে কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক জ্ঞানের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সফল ও সুন্দরভাবে কাজ করার জন্য বিভিন্ন এডভান্সড ট্রেনিং দেয়া হয়। নানা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ট্রাবলশুটিং ও কম্পিউটার ব্যবহারের বিবিধ টিপস এমনভাবে দেয়া হয়, যেন স্টাফরা নিজ নিজ কাজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে। এভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্যাম্পাস’র স্বচ্ছতা ও স্টাফদের দক্ষতা।
ক্যাম্পাস’র সততা পুরস্কার এবং সততা জাগরণী কার্যক্রম
ক্যাম্পাস’র স্টাফ ও শিক্ষানবিশরা নিজেরা সততা, ন্যায়-নীতির চর্চা করেই ক্ষান্ত নন, তারা সমাজে ও জাতিতে সততা ও ন্যায়ের চর্চাকারীদের মাথা উঁচু রাখতে চালু করেছে সততা পুরস্কার ও সততা জাগরণী কার্যক্রম। ঘুষ-দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে ন্যায়-নীতিবোধের জাগরণে সমাজের সৎ ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করতে ক্যাম্পাস’র সততা পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ কর্মসূচির বিভিন্ন ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বগণকে এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে; রয়েছে পৃথক ব্যাংক একাউন্ট।
ক্যাম্পাস’র ত্রাণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা
মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই পরিচালিত হয় ক্যাম্পাস’র ত্রাণ কার্যক্রম। দুর্গত মানুষদের মধ্যে ক্যাম্পাস অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সাথে ত্রাণ-সামগ্রী বিতরণ করে থাকে। কে কত পরিমাণে ত্রাণের অর্থ দিয়েছে, কে কতটুকু ত্রাণ সংগ্রহ করেছে, কোথায় কীভাবে ত্রাণ বন্টিত হয়েছে এসবের সবিস্তারিত তথ্য ও প্রতিবেদন পত্রিকান্তরে মুদ্রিত হয়। তাতে কারুর কোনো কিছু লুকানোর, গোপন করার বা অস্বচ্ছতার সুযোগই থাকে না। তাছাড়া অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণে এ কর্মসূচির জন্য রয়েছে পৃথক ব্যাংক একাউন্ট।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অনন্য নজির সমাজ সচেতনতামূলক কর্মসূচি
ক্যাম্পাস’র প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, যা সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ করে ক্যাম্পাস। সে ধারাবাহিকতায় নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত সচেতনতামূলক বক্তব্য ক্যাম্পাস প্রচার করে দেশব্যাপী। ক্যাম্পাস বিশ্বাস করে মানুষকে সচেতন করতে পারলে সকল কাজ-কর্মে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। নিজস্ব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা দেশব্যাপী প্রচারের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস অনন্য দৃষ্টান্ত।
স্বচ্ছতা ও সুশাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত ক্যাম্পাস’র নেতৃত্ব
ক্যাম্পাস’র বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনায় রয়েছেন নিবেদিতপ্রাণ এক ব্যক্তিত্ব; যার দূরদর্শী পরিকল্পনা, দক্ষ নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধানে সুদীর্ঘ ৩ যুগ ধরে এগিয়ে চলেছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এর মহাসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এম হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাব বিজ্ঞান এর ন্যায় কঠিন ও আধুনিক বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেও সেই বিষয় সংশ্লিষ্ট সহজ ও লোভনীয় চাকরিতে সম্পৃক্ত হননি। জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন সমাজ-জাগরণ ও দেশপ্রেমে উজ্জীবনের দুঃসাধ্য কাজ। গণমানুষের জন্য কাজ করাকে জীবনের ব্রত বলে তিনি মনে করেন। ছাত্র-যুব সমাজে বিরাজিত হতাশা দূর করে তাদের মধ্যে দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন কর্মসূচি সর্বজন প্রশংসিত। আর তাই আশি’র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নির্বাচিত নেতা হিসেবে শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি তাঁর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাস এখন জন-জাগরণ ও দেশ উন্নয়নের অনন্য প্রতিষ্ঠান।
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা বিধানে ক্যাম্পাস কার্যালয়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। এতে ক্যাম্পাস কার্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। তাছাড়া প্রবেশ পথে নিরাপত্তা রক্ষীর নিকট রাখা দর্শনার্থী বইয়ে আগন্তুকের নাম-পরিচয় ও আগমনের উদ্দেশ্য লিখে এবং স্বাক্ষর করে ক্যাম্পাস কার্যালয়ে প্রবেশ করতে হয়। ভিআইপি পরিদর্শকগণের মন্তব্যের জন্য রয়েছে পরিদর্শন বই।
অনুষ্ঠান আয়োজনে দক্ষ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাস
সেমিনার, সিম্পোজিয়া, ওয়ার্কশপ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংবাদিক সম্মেলন, চা-চক্র বা ভোজসভাসহ যেকোনো ছোট-বড় অনুষ্ঠান আয়োজনে সর্বদাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যাম্পাস। এজন্য বাইরের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় না। একসাথে ২০০ জনের খাবার আয়োজন ও পরিবেশনায় ক্যাম্পাস’র স্টাফগণ সিদ্ধহস্ত। ক্যাম্পাস কিচেনের খাবার পরিবেশনায় যা যা প্রয়োজন, তার প্রায় সবকিছুই রয়েছে ক্যাম্পাস কার্যালয়ে। এটি ক্যাম্পাস’র তাৎক্ষণিকতা ও দক্ষতার আরেক পরিচয়। ইনডাকশন কুকার, বারবিকিউ মেশিন, রুটি মেকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাইজের রকমারী ফুড ওয়ার্মার কিংবা লেটেস্ট প্রযুক্তির ছোট-বড় ড্রিম পট সবই আছে ক্যাম্পাস অফিসে।
দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালনে দক্ষতা
দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালনেও ক্যাম্পাস দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে আসছে। এজন্য ক্যাম্পাস’র রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল। এ দলের কর্মীগণ সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়ের মাধ্যমে সমাজের অনাচার, অন্যায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অবসানে মানুষকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করে।
দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালনে দক্ষতা
দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতি লালনেও ক্যাম্পাস দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়ে আসছে। এজন্য ক্যাম্পাস’র রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক দল। এ দলের কর্মীগণ সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়ের মাধ্যমে সমাজের অনাচার, অন্যায়, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অবসানে মানুষকে সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করে।
আত্মোন্নয়ন চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা
ক্যাম্পাস কার্যালয়ে পরিচালিত হয় নিয়মিত ধ্যান কার্যক্রম। এর মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষানবিশ ও প্রশিক্ষণার্থীরা নিজ উন্নয়নে একক ও সম্মিলিত ধ্যান করার সুযোগলাভ করে। সম্মিলিত ধ্যানের ফলে এবং প্রোএকটিভ সেমিনারে নিয়মিত অংশগ্রহণের কারণে ক্যাম্পাস পরিবারের সবাই মানবিক গুণসমৃদ্ধ, সৎ সাহস ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী।
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা রক্ষায় ক্যাম্পাস’র আধুনিকতা
আত্মোন্নয়নের পাশাপাশি ক্যাম্পাস স্টাফদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এখানে রয়েছে ইয়োগা কর্মসূচি; রয়েছে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপ্রেশার-রিফ্লেক্সোলজি-রেইকি চর্চা। এর মাধ্যমে সুস্থ দেহে সজীব মন নিয়ে ক্যাম্পাস কর্মীরা উন্নততর মানুষ হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্টাফদের জন্য ক্যাম্পাস কার্যালয়ে রয়েছে স্পেশাল ফিটনেস এন্ড রিলাক্সেশন মেশিন, ফুট ম্যাসেজার, আকুপ্রেশারের হাতিয়ার ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রেই যেকোনো সময়ে তারা নিজকে রিলাক্সড করতে পারে, রাখতে পারে স্ট্রেসহীন।
খাবার গ্রহণে স্বাস্থ্য সচেতনতা রক্ষা
খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাস পরিবার অত্যন্ত সচেতন। তারা ভাজা-পোড়া খাবারের চেয়ে সব্জি, ফলমূল, সিদ্ধ খাবার ও হারবাল খাদ্যই বেশি খেয়ে থাকে এবং অন্যদেরকেও এ ধরনের খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করে। কোক-ফান্টা জাতীয় পানীয় বা রঙিন ও কেমিক্যাল জাতীয় খাবার বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য পরিবেশিত হয় না।
অন্যের সমালোচনা বা ঈর্ষায়ও ক্যাম্পাস’র স্বচ্ছতা
ক্যাম্পাস’র ডায়নামিক, ব্যতিক্রমী ও দক্ষ কার্যক্রমে ঈর্ষান্বিত ও পরশ্রীকাতর হয়ে অন্ধকারের জীবরা কখনও কখনও মিথ্যা ও প্রতারণামূলক কল্পকাহিনী লিখে বেনামে বা কাল্পনিক নামে লিফলেট আকারে প্রচার করে থাকে; এমনকি ইমেইল পাঠিয়েও মানুষকে বিভ্রান্ত করে। বেনামী এসব উড়ো চিঠিতে কী ধরনের ডাহা মিথ্যা থাকে তা অধিকাংশ মহলই বোঝেন বা আঁচ করতে পারেন, তাই তারা বিভ্রান্ত হন না। কিন্তু দু’চারজন আছেন, যারা এসব ডাহা মিথ্যায় বিভ্রান্ত হন। তাছাড়া এরূপ বেনামী বা উড়ো চিঠিতে গঠনমূলক কোনো অভিযোগ থাকে না যে, তার উত্তর দেয়া যায়। তারপরও ক্যাম্পাস নিজ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির নিশ্চয়তায় এরূপ বেনামী লিফলেটেরও প্রতিটি পয়েন্টের ব্যাখ্যা দিয়ে তা পত্রিকান্তরে ছাপিয়ে থাকে। এরূপ লিফলেট এতই মিথ্যা ও অবাস্তব যে, আজ পর্যন্তও কোনো কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস’র নিকট এরূপ লিফলেট সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের ব্যাখ্যা চায়নি। কোনো কোনো লিফলেটের ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করেও কিছু পায়নি যে সম্পর্কে ক্যাম্পাস’র ব্যাখ্যা চাইতে পারে। বরং লিফলেটের নেপথ্য হোতা ও প্রচারকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নজির বিদ্যমান।
আলো কখনো অন্ধকারকে ভয় করে না, বরং অন্ধকারই ভয় করে আলোকে। ভয় করে বলেই মিথ্যা ও বিভ্রান্তির ওপর ভর করে আস্ফালন করে। কিন্তু শেষতক ধোপে টেকে না; বরং হিতে বিপরীত হয়। কারণ সময় যতই লাগুক না কেন, অবশেষে সত্যেরই জয় হয়।
ক্যাম্পাস’র অন্যান্য আদর্শ ও দিগ্দর্শন
উপরোক্ত বিভিন্ন নীতিদর্শন ছাড়াও ক্যাম্পাস আরো কিছু বিশেষ বিষয়ের চর্চা, লালন ও প্রচার করে থাকে, যা ক্যাম্পাস’র ১০ দিগ্দর্শন নামে সমধিক পরিচিত এবং এসব বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বহুল প্রচারিত একটি বইও রয়েছে। বইটির নাম “সর্বক্ষেত্রে অবিরাম সাফল্যের বিশেষ মানুষ হতে ১০দিগ্দর্শন”। এটি ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমেলা সিরিজের ৬ নং বই।
উক্ত বইয়ে উপস্থাপিত ১০টি দিগ্দর্শন নিম্নরূপ।
১। সহজ-সরল ও স্বাভাবিক থাকা তথা ন্যাচারাল হওয়া;
২। যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচার-আচরণ করা;
৩। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার চর্চা;
৪। ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া;
৫। সময়, সুযোগ ও স্থানের সদ্ব্যবহার;
৬। আত্মঅনুসন্ধান ও আত্মউপলব্ধি;
৭। সততার লালন ও চর্চা;
৮। দায়িত্বশীল হওয়া এবং দেনা ও দায়মুক্ত থাকা;
৯। গণতন্ত্রের অনুশীলন এবং অন্যের অধিকারের প্রতি সচেতন থাকা;
১০। নীতি-আদর্শ ও ধর্মকর্ম পালন।
শেষ কথা
উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বাংলাদেশে অচিরেই স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে, সুশাসন নিশ্চিত হবে, দুর্নীতির কালিমা থেকে মুক্ত হবে দেশ, গড়ে উঠবে উচ্ছল-উজ্জ্বল-আলোকিত প্রোএকটিভ জাতি এ প্রত্যাশা ও বিশ্বাসে নিত্য-নতুন উদ্যোগে এগিয়ে ক্যাম্পাস, অন্যসব দেশপ্রেমীদের মতো।