২০২১ সালে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরিপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি) বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যাংকিংয়ে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থানের সূচকে প্রথম স্থান লাভ করেছে। একই ইনডেক্স জরিপে বশেমুরকৃবি গত ২০১৯ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যথাক্রমে চতুর্থ ও দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিল।
এটি একটি গবেষণাভিত্তিক বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে (১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইপসা এবং ১৯৯৮ সালে জাতির পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত) এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিতে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণায় অগ্রাধিকার প্রদান করে আসছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আধুনিক কৃষির নানা বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কৃষি, মৎস্য, পশুপালন এবং পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানে মৌলিক জ্ঞান সৃজনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রেখে আসছে। প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল, সবজি ও তৈল জাতীয় ফসলের ৫০টির বেশি উচ্চফলনশীল জাত ও ১৪টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশেষ করে বিইউ ধান ১ এবং মুগডালের জাতগুলো বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মঙ্গা দূরীকরণে অসামান্য অবদান রাখছে।
সম্প্রতি জাতগুলোর উদ্ভাবনের বছর, উৎপাদন মৌসুম, জীবনকাল, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ফলন, চাষাবাদ পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিগুলোর বর্ণনা ও উপকারিতা সন্নিবেশ করে বশেমুরকৃবি প্রযুক্তি বই নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছে। সংকলনটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিতে উৎসর্গ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, বইটি দ্বারা কৃষি শিক্ষার্থী, কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, গবেষক, সম্প্রসারণবিদ ও এনজিও কর্মী, সর্বোপরি কৃষকরা উপকৃত হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া’র দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও আন্তরিক নেতৃত্বের কারণে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির মধ্যেও গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিম, চেরি টমেটো, সয়াবিন, ফুলসহ অন্যান্য ফসলের ১৪টি জাত কৃষকের চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করেছে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকদের দুই শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন উচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরবিশিষ্ট জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও এ উপাচার্যের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার সময়েই প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে বিদেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৫৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।
ড. মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়তে একটি সুশিক্ষাসমৃদ্ধ, দক্ষ, সৎ ও মেধাবী জাতি গঠন খুব জরুরি। সেই লক্ষ্যে কৃষি শিক্ষায় বিশ্বমানের দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নিরলসভাবে কাজ করছে। ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর বিশাল খাদ্য চাহিদা পূরণে কৃষি শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি, ফসলের উচ্চফলনশীল জাত, যুগোপযোগী ও লাগসই কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনে বশেমুরকৃবি অনন্য ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বশেমুরকৃবি দেশের একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা আমেরিকান ট্রাইমিস্টার ও কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতিতে সুনির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্তভাবে শিক্ষাদান করা হয়। এছাড়া দেশের অন্যতম গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় যা ইতোমধ্যে ৩২১ জন গবেষককে পিএইচডি, ১৯০৮ জনকে এম.এস, ৮১ জনকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা এবং ১৫৯৩ জনকে কৃষি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে বি.এস ও ডিভিএম ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পিএইচডি প্রোগ্রাম যুগোপযোগী করার জন্য সম্প্রতি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া ব্যক্তিগত গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, ইউজিসি এওয়ার্ড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো, ইউজিসি প্রফেসর ইত্যাদি জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান বজায় রাখতে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, কানাডা, অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে সহযোগিতা কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে।