দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি। এসব কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। তবে কাঙ্খিত সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মাত্র চার হাজার ৩৫০ জন। এই স্বল্পসংখ্যক আসনের মধ্যে মফস্বলের একটি কলেজ থেকেই সুযোগ পেয়েছেন ৪৩ জন। শুধু এ বছরই নয়, কয়েক বছর ধরে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল, বুয়েটসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছেন। ফলে কলেজটি পরিচিতি পেয়েছে উত্তরবঙ্গের বাতিঘর হিসেবে।
জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় ১৯৬৪ সালে সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি স্কুল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা। এরপর ১৯৭৭ সালে নামকরণ হয় সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজ। সাধারণ শিক্ষার কলেজ হলেও কারিগরি নাম থাকায় শিক্ষার্থীদের এত দিন নানা সমস্যায় পড়তে হতো। ফলে গত বছর কলেজটির নতুন নাম হয় সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষক ৩৪ জন, শিক্ষার্থী প্রায় এক হাজার। আর এ বছর এইচএসসিতে ২৫০ জনের সবাই জিপিএ ৫ পেয়েছে।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে এই কলেজের ৪৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন চলতি বছর পাস করা, বাকি তিনজন গত বছরের। ৪০ জনের মধ্যে ২১ জন ছাত্র এবং ১৯ জন ছাত্রী। গত বছরও এই কলেজ থেকে ৩৮ জন মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন; ২০১৯ সালে পেয়েছিলেন ৩৬ জন।
সাফল্যের কারণ জানাতে গিয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, শুধু মেডিক্যালে নয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আমাদের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায়। আমাদের শিক্ষকরা ডেডিকেটেড, শিক্ষার্থীরা কমিটেড। শিক্ষার্থীদের কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হয়। যেহেতু বিজ্ঞান কলেজ, ব্যবহারিকে জোর দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থী যদি খারাপ করে, তাহলে আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে কারণ অনুসন্ধান করি। এরপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যেই আমরা ভালো করার তাগিদ দেখতে পাই। মফস্বলের কলেজ হলেও আমরা করোনাকালে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করাচ্ছি।
কলেজের অধ্যক্ষ তাঁদের কিছু সংকটের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার সময়ে কলেজে একটি হোস্টেল নির্মিত হয়েছিল, যাতে মাত্র ১০০ ছাত্র থাকতে পারে। অথচ এখানে নীলফামারীর পাশাপাশি দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, রংপুর থেকে শিক্ষার্থীরা আসে। যদি আরো একটি ছাত্র ও একটি ছাত্রী হোস্টেল করা যায় তাহলে আবাসিক সংকট দূর হবে। এছাড়া কলেজটির প্রতি দিন দিন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়লেও আসন সীমিত। যদি আরেকটি একাডেমিক ভবন করে শিক্ষার্থীসংখ্যা বাড়ানো যায়, তাহলে আমরা আরো কিছু শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারব।