ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের ৭৭৪ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেট ও ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নতুন বাজেট অনুমোদিত হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে এই সংশোধিত ও নতুন বাজেট অনুমোদিত হয়।
সিনেট অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও নতুন অর্থবছরের বাজেট -দুটি ক্ষেত্রেই ঘাটতি থেকে গেছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের ৮৩১ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বাজেটে বেতন, ভাতা ও পেনশন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১১ কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা মোট ব্যয়ের ৭৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গবেষণায় বরাদ্দ (মঞ্জুরি) করা হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।
বাজেট বাস্তবায়নে ইউজিসি দেবে ৬৯৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে ইউজিসির বরাদ্দ ৫১ কোটি ৫২ লাখ টাকা কমবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাতগুলো থেকে আয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এসবের পরও বাজেটে ঘাটতি থাকবে ৭০ কোটি ২৫ লাখ টাকা (বাজেটের ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ)।
২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেট ছিল ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে তার আকার দাঁড়িয়েছে ৭৭৪ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুদান ছিল ৬৬৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। নিজস্ব আয় ৬০ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় ৪৭ কোটি ৫২ লাখ ৪২ হাজার টাকা (প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ)।
২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে ইউজিসির নিয়মিত অনুদান ছিল ৭৪৮ কোটি ৬ লাখ, যা পরে সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ৬৬৬ কোটি ৭৬ লাখ। করোনা মহামারির কারণে অনেক কাজ শুরু বা সম্পন্ন করতে না পারায় মূল বাজেটের কিছু অর্থ খরচ হয়নি। তাই সংশোধিত বাজেটে ৮১ কোটি ৩০ লাখ টাকা (১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ) কমানো হয়েছে। আগামী বছরের বাজেটে ইউজিসি থেকে সর্বশেষ বছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৫১ কোটি ৫২ লাখ টাকা (৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ) কম বরাদ্দ পাওয়া যাবে।
বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে বরাদ্দের বিষয়ে বক্তব্য দেন কোষাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রয়োজনে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে নিয়োজিত। সে জন্য পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য ইউজিসির মাধ্যমে সরকার যে অর্থ দেয়, তা অপর্যাপ্ত। ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে কোনো বরাদ্দ আসে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বাড়ছে। অথচ ইউজিসি অনুদান কমিয়ে দিয়েছে। এটি অপ্রত্যাশিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান নয়। ফলে নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়। প্রতিবছর এভাবে ঘাটতি হতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে।
অধিবেশনে উপাচার্যের অভিভাষণে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিভাগ-ইনস্টিটিউটগুলোর সক্ষমতা ও দেশ-আন্তর্জাতিক পরিম-লের চাহিদা বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা পুননির্ধারণের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে চ্যালেঞ্জিং।
উপাচার্য বলেন, গ্র্যাজুয়েটদের ব্যবহারিক-প্রায়োগিক কর্মদক্ষতা, ভাষা দক্ষতা ও করপোরেট শিষ্টাচারের জ্ঞান অর্জনসহ অধিকতর নিয়োগযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য গ্র্যাজুয়েট প্রমোশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট নামের একটি বিশেষ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। শতবর্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্বিতীয় শতবর্ষের উপযোগী বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা সবার নৈতিক ও পেশাদারি দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং নির্ধারণের সূচকগুলোর বিশেষ করে মৌলিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের উন্নয়ন না ঘটলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঢাবির অবস্থান এগোনো তো দূরের কথা, পেছানো অস্বাভাবিক নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে উপাচার্য বলেন, এসব কার্যকর হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষণার কাজ বেগবান হবে, যা শতবর্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে উঠতে ভূমিকা রাখবে।
ডাকসু মনোনীত শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হলো গবেষণা খাত। এই খাতটি যদি বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেত, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে হয়তো প্রথম ১০০-তে থাকত।
উপাচার্যের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের এই সভায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক খন্দকার বজলুল হক, সাদেকা হালিম ও জিনাত হুদা প্রমুখ।