হতাশামুক্ত উচ্ছল-উজ্জ্বল-আলোকিত জাতি গঠনে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র (সিএসডিসি)। এ কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠানে আমি যোগদান করি ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে। যোগদানের পর থেকে প্রতি মুহূর্তেই কিছু না কিছু শিখছি। কাজ শেখা থেকে শুরু করে সময়ানুবর্তিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, যুক্তিভিত্তিক আচরণ, সততা, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, সময়ের সদ্ব্যবহার -এসবের পাশাপাশি রয়েছে মেডিটেশন, ইয়োগা, আকুপ্রেশার, রিফ্লেক্সোলজি প্রভৃতি শেখা। আরও রয়েছে চলন-বলন শেখা, প্রোএকটিভ হতে শেখা, রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখা ইত্যাদি। এমনই অনেক-অনেক শেখার একটি বিশেষ শিক্ষা- ‘জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে রাখা’।
অনেকের কাছে মনে হতে পারে, এটা আবার শেখার বিষয়? মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ খুব কম মানুষই এমন বিষয় নিয়ে ভাবে।
আমার এ লেখার পরবর্তী অংশটুকু পড়ার আগে পাঠকের কাছে অনুরোধ- কিছু সময়ের জন্য চিন্তা করুনতো, জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে না রাখার ফলে অতীতে আপনি কি কি সমস্যায় পড়েছিলেন এবং জিনিসপত্র যথাসময়ে না পাওয়ার ফলে আপনার অনুভূতি কেমন হয়েছিল? কত মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছিল?
আমরা সবাই অফিস-আদালতে কিংবা বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে কাজ করি অর্থাৎ প্রয়োজনীয় নানা জিনিস ব্যবহার করি। কিন্তু খুব কমজনই কাজ শেষে জিনিসটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখি। নির্দিষ্ট স্থানে না রাখার ফলে পরবর্তীতে প্রয়োজনের সময় জিনিসটি পাওয়া যায় না, কিংবা অনেক খোঁজাখুঁজি করে পেতে হয়। আর অনেক খোঁজাখুঁজি মানে অনেক সময় ব্যয়, বিরক্ত, রাগ এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে উন্মাদনা! অথচ আমরা যদি কাজ শেষে জিনিসটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখি, তাহলে প্রয়োজনের সময় খুব সহজেই পেতে পারি। এতে যেমন সময় বাঁচবে তেমনি পরবর্তী প্রতিটি কাজে, প্রতিটি পদক্ষেপে আসবে অনাবিল আনন্দ, সুখ-সুখ আর সুখ।
বাসা-বাড়িতে কিংবা অফিসে আমরা প্রায়ই শুনে থাকি বা নিজেও বলে থাকি- আহ! সময়মত কোন জিনিস পাওয়া যায় না, কাজের সময় কোন জিনিস পাওয়া যায় না... ইত্যাদি। আবার এরকমও শোনা যায়, জিনিসটি কি উধাও হয়ে গেল নাকি! আসলে জিনিসটি উধাও হয়ে যায়নি, উধাও হয়ে গেছে আমাদের সচেতনতা। আর তাই এমন নেগেটিভ কথাবার্তা এবং নেগেটিভ এটিচিউড; যা আমাদের বিরক্তিরই বহিঃপ্রকাশ। আর এত বিরক্তির কারণ জিনিসপত্র রাখার ক্ষেত্রে অসচেতনতা তথা নির্ধারিত জায়গায় জিনিস না রাখার বদভ্যাস।
কেউ কেউ আছেন জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখেন, কিন্তু সময় না থাকার অজুহাতে নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন না। এটাও আসলে ঠিক সমাধান নয়। এর ফলে সময় আরও বেশি নষ্ট হয়। যেমন- গুছিয়ে রাখার জন্য সময় ব্যয় করতে হয় এবং দরকারের সময় খোঁজাখুঁজি করে আবারও সময় ব্যয় করতে হয়। অথচ আপনি যদি গুছিয়ে রাখার টার্গেট না করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার টার্গেট করেন, তাহলে আপনার গোছানোটা এমনিতেই হয়ে যাবে। না চাহিতে যারে পাওয়া যায়... -রবী ঠাকুরের সেই গানটির মত।
অনেকে আবার জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে রাখার দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে চান অন্যের ওপর। এটাও ঠিক নয়, কেননা যাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সে হয়ত ভুলেও যেতে পারে। তাই আপনি যে জিনিসটি ব্যবহার করেছেন, কাজ শেষে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার দায়িত্ব আপনারই। এজন্য কোন বাড়তি সময়ের দরকার হয় না, শুধু দরকার সচেতনতা। বাসা বা অফিসের সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে কাজ শেষে আবার নির্দিষ্ট স্থানে রাখার অভ্যাস করতে হবে।
একসময় আমিও উক্ত ব্যাপারে সচেতন ছিলাম না। ক্যাম্পাস-এ যোগদান করার পর আমাদের সম্পাদক এম হেলাল স্যারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে শিখেছি। এখন আমি অনেক সচেতন। যদিও মাঝেমধ্যে ভুল হয়ে যায়, তবুও প্রতি মুহূর্তে চেষ্টা করছি নিজেকে শোধরানোর। আশা করি, জিনিসপত্র নির্দিষ্ট স্থানে রাখার ব্যাপারে আমার সম্পাদক স্যারের মত আমিও সিরিয়াস হতে পারব।
সবশেষে আমার রচিত ছন্দে মিলানো চারটি লাইন দিয়ে এ লেখা শেষ করছিঃ
রাখ যদি জিনিস তুমি নির্দিষ্ট স্থানে
পাবে তা যথাসময় যথাস্থানে;
হবে না বিরক্ত তুমি, কত যে খুশি
বাঁচবে সময় তোমার, কাজে মন বেশি ॥
লেখকের ইমেইলঃ
Mridul30682@gmail.com
মোঃ মনিরুজ্জামান মৃদুল
সিনিয়র ডিজাইনার