একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে
একটি মানুষ, মানুষ হলে বিশ্বজগৎ টলে।
-কথাটা জানতাম, কিন্তু মানতাম না। ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে হেলাল স্যারকে দেখে উপরোক্ত সত্যকে মানতে বাধ্য হয়েছি। আমার এখন শুধুই মনে হয় ক্যাম্পাস -এ আমার আসাটা অনেক দেরি হয়ে গেছে। মনে হয়- আরো ১০ বছর আগে যদি আমি ক্যাম্পাস’র সাথে জড়িত হতাম, তাহলে আজ হয়তো নিজেকে সফল ও সার্থক মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম। মনে হয়, কেন যে আমি এতদিন ক্যাম্পাস’র খোঁজ পেলাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খুব শখ ছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। ক্যাম্পাস -এ এসে ঢাবিতে পড়তে না পারার দুঃখ ঘুচল। বিশেষ করে সম্পাদক মহোদয়ের যে সৎ ও দূর-দৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তা, ক্যাম্পাস পরিবারের যে দক্ষ অভিভাবকত্ব, যে সু-দক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা, ক্যাম্পাস পরিবারের সদস্যদের বন্ধুত্বসুলভ আচরণ এবং সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা -এসব গুণাবলী যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
এতক্ষণ পর্যন্ত যে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বললাম, সেটা হল আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা বা ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (CSDC), যার সাথে আমার পরিচয় হয় ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর। হঠাৎ একদিন কম্পিউটার বিচিত্রায় দেখলাম, ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিং -এর একটি খবর। তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা পরিচালিত এবং ৮২তম ব্যাচ। বিশ্ববিদ্যালয় নামটা দেখে বেশি পুলকিত হয়েছিলাম। ভাবলাম, নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত কিছু হবে। সাথে সাথে ফোনে যোগাযোগ করি। পরের দিন অফিসে এসে ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে ভর্তি হয়ে যাই।
প্রথম দিনের Impression ছিল অত্যন্ত চমৎকার। বুঝতে পারলাম, শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে নিবেদিত এবং ছাত্র-যুবকদের আত্মোন্নয়ন ও দিক-নির্দেশনায় এক অনন্য প্রতিষ্ঠান এ ক্যাম্পাস। ডিসেম্বরের ২০ তারিখ থেকে আমি ফ্রি কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ৮২তম ব্যাচে কম্পিউটার ক্লাস শুরু করি। ট্রেনিং ক্লাসে একদিন বলা হল, প্রত্যেক বছর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস -এর ক্যালেন্ডার ক্যাম্পেইন হয় এবং সেটার জন্য পকেটমানিও দেয়া হয়। এ ক্যাম্পেইনের জন্য আগ্রহীদের হাত তুলতে বলা হল। অনেকের সাথে আমিও হাত তুললাম এবং আগ্রহীদের তালিকায় নাম লেখালাম। বলা হল ২৮ তারিখ থেকে ক্যাম্পেইন শুরু হবে এবং সকাল ৮-৩০ মিনিটের মধ্যে অফিসে আসতে হবে। ২৮ তারিখে সকাল ৮-৩০ মিনিটে আমি অফিসে আসলাম। এসে দেখি অফিস স্টাফ ছাড়া ক্যাম্পেইনের কোন লোকজন নেই। সহকারী পরিচালক রনি ম্যাডাম আমাকে বললেন, আপনি কি ক্যাম্পেইনের জন্য এসেছেন? আমি বললাম, হাঁ। তিনি জানালেন, আমরাতো সবাইকে ফোন করে বলে দিয়েছি যে আমাদের ক্যাম্পেইন ২৮ তারিখ হবে না, জাতীয় নির্বাচনের কারণে। ৩১ তারিখ থেকে ক্যাম্পেইন শুরু হবে। আপনার ফোন নাম্বার দেয়া ছিল না, তাই আপনার req. number -এ জানিয়ে দিয়েছি। বললাম, ঠিক আছে, আমি চলে যাচ্ছি।
এর মধ্যে সম্পাদক মহোদয় অফিসে এসেছেন এবং আমাকে বসা দেখে রনি ম্যাডামের কাছ থেকে আমার আগমনের উদ্দেশ্য জানলেন। পরবর্তীতে ম্যাডাম এসে আমাকে জানান যে, স্যার আপনাকে ডেকেছেন। আমি সম্পাদক মহোদয়ের রুমে গেলাম। স্যার আমাকে বসতে বললেন এবং আমার background জানতে চাইলেন। আমি সব বললাম। স্যার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন কি করছ। আমি বললাম- স্যার, আমি বেকার আছি, চাকরি খুঁজছি। স্যার তখন জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কাজ করতে চাও? বললাম- স্যার, আপনি যদি আমাকে সুযোগ দেন তাহলে করব। স্যার বললেন, তাহলে প্রথম ৬ মাস শিক্ষানবিশ হিসেবে থাক। আমি রাজি হয়ে গেলাম। সেই থেকেই ক্যাম্পাস পরিবারের একজন সদস্য হয়ে কাজ করছি।
সত্যি কথা বলতে কি, এখন আমার কাছে ক্যাম্পাস পরিবারের সদস্য বলে পরিচয় দিতে গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে। কারণ এই ক্যাম্পাস’র সুবাদেই আমি অর্থ,অভিজ্ঞতা, সাহস, সততা, আত্মবিশ্বাস, পরিচিতি -অনেক কিছু পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এমন একটা নাম, যেখানে যাই সেখানেই মানুষ ক্যাম্পাস’র কর্মকান্ডের প্রশংসা করে। আমি এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সাথে কথা বলি, ঢাকা শহরের সমস্ত বেসরকারি কলেজের প্রিন্সিপালদেরকে নিয়ে আমি ডিল করি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান-এমডিদের সাথে দেখা করি, কথা বলি। সবাই আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন, কথা বলেন, আপ্যায়ন করান। এখানে কাজ করার সুবাদে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ অনেক জেলায় ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছে আমার। ক্যাম্পাসই আমাকে এ সুযোগ করে দিয়েছে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জজকোর্ট, ডিসি অফিস, এসপি অফিসসহ সকল সরকারি স্থাপনাগুলোতে ক্যালেন্ডার ক্যাম্পেইনে গিয়ে আমার অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক ডিসি, এসপি, জজ, বিচারপতি, মেয়রের সাথে আমার কথোপকথন হয়েছে, যা ক্যাম্পাস’র সাথে যুক্ত না হলে কোনদিনই সম্ভব হত না। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য বিরাট অর্জন। ক্যাম্পাস-এ আসার আগে আমি কখনো সংসদ ভবনের ভিতরে যাইনি, যাইনি বাংলাদেশ সচিবালয়ে। কিন্তু ক্যাম্পাস’র সুবাদে আমি বেশ কয়েকবার সচিবালয়ে গিয়েছি, সংসদ ভবনে গিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আমার জীবনের অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। আমি ক্যাম্পাস-এ আসার আগে খুবই হতাশা ও নিরাশায় ছিলাম। কিন্তু ক্যাম্পাস-এ এসে আমি সম্পাদক মহোদয়ের অনুপ্রেরণায়, তাঁর উদ্দীপিত পরিচালনায় আমার হতাশা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমি এখন আশাবাদী এবং প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী। আমার এ প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছেন সম্পাদক মহোদয়। স্যার আমাকে সবসময় বলেন, ‘তুমি পারবেই’। স্যারের প্রেরণা থেকেই আমি শক্তি সঞ্চয় করেছি।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস -এ সম্পাদক মহোদয় একটা দক্ষ কর্মীবাহিনী এমনভাবে গড়ে তুলেছেন, যা যে কাউকেই মুগ্ধ করে, আন্দোলিত করে। বিশেষ করে এখানে স্টাফদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। কেউ বড় পদে বা কেউ ছোট পদে চাকরি করে -এ দৃষ্টিকোন থেকে কেউ কাউকে দেখে না। ব্যক্তি হিসেবে, মানুষ হিসেবে দেখে। সকল ক্ষেত্রে সবাই সবাইকে সমান মূল্যায়ন করে, সম্মান করে। এখানকার সবার প্রতি সবার সহযোগিতা, সহমর্মিতা চমৎকার, যা অন্যত্র বিরল। এখানে সবাই স্মার্ট, সবাই সৎ চিন্তা করে, সততার চর্চা করে। বিশেষ করে এখানে আমাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে ধর্মকর্ম ও ন্যায় নিষ্ঠার প্রতি সম্পাদক মহোদয়ের তাগিদ। তাঁর কথা হল- যিনি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ধর্মের কর্ম না করে এখানে আসার দরকার নাই। সম্পাদক মহোদয় বরাবরই বলে থাকেন, তুমি কাজ কম পার বা না পার তাতে সমস্যা নেই, আগ্রহ থাকলে সবকিছুই আস্তে আস্তে শেখা হয়ে যাবে। কিন্তু তোমাকে নামাজ এবং সৎ চিন্তা -এই দু’টো বিষয়কে ১০০% নিশ্চিত করতে হবে। যদি তুমি সে নিশ্চয়তা দিতে পার, তাহলে আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, তুমি সফল হবেই, যতদিন ক্যাম্পাস থাকবে ততদিন তুমি থাকতে পারবে।
এ বিষয়ে আমি একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। জানুয়ারিতে আমি সিলেটে ক্যালেন্ডার ক্যাম্পেইনে গিয়েছিলাম একজন শিক্ষানবিশসহ, রাতে মডার্ণ হারবাল গ্রুপ -এর ডিভিশনাল চিফ মি. শাকেরের অতিথি হয়ে ছিলাম। সকালে উঠে ক্যাম্পেইনের জন্য সিভিল সার্জনের অফিসে প্রবেশ করেছি মাত্র, এমনি সময় সম্পাদক মহোদয় ঢাকা থেকে ফোন দিলেন। স্যার সর্বপ্রথম জিজ্ঞাসা করলেন, ফজরের নামাজ পড়েছ কিনা। আমি সত্য কথা বললাম, না পড়িনি। স্যার বললেন- ক্যাম্পেইন করা লাগবে না, তোমরা চলে আস। শেষে বললেন, এখনই কাজা নামাজ পড়ে নাও। নামাজ পড়া ছাড়া কোন কাজ ধরবে না। তখন আমরা কাজা নামাজ পড়ে নিলাম।
বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করেছি। কিন্তু এরকম একটি সুশৃঙ্খল এবং সুসংবদ্ধ টিম আমি খুব কম দেখেছি। এখানে সম্পাদক মহোদয় স্টাফদের self development -এর জন্য যে ভূমিকা রাখেন, বিশেষ করে প্রত্যেক শনিবার ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত প্রত্যেক স্টাফের ব্যক্তিত্ব ও আত্মোন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ, বিকাল বেলা ধ্যান এবং যোগ ব্যায়াম করা স্টাফদের জন্য বাধ্যতামূলক। অফিসের কাজ বাদ দিয়ে হলেও এগুলো করতে হয়। অথচ অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা চান শুধু কাজ আর কাজ, স্টাফদের মানসিক শক্তি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির কথা ভাবার ফুরসত নেই তাদের। এখানেই অন্যদের সাথে ক্যাম্পাস’র পার্থক্য। প্রিয় ক্যাম্পাস, তুমিই তোমার তুলনা।
পরিশেষে এটুকুই বলব যে, ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক মহোদয় আমাকে ক্যাম্পাস’র মত প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে superior human being হওয়ার পথে এগিয়ে দিয়েছেন -তাই আমি স্যারের কাছে চিরঋণী।
মোঃ মহিন উদ্দিন
সিঃ এক্সিকিউটিভ