॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর -২২ ॥
অধ্যায় ৫
॥পর্ব ১॥
চেহারা দেখে রোগ চেনা
কনফুসিয়াসের সময় চাইনিজ ডাক্তারগণ প্রাচীন একটি পদ্ধতি ‘ফেস রিডিং’ অর্থাৎ মুখ দেখে রোগ নির্ণয় করতেন। তারা বুঝেছিলেন যে মুখমন্ডল মানুষের শক্তি, স্বাস্থ্য ও ভাগ্য নির্দেশ করে।
মুখমন্ডল হলো মনের আয়না। মুখের বিভিন্ন লাইন, রেখা ইত্যাদি দেখে বিভিন্ন অসুবিধা এবং রোগ নির্ণয় করা যায়। উদাহরণস্বরূপ নিম্নে কয়েক রকম ফেইসের বর্ণনা দেয়া হলো।
উড ফেসঃ এ ধরনের মানুষের মুখমন্ডল ও নাক হয় লম্বা, কপাল চওড়া ও উঁচু, গাল সরু বা চিকন। এরা লিভার ও গলব্লাডারের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এর সাথে মাথাব্যথা, হজমের সমস্যা, পিত্তথলীতে পাথর ও আলসার দেখা দেয়। এ অবস্থায় এদের তেলজাতীয় গুরুপাক খাবার এবং এলকোহল এড়িয়ে চলা উচিত। পিত্তথলীতে যাতে পাথর না হয়, এজন্য প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
ফায়ার ফেসঃ এ ধরনের মানুষের মুখ লম্বাটে ও সরু বা চিকন, গালের হাড় খুব উঁচু, চিবুক সরু এবং উড ফেইসের মানুষের চেয়ে এদের কপাল উঁচু। এদের হৃদরোগ, দুঃশ্চিন্তা, অনিদ্রা বা ত্বকের সমস্যা থাকতে পারে।
ফায়ার ফেস লোকদের খাদ্য তালিকায় তিতাজাতীয় সব্জি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা রক্তের পুষ্টি বাড়ায়; যেমন করলা, কালোমেঘ, চিরতা ইত্যাকার খাবার।
আর্থ ফেসঃ আর্থ ফেস হলো ছোট, চৌকোণা আকৃতির এবং চোয়াল বেশ স্পষ্ট, মুখমন্ডল পান্ডুর বা ফ্যাকাশে বর্ণের, দেহ পুরু ও শক্ত সমর্থ, কণ্ঠস্বর ভারী বা গম্ভীর। এদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। যেমন খাদ্যের সমস্যা, পাকস্থলী ও প্লীহার সমস্যা, অসুবিধা, খাদ্য হজমঘটিত সমস্যা এবং পরিপাককৃত খাদ্য পরিবহনে সমস্যা। এদের নিরামিষ জাতীয় খাদ্য, ফলমূল এবং প্রচুর পানি পান করা উচিত। তাছাড়া নিয়মিত ইয়োগা চর্চার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনকে ঠিক রাখা উচিত।
মেটাল ফেসঃ এরূপ মানুষের মুখ ডিম্বাকৃতি বা ওভালো আকৃতির এবং একটু চ্যাপ্টা ধরনের, গালের হাড় ‘ভি’ আকৃতির এবং চেহারায় মলিন ভাব থাকে। এরূপ মানুষরা যখন দুঃখিত হয় বা বিষন্নতায় ভোগে, তখন তাদের নানারকম জটিলতা দেখা দেয়। যেমন শ্বসনতন্ত্রের সমস্যা এবং লোয়ার ইনটেস্টাইনের জটিলতা। এসময় তাদের মিনারেলসমৃদ্ধ ভালো ভালো খাবার খাওয়া উচিত এবং জাংক ফুড বা ফাস্ট ফুড থেকে দূরে থাকা উচিত।
ওয়াটার ফেসঃ এ ধরনের মানুষের মুখ হয় গোলাকার, নাদুশ-নুদুশ, নরম; কিছুক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত গোলাকার দেহও দেখা যায়। উত্তেজনা ও গভীর অনুভূতির ফলে অনেক সময় এদের কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে চাপের ভেতর থাকলে, বিশেষ করে মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত কাজের চাপ থাকলে কিডনি আক্রান্ত হয়। এজন্য এদের অতিরিক্ত পরিশ্রম, অতিরিক্ত কফি এবং রিচ ফুড হতে দূরে থাকার পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করা উচিত।
আঙুল দেখে রোগ নির্ণয়
মানুষের হাতের আঙুল বা আঙুলের দৈর্ঘ্যরে সঙ্গে মোটর নিউরন রোগের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিয়ে গবেষণার পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাতের আঙুল দেখে মানুষের বিশেষ ধরনের কিছু রোগ শনাক্ত করা সম্ভব। এ বিষয়ে গবেষণার ফল নিউরোলজি, নিউরো সার্জারি এন্ড সাইকিয়াট্রি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় জানা যায়, মানুষের আঙুল দেখে রোগ শনাক্ত এবং আঙুলের দৈর্ঘ্যরে অনুপাত বিশেষভাবে সম্পর্কিত। গবেষকরা ১১০জন মানুষের আঙুলের দৈর্ঘ্য মাপেন। এদের মধ্যে ৪৭ জন মোটর নিউরন রোগের সবচেয়ে পরিচিত রূপ এমিওট্রোপিক ল্যাটারাল ক্যারোসিসে (এএলএস) আক্রান্ত। এর ফলে পাশের কোষকলায় কাঠিন্য তৈরি হয়, যা স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে। গবেষকরা বলছেন মানুষের চতুর্থ আঙুল, তর্জনী এবং এএলএসের মধ্যে যোগসূত্র আছে। মানুষের আঙুলগুলোর মধ্যকার অনুপাত তাদের বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যেমন খেলাধুলায় দক্ষতা এবং বৈরী আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। আর শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময়ই তাদের এসব আচরণ নির্ধারিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কোনো শিশুর চতুর্থ আঙুল ও তর্জনী তুলনামূলক লম্বা হলে বোঝা যায়, জন্মের আগে টেস্টোসটেরন হরমোন তাদের ক্ষেত্রে কী রকম প্রভাব ফেলেছে। বাস্তবেও দেখা যায়, ছেলেদের হাতের অনামিকা তাদের তর্জনী অপেক্ষা লম্বা। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটর নিউরনের টিকে থাকা এবং পুনর্গঠনের জন্য টেস্টোসটেরন হরমোন প্রয়োজন। আর যেসব মানুষ টেস্টোসটেরন হরমোন ব্যবহার করার সক্ষমতা নিয়ে জন্মায় না, তাদের ক্ষেত্রে মোটর নিউরনের ক্ষয় দেখা দেয়।
হার্ট এটাকের পূর্বাভাস
রক্ত পরীক্ষা করেই ভবিষ্যতে কারও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আভাস পাওয়া যেতে পারে। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে সার্কুলেটিং এন্ডোথেলিয়াল সেলস (সিইসি) বা প্রবাহিত রক্তকোষ অস্বাভাবিক গঠনের থাকে। আর এগুলোই ভবিষ্যৎ হৃদরোগের ঝুঁকির আভাস প্রায় নির্ভুলভাবে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস ট্রান্সলেশনাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গবেষকরা দেখেছেন হার্ট এটাক রোগীদের এনডোথেলিয়াল রক্তকোষ অস্বাভাবিক বড়, অনেকটা বিকৃত এবং কখনো কখনো এদের একাধিক নিউক্লিয়াস থাকে। রক্ত কণিকার এ ধরনের গঠন হার্ট এটাকের আগাম বার্তা দেয়। ধূমপান, মুটিয়ে যাওয়া, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস প্রভৃতি হার্ট এটাকের সম্ভাব্য কারণ। এসব ব্যাপারে সাবধান হলে হার্ট এটাকের ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ক্ষত থেকে ক্যান্সার
কথায় আছে সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে এ কথাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য অবহেলা বা সতর্কতার অভাবে হতে পারে অনেক বড় ক্ষতি। যেমন সামান্য একটু ক্ষত সময়মতো চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে না উঠলে ঘটতে পারে মৃত্যু। গবেষণায় জানা গেছে ক্যান্সারের একটি বড় কারণ ক্ষত বা ইনফেকশন। ক্যান্সার রোগীদের ছয় ভাগের এক ভাগই সংক্রমণ থেকে আক্রান্ত হয়। অথচ এসব সংক্রমণের বেশিরভাগই চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব।
নাক ডাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি
ঘুমের মধ্যে যদি কারো নাক ডাকার অভ্যাস থাকে, তাহলে তার চিকিৎসা করানো উচিত। কারণ বছরের পর বছর ধরে যে সমস্যাটি আমাদের কাছে কখনো রোগ বলে মনেই হয় না, সেই সামান্য সমস্যাটি কিন্তু শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। সঙ্গে এটিও মনে রাখতে হবে, রাত্রিকালীন একটু আধটু সমস্যা বলে মনে হওয়া এই নাক ডাকার ব্যাপারটি আসলে অনেক বড় একটি রোগ এবং কমপক্ষে আরো চারটি মারাত্মক রোগের সঙ্গে এর সহাবস্থান।
মানুষ নাক ডাকে স্লিপ এপনিয়া রোগের কারণে। স্লিপ এপনিয়া হলো ঘুমন্ত অবস্থায় রক্তে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস-প্রক্রিয়ার সাময়িক বাধা। এর কারণে নাক ডাকার পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা, মুটিয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস ও হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ হতে পারে; এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন এর বিজ্ঞানী ড. জ্যাভিয়ার নিয়েতোর এ বিষয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। তাতে দেখা গেছে ঘুমজনিত কোনো রোগ নেই, এমন ব্যক্তির চেয়ে নাক ডাকা ব্যক্তির ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫ গুণ বেশি।
নাক ডাকা শিশুর আচরণে সমস্যা
কোনো শিশু যদি ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় শ্বাসকষ্টে ভোগে, তাহলে সে শিশুর আচার-আচরণে সমস্যা ও অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে ১১ হাজার শিশুর ওপর পরিচালিত এক সামাজিক গবেষণায় এ কথা জানা গেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইয়েশিবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিসিন কলেজের মনোরোগ চিকিৎসক ডাঃ বোনাক।
গবেষণা সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে, শতকরা ১০টি শিশু ঘুমের ঘোরে নাক ডাকে। এছাড়া শতকরা ২ থেকে ৪টি শিশু ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ভোগে। গবেষকরা ৬ থেকে ৭ বছর বয়সের এ শিশুদের আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে প্রমাণ পেয়েছেন নাক ডাকা ও ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশুরা খিটখিটে মেজাজের হয়; তারা বেশি চিৎকার-চেঁচামেচি করে।
ডাঃ বোনাক আরও বলেন, ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা কিংবা ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুর শ্বাসকষ্টের কারণে তাদের নানা সমস্যা হতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যাওয়া, শরীরে ক্ষয়পূরণে সমস্যা হওয়া, মস্তিষ্কের কোষে রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি। এ সমস্যাগুলোতে অনেকদিন ভুগতে ভুগতে শিশুর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।
দীর্ঘভ্রমণে শারীরিক সতর্কতা
দীর্ঘভ্রমণে রক্তনালিতে রক্তের জমাট পিন্ড দেখা দিতে পারে, বড় ঝুঁকি হতে পারে জীবনের। ভ্রমণ যত দীর্ঘ হয়, বিপদ তত বাড়ে। এই বিপদের নাম ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম। পায়ের শিরায় জমাট বাঁধে যে রক্তপিন্ড, জমাট রক্ত থেকে ছোট টুকরো ভেঙে যদি শিরাপথে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছে, তাহলে ভয়ানক বিপদ।
বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল এনালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত নিবন্ধে দেখা গেছে, ভ্রমণ করলে রক্তের জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বাড়ে তিনগুণ। আর আকাশ ভ্রমণে এসব বিপদের সম্ভাবনা খুবই জোরালো। উড়োজাহাজে প্রতি দু’ঘণ্টা বাড়তি ভ্রমণে রক্তের জমাট পিন্ড বাঁধার ঝুঁকি বাড়ে ২৬ শতাংশ। যাত্রীরা ভ্রমণের সময় দীর্ঘক্ষণ নিশ্চল থাকেন বলে এমন দুর্ঘটনা ঘটে। তাই এসব এড়াতে হলে ভ্রমণে মাঝে মধ্যে প্লেনের ভেতর বা ট্রেনে হাঁটতে হবে এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে।
মাংসপেশিতে টান পড়লে
মানব শরীরের ভেতরে মাংসপেশির কিছু না কিছু অংশ কখনো কখনো ছিঁড়ে যায়; ছিঁড়তে পারে রক্তনালিও। এরূপ আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ব্যবস্থা নিলে দু’টো বিষয়ই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন আক্রান্ত স্থানে বরফ লাগালে, আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নড়াচড়া না করলে। সাধারণত আক্রান্ত অংশ একটু হলেও ফুলে যায়। ফোলা অবস্থায় কখনোই গরম সেঁক দিতে হয় না। তবে ফোলা কমে গেলে গরম সেঁক দেয়া যেতে পারে।
আক্রান্ত অঙ্গ যত কম নড়াচড়া করা যায়, ততই ভালো। যেমন পায়ের পেশিতে টান লাগলে হাঁটাচলা কম করতে হবে। হাঁটার সময় ক্র্যাচ ব্যবহার করা উচিত। হাতে ব্যথা হলে ভারি কোনো কিছু বহন বা ওঠানো যাবে না। লেখালেখির মতো স্বাভাবিক কাজ থেকেও বিরত থাকা ভালো।
আক্রান্ত স্থানে প্রতিদিন ২ ঘণ্টা পর পর অন্তত ২০ মিনিট করে বরফ লাগাতে হবে। বরফ সরাসরি ত্বকের ওপর দিতে হয় না; বরফের টুকরো কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে তারপর দিতে হয়।
শুয়ে থাকার সময় আক্রান্ত অঙ্গ একটু উঁচুতে রাখতে পারলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। যেমন পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে রাখা যায়।
এভাবে একটু সচেতন থাকলে স্বাস্থ্যগত বহু সমস্যার সহজ সমাধান আমরা নিজেরাই করে ফেলতে পারি। ডাক্তারের গলদঘর্ম পরিশ্রম লাঘবে আমরা রোগী বা রোগীর অভিভাবকরা বহু অনুকূল ভূমিকা রাখতে পারি। ... and thus we can also be our own Doctor.
নাভিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত রাখুন
আমাদের শরীরের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, যেগুলো দীর্ঘসময় আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে থেকে যায়। কালেভদ্রে আমরা সেদিকে নজর দেই বা কেউ তা মনে করিয়ে দিলে সে বিষয়ে সচেতন হই; যেমন নাভি। নিয়মিত নাভির যত্ন-আত্তি করে, এমন মানুষ খুব কমই আছে। গোসলের সময় দেহের এ অংশটি ধোয়া-মোছার বাইরেই থেকে যায়।
অণুজীব বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন নিয়মিত নাভিকু- বা নাভির গর্ত পরিষ্কার না করলে সেখানে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। দেহভেদে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৬০০ পর্যন্ত জানা-অজানা সব ব্যাকটেরিয়া অবস্থান করে নাভিমূলে। তাই শরীর ১০০ ভাগ সুস্থ রাখতে দেহের ছোট্ট এ অংশটি নিয়মিত পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
নাকে বা কানে কিছু ঢুকলে
শিশুরা সহজাতভাবেই নাক বা কানের মধ্যে এটা-ওটা ঢোকাতে পারে। আবার বড়দের ক্ষেত্রেও অসাবধানতাবশত ঢুকে যেতে পারে কিছু। শস্যদানা ও বনজ যেমন ছোলা, মটর, বাদাম, শিমের বিচি, তেঁতুল বিচি, পাতার অংশ, ধান; কিংবা অন্যান্য জিনিস যেমন পুঁতি বা ছোট্ট বল, ছোট পাথরের টুকরো, বোতাম, কাগজ, মুড়ি, টিস্যু পেপার, ইরেজার অথবা মশা-মাছি, উকুন ইত্যাদি ঢুকতে পারে।
নাকের মধ্যে যে ধরনের সমস্যা দেখা যায়ঃ নাকের মধ্যে কোনো কিছু ঢোকানোর ঘটনা সাধারণত শিশুদের মধ্যেই দেখা যায়। এ কারণে কোনো শিশুর নাক দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত শ্লেষ্মা ঝরলে প্রথমেই তার কারণ হিসেবে বাইরের কোনো বস্তু দায়ী কিনা, সেটা দেখা উচিত। শিশুরা খেলাচ্ছলে কিংবা অবসরে হাতের কাছে কিছু পেলেই নাসারন্ধ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়। নাকের মধ্যে শরীরের অংশ নয় এমন কিছু ঢুকলে তার বাইরে শ্লেষ্মা জড়িয়ে নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সেখানে জীবাণু বাসা বাঁধার কারণে ইনফেকশন হয়। তখন নাক থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বেরিয়ে আসে। অনেক সময় এসব বস্তু নাকের ভেতরের নিঃসরণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পাথরের সৃষ্টি করে। যাকে বলা হয় রাইনালি বা নাকের পাথর। তবে এর বাইরে নাকে আঘাত কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে নাকের মধ্যে বাইরের বস্তু ভেতরে ঢুকে থাকতে পারে।
নাকে কোনো কিছু ঢুকলে যেভাবে বুঝবেনঃ সাধারণত অভিভাবকরাই প্রথমে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে চিকিৎসকের কাছে আসেন। অনেক সময় বড় শিশু নিজেই বিষয়টি বাবা-মাকে বলে থাকে।
চিকিৎসাঃ নাকে কিছু ঢুকলে প্রথম কাজ হবে সেটিকে নাক থেকে বের করে আনা। এজন্য অনেক সময় শিশুটিকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে। তবে কখনো কখনো অচেতন না করেই বের করা যায়। এটি বের করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ সার্জন। নাকের এমন সমস্যায় দেরি করা উচিত নয়। দেরি করলে ঘুমের মধ্যে কিংবা অন্য সময়ে নাক থেকে বস্তুটি ফসকে গিয়ে শ্বাসনালিতে ঢুকে অবস্থা আরও জটিল করে তুলতে পারে।
কানের মধ্যে কোনো কিছু ঢুকলে কী হয়ঃ রোগী নিজেই প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারেন। কানের মধ্যে বাইরের কোনো কিছু ঢুকলে বস্তুর ধরন অনুযায়ী উপসর্গ দেখা দেয়। কীটপতঙ্গ ঢুকলে খুব ব্যথা হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে কান বন্ধ হয়ে যায়, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, দুর্গন্ধ হয়। তাছাড়া অস্বস্তিতো আছেই।
কানে কিছু ঢুকলে করণীয়ঃ কী করতে হবে, সেটি নির্ভর করে কানে কী ঢুকেছে তার ওপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে অচেতন করে নিতে হয়। বিশেষ করে শিশুদের অচেতন করে নেয়াই ভালো; কারণ অচেতন না করে কানের মধ্যে কাজ করতে গেলে কানে আঘাত লাগতে পারে। এসবক্ষেত্রে কখনোই হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত নয়। নিজেরাও বের করার চেষ্টা না করাই ভালো। অদক্ষ হাতে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া এ ধরনের কাজ করতে গেলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। অজ্ঞতাবশত অযাচিত খোঁচাখুঁচির জন্য কানের পর্দা ফুটো হয়ে বাইরের বস্তুটি মধ্যকর্ণে ঢুকে যেতে পারে। তখন এটি বের করে আনা আরও জটিল হয়ে যায়।
স্ট্রোক প্রতিরোধের ১০টি উপায়
-যারা ধূমপান করেন, ধূমপান ছেড়ে দিন।
-যারা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করান। অনিয়মিত ঔষধ সেবন ও রক্তচাপ ওঠানামা স্ট্রোকের কারণ।
-মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশান, হার্ট ফেইলিউর, এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, এন্ডোকার্ডাইটিস, মাইট্রাল ভাল্বে সমস্যা থাকলে স্ট্রোক হতে পারে। এর কোনোটি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
-যাদের ডায়াবেটিস আছে, তারা নিয়মিত ঔষধ সেবন করবেন।
-রক্তে ক্ষতিকারক চর্বির আধিক্য থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চর্বিজাতীয় খাবার কম খান; নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন কমানো এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঔষধ সেবনের মাধ্যমে রক্তের চর্বি স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসার চেষ্টা করুন।
-মদ্যপান পরিহার করুন।
-জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি পরিহার করে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
-রক্তে লোহিত কণিকার আধিক্য থাকলে এর চিকিৎসা নিন।
-একবার স্ট্রোক হয়ে থাকলে দ্বিতীয়বার স্ট্রোক প্রতিরোধে স্ট্রোকের জন্য সহায়ক কারণগুলোর চিকিৎসা করান।
-দুশ্চিন্তামুক্ত, সুন্দর ও সাধারণ জীবনযাপন করুন।
মাজলে দাঁত ভালো থাকে হার্ট
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখের বিভিন্ন রোগের কারণে হৃদরোগ ও স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া যেকোনোভাবে রক্তের সঙ্গে মিশে হৃৎপিন্ডে চলে যেতে পারে এবং হৃদরোগ ঘটাতে পারে। আবার মাড়ির রোগের কারণে বা ক্যারিজে আক্রান্ত দাঁতের গোড়াতে পুঁজ জমে থাকায় ব্যাকটেরিয়াগুলো রক্তের মাধ্যমে হৃৎপিন্ডের মিশে হৃদরোগ ঘটাতে পারে।
বারডেম হাসপাতালে ডেনটিস্ট্রি বিভাগের গবেষণায় দেখা গেছে মাড়িতে প্রদাহজনিত কারণে হৃদরোগ বা করোনারি হার্ট ডিজিজ, মাইয়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অধিক পরিমাণে বাড়ে। তাই মুখের ভেতরে কোনো ধরনের প্রদাহ, বিশেষত মাড়ির রোগ যাতে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মুখের রোগের কারণে মুখে যেমন স্থায়ীভাবে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে, তেমনি শরীরের জন্যও বিপদ নিয়ে আসতে পারে। যেহেতু দাঁত ও মাড়ির সঙ্গে শরীরের রক্ত চলাচলের সম্পর্ক আছে তাই মুখের ইনফেকশন রক্তের সঙ্গে মিশে হৃৎপি-, মস্তিষ্ক, হাড়, সন্ধি, বৃক্ক, যকৃৎ ও চর্মের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। মুখের সংক্রমণজাতীয় রোগ থেকে আরও যেসব রোগ সৃষ্টি হতে পারে সেগুলো হলো হৃদরোগ, বাত, রোগের সন্ধিপ্রদাহ, উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি রোগ। মুখে রোগের কারণে শরীরে এসব জটিলতা দেখা দিতে পারে বলেই মুখ ও দাঁতের যত্ন নেয়া খুবই প্রয়োজন। এজন্য ফ্লুরাইড টুথপেস্ট দিয়ে দিনে অন্তত দু’বার দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
-সকালে ও রাতে খাওয়ার পর দাঁত ও মাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
-দাঁতের অথবা মাড়ির প্রদাহ থাকলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা প্রয়োজন, কারণ প্রদাহ শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
-নিয়মিত একটি জীবাণুনাশক ঔষধ মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ কুলকুচো করা প্রয়োজন (বিশেষত রাতে খাওয়ার পর ও ঘুমানোর আগে)।
-কোনো দাঁত না থাকলে, সে স্থান কৃত্রিম দাঁতের মাধ্যমে পূরণ করা প্রয়োজন।
-দন্ত চিকিৎসকের কাছে মুখ ও দাঁতের চিকিৎসার পূর্বে শরীরের অন্যান্য রোগের উপস্থিতি লক্ষ্য করা -প্রয়োজন। কারণ, ডেন্টাল সার্জারির আগে এন্টিবায়োটিকজাতীয় ঔষধ যেমন জরুরি, তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা নিশ্চিত করাটাও অত্যাবশ্যক।
-বছরে অন্তত দু’বার একজন দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্যে মুখ গহবরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
-চিকিৎসার আগে জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি, একবার ব্যবহারযোগ্য সূচ ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
-হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগ থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের পারস্পরিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে চিকিৎসা করানোই নিরাপদ।
-চলবে।