জঙ্গি কর্মকান্ডে শিক্ষার্থীদের নাম আসায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে নজরদারিতে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সচিবালয়ে নিজ দফতরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠকের আগে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে সরকার সচেতন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ প্রত্যেকের ওপর নজর রাখা হবে। তবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, জামায়াতের মানারাত, বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটিসহ একাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের নাম জঙ্গি হামলাকারীর তালিকায় আসলেও মন্ত্রণালয় সেখানে নীরব কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নর্থ সাউথ যেমন উদ্বেগের কারণ তেমনি অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সেখানকারও অনেক শিক্ষার্থীর নাম আসছে জঙ্গিদের তালিকায়। তাই কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর দিলে সঙ্কটের সমাধান হবে না। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এর আগেও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল। তখন কি সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি? এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আমরা সচেতন আছি। তাদের সঙ্গে আগেও বৈঠক করেছি, বহু আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, আজকে এ ঘটনাটা সকলকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে আগের ঘটনাটি এভাবে সকলকে নাড়া দেয়নি। এটা আমাদের নজরে নেই, তা কিন্তু নয়। ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একজন শিক্ষককে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। শোকজ করা হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শোকজের জবাব দিয়ে চলে গেছেন। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা ওখানে যে নজর রাখি না তা নয়। নর্থ সাউথে অনেক ক্ষেত্রে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। অনেক দিন ট্রাস্টি বোর্ডের কমিটিকে স্থগিত রেখেছি। প্রসেস কমপ্লিট না করা পর্যন্ত আমরা তাদের কনভোকেশন করতে দেইনি। সেখানে রাষ্ট্রপতি যাবেন সেটা আমরা অনুমোদন করিনি। এতে তাদের অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এখন নর্থ সাউথের বিষয়টি সবাই সার্বিকভাবে মনে করছেন। আমরাও সেভাবে গ্রহণ করেছি। আগে যে আমাদের (নজর) ছিল না তা নয়। যেভাবে ছিল সেভাবে মোকাবেলা করেছি। আজকের পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই আমরা ভিন্নভাবে মোকাবেলা করছি। শিক্ষা কার্যক্রমে এক সিমেস্টার অনুপস্থিত থাকলে ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যাবে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাদের এ সিদ্ধান্ত যথাযথ হয়নি বলেও জানান তিনি। বর্তমানে দেশে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ি পালিয়ে জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে তথ্য আসায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সরকার ও অভিভাবক মহলে। কোনো তরুণ বাড়ি পালিয়ে জঙ্গি দলে ভিড়েছে কি না- তা জানতে পরিবারের কাছে তথ্য চেয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী টানা দশ দিন অনুপস্থিত থাকলেই সে তথ্য সরকারকে জানাতে হবে।
উল্লেখ্য, জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষকদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি। প্রশ্নের মুখে পড়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিও। জঙ্গি হামলাকারী, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র হয়ে হামলার হুমকি দাতাদের তালিকায় চলে এসেছে আলোচিত এ প্রতিষ্ঠানের একের পর এক উগ্রবাদী ছাত্রের নাম। সম্প্রতি গুলশানে জঙ্গী হামলা চালানোর পর অভিযানে নিহত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী নিব্রাস ইসলাম নিহত হয়েছে। নিব্রাস যখন নর্থ সাউথে পড়ালেখা করে তখন সেখানকার শিক্ষক ছিলেন হামলার ঘটনায় আটক হাসনাৎ রেজা করিম।
শোলাকিয়ায় হামলা চালাতে গিয়ে নিহত জঙ্গি আবীরও নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী। একই বিতর্কে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। গুলশানে হামলাকারী নিহত জঙ্গিদের একজন রোহান ইমতিয়াজ ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। রোহান স্কলাসটিকায় পড়াশোনা শেষ করে পড়ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে। অন্যদিকে গুলশানে হামলার ঘটনার পর কথিত আইএসের বরাত দিয়ে বাংলাদেশি তিন তরুণের ভিডিও প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স। ভিডিও’র প্রথম তরুণ সাবেক নির্বাচন কমিশনার সফিউর রহমানের ছেলে তাহমিদ রহমান শাফি। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় তার বাড়ি। তাদের গ্রামের বাড়ি সিলেট। তাহমিদ নটরডেম কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছেন। এর পর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়েছেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এ ছাত্রকে নিয়েও চলছে হইচই। এরা ছাড়াও আরও অনেক তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন। যারা দেশের নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিখোঁজদের খুঁজতে সহায়তা চেয়েছে।