সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন ২০১৬ খসড়া করেছে মন্ত্রিসভা। সম্প্রতি সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। আইনে বলা হয়েছে, এই কাউন্সিলের সনদ ছাড়া এখন থেকে কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর উচ্চশিক্ষার সনদ দিতে পারবে না।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে এবং বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা দিতে এটা যুগান্তকারী আইন। এই কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে। এছাড়া তা বাতিল বা স্থগিতও করতে পারবে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামের নিয়ন্ত্রণও থাকবে এই কাউন্সিলের হাতে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন এমন একজন, যিনি শিক্ষার গুণগত মান সম্পর্কে অভিজ্ঞ; বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ১০ বছর অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। কাউন্সিলে ১৩ সদস্য থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন অধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষাবিদ কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য হবেন। বাকি আটজন খ-কালীন।
তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে এর কার্যক্রম সম্পূর্ণ আলাদা হবে। এই কাউন্সিল শুধু শিক্ষার মান যাচাইয়ের বিষয়গুলোই দেখবে। তাছাড়া ইউজিসি’র আইনটিও অনেক পুরনো। এটিও সংশোধন করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
এ্যাক্রেডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান এ্যাক্রেডিটেশনপ্রাপ্ত বলে প্রচার করতে পারবে না। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কাউন্সিলের দায়িত্ব ও কাজ তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে কনফিডেন্স সার্টিফিকেট বা ক্ষেত্রমতে এ্যাক্রেডিটেশন সার্টিফিকেট দেয়া বা স্থগিত করা, যদি মনে করেন দেয়ার মতো না তখন স্থগিত করবেন, বাতিল করবেন বা প্রদান করবেন। এ তিনটি তাদের প্রধান দায়িত্ব। এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠিত হলে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ্যাক্রেডিটেশনের কোনো দায়িত্ব ইউজিসি’র নেই। ইউজিসি’র আইনটি নতুনভাবে পুনর্বিন্যাস করে আনা হবে। ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাজেট, ফাইন্যান্স, জনবল দেখে থাকে। আর এদের কাজ কোয়ালিটি কন্ট্রোল অব দ্য এডুকেশন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষাবিদদের সুপারিশ অনুসারেই দেশের উচ্চশিক্ষার মান যাচাইয়ে হতে যাচ্ছে পৃথক এ প্রতিষ্ঠান। এর আগে গত মার্চে মন্ত্রিসভায় আইনটির খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন পায়। তবে সংসদে তোলার পর কিছু ধারা সংশোধনের জন্য তা আবার ফেরত আসে। সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করেই এবার মন্ত্রিসভায় পাঠানো হয়। জাতীয় শিক্ষানীতির ‘শিক্ষা প্রশাসন’ অধ্যায়ে বলা হয়েছিল উচ্চ শিক্ষার মান রক্ষা ও যাচাইয়ে গঠন করতে হবে ‘এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) কাউন্সিল।
শিক্ষানীতিতে আরও বলা হয়েছে, অপর দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদানকারী সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাননির্ণয় এবং তার ভিত্তিতে প্রতিবছর এগুলোর র্যাংকিং নির্ধারণ করা ও উন্নয়নের পরামর্শ দান করা হবে। উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যথাযথ ক্ষমতা ও দক্ষতা সম্পন্ন একটি এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হবে। খসড়া আইনে বলা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া ও শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করবে কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমের কারিকুলামের নিয়ন্ত্রণও থাকবে এই কাউন্সিলের হাতে। বলা হয়েছে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা বিভাগ খোলার জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করতে হবে। কাউন্সিলের সদস্যরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেবে। পরে কাউন্সিলই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও বিভাগ খোলার অনুমোদন দেবে।
সনদ বাতিলের বিষয়ে খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইনের শর্ত ভাংলে তাদের সনদ বাতিল হবে। এ্যাক্রেডিটেশন (স্বীকৃত) সনদ ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য-নির্দেশিকা প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সনদও দিতে পারবে না। কাউন্সিলের সদস্যরা কোনো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোন তথ্য গোপন করা যাবে না। ব্যবস্থা নেয়া হবে ভুল তথ্য দিলেও। সনদ বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অবশ্য রিভিউ আবেদন করতে পারবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করে আবেদনটি বিবেচনা করে দেখবে কাউন্সিল।