একটি কাপড় বা জুতা কিনতেই আমরা কত বাছবিচার করি। আর অতি প্রিয় গাড়িটি কিনতে গেলে তো চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। বহুমূল্যের এই বস্তুটি কেনার সময় ব্র্যান্ড, ফিচার, দাম এবং ভবিষ্যতে বিক্রি করতে গেলে কেমন দাম পড়বে ইত্যাদি নানা হিসাব-নিকাশ করতে হয়। ঝকঝকে আনকোরা বা সেকেন্ড হ্যান্ড যে গাড়িই কিনুন না কেন, সাধারণ গুটিকয়েক ভুল এড়িয়ে যেতে পারলেই আপনি ঠকবেন না, হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারেন। এখানে দেখে নিন মনের মতো গাড়িটি ঘরে আনার আগে যে সাতটি ভুল করা যাবে না-
১. অর্থের বন্দোবস্ত না করেই গাড়ি দেখতে যাওয়া : অনেকেই শুধু পছন্দ করতে গাড়ির বিভিন্ন শো রুমে ঢুঁ মারেন। সেখানে তৎক্ষণাৎ কোনো গাড়ি মন চুরি করে নিলে তা না কেনা পর্যন্ত মনের শান্তি উবে যাবে। তা ছাড়া গাড়ি পছন্দ হয়ে গেলে বিক্রেতা আর্থিক লেনদেনের ফাঁদে ফেলে দেবে। তাই আগে থেকেই ব্যাংক লোন বা ক্রেডিট ইউনিয়নের ব্যবস্থা না করে শো রুমে পা দেয়ার দরকার নেই।
২. কিস্তিতে কেনায় বেশি আগ্রহ থাকা : পছন্দের গাড়িটি নগদ কেনার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সবার মনে মাস শেষের কিস্তিটাই বেশি সহনীয় মনে হয়। একবারে তো আর এত টাকা চলে গেল না। কিন্তু কিস্তিতে কেনার পর একসময় বুঝবেন, আপনি যা পেয়েছেন এর চেয়ে অনেক বেশি দিতে হচ্ছে। তাই যতটা সম্ভব অর্থ পরিশোধ করে গাড়িটি নিয়ে আসুন।
৩. আড়ালের খরচ না দেখা : এটা সত্য যে নতুন গাড়ির স্টিকারে যা লেখা রয়েছে তা কিন্তু আপনার মোট খরচ নয়। শুধু গাড়ির দামের সঙ্গে ট্যাক্স, লাইসেন্স ফি, ইন্টারেস্ট, ইনস্যুরেন্স, পরিচর্যাসহ তেলের খরচটাও ভুলে গেলে চলবে না। এসব খরচ যোগ দিয়ে দেখুন গাড়ির মূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকে।
৪. হোমওয়ার্ক না করা : একজন স্মার্ট ক্রেতা গাড়ি কেনার আগে সব প্রশ্নের তালিকা নিয়ে হোমওয়ার্কে বসেন। প্রাইভেট কারটি কিভাবে ব্যবহৃত হবে বা প্রতিদিন কী কাজে লাগবে, যাত্রীবাহী মাইক্রো বাস কিনলে তা কতটুকু পথ প্রতিদিন চলবে বা কতজন যাত্রী উঠবে ইত্যাদি জানা প্রয়োজন। এসব প্রশ্নের জবাব মিললে হয়তো আপনার চাহিদা বদলে যেতে পারে এবং তা হবে বাস্তবসম্মত। সেকেন্ড হ্যান্ড কিনতে গেলেও থার্ড পার্টি ইন্সপেকশন ও অন্যান্য রিপোর্ট যাচাই করা চাই।
৫. টেস্ট ড্রাইভ না করে শুধু ফিচার দেখা : গাড়ির ফিচার দেখলে সব গাড়িই ভালো মনে হবে। খুব আশ্চর্যের বিষয় হলো, প্রতি ছয়জনের একজন ক্রেতাই গাড়ি কেনার সময় টেস্ট ড্রাইভ করেন না। কাগজে যা-ই লেখা থাক, গাড়ির পারফরম্যান্স কেমন তা একমাত্র পথে নামলেই বোঝা যাবে। তাই গাড়ি চালিয়ে এর হ্যান্ডলিং, সাইট লাইন, কন্ট্রোল, ফিচার ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদি সূক্ষ্মভাবে মাপজোখ করুন।
৬. দালালের মাধ্যমে কেনা : গাড়ির বিষয় না বুঝলে অনেকেই দালালের আশ্রয় নেন। কত বড় ভুল হয়েছে তা ব্যবহারের সময় বুঝতে পেরে মাথা চাপড়াবেন। অন্তত গাড়ি সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে এমন পরিচিতজনকে নিয়ে যান। এ ছাড়া যার মাধ্যমেই কিনুন, নিজে গিয়ে গাড়ির পারফরম্যান্স ও কাগজপত্র পরীক্ষা করে নিন।
৭. ফিচারের ওপর নির্ভর করা : বেশির ভাগ সময় এমন হয় যে শোরুমে গিয়ে দেখে-শুনে পছন্দ করে তবে গাড়ি কিনবেন। অর্থাৎ আপনার পূর্বপরিকল্পনা বা পছন্দ নেই। সে ক্ষেত্রে ডিলারদের দেখানো গাড়ি থেকে একটি পছন্দ করতে হবে। আর সেখানেই যা সর্বনাশ ঘটার ঘটে যেতে পারে। বিক্রেতা একটির পর গাড়ি দেখিয়ে আপনার মাথা নষ্ট করে দেবে। একেক গাড়ির ফিচারের আকর্ষণীয় বর্ণনা ছাড়া আপনি আর কিছুই বুঝতে পারবেন না। বহু ফিচার-সমৃদ্ধ গাড়ি কিনতে চাইলেও এর সম্পর্কে আগে থেকে তথ্য নিন এবং পরে দেখতে যান।