সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনার পর নিজেকে প্রশ্ন করুন- কেন বিদেশে পড়তে যেতে চান। কারণগুলো খুঁজে বের করতে সময় নিন। কেননা, এসব কারণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আপনার ভবিষ্যৎ। হয়তো আপনি নতুন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক অথবা নতুন ভাষা শিখতে চান, কিংবা নিজের পড়ালেখার ক্ষেত্রকে ভিন্নমুখী করতে বা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ডিগ্রি পেতে চান। কারণ যাই হোক, নোট বইয়ে সেসব লিখুন।
প্রাথমিক শর্ত
-পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করাই প্রথম কাজ। পরীক্ষার ফলের চেয়ে সত্যিকার শিক্ষা কাজে আসবে এখানে।
-ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে। তবে চীন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স- এসব দেশে যেতে চাইলে সেসব দেশের ভাষা শিখে নেওয়া ভালো।
-শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট ইংরেজি করে নিতে হবে।
-পাসপোর্টে যাতে কোনো সমস্যা না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
-যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাচ্ছেন তার খরচ বহন করা আপনার পক্ষে সম্ভব কি-না, সেটাও মাথায় রাখুন। এটি আপনার মতো কর্তৃপক্ষের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি মনে করেন, ব্যয়ভার বহন করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, তবে ভিসা পাবেন না আপনি।
GRE, SAT, GMAT এবং IELTS বা TOFEL-এ ভালো স্কোর না থাকলে বিদেশে পড়াশোনার চেষ্টা না করাই ভালো। এসবে ভালো স্কোর না থাকলে বৃত্তি মিলবে না- এটি নিশ্চিত।
-অনলাইনে নিজেই সব কাজ সেরে নিতে পারেন। তবে কোনো এডুকেশন কনসালট্যান্সি ফার্মের মাধ্যমে কাজ করতে চাইলে তাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিন।
কোর্স বাছাই
পেশাগত উন্নতির পাশাপাশি সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছতে কোন পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করুন। বিশ্বায়নের এ সময়ে উচ্চশিক্ষার হাজারও কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটি কোর্স বেছে নিতে হবে, যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার প্রস্তুতি হিসেবে গণ্য হবে। পাশাপাশি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয়, কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ এবং চাহিদাসম্পন্ন এমন বিষয় পছন্দ করতে পারেন। তবে সাধারণত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে এমন কোর্সকে উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। উপযুক্ত কোর্স নির্বাচনে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন তা হচ্ছে-
-পেশাগত জীবনে কোন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং সে অনুযায়ী আপনার বর্তমান যোগ্যতা সাপেক্ষে কোন কোর্সটি সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে হয়? এ ছাড়া কোর্সটির কোনো বিকল্প কোর্স পাওয়া যায় কি-না?
-যে দেশে পড়তে আগ্রহী সে দেশে উক্ত কোর্সে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে গ্রহণযোগ্য বা বিষয়টা কতটুকুু সময়োপযোগী?
-কাঙ্ক্ষিত কোর্সে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন এবং সেখানে এর সুবিধা বা সম্ভাবনা এবং অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতটুকু?
-যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন সেখানে কোর্সটি কত বছর মেয়াদি এবং টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ আপনার সামর্থ্যের মধ্যে কি-না?
-কোর্সে পড়াশোনাকালে আর্থিক সহায়তা বা বৃত্তির ব্যবস্থা আছে কি-না? থাকলে তা কোন ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হবে এবং আপনি কতটুকু পূরণ করতে পারবেন?
এসব প্রশ্নের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিতে পারেন। এ ছাড়া এসব কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এমন কোনো বিদেশি বা দেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করতে পারেন।
ক্রেডিট ট্রান্সফার
দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন বা করছেন। কিন্তু এখন আপনি ওই কোর্সেই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে দেশে সম্পন্নকৃত কোর্সটির ক্রেডিট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এক্সেমশন দাবি করতে পারেন। আপনার কোর্সটির জন্য কতটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারণ করবে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আপনাকে কাগজপত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনার অর্জিত কোর্স স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা এবং এসব বিষয় বিদেশের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত বিষয়েরই অনুরূপ। ক্রেডিট ট্রান্সফারের জন্য যে সনদ ও কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে চাইতে পারে সেগুলো হচ্ছে-
-একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র।
-কোর্সের আউটলাইন ও পাঠ্যতালিকা।
-কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি।
-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা।
-কোর্স অ্যাসেসমেন্টের পদ্ধতি বা পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি।
-গ্রেডিং সিস্টেম সংক্রান্ত তথ্য।
-কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘণ্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘণ্টা, ফিল্ডওয়ার্ক ইত্যাদি।