প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মানুষ। তাই মানব সভ্যতার পাদপীঠে তথা সমাজে ও পরিবারে অত্যাচার-অবিচার ও নিপীড়ন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যখন অন্য মানব হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যায় এবং সেই ভাঙন-হাহাকারের রোনাজারী আর চিৎকার যখন স্রষ্টার আরশ কাঁপানোর পর্যায়ে চলে যায়, অর্থাৎ নির্যাতিতের বুকফাঁটা আর্তনাদে সৃষ্টিজগতের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে, তখন প্রকৃতিও হারিয়ে ফেলে তার ভারসাম্যতা। সে ভারসাম্যতা রক্ষায় কিংবা ফিরিয়ে আনতে প্রকৃতি তখন নেমে পড়ে নির্মম প্রতিশোধে। সমাজের সকল মানুষই পড়ে যায় সেই প্রতিশোধ-প্রক্রিয়ায়। অন্যায়কারী, অন্যায়ে সাহায্যকারী, প্রশ্রয়দাতা কিংবা অন্যায় সহ্যকারীসহ অন্য সকল মানুষ। কেন সকল মানুষ সেই প্রতিশোধে পড়ে- তা পূর্বেই করোনা সংক্রান্ত আরেকটি আর্টিকেলে লিখেছি, আল্লাহ্র সাথে এরূপ বিষয় সংক্রান্তে কথা বলাকালীন হযরত মূসা (আঃ) কে পিঁপড়া-কামড় ঘটনার উদাহরণ দিয়ে।
সেজন্যই একটি এলাকায় আগুন লাগলে কিংবা প্লাবন বা ঘূর্ণিঝড় দেখা দিলে কেবলমাত্র প্রাণিজগতই নয়, জড়জগত এমনকি মসজিদ-মন্দির পবিত্র বলে সেসবও রেহাই পায় না সেই আগুন কিংবা প্রকৃতির প্রলয় থেকে। ফসলের ক্ষেতে বৃষ্টির প্রয়োজন মেটাতে শুধু বেছে বেছে কৃষকের খামারে বৃষ্টি ঝড়ানোর মতো সুযোগ কিংবা সিস্টেম নেই এখানে। তা মেটাতে বৃষ্টি বইয়ে দিতে হয় ঐ এলাকার উপর দিয়ে। এখানে ম্যানুয়াল সিস্টেম নেই, সবকিছুই আল্ট্রা-মেগা ডিজিটাল। তাই প্রকৃতি ও স্রষ্টার কাছে কিছু চাওয়ার পূর্বে এবং প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কোনো অন্যায় করার পূর্বে প্রকৃতির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি আমাদেরকে বারংবার যথেষ্ট বিবেচনা করা উচিত। কোথাও বৃষ্টিতে আটকা পড়ে গেলে স্রষ্টার কাছে বৃষ্টি থামিয়ে দেয়ার কামনা করা বোকামির অপরাধ। কারণ যেই বৃষ্টি আমার একার জন্য অসুবিধার কারণ হয়েছে, সেই একই বৃষ্টি আবার হাজার জনের জন্য লক্ষ রকমের উপকারী। তাই এক্ষেত্রে চাইতে হবে এভাবে- If it is beneficial for me and for all concern, then I want it. এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছি আমার পূর্ববর্তী বহু কলাম ও বইয়ে। তাই এখানে আর বিস্তারিত যাচ্ছি না। এ লেখায় আমরা থাকব করোনা মহামারী আগমণের কারণ অনুসন্ধান নিয়ে।
আমার বিশ্বাস, সমাজ-সংসার কলুষিত করে মানবসভ্যতা বিকলাঙ্গ ও পর্যুদস্ত করার পরিনাম-প্রতিক্রিয়ায় প্রকৃতির ভারসাম্য বা ব্যালেন্স রক্ষার জন্য দরকার হয়ে পড়ে আধ্যাত্মিক শক্তি তথা সৃষ্টিকর্তার হস্তক্ষেপ ও প্রভাব-প্রলয়। সেইরূপ এক মহান উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে এ করোনা মহামারী। করোনা প্রলয়ে আধ্যাত্মিকতার ওপর আমি সোস্যাল মিডিয়ায় কয়েকটি পোস্ট দিয়েছিলাম গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসেই, লকডাউন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত। তাতে কারুর কোনো কমেন্ট ছিল না। কয়েকটি মাত্র লাইক ছিল, তাদেরকে ধন্যবাদ। অথচ সুদর্শন বিভিন্ন ছবির ওপর, বিশেষত সুন্দরীদের ছবির ওপর অজস্র লাইক/কমেন্ট পড়তেই থাকে। তাতে পুনর্বারও নিশ্চিত হয়েছি যে, এ সমাজে আমরা চেতনার সৌন্দর্যের চেয়ে চেহারায় সুন্দরের অধিক পূজারী; মনের সৌন্দর্যের চেয়ে মুখশ্রীর কদর খুব বেশি। তাতেওতো ক্ষতি ছিল না, যদি ঐরকম সুন্দরের চর্চার ক্ষেত্রে চিন্তায় ও মননে আমরা জঘন্য অপরাধ না করতাম এবং সেসব অপরাধের প্রতিফলে এখন এরূপ অদৃশ্য-অস্পৃশ্য করোনা মহামারী না আনতাম। করোনা-স্থায়ীত্বের আশা-নিরাশার দোলাচলের মধ্যে অতিসম্প্রতি বিশ্বশীর্ষ ধনী বিল গেটসও বলে ফেলেছেন- করোনা মহামারী সংক্রান্ত ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছুর পেছনে রয়েছে আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য...।
তাই আমাদের সকল জীবন-যাপনের প্রতি পরতে পরতে নিশ্চিতভাবে মনে রাখতে হবে যে, প্রকৃতির রুদ্ররোষ বড়ই নিমর্ম। অথচ আমাদের মধ্যে যেসব মানুষ আত্মসুখে ও আপন ভোগ-বিলাসিতায় অবিরাম অন্যায় করে বেড়াচ্ছে এবং অন্য যারা সেই অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা, সাহায্যকারী, সহ্যকারী হিসেবে থেকে যাচ্ছে; তাদের কেহই উপলব্ধি করতে পারছে না যে, আমাদের অন্যায়ের পদভারে ভূপ্রকৃতিকে ক্ষেপিয়ে তোলা সমীচীন নয়। সেই অবশ্যম্ভাবী ক্ষ্যাপা পাগলার রুদ্ররোষ থেকে তার আপনজনরাও এমনকি স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোন কেউই রেহাই পাবে না। আমাদের ১০ জনের ১০ অন্যায়ের ১০ দিন, আর প্রকৃতির প্রতিশোধ যেহেতু ১ দিন -তাহলে তার প্রলয়-প্রকম্পনের বিপর্যয় কত ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা কিছুতেই বোধে আসে না আমাদের চালাক-বোকা মানুষদের।
এরূপ রুষ্ঠ প্রকৃতিরই এক মহাপ্রলয় হচ্ছে এখনকার চলমান এই নির্মম করোনা মহামারী, যা আমার মতে ‘করোনা-গড’। করোনা প্রলয়ের এ আধ্যাত্মিকতা উপলব্ধি করতে যারা সামর্থ্যবান, তাদের কাছে করোনা-যুগ কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিনম্র কিছু আহ্বান।
আপনার আশেপাশে যেখানেই অত্যাচার-অনাচার-ব্যভিচার হয়েছে বা হচ্ছে, সেখানেই তা প্রতিরোধ করুন। প্রতিরোধের ক্ষমতা যদি আপনার নাও থাকে, তাহলেও অন্তত ঐ অন্যায়ের উচ্চকিত বা সরব প্রতিবাদটুকু করুন; সামান্য হলেও আওয়াজ তুলুন; আপনার সামাজিক যৎসামান্য দায়িত্ব পালনের সততায় এগিয়ে আসুন।
দিবালোকে রাস্তাঘাটেও প্রায়ই দেখা যায়- এক শক্তিমান মানুষ আরেক দুর্বল মানুষকে বেধড়ক পেটাচ্ছে আর সবাই তামাশা দেখছে, কিংবা ছবি তুলছে...। এরূপ ঘটনাতো আমাদের সবার চোখের ওপর অজস্র ঘটে যাচ্ছে। অবশ্য কদাচিত ক্ষেত্রে দু’একজন সরল-সুবোধকে দেখা যায়, ঐ ঘটনার প্রতিবাদী হতে কিংবা অসহায়-দুর্বল মানুষটির পাশে দাঁড়াতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐ নির্যাতিতের পক্ষে কেউ স্বাক্ষীও দিতে চায় না; সেক্ষেত্রে নির্যাতিত ব্যক্তি ও দর্শক সবাই তাদের নিজ নিজ অন্যায়ের এ ইহকালের দায়িত্ব থেকে খালাস! কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধের বিচার থেকে তথা পরকালের সেই সুপ্রীম বিচার থেকে কেউই রেহাই পাবে কি?
আমাদের আশেপাশে এরূপ অনেক ঘটনাও হরদম ঘটে যাচ্ছে- স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে মেরে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে; অথচ প্রতিবেশী তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে-শুয়ে থাকছে; দারোয়ান-ড্রাইভার, আয়া-বুয়া গেট খুলে দিয়ে নির্যাতিতকে তাড়িয়ে দিচ্ছে কিংবা চলে যেতে বলছে...। এরূপভাবে অন্যায়কারীকে সহ্য-সহযোগিতার পরিনামই কিন্তু এখনকার এ অদৃশ্য মহামারী আর বিশ্ব-লকডাউন। এমনকি এই লকডাউনেও ঘটছে নিম্নরূপ জলজ্ব্যান্ত ঘটনা।
সাংবাদিক জয়নাল আবেদিনের ফেসবুক ওয়ালে গতকাল দেখলাম আরেক মর্মান্তিক রিপোর্ট। চট্টগ্রামের পেট্রোল পাম্প-কর্মী সাহাব উদ্দিন (৫৫) করোনা টেস্ট করাতে দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, এ কথা জেনে তার স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে সিটকিনি ও তালা লাগিয়ে দেয়।
নির্মমভাবে ভেতরে আটকে পড়া সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দরজা খোলার অনেক আকুতি জানান, প্রচ- ক্ষুধায় খাবার চান, তৃষ্ণা মেটাতে পানি চান। কিন্তু স্ত্রীর কাছে তার কোনো আবেদনই মঞ্জুর হয়নি। রাতের কোনো এক সময়ে ছটফট করতে করতে প্রাণ হারান সাহাব উদ্দিন। সারাজীবন যাদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, সেই মানুষগুলোকে জীবন সায়াহ্নে পাশেতো পেলেনই না- এমনকি এক চামচ পানিও না! অথচ তার করোনা ভাইরাস কিনা, সেটি তখনও নিশ্চিত না। তা সত্ত্বেও স্ত্রী-সন্তানদের পৈশাচিক নির্যাতনে তাকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে যেতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান জানান, করোনা টেস্ট দিয়ে আসার পর থেকে সাহাব উদ্দিনকে আর কোনো খাবার দেয়া হয়নি; এমনকি স্ত্রী-পরিবার সবাই উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও কেউই তার সাথে কথাও বলেনি। বাইরে তালা দিয়ে তাকে আটকে রাখা রুম থেকে চিৎকার করে বার বার খাবার চাইলেও কেউ দেয়নি। মৃত্যুর পূর্বে পানি চেয়েও এক ফোঁটা পানি পাননি। অসহায় বাবার এরূপ চিৎকারে শিশু-ছেলে বার বার এগিয়ে যেতে চাইলেও তাকে অন্যরা বাধা দেয়। এভাবে চিৎকার করতে করতে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যু হয়ে যায়। অনেক সময় ধরে কোনো সাড়াশব্দ না থাকায় জানালায় উঁকি দিয়ে দেখা যায়, তিনি মারা গেছেন। সবাই যার যার ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়; কেবল ছোট ছেলেটা ‘বাবা মারা গেছে’ বলে প্রচন্ড কান্না ও চিৎকার শুরু করলে সাহাব উদ্দিনের মৃত্যুর কথা জানাজানি হয়ে শোরগোল পড়ে যায়।
ঠান্ডা মাথায় স্বামী হত্যাকান্ডের এরূপ বিভৎস দৃশ্য সবাইতো দেখেছে-জেনেছে; কিন্তু প্রতিবাদ-প্রতিকারে এগিয়ে এসেছে কতজন! একমাত্র ছোট ছেলে ছাড়া আর সবাইকে বিশেষত পাষন্ড স্ত্রীকে এ নির্মম হত্যাকান্ডের জন্য বিচারের আওতায় আনা জরুরি নয় কি? মৃত্যুর পূর্বে সাহাব উদ্দিনের ঐ গগণবিদারী চিৎকার ও হাহাকারে কি রুষ্ঠ হননি প্রকৃতি ও স্রষ্টা? কেন রোগাক্রান্ত স্বামীকে পানি-খাবার পর্যন্ত দিলেন না -এর জবাব কী দিবেন তার স্ত্রী, ইহজগতে ও পরজগতে?
অন্যদিকে যেখানে প্রেম-ভালোবাসার আবেগে পড়লে উভয়েই পরস্পরের কাছে নিজ নিজ স্বার্থে অন্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রী সহমরণের বহু নজির দেখা যায় বিভিন্ন সমাজে, সেখানে স্বামীর রোগাক্রান্তে এমনকি মৃত্যু যন্ত্রণায়ও একফোঁটা খানাপানি না দেবার আমাদের সমাজের উপরোক্ত পাপাচার স্রষ্টাইবা সইবেন কী করে!
সাংবাদিক জয়নুল আবেদিন এর উপরোক্ত রিপোর্টে উল্লেখিত সেই স্ত্রী-সন্তানের লোমহর্ষক ঐ অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং একই সাথে পরকালে বিচার্য ঐ পাপাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হওয়া মানুষ হিসেবে আমাদের জন্মগত দায়িত্ব; যদি কিনা আমরা নিজকে মান+হুঁশ হিসেবে মনে করি। তা না হলে পরকালের এসব পাপাচারের ভার কিংবা ইহকালের অন্যায়-অবিচারের বিশদ-বিপুল ভার সহ্য করতে না পেরে অর্থাৎ প্রকৃতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে কেয়ামতরূপী প্রলয় কিংবা কেয়ামতের মহড়ায় এরূপ করোনা-গডতো আসবেই, থাকবেই, এমনকি যাবে না আর কখনোই। নানাভাবে রূপ-রং ও ক্ষমতার ধরন বদল করে এরূপ প্রাকৃতিক প্রতিশোধের দুর্যোগ আসতেই থাকবে এবং সে দুর্যোগ থেকে যাবে মানবজাতির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বাইরে।
প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করে দেখুন- করোনার সঠিক ও নির্ভরশীল চিকিৎসা তথা ভ্যাকসিন কেন এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়ে উঠছে না এবং সে অসম্ভবকে সম্ভব করতে তথা অনুবীক্ষণিক একটি ক্ষুদ্র শক্তিকে বশীভূত করতে বিশ্বভান্ডারের সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বশক্তি বিনিয়োজিত করেও বছরের পর বছর সময় লেগে যাচ্ছে। তাইতো বিশ্বশীর্ষ ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্টও বাংকার-প্রকোষ্ঠে নিজের মৃত্যুর মহড়া বা কসরত করছে, কেউবা আকাশছোঁয়া পাহাড় চূড়ায় পালিয়ে কিংবা বহুজন নিজকে কঠিন সুরক্ষায় গৃহবন্দী করেও করোনা থেকে রেহাই পায়নি। আবার অর্ধশিক্ষিত ও অসচেতন বিপুল সাধারণ মানুষ সারাক্ষণ করোনা-জোনে মাখামাখি করেও করোনার করুনা পেয়েই চলেছে। অর্থাৎ এ পৃথিবীর কোনো মানুষই এখনও নিশ্চিত করে জানে না- স্রষ্টার ক্যারিশমেটিক অদৃশ্য এ করোনা পুরো বিশ্ব-মানব সমাজকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!
তাই এখনো সময় থাকতেই আমাদের প্রত্যেকের প্রবল আত্ম-উপলব্ধির সতর্কতা খুবই জরুরি। আমাদের মধ্যে যারা অন্যায়-অবিচারের সাথে জড়িত নন, তাদের ভালোত্ব এবং মানুষ হিসেবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে ও বজায় রাখতে সমাজে ও পরিবারে যেকোনো অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে যার যার সাধ্যমতো প্রতিবাদ করা এখনই জরুরি এবং তা এখন এ করোনা মহাদুর্যোগ সময়ের মৌলিক দাবি।
সত্য-ন্যায় ও মানবতার আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করা আমাদের সব্বার প্রিয় অবিসংবাদিত বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেমনি পাকিস্তানী শাসকরা নানা নির্যাতনে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল; তেমনি ঐরূপ স্বৈরাচারী পাকিস্তানীদের নিষ্ঠুর কায়দায় গুটিকতক প্রভাবশালী ক্ষমতাবান কর্তৃক পরিবারে-সমাজে-জাতিতে নিষ্ঠুর নির্যাতন-নিবর্তন করে তা আবার এমনভাবে চাপা দিতে সচেষ্ট হয়, কেউ তাতে প্রতিবাদ করার সাহস পর্যন্তও পায় না। তাই মানব সমাজে সেসবের বিচারও হয় না। কিন্তু প্রকৃতি, স্রষ্টা তথা সৃষ্টিজগতের বিবেচনায় সে অন্যায়তো থেকেই যাচ্ছে। তাই এক পর্যায়ে কার্যকর হয়ে যায় প্রকৃতির অমোঘ বিধান। কারণ Injustice aûwhere is a threat to justice everywhere; অর্থাৎ পাপের একটি বীজ যেখানে পড়ে, সেখানে দেখতে দেখতে সমগ্র মানব সমাজ কেমন করে অরণ্যে পরিণত হয়ে যায়, তা কেউ টেরও পায় না।
আমার চেনা-জানার মধ্যেও অনুরূপ বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে, তন্মধ্যে বিশদ-বিশাল পাপাচারে লিপ্ত থাকা উচ্চ-ডিগ্রিধারী এক ক্ষমতাধর নারীর কথা বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বলছি। মক্ষীরাণীসুলভ তার এক ব্যক্তির পৈশাচিক আত্ম-অহংকার এবং অমনুষ্যচিত প্রতিপ্রত্তি-প্রভাবে তারই বহু আত্মীয়-স্বজন ভীষণ রাশভারে সুদীর্ঘকাল থেকে মহা-আক্রান্তে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। স্বামীকে না মেনে, উচ্চডিগ্রি ও রূপ-সৌন্দর্য্যরে আকর্ষণে ধনাঢ্য ও ক্ষমতাশালী বিভিন্ন গডফাদারের ছত্রছায়ায় সে এসব নিরাপদে করে যেতে আপাত সফল হচ্ছে তার পরিবারের কিংবা সমাজের কারুর কোনো প্রতিবাদ-প্রতিরোধ না থাকার কারণে।
জ্বলজ্যান্ত এমন বাস্তব ঘটনা হচ্ছে- ছোটবেলা থেকেই কঠোর পরিশ্রমী, সহজ-সরল, সৎ ও নিষ্ঠাবান, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বের এক চরিত্রহীনা স্ত্রী তার অর্থ-বিত্তের অহংকার-ঔদ্ধত্বে স্বামীকে অকস্মাৎ ঘর-সংসার থেকে বের করে দিয়েছে, কাউকে কোনো কারণ না জানিয়ে। স্বামীকে বাসা থেকে বের করে দেয়ার সময়ে সে ক্ষুধার্ত বলে বার বার খাবার চাইলে তাকে খাবার দেয়া হয়নি; এমনকি বাসা থেকে বের করে দেবার পর তার তৈরি ঘর-সংসার-বাসা থেকে অন্তত শেষ খাবার দেয়ার জন্য স্ত্রীকে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া কন্যাকে ও নবম শ্রেণিতে পড়া ছেলেকে আলাদা আলাদা ফোনে ও এসএমএস এ লিখলেও ক্ষুধার্ত বাবা তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে খাবার পায়নি। বরং স্ত্রী তার অর্থবিত্তের ছলাকলার প্রলুব্ধে কিশোর ছেলেকে নিজের বশীভূত করে ছেলের বাবার বিরুদ্ধাচারণে নিয়ে ঐ ছেলেকে দিয়েই পুলিশ ডেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্বামীকে শায়েস্তা-সোপর্দ করছে। অথচ সেই দিনে-দুপুরেই বিভিন্ন ফ্ল্যাট-প্রতিবেশী এমনকি সুপ্রীমকোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী দম্পতি পর্যন্ত বিপথগামী ঐ নারী ও সন্তানদের তামাশা দেখেছে। কিন্তু একটিবারও জিজ্ঞাসা করেনি, কী কারণে বা কী অপরাধে দিবালোকে স্বামীর তৈরি বাসা থেকে তাকে কেন বের করছে? এটি কি পুরুষ নির্যাতন, নাকি স্ত্রী কর্তৃক ফ্ল্যাট দখল -এরূপ কোনো কৌতূহলেরও ধার ধারেনি ঐসব প্রতিবেশী। এরূপ ক্যালাস প্রতিবেশীদের থেকে ঐসব নিষ্ঠুর-নির্যাতক-অত্যাচারীরা ছাড় পেলেও স্রষ্টার কাছ থেকেতো রেহাই নেই। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে- আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। তাইতো স্বামীকে হঠাৎ বাস্তুচ্যুত করে সুদীর্ঘ ৪ বছর নির্জন-নিরালায় বন্দী রাখার পর এখন এই করোনা ঐ বহুগামিনী-বহুচারিণীকে জোর করে বাধ্যতামূলকভাবে ঘরে ঢুকিয়ে বন্দী করে লাগাতার লকডাউনে রেখেছে।
ধারাবাহিকভাবে অজস্র অন্যায় ও প্রমাণিত নিষ্ঠুর নির্যাতন করেও এরূপ ব্যভিচারিণী থেকে যাচ্ছে শাসকদের কিংবা সমাজের ধরাছোঁয়ার বাইরে এবং আইন-আদালতের দুর্বলতায় ও ফাঁক-ফোকরে থেকে যাচ্ছে নিরাপদে। এভাবে সে কিশোরী বয়স থেকেই নিজের একান্ত প্রমোদ ভোগ-বিলাসে সমাজকে কলুষিত ও পাপাচারে লিপ্ত করে বেড়াচ্ছে।
আত্মঅহমিকায় অন্ধ এ নারী বহু পুরুষ-জীবনকে শুধু তার নিজের একার স্বার্থ ও অভিলাষে নিরাপদভাবে ব্যবহার করে আসছে। কিশোরী বয়সে সুদীর্ঘ দিনের প্রেমিক/স্বামীর সাথে মনোদৈহিক সম্পর্ক হঠাৎ ত্যাগ করে নয়া স্বার্থান্ধে আরেক যুবকের ঘাড়ে চড়ে বসে, তার অধ্যক্ষ-বাবার সাথে ঐ যুবকের সুসম্পর্কের সুযোগে। দেহের সৌন্দর্য-সৌষ্ঠবের প্রলোভনে ফেলে সরলমনা ঐ যুবককে কুমন্ত্রণায় বাজিমাত করে দখল করে নেয় জীবন-জগত। এভাবে অল্প ক’দিনের মধ্যেই জরুরি গোপন বিয়ের জন্য ক্রেইজী চাপ দিতে থাকে এবং তারপর জরুরি বাচ্চা নিতে যা যা করার তাই তাই করে। তারপর ঐ যুবককে তার বাপের বাড়িতে পুনর্বার লোক দেখানো বিয়ে করতে বাধ্য করে। বিদ্বান বাবার বদৌলতে পাওয়া ভালো ছাত্রীত্বের সুবিধা নিয়ে আড়ালে-আবডালে চালাতে থাকে তার এসকল কুমন্ত্রণা। এমনকি পিতা-মাতাসহ সবার অজান্তে-অগোচরে প্রেম-বিয়ে-ডিভোর্স খেলাখেলিতেও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে এবং সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজকে নিরাপদ রাখতে খুবই সমর্থ ও সফল হয় সে।
স্কুল-কলেজ জীবনের প্রেমিক/স্বামীর সাথে তরুণী-কিশোরী বয়সের সকল স্বার্থ উদ্ধার করে নিয়ে তাকে ফেলে দেয়ার প্রতারণা ও নিরাপদ সাফল্যের অভিজ্ঞতায় এখন তার ৫০ বছর বয়সের ভীমরতিতেও সে নিজের ঐরূপ আরেক স্বার্থ রক্ষায় মাতাল হয়ে ৩ সন্তানসহ ২০ বছরের সংসার জীবনের পুরোনো স্বামীকে হঠাৎ ডিভোর্স দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এমনকি কোনো আলাপ-আলোচনার তোয়াক্কা না করে পরিবার ভাঙনের বীভৎস সাহসে সমর্থ হয় এবং তার এসব কুপ্রবৃত্তি, যা সমাজের অন্য অনেক সরলমনা অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত নারীদের জন্য অনুকরণীয় করে তোলে। এ নারীর জীবনাচারের ধারাবাহিক অসৎ চরিত্রের কারণে, এমনকি তার সুদীর্ঘ দিনের পৃষ্ঠপোষক স্বামীর কিংবা ৩টি সন্তানের ক্ষয়ক্ষতি, অসুবিধা ও দুর্ভোগের বিষয়ে এখনো এ করোনা যুগেও সে কোনোরূপ বিচলিত-বিবেচনায়ই আসতে পারছে না।
মৌলিক ধ্যান-জ্ঞানহীন, কেবলমাত্র টাকা উপার্জনের শিক্ষায় উচ্চডিগ্রির আত্ম-অহমিকার কারণে কিছুতেই এ ব্যভিচারিণীর বিবেচনায়ই আসছে না যে, জীবনধারণ ও জীবনযাপন করতে হয় ন্যূনতম ৩টি আদর্শ-শর্তের ভিত্তিতে।
১। পরজগতে পাপ-পুণ্যের বিবেচনা এবং ইহজগতে ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে।
২। সমাজে ও পরিবারে কোনো মানুষের কোনোরূপ ক্ষতি হয়, এমন কিছু না করে বিশেষত বৈবাহিক চুক্তিতে আবদ্ধ জীবন-সঙ্গীর সাথে এবং সন্তান ও পরিবার-পরিজনে কোনোরূপ ক্ষতি না করে।
৩। নিজের সুখ ও স্বার্থের চর্চা ততদূর পর্যন্ত করা যাবে, যতদূর পর্যন্ত অন্যের কোনোরূপ ক্ষতি কিংবা অসুবিধা না হয়। অন্যের এরূপ-কোনোরূপ ক্ষতি করা মানেই তা অন্যায়। সেরূপ কোনো অন্যায় না করে নিজের জগতে যত ইচ্ছা সুখভোগ করা যাবে।
অথচ পুরুষখেকো এই স্বার্থান্ধ নারী তার সুদীর্ঘ ২০ বছরের স্বামী, ৩ সন্তান ও বহু আত্মীয়-পরিজনদের সবাইকে দুঃখ-কষ্টের ট্র্যাজেডিতে ফেলে কেবলমাত্র নিজের বহুগামীতার স্বার্থ রক্ষার্থে আচমকা ঘর-সংসার ভেঙে দিয়ে নিজকে ঘোষণা দেয় সিঙ্গেল মাদাররূপে। তার জীবন-উত্থানের পৃষ্ঠপোষক যেই স্বামী নিজ কাঁধে সংসার ও শিশু-সন্তানদেরকে রেখে স্ত্রীকে দেশ-বিদেশে উচ্চশিক্ষায়, পেশাগত শীর্ষত্বে এমনকি মিডিয়া-ব্যক্তিত্বে উন্নীত করে -সেই ৬০ বছর বয়সী নিরুপায় স্বামীকে কোনো কারণ ছাড়া এমনকি কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা না করেই ঘর থেকে বের করে দিয়ে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়। ডিভোর্স সংক্রান্ত সরকারি কর্তৃপক্ষের বারংবার আহ্বানকৃত এবং পারিবারিক জজ-আদালতের নোটিশ পেয়েও কোনো সালিশী-সভায় অংশগ্রহণ না করে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, মুরুব্বিয়ান, সমাজসেবী ও পারিবারিক ভালোবাসা আন্দোলন ফোরাম নেতৃবৃন্দের সকল অনুরোধ-আবদার উচ্ছৃঙ্খল-ঔদ্ধত্যে প্রত্যাখান করে দেয় এ দাম্ভিক নারী। এমনকি এরূপ মুরব্বীয়ানদের অনেককেই অপমান করে তার বাসা থেকে বের করে দেয়।
কেবলমাত্র এই পৃষ্ঠপোষক স্বামীর ক্ষেত্রেই যদি সে এতটা চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা দেখিয়ে নিজ স্বার্থ ও বেলাল্লাপনা মোহের পথেই চলতে থাকে, তাহলে অন্য পুরুষদের সাথে তার বীভৎস চরিত্রের স্বরূপ সহজেই অনুমেয়! যে নারী নিজ সন্তানের কাছে তার একান্ত স্বার্থপরতা ও বেলাল্লাপনা লুকাতে সিদ্ধহস্ত, সেই নারী কি সমাজ ও জগত সংসারের অন্য মানুষদেরকে এর চেয়ে নিদারুণভাবে ঠকিয়ে নিজের একক স্বার্থভোগে লিপ্ত রয়েছে না?
এখন গভীর বিবেচ্য এবং তীক্ষè অনুসন্ধানের বিষয় হচ্ছে যে- কিশোরী বয়সেই সতীত্ব ও চরিত্র হারিয়ে নিজ হাতে নিজের জীবনে ডেকে আনা মহাবিপর্যয় থেকে যে স্বামী তাকে উদ্ধার করেছিল, ২০ বছর ধরে স্ত্রীর ক্যারিয়ার গড়ায় ও সংসারে নিরলস পৃষ্ঠপোষকতা করা স্বামীকে যেভাবে সে ঠকিয়েছে, তার চেয়েও অধিক নিষ্ঠুরভাবে সে অন্য পুরুষদেরকে অতীতে ঠকিয়েছে, বর্তমানে ঠকাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও ঠকাবে না?
সমাজের উন্নয়নে ও অগ্রগতিতে এরূপ নীরব ঘাতকের আস্ফালন থামাতে এ নারীকে বহু নরের নীরব হত্যার ও অপমৃত্যুর জন্য দায়ী করে তাকে শীঘ্রই আইনের আওতায় আনা উচিত নয় কি?
তা না হলে সমাজে অন্যায়ের বিচ্ছুরণে ও পরকালের পাপাচারে পাপিষ্ঠ এ নারীকে আমরা সবাই বয়ে বেড়ানোর কারণে এবং আমাদের সবার আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক শক্তি নষ্ট হবার কারণে করোনা মহামারীর ন্যায় মহাদুর্যোগে পড়ে থাকা কিংবা পুনর্বার পড়ার সম্ভাবনা থেকে এই আমিসহ আমরা সবাই আমাদের মাননীয় বিচারক, সমাজপতি কিংবা নীতিনির্ধারক কেউই কি রেহাই পাবো?
করোনা যুগে এখন সময় এসেছে এসব পারিবারিক ও সামাজিক নিষ্ঠুর নিবর্তন অপরাধের নিশ্চিত শাস্তি বিধানের। সময় এসেছে এসব অমনুষ্যোচিত আচরণের কারণে প্রকৃতির রুদ্ররোষ সৃষ্টিকারীদেরকে আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্থ অসহায়দের উদ্ধার ও তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার। আমাদের মনে রাখতে হবে, এরূপ কিছু অন্যায়কারীর অনাচারে বিকলাঙ্গ ও পর্যুদস্ত মনুষ্য সমাজকে প্রকৃতি ও স্রষ্টা কেহই সহ্য করবেন না এবং তা করলেতো বিশ্বচরাচর সুশৃঙ্খলভাবে টিকে থাকবে না।
আমরা সকল মানুষ মৌখিক একবাক্যে চাই যে, করোনা-কাল কেটে যাক। অন্যদিকে এসকল মানুষের মধ্যে চরমভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত-নিরুপায় কিছু মানুষ থাকতেও পারে, যারা সবার দৈন্যদশার প্রতি সংহতি প্রকাশে উপরিমনে সবার সাথে ঐরূপ বললেও তাদের আরেক অপ্রকাশ্য একান্ত মনে চায় যে- করোনা-কাল থেকেই যাক, যতক্ষণ না আমার ওপর অন্য মানুষের অসহনীয় ও দুর্দমনীয় নিপীড়ন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত না হয় কিংবা আমার জীবন বিপন্নের ক্ষয়ক্ষতির শোচনীয়তার বিষয়ে ঐ অত্যাচারীর মধ্যে আত্মউপলব্ধি-অনুশোচনা যতক্ষণ না আসে।
ব্যক্তির একান্ত ভোগ-বিলাসে লোলুপতা করে বেড়ানো এবং সমাজকে নীরব ঘাতকে কলুষিত করে ফেলা এরূপ ক্ষমতাবান পরাক্রমশালী অত্যাচারী ব্যভিচারীদেরকে রুখতে না পারলে আমাদের কারুরই রক্ষা নাই করোনার আগ্রাসনের থাবা থেকে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমীন!