এবারের বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন- অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, এবারের বাজেটে মানুষকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এবারের বাজেট মানবিক বাজেট।
সংসদে চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের গ্রামে যেতে বলেছেন। গ্রামের অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিতে বলেছেন। গ্রামের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিয়ে আমরা বাজেট প্রণয়ন করেছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বছর বাজেটের সমন্বয়ের কারণটি আমাদের সবার জানা। বৈশ্বিক মহামারি করোনার বিবেচনায় আমরা সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয় কিছু সমন্বয় করার চিন্তা করেছি। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও আমরা ৮.২ শতাংশ কমিয়ে ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করেছি। আমরা যদি এই পুননির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারি তা হবে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাজেট বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, অন্যবার আমরা রেভিনিউ অর্জন করি এবং রেভিনিউ খরচ করি। এবার আমরা রেভিনিউ আগে খরচ করব, তারপর রেভিনিউ অর্জন করব। কাজেই এই বিবেচনা মাথায় রেখে আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আসুন সবাই আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই বাজেট যেন পরিচালনা করি।
সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী জানান, সম্পূরক বাজেট করোনা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাত, স্বাস্থ্য চিকিৎসা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
বাজেটের টাকা কোথা থেকে আসবে ভাবিনি -অর্থমন্ত্রী
সঙ্কটকালের বাজেট প্রস্তাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যকে অর্থনীতিবিদরা ‘অবাস্তব’ বললেও অর্থমন্ত্রী আ ম মুস্তফা কামাল তার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে।
মোট পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেটের ৬৬ শতাংশ অর্থ রাজস্ব আয় থেকে যোগানোর পরিকল্পনার ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, টাকা কোথা থেকে আসবে সে চিন্তা আমরা করিনি। মানুষকে বাঁচাতে হবে, কমর্সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের অর্থনীতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে। অর্থ যাই লাগবে সেটা জোগাড় করা হবে।
আর মহামারীর ধাক্কায় বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে যেখানে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হয়েছে, কবে এই মহামারী শেষ হবে সেই নিশ্চয়তা যখন কেউ দিতে পারছে না, তখনও নতুন অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করার ব্যাখ্যায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ওই লক্ষ্য তিনি ধরেছেন ‘অতীতের অর্জনের ধারাবাহিকতায়’।
জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী উপস্থাপন করেছেন, তাতে অর্থনীতিতে মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, বরাদ্দে মনোযাগ পেয়েছে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা আর কৃষি খাত।
মহামারীর মধ্যে গত তিন মাস ধরেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির, শিল্প উৎপাদনও গতিহারা। আমদানি-রপ্তানি, রেমিটেন্সসহ অর্থনীতির সব সূচকই বাজে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়েছে এনবিআর।
তারপরও অর্থমন্ত্রী বাজেটের পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্বাহের জন্য ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন, যার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসে বার বার এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে অর্থমন্ত্রী আ ম মুস্তফা কামালকে। করোনাভাইরাস সঙ্কটে এবারের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন হয়েছে অনলাইনে।
নিজের দেওয়া দ্বিতীয় বাজেটকে ‘মানুষকে রক্ষা করার’ বাজেট হিসেবে বর্ণনা করে মুস্তফা কামাল বলেন, সেই চিন্তা থেকেই আমরা প্রথমে টাকা খরচ করব; পরে আয় করব। আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। তারপর টাকা জোগাড় করব।