নারী আমাদের মাতা, নারী আমাদের ভগ্নী। নারী মানেই আমাদের হৃদয়ের অঢেল ভালোবাসা, অবনত শিরের শ্রদ্ধা আর অকুণ্ঠ ভক্তি। এ সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যুগে যুগে নারীরা দিয়েছে পুরুষে প্রেরণাশক্তি। বর্তমান যুগে বহুক্ষেত্রে নারীরা সমাজকে, জাতিকে কল্যাণ ও আদর্শের মন্ত্রে দীক্ষিত করে চলেছেন; দিয়ে যাচ্ছেন ব্যতিক্রমী মানবিক নেতৃত্বের দীক্ষা। বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মহিয়সী-গরিয়সী বহু নারী মানুষ ও মানবতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁদের অনুপম সুমহান ব্যক্তিত্বের আপন বৈশিষ্ট্যে। মানুষের জন্যে নিজের ভোগবিলাসবিহীন নিরন্তর ত্যাগ-তিতিক্ষার নেতৃত্বগুণে এঁরা ছাড়াও আমাদের জানা-অজানা বহু মাতা-ভগ্নী তাঁদের অন্তহীন মায়া-ভালোবাসা ও মঙ্গল-চিন্তায় এবং অবারিত ত্যাগ-তিতিক্ষায় স্বামী-সন্তানে, পরিবারে-সমাজে-জাতিতে, এমনকি বিশ্বপরিসরেও জ্বালিয়ে যাচ্ছেন মঙ্গল আলোর বহ্নিশিখা। অন্যদিকে এঁদের বিপরীতে আবার গুটিকতক নারী নিজ লোভ, স্বার্থ, অহংকারের হুংকারে তাদের সঙ্গী, সরলমনা পুরুষদের বিভ্রান্তি ও অত্যাচার- নিপীড়নে ফেলে দিয়ে সুন্দর-সুশীল নারী সমাজকে কলঙ্কিত করতে লিপ্ত রয়েছে গভীরভাবে। অবশ্য এটি যে কেবল কিছু অতি আধুনিকা নারীই করছেন তা কিন্তু নয়; মানবসমাজ সৃষ্টির প্রথম থেকে এ ব্যতিক্রমটা লক্ষ্যণীয়, যা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত ক্রমবর্ধিষ্ণু। মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খেয়েছিলেন বিবি হাওয়া। শয়তান তাঁকে লোভ দেখিয়েছিল- এ ফল খুবই মিষ্টি, খুবই উপভোগ্য...। অধিকন্তু ঐ নিষিদ্ধ গন্ধম ফল খেতে আদম (আঃ) কেও প্ররোচনা দিয়েছিলেন বিবি হাওয়া। এভাবে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার কারণে তাদের মধ্যে দেখা দিলো পায়খানা-প্রস্রাবের উপসর্গ। অথচ তৎপূর্বে বেহেশতি খাবারে তাঁদের কখনো পায়খানা-প্রস্রাব হতো না। এভাবে নিষিদ্ধ গন্ধম খাওয়ার পরিণামে তাঁরা বেহেশতের সুখ-ঐশ্বর্য থেকে মাটির পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। অনুরূপভাবে বিবি হাওয়ার মতো কতিপয় নারীর কুপ্ররোচনায় পড়ে যুগে যুগে বাবা আদমের মতো কত পুরুষ যে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে, সেই ইতিহাসের কোনো ইয়ত্তা নেই। এ পৃথিবীর প্রথম হত্যাকা-টিও সংঘটিত হয়েছিল কুপ্ররোচনাকারী নারীরই কারণে। হযরত আদম (আঃ) এঁর পুত্র হাবিল-কাবিলের মধ্যে নারীর কারণেই সংঘটিত হয় হত্যাকা-। তাদের সহোদরা নারীই প্ররোচিত করে ভাইয়ে-ভাইয়ে প্রাণঘাতী যুদ্ধে। রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিলো ট্রয়ের হেলেনের কারণে। ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়ে সহস্র বছরের সভ্যতা ধুলিস্মাৎ হয়েছিল স্রেফ সুন্দরী হেলেনের কুমন্ত্রণায়। রাশিয়ার জার নিকোলাস তার সুন্দরী পত্নী ব্যভিচারিণী জারিনার কারণে সাম্রাজ্যের সিংহাসনচ্যুত হয়েছিলেন। নিকোলাসের আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু রাসপুটিনের সাথে জারিনার ছিল অবৈধ ও গোপন প্রণয়। নারীর কুমন্ত্রণা ও কুপ্ররোচনাকে ঘিরে অস্ট্রিয়ায় সূচিত হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও হিটলারকে মন্ত্রণা দিতো তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ইভা ব্রাউন। এভাবেই বিশ্বের বড় বড় বিপর্যয়ের মূলে রয়েছে কোনো না কোনো নারীর কুপ্ররোচনা এবং দূষিত ও বিষাক্ত ইন্ধন। আমাদের এই আধুনিক যুগের অতি-আধুনিকা কতিপয় নারী যেন কুমন্ত্রণাদানকারী প্রাচীন নারীদেরই আধুনিক সংস্করণ। তারা নিজেরা সর্বদাই শয়তানের কুমন্ত্রণায় থাকে এবং সেই কুমন্ত্রের দূষণ ও বিষাক্ত ছোবল দিয়ে তাদের সঙ্গী-পুরুষকে দূষিত ও প্ররোচিত করে থাকে কিংবা নিষ্ঠুর নির্যাতনে ফেলে জীবন-যৌবন বিষাক্ত করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। অসৎ প্ররোচন, কুমন্ত্রণা ও নিষ্ঠুরতা দিতে এরা অত্যন্ত সুনিপুণা। এদের সুনিপুণ মন্ত্রণায় ও জ্বালা-যন্ত্রণায় পুরুষ-জীবন হয়ে ওঠে বিষাক্ত। সকরুণভাবে ধ্বংসের মুখে নিপতিত হয় অসহায় পুরুষ, তাদের রমণীয় ছলাকলা ও ঘোর বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে। প্রাচীন নারীদের চেয়েও তারা শত-সহস্রগুণ বিষাক্ত, বিভ্রান্তকারী, কুচক্রিণী ও ব্যভিচারিণী। কারণ, প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধার ছোঁয়ায় লেটেস্ট স্মার্টফোন, ফেসবুক ইত্যাকার বহু মিডিয়ার বদৌলতে আজকাল তাদের ছলাকলা ও দূষিত প্ররোচনাগুলিও হয়ে উঠেছে বহগুণ অত্যাধুনিক নারকীয়। এখনকার সময়ে পারিবারিক জজ-আদালতগুলোতে কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত বিভিন্ন কোর্ট-কাচারিতে চলমান মামলা প্রত্যক্ষ করে কোনো কোনো সাংবাদিক বন্ধু এরূপ বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার কথা লিখে আসছেন। বিদ্যমান নারী নির্যাতন আইনের কিছু সুবিধা অসৎভাবে কাজে লাগিয়ে কিংবা এরূপ কল্যাণ-আইনের অপব্যবহার করে কীভাবে উচ্ছৃঙ্খল ও চরিত্রহীনা কিছু নারী বাড়িয়ে তুলেছেন পুরুষ নির্যাতন এবং কীভাবে স্বামীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজ ফন্দি ও দুরভিসন্ধি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন নিরাপদে ও অবলীলায়! আমার প্রত্যক্ষ জানামতেও কয়েকটি ঘটনা রয়েছে, তন্মধ্যে অতিসাম্প্রতিক একটির কথা স্বল্পপরিসরে বলছি। বর্তমান সমাজের সাকিব নামে ছোট্ট এক শিশুর বাবাও প্রতারক স্ত্রীর কুমন্ত্রণা, অহংকার, হিংসা-ঈর্ষার ঔদ্ধত্যে দীর্ঘদিন ধুকে ধুকে জ্বলে জ্বলে অবশেষে এ নির্বোধ শিশুর নিরাপত্তার স্বার্থে তার কাছ থেকেও সরে যেতে বাধ্য হয়ে শেষে গেছে আত্মহননে। কারণ উপরোক্তরূপ কুচক্রিণী নারীদের চেয়েও এ নারীর চরিত্র অধিক বিপদজনক। সাকিবের বাবার জীবনালেখ্য হতে জানা যায়, মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়ে ছোটবেলা থেকেই কর্মযোগীর কঠিন সাধনায় এবং সত্য ও সুন্দরের নিরন্তর চর্চায় বড় হওয়া বিশুদ্ধ মননের নিষ্পাপ এ মানুষটি তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েক বছর পর প্ররোচিত হন দূষিত এ নারীর দ্বারা; যার কিশোরী বয়সেই প্রথম বিবাহে তার স্বৈরিণী স্বভাবে বেসামাল হয়ে উঠে। একদিকে মানসিক ও শারীরিক মেলামেশার সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুদীর্ঘ দিনের বন্ধন থেকে বিদায়ের কিংবা অনুমতির কোনো তোয়াক্কা নেই, অন্যদিকে সামান্য ফোনালাপের পরিচয়েই ঠিকানা নিয়ে এক সকালে বিনা-নোটিশে চলে যায় বর্তমান সাকিবের বাবার ঐ সময়ের ব্যাচেলর বাসায়। শাড়ি-টিপ পরা আচমকা আগুন্তুক সেই অতিথি তার দেহ-সৌষ্ঠবের প্রলোভনে ফেলে দেয় সরলমনা যুবকটিকে; কুমন্ত্রণার সবকিছু করে নিমিষেই বাজিমাত করে ফেলে। এভাবে অল্প ক`দিনের যাতায়াতের মধ্যেই গোপন বিয়ের জন্য ক্রেইজি চাপ দিতে থাকে এবং তারপর জরুরি বাচ্চা নিতে যা যা করার তাই তাই করে। এসবই করেছে সে তার অতীত কলঙ্ক চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে। এভাবে সম্পর্ক শুরু করা দূষিত স্ত্রীর ব্যভিচারে পড়ে শেষ হয়ে গেছে সাকিবের বাবার বিপুল সম্ভাবনাময় শখ-সাধনার ও জ্ঞান-গরিমার আলোকিত জীবন। স্ত্রীর আশ্চর্য অনাচারে ঘুরপাক খেয়ে হারিয়ে ফেলে নিজ জীবনের সাধ। তাই স্ত্রীর নির্মম অত্যাচার ও শত্রুতার গভীর অমানিশায় পড়ে গিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৃথিবী থেকে তার বিদায়বাণীরূপে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুাঁশিয়ারিস্বরূপ লিখে রাখেন দু`টি বই। অপ্রকাশিত সেই গ্রন্থ- `নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার প্রতিফল ও সকরুণ কাহিনী` এবং `ড. স্ত্রীর স্বামী-নির্যাতন` এর পান্ডুলিপির বিভিন্ন জায়গায় তার নিজ জবানীতে এরূপ বলেন- “যার কাছে যা আছে, সেতো তাই দেবে অন্যজনকে। আমার কাছে তার জন্য সরল ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, উৎসর্গ, ধৈর্য-সহ্য-কৃতজ্ঞতা-ক্ষমা যা ছিল তাই দিয়েছি তাকে; সর্বোচ্চ ও সর্বোত সহযোগিতা দিয়েছি আমার পাণিপ্রার্থী এ নারীকে। আর স্ত্রীর কাছে যা ছিল অধৈর্য-অসহিষ্ণুতা, অহংকার-ঔদ্ধত্য, অকৃতজ্ঞতা, নির্মম নিষ্ঠুরতা, প্রতিশোধ, পাশবিক বৈরিতা-শত্রুতা.. তাইতো সে দিয়েছে আমাকে এবং তার সাথে সম্পর্কে জড়ানো সব পুরুষকেও তাই দিয়েছে, দিচ্ছে ও দিতে থাকবে সকল সম্পর্কের শেষ প্রান্তে এসে। এগুলোই তার ব্যক্তি-চরিত্র। এর চেয়ে বেশি কিছু কিংবা অন্য কিছু দেবে সে কোথা থেকে! তবে পুরুষের সাথে এরূপ সম্পর্কের শুরুতে শয়তানের প্রতিরূপে মিষ্টি-মধুর মুখের কথা, মনলোভা ছলাকলা, হৃদয়হরী গানের গলা, মন কাড়া চোখের ভাষা এবং শর্টড্রেসে দেহ-সৌষ্ঠবের আকর্ষণ করাতো তার চরিত্রে থাকবেই। এরূপ ছলাকলা না থাকলেতো সম্পর্কের খেলাখেলি শুরুই হবে না। তাছাড়া এসব ঝকমক দিয়ে সম্পর্ককে অনেক উচ্চতায় না তুললেতো শেষ পরিণতিকালে অর্থাৎ নিজ স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে সঙ্গীকে আচমকা ধাক্কায় গভীর তলায় ফেলে জনম ঝাঁকুনি দেয়া যাবে না! বইয়ের জ্ঞান, বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, এসবে এদের অহংকার আর গৌরব বাড়ায় এবং ডিগ্রি যত বড় ও উচ্চতর হয়, ক্ষমতার অহংকার আর লাম্পট্যের দাপট তত বাড়ে। কিন্তু এদের প্রকৃত মান-হুঁশ হবার যে দীক্ষা কিংবা মানবিক গুণাবলীর একাডেমিক শিক্ষা, তা কখনোই তাদের কিশোরী বয়সের অসৎ চরিত্রের বুহ্য ভেদ করতে পারে না। অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম এদের কুচরিত্রে পরিবর্তন আনতে পারে না; কিছুতেই হনন করতে পারে না এদের অন্ধ-আত্মকেন্দ্রিকতা, লোভ-লালসা, অহং ও অমনুষ্যচিত স্বার্থপরতা। এদের জন্য একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে- ``ইল্লত যায় না ধুইলে খাসলত যায় না মইলে” আরেক পান্ডুলিপিতে সাকিবের বাবা আরো লিখেন- “তার কাছে আমার সব হারিয়ে এখন সর্বহারা নিঃস্ব হয়ে বিশাল এক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা পেয়েছি। যেই জ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের এত ডিগ্রিতে কিংবা সুবিশাল লাইব্রেরির পড়ায়ও পাইনি। এ নারী-দুশ্চরিত্রের বিশাল ক্যানভাস থেকে যা পেয়েছি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এবং সে প্রেক্ষাপটে নিবিড় অনুসন্ধান, নিরন্তর গবেষণা ও স্রষ্টার সত্য চর্চায় আমি এখন ঢের সমৃদ্ধ; যা পরকালের-পরজনমের সুবিশাল সঞ্চয়ন, আলহামদুলিল্লাহ। তাই এখন আমি আনন্দিত যে, আমার যুব-বয়সের এরূপ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দিয়ে স্রষ্টা আমাকে এ নষ্ট মেয়ের ফাঁদে ফেলে শেষতক দিয়েছেন অমীয় স্বাদের সুবিশাল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। যেরূপ অভিজ্ঞতার কথা লিখে গিয়েছেন বহু মনীষী, বিজ্ঞানী তাঁদের স্ত্রীর চরিত্র পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণে। অনুরূপভাবে এ দূষিত নারীর চরিত্ররূপ এখন আমার জন্য এক মহান শিক্ষা ও গবেষণা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বাস্তব ও বিজ্ঞানসম্মত দিকনির্দেশনা। তাই আমি এখন আমার আত্মসমালোচনা ও আত্মঅনুসন্ধান করে বলছি, তার কোনো ভুল হয়নি; ভুল করেছি শুধু আমি। হ্যাঁ, আমি অকপটে আমার ভুল স্বীকার করছি। আমার প্রতি এ নারীর সব নিষ্ঠুর নির্যাতনের জন্য দায়ী আমি; দায়ী আমার সরল বিশ্বাস আর অন্ধ ভালোবাসা। আমি বুঝতে পেরেছি- সব নারী মাতৃতুল্য নন, সব নারী বিবি খাদিজা নন, সব নারী মাদার তেরেসা কিংবা শেখ ফজিলাতুন্নেছা কিংবা ফয়েজুন্নেছা নন। আমি স্বীকার করছি- এই অযোগ্য মেয়েকে এতবেশি সম্মান দিয়ে প্রেরণা যুগিয়ে তাকে উন্নতির শিখর চূড়ায় তোলা ছিল আমারই ভুল, আমার জন্মের ও জন্মান্তরের অন্যতম সুবিশাল ভুল। তাইতো আমার এ ভুলের জন্য আমি ছোট্ট শিশু সাকিব, রাকিবসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ সবার কাছেই ক্ষমা চাচ্ছি। কিশোরী-তরুণী বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের হলে-হোস্টেলে, ব্যাচেলর কোয়ার্টারে এবং যুবালয়ে গিয়ে গিয়ে তার চরিত্র হারানোর কথা তারই মুখে জেনে-শুনেও বিয়ে করার জন্য তার ক্রেইজি আহ্বানে রাজি হয়ে যাওয়া ছিল আমার প্রথম ভুল। তদুপরি তার এহেন অতীত চরিত্রের ধরন বিবেচনায় না এনে তাকে পাশ্চাত্যের উন্মুক্ত-স্বাধীন অঙ্গনে নারী-শিক্ষায় দীক্ষিত করার সকল আয়োজন এবং আমার সরল মনের সুবিশাল পরিকল্পনা করা ছিল দ্বিতীয় বড্ড ভুল। তার বোন-দুলাভাইয়ের নিষেধ সত্ত্বেও তাকে বিলেতে পড়তে সব আয়োজন করে দেয়াতো ছিল আমারই চরম বোকামি-ভুল। কোলের শিশু-কন্যাকে আমার কাছে রেখে তার মাকে বিলেতের মুক্ত মেলামেশার সমাজে পাঠানো এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে তুলে দিতে গিয়েও তার ব্যক্তি-স্বাধীনতার পথ শানিত করতে তাকে যে বলে দিয়েছিলাম, Don`t hesitate to enjoy aûthing around your World -সেসবতো ছিল একমাত্র আমারই ভুল। পুনরায় দুই শিশু ছেলে ও মেয়েকে একত্রে আমার কাঁধে নিয়ে তাদের মাকে পিএইচডি করতে দীর্ঘদিনের জন্য হল্যান্ড পাঠানো এবং তৎপরবর্তীতে মিডিয়া ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে মধ্যরাত অবদি টকশোতে অনুমতি দিয়ে অবারিত ক্ষমতাবান করা এবং তার মধ্যে অহংকারের পাহাড় তৈরির সুযোগ করে দেয়াতো ছিল আমারই ভুল। এসবই যে আমার ভুল, আমার চরম ব্যর্থ প্রয়াস; এসবই যে আমার নিজের পায়ে কুঠারাঘাত...; তা এখন তার উন্মাদ চপেটাঘাতের পরে আমি একাকী নির্জন-নিরালায় বসে আল-কোরআন পড়ে এবং স্বর্গ থেকে পৃথিবী তৈরি ও বিধ্বংসের কাহিনীসমগ্র বিশেষত সাম্প্রতিক কভিড-১৯ এর করোনা গ্রাস দেখে সুনিশ্চিত হচ্ছি। যতই পড়ছি, ততই শিখছি; আর বুঝতে পারছি- কিশোরী বয়সে চরিত্রহীন বিকৃত রুচির স্ত্রীর ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অন্ধ-পাগলামি করা আমার কত বড় ভুল! তাই এ ভুলের জন্যইতো আমি কঠিন চপেটাঘাতে শাস্তি পেয়েছি স্বয়ং এ বিশ্বাসঘাতক স্ত্রীর কাছ থেকে এবং এখনো আছি তার নষ্ট চরিত্রের নিষ্ঠুর নির্যাতন ও শত্রুতার প্রলয়ে। এখন শুধু ক্ষমা চাইছি আমার ছোট্ট ছেলে সাকিবের কাছে, শিশু-বয়সেই যে পড়েছে মায়ের বহুমুখী প্রবঞ্চনায় এবং বাবা-ছেলের সুসম্পর্কের প্রতি তার মায়ের ঈর্ষায়। যা আমার আরেক নতুন ট্র্যাজিক এক্সপেরিয়েন্স; তাই আমি পাহাড়সম ভার বুকে বয়ে, আর সাগরসম অশ্রুজলে এ শিশুর সাথে যোগাযোগ থেকেও নিজকে বিচ্ছিন্ন করার কঠিন প্রয়াস নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ খুঁজে পাচ্ছি না। বিষাক্ত ব্যভিচারিণীর কাছে আমার পরাজয়কে বরণ করে হলেও একটি শিশুকে তার মায়ের ঈর্ষামুক্ত, অত্যাচার-অবিচারমুক্ত রাখাই এখন এ অসময়ের অতীব জরুরি কাজ। তাহলে এমনওতো হতে পারে আমার এরূপ উৎসর্গীকৃত এ শিশু-সন্তানই দেশ ও জাতির সূর্য-সন্তান হিসেবে আগামীর পুরুষ-নির্যাতন প্রতিরোধে রাখতে পারে বিশাল ভূমিকা। এতদিনে আমার বোধোদয় হয়েছে যে- স্বার্থপর মানুষরাই জীবনে ভালো থাকে; আর বোকারাতো কেবল অন্যকে ভালো রাখে॥ হে দয়াময়, আপনি আমার ওপর এ নারীর আরও কঠিন নির্যাতন দিয়ে হলেও এই নিষ্পাপ-অবোধ শিশুটিকে রহমত আর বরকতে ভরিয়ে দিন; আর আমাকে এ বিপথগামী কুচক্রিণীর ব্যভিচার-নির্যাতন সইবার তৌফিক দিন। উপকার করে বাঁশ খাওয়া বোকা মানুষগুলোর জন্যইতো পৃথিবী এতো সুন্দর। তাই হে আল্লাহ, আপনি এ বোকার প্রার্থনা কবুল করুন, সবাইকে মাফ করুন; যদিও জানি যে- ইবলিশরূপী এরূপ মানুষকে আপনি হেদায়েত দান করেন না। তবুও আমার ৩ অবুঝ সন্তান বিশেষত নিষ্পাপ শিশু-সাকিবের কথা বিবেচনা করে আপনি তাদের এই বিপথগামী মাকে হেদায়েত করুন- আমিন।” এভাবেই সাকিবের লেখক বাবা তুলে ধরলেন এ বাংলার ইবলিশ এক ললনাকে তার উক্ত দু`বইয়ে। আর এমনিভাবেই যুগে যুগে বিবি হাওয়ার অনুকরণে বিভিন্ন নারী কুমন্ত্রণা আর কুপ্ররোচনার ছলনাজালে জড়িয়ে পুরুষ জাতিকে বাবা আদমের মতো করেছে পথভ্রষ্ট, স্বর্গচ্যূত; ঠেলে দিয়েছে বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের নরক কুন্ডে। বেহেশতের স্বর্গীয় বাগিচা থেকে পৃথিবীর সর্বগ্রাসী অগ্নি কুন্ডের এক সর্বনাশা জ্বালামুখে। যেখানে পুরুষ জাতির অধিকাংশই নরকের আগুনে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যেন ধিকি ধিকি জ্বলছে প্রতিনিয়ত। উক্ত ভুক্তভোগীর নিজের লেখা বইয়ের পান্ডুলিপিতে আরো বহু বাস্তব তথ্য-উপাত্ত, উদাহরণ, প্রামাণ্য দলিল দেয়া হয়েছে; যা পড়লে কিংবা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করলে কোনো কোনো অধ্যায়ে সহৃদয় যে কোনো পাঠককে এক প্রতিবাদমুখর ট্র্যাজিক বেদনায় পড়তে হতে পারে। সাকিবের বাবা লিখেন- “শিক্ষিত মানুষ মাত্রই যেখানে সামান্য উপকারেও অসামান্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিজের উদারতা ও মহত্ত্বের পরিচয় দেয়; সেখানে ব্যভিচারী নারী তার স্বামীর কাছ থেকে এত্তকিছু পাবার পরও উপরোক্তরূপ অসামান্য সহযোগিতায় সামান্য কৃতজ্ঞতাতো দূরেরই কথা, সরলমনা স্বামীর বিশাল সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায়ও ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা বোধটুকু দেখায়নি। এমনই ঐ এককালের নষ্ট মেয়ের এখনকার অমনুষ্যচিত নারী-মন। সে তার অবুঝ সন্তানদের কিশোর বয়সের ক্ষণিক-মোহের ভ্রান্ত ধারণা দিয়ে যা বুঝিয়েছে, সেই বুঝও ধরাশায়ী হবে তখন, যখন এ সন্তানরা পরিণত হয়ে তাদের সন্তানদের চাকুরিতে ও বিয়েতে যাবে, এই বিচ্ছিন্নতাক্রান্ত সন্তানরাও তখন নিশ্চিতভাবে বুঝতে থাকবে নিম্নোক্ত দর্শনতত্ত্ব- United we Rise Divided we Fall... আমি জানি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান এ নারীকে আলোকিত করতে পারেনি; এমনকি স্বামী-সন্তানকে দেশে ফেলে রেখে বছরের পর বছর পাশ্চাত্যে থেকেও সভ্যতা-নম্রতা-ভদ্রতা, যুক্তি-বিজ্ঞান-গণতন্ত্র, নিজ স্বার্থের পাশাপাশি অন্যের অধিকার ও অন্যের ক্ষতির প্রতি সচেতনতা- এসবের কিছুই সে শিখতে পারেনি; কিংবা নিজ জীবনে ও পরিবারে চর্চা করতে পারেনি। ধর্মের শিক্ষা কিংবা চর্চাও তার মধ্যে নেই। আমাদের মতো স্বামী-জীবন, এমনকি ৩ সন্তানের জীবনও তার ব্যক্তিস্বার্থ ও অন্ধের মোহের কাছে পরাজিত। কিন্তু ভেবে অবাক হই, তার প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বাবার মতো সুউন্নত ব্যক্তিত্বের কোনোরূপ ব্যক্তিত্বই তাকে ছোঁয়নি। সে যেভাবে আচমকা ঐ আমার ব্যাচেলর বাসায় গিয়ে পুরুষ-ধর্ষণ করে কুমন্ত্রণা দিয়ে দু`কাজী অফিসে দু`বার বিয়ে করে তার সব স্বার্থ উদ্ধার করেছে, আবার ঠিক ঐ একইভাবে নিজের সকল স্বার্থ তার টইটম্বুর ভোগবিলাসে মিটিয়ে নিয়ে অতঃপর সিঙ্গেল মাদার হওয়ার কুপ্রবৃত্তিতে প্রৌঢ় স্বামীকে হঠাৎ ঘর থেকে বের করে দিয়ে কোনো কারণ ছাড়া ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে করেছে পরিবার-সন্ত্রাস। এ সংসারে, এ সমাজে তার এতশত অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য বিচারের মুখোমুখী হওয়াতো থাক দূরের কথা, সে কি কারোর কোনোরূপ প্রশ্নের মুখোমুখী হয়েছে? বিশেষত তার কিশোরী বয়সে বার বার বিভিন্ন পুরুষালয়ে গিয়ে পুরুষ ধর্ষণের জন্য কিংবা পরিণত বয়সে উচ্চশিক্ষিত নারী হয়ে মূর্খ নারীর চেয়েও অধমরূপে পরিবার-সন্ত্রাসের জন্য?” এ প্রশ্ন কি শুধু প্রশ্নই থেকে যাবে, নিস্ফল হাহাকার হয়ে শুধু ঘুরে বেড়াবে আকাশে-বাতাসে? শিশু ও নারী অধিকার আইনের অন্তরালে, নারী অধিকারের নামে এসব কুচক্রী ব্যভিচারী কতিপয় নারী কি যুগ যুগ ধরে আমাদের পরম সশ্রদ্ধ অন্যসব মা-বোনদের প্রোজ্জ্বল উৎসর্গ ও ভূমিকার মুখে শুধু কলঙ্ক হয়েই থাকবে? এ কলঙ্কের কালিমা তাদের মুখে এঁকে দিয়ে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে কোনো সমাজপতি বা কোনো রাজনীতিকের উদ্যোগ কিংবা কোনো বিচারকের বিচার কি এ ইহকালে দেখে যেতে পারবো না আমরা? যুগে যুগে এভাবেই সরলমনা পুরুষের জীবন কি কুচক্রী ব্যভিচারী কতিপয় নারীর দ্বারা ধ্বংস হয়ে যেতে থাকবে? পুরুষ হৃদয় ভাঙনের গগণবিদারী কান্না ও মানবতা ভুলণ্ঠিত হতেই থাকবে? বিনা কারণে যখন-তখন যে কেউ ডিভোর্স দিয়ে সন্তান ও স্বামীর জীবন ভেঙে চুরমার করে দিতে থাকবে? পেটে সন্তান নেয়ার পূর্বে ডিভোর্স না হয় মেনে নেয়া যায়, কিন্তু সন্তান হবার পর বিশেষত ৩টি অবোধ সন্তানের সম্মুখে ২৪ বছরের বিবাহিত জীবনের স্বামীকে কোনোরূপ আলোচনা ছাড়াই ডিভোর্স দিয়ে ৩ সন্তান ও তাদের বাবার জীবনকে ভেঙে চুরমার করে দেয়া কি আল্লাহর আরশ কাপানো মহাপাপ নয়? সমাজ চক্ষু বন্ধ করে সবাই এরূপ নারীর অহং-ঔদ্ধত্য ও নির্মম নিষ্ঠুরতাকে এড়িয়ে যাওয়া আরেক অন্যায় কিংবা পাপাচার নয় কি? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি-বিধানেরও চরম লঙ্ঘন নয় কি? তাহলে এখন কেন নয় করোনা মহামারী? কেন নয় লাগাতার লকডাউন? কেন নয় আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন? কেয়ামতের মহড়ারূপী শত বছর পর পর হিসাব করে কেন নয় এ অদৃশ্য-অস্পৃশ্য-অপ্রতিরোধ্য মহামারী?