॥ নাছরিন আক্তার হিরা ॥
এক্সিকিউটিভ, ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র
সততা ও সত্যবাদিতা হচ্ছে মানুষের এমন এক মহামূল্যবান বৈশিষ্ট্য, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং অন্যদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সহায়তা করে।
সৎ ও সত্যবাদী মানুষ সবার কাছেই সম্মানিত ও প্রশংসিত হয়। আশেপাশের চেনা মানুষগুলো তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। সততা মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে এবং ব্যক্তিকে অন্যদের মাঝে প্রিয় করে তোলে। কেউ যদি সত্যবাদিতা থেকে দূরে সরে না যায় এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে, তাহলে সে কখনোই মিথ্যাবাদী হয়ে উঠবে না। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, সত্য কথা শুনতে চাইলে শিশুদের কাছে যাও। শিশুদের মন ও আত্মা যেহেতু পবিত্র থাকে; সে কারণে তারা জন্মগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সত্য কথা বলে। কারণ মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই হলো সততা ও সত্যবাদিতা।
ব্যক্তির মনের ভেতরের উদ্দেশ্য এবং কাজে-কর্মের মধ্যে যখন মিল থাকে, তখনি সেটাকে সততা বলা হয়। সততা কেবল একটি সত্য শব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, সবসময় কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকা জরুরি। যাদের মধ্যে সততা নেই, তারা নিজেকে এবং অন্যদেরকে স্বাভাবিকভাবে কিংবা সঠিকভাবে চিনতে পারে না। এ ধরণের ব্যক্তি আসলে অন্যদেরকে ধোঁকা দেয়ার পাশাপাশি নিজেকেও ধোঁকা দেয়। সৎ ও সত্যবাদী না হলে মানুষের অন্যান্য গুণাবলীও লোপ পায়। অসৎ ব্যক্তির সমাজে কোনো সম্মান থাকে না। কারণ অসৎ ব্যক্তি নির্লজ্জের মতো যেকোনো ধরণের কাজে লিপ্ত হতে পারে। এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
সততার প্রথম ভিত্তি হল পরিবারে। পরিবার হচ্ছে মানুষের প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে একজন মানুষের শিক্ষা ও বিকাশ শুরু হয়। একটি পরিবারে নিজেদের মধ্যে সততাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুণ। সবার আগে বাবা-মাই পারেন তার কথা, কাজ ও আচার-ব্যবহারের মাধ্যমে সন্তানদের শিক্ষা দিতে। এরপর শিশুরা বিদ্যালয়ে সততার সঙ্গে আরও বেশি পরিচিত হয়। তারা প্রতিমুহূর্তে পরিবারের অন্য সদস্য এবং চেনা মানুষদের সততা পরিমাপ করতে শেখে এবং বড়দের অনুকরণ করে। বড়রা মিথ্যা বললে পরিবারের অন্য সদস্যরাও মিথ্যা বলতে শেখে।
মিথ্যাচার থেকেই নানা অপকর্মের সূত্রপাত সৃষ্টি হয়। এজন্য মিথ্যাচারকে অপকর্মের জননী বলা হয়ে থাকে। একবার একটি মিথ্যা কথা বলে ফেললে তা কাটাতে আরো অনেক মিথ্যা কথা বলতে হয়। যারা মিথ্যা কথা বলে, তারা অন্যদেরও মিথ্যাবাদী মনে করে। ফলে সমাজে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মিথ্যাবাদীরাও সত্যকে গ্রহণ করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে।
আদিকাল থেকে মানুষ সততার চর্চা করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে আসছে। সততার গুণে সমৃদ্ধ মানুষ সমাজের আদর্শ মানুষ। সততার সুফল শত ধারায় বিকশিত। জীবনকে সুন্দর, সফল ও সার্থক করে তুলতে হলে সৎ থাকার অভ্যাস অর্জন করতে হয়। সৎ গুণসম্পন্ন মানুষ কখনও অসৎ কিংবা মন্দকাজে লিপ্ত থাকে না। সৎলোক মাত্রই চরিত্রবান ও মহৎ হয়। জীবনকে সফল ও সার্থক করে তোলার প্রধান ধাপ হচ্ছে সততা। একজন ভালো মানুষ সবসময় সত্য বলে। সত্যের অনুশীলন করেই সে আগামীদিনের পথে এগিয়ে যায়।
আমার কর্ম-প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার ২৪টি কার্যক্রমের অন্যতম হচ্ছে সততা পুরস্কার ও সততা জাগরণী কার্যক্রম। এ কার্যক্রমে রয়েছে সৎ ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা, সৎকর্মে সবাইকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা, সেমিনার ও পথসভা আয়োজন, স্টিকার-লিফলেট-ডেক্সসিøপ-স্যুভেনির ও ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে সততার জাগরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। ক্যাম্পাস-অডিটোরিয়ামে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মন্ত্রী-সচিবসহ বিভিন্ন সৎ ব্যক্তিত্বগণকে পুরস্কার-এওয়ার্ড ও সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে ক্যাম্পাস’র নিজস্ব অর্থায়নে। ক্যাম্পাস’র এ দৃষ্টান্ত অনুসরণে অন্যরাও এগিয়ে আসলে সর্বস্তরে উন্মেষ ঘটবে সততার চেতনা; জাতিতে উজ্জীবিত হবে দেশপ্রেম ও মানবতাবোধ।
আমাদের সম্পাদক ড. এম হেলাল স্যার সততার সঙ্গা, ব্যাখ্যা ও উদাহরণ সম্বলিত যে কলাম ও বই লিখেছেন তা পড়ে, বুঝে আমি নিজেও সততার ব্যাপারে সচেতন ও সিরিয়াস হয়ে উঠেছি। কারণ, স্যারের বই অধ্যায়ন করে আমি বুঝে গেছি সততা সুন্দর; সততা মহান। আমাদের চরিত্রকে ভালো করার জন্য, জীবনকে সফলতায় ভরিয়ে দেয়ার জন্য সততার চর্চা অপরিহার্য। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সততার পরিচয় দেয়া একান্ত দরকার। আর এইজন্যে আমাদের সৎ থাকার অভ্যাস গঠন করতে হবে, সততার অনুশীলন করতে হবে। তাই আমি নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি যে এখন থেকে সততার লালন ও চর্চায় আমি একনিষ্ঠ থাকব। সবাইকে সেই সুন্দর পথে, সেই সুমহান জীবনে চলে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। এভাবে সবাই মিলে গড়ে তুলবো আমরা নতুন এক সভ্য সমাজ এবং আগামীর সুন্দর পৃথিবী।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)