বিশেষ খবর



Upcoming Event

এক নজরে পিএইচডি ডিগ্রি

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রতিবেদন

ডক্টরাল গবেষণার নানা দিক নিয়ে অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে। বেশির ভাগের প্রশ্ন থাকে ফান্ড-গ্রান্ট নিয়ে। গবেষণার সময় পরিবেশ ও কাজের চাপ নিয়েও প্রশ্ন থাকে। পিএইচডি যেহেতু একটি একাডেমিক ডিগ্রি, সেহেতু বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নিয়ম আরোপিত থাকে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে এবং নিজের কর্মক্ষেত্রে নানা দেশের পিএইচডি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ তথ্যগুলো এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

ফান্ডিং
পৃথিবীর সব দেশে ফান্ডিং, গ্রান্ট ও সেলারি অভিন্ন নয়। এটা নির্ভর করে প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, সমাজব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার ব্যয়; মূলত এই তিনটি বিষয়ের ওপর। যে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো, সেই দেশে ফান্ডিং বা গ্রান্ট ভালো এমনটি বলা যায় (তবে সব সময় নয়)। সমাজব্যবস্থা বা সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে ফান্ডিং-গ্রান্টের বিষয়টা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। পৃথিবীর কিছু দেশে পিএইচডি একটি চাকরি (Full time job) হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে একজন শিক্ষার্থী প্রতিমাসে বেতন পেয়ে থাকেন। যেহেতু, বিভিন্ন দেশের বেতনের অবকাঠামো ভিন্ন, তাই অর্থের পরিমাণও ভিন্ন। সময়ে-সময়ে বেতন বৃদ্ধি হয়। বছরে নির্দিষ্ট দিনের ছুটি থাকে। জবের সিকিউরিটি থাকে। চিকিৎসা ও অন্যান্য বাবদ কিছু খরচও পান। শিক্ষার্থীকে আয়কর দিতে হয়।
অন্যদিকে, পৃথিবীর অনেক দেশে পিএইচডি হলো বৃত্তি বাবদ গবেষণাকর্ম। ফলে সেসব দেশে একজন শিক্ষার্থীকে আয়কর দিতে হয় না কিংবা কোথাও কোথাও আয়কর হার তুলনামূলক কম।
আরেকটি বিষয় হলো জীবনযাত্রার খরচ (Living Cost)। কোনো কোনো দেশে জীবনযাত্রা খুব ব্যয়বহুল। ফলে সেসব দেশে শিক্ষার্থীরা ফান্ড বা সেলারি বেশি পেয়ে থাকেন। যেমনঃ নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডে পিএইচডি’র গবেষকদের বেতন তুলনামূলক বেশি। এসব দেশে জীবনযাত্রাও খুব ব্যয়বহুল। বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট কিংবা ইন্ডাস্ট্রি কোথায় গবেষণা করছেন, তার ওপর নির্ভর করেও ফান্ডের পরিমাণ ভিন্ন হয়।

পিএইচডি’র সময়
পৃথিবীর অনেক দেশে পিএইচডি তিন বছর আবার অনেক দেশে চার-পাঁচ বছর। তবে কোনো কোনো শিক্ষার্থীর গবেষণা-ভাগ্য খারাপ হলে কিংবা প্রফেসর সহযোগী না হলে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি লাগতে পারে। যেসব দেশে পিএইচডি ফুল টাইম জব নয়, সেখানে ফান্ড নিয়ে টানাপড়েন থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রেও সময় কারও বেশি লাগে। সেটা শুধু দেশভিত্তিক না, প্রতিষ্ঠানভিত্তিকও হতে পারে। পিএইচডি’র সময় কোর্স এবং টিচিং (TA: Teaching assistant) করতে হয়। আমেরিকায় পাঁচ বছর, তবে ওখানের কয়েকজন শিক্ষার্থী পেয়েছি, যাদের ছয়-সাত বছর লেগেছে বলে দাবি করেছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশে তিন-চার বছর। সুইডেনে পাঁচ বছর। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই চার বছরের স্নাতক শেষ করে পিএইচডি শুরু করা যায় (যেমনঃ চীন, আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশ)। ইউরোপে যেটাকে ধরা হয়, ২৪০ ইসিটিএস (European Credit Transfer System) ; প্রতিবছর ৬০ ক্রেডিট ধরে, চার বছরের স্নাতক শিক্ষা। অনেক দেশে আবার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রয়োজন হয়। যেমনঃ চীনে, স্নাতক (চার বছর) শেষ করে পিএইচডি শুরু করতে পারলে, সময় লাগবে পাঁচ বছর কিন্তু তা না হলে মাস্টার্স (সেখানে তিন বছর) শেষ করে শুরু করলে, পিএইচডি করতে লাগবে তিন বছর। মূল হিসাবটা মোটের ওপর সারা পৃথিবীতেই প্রায় একই। স্নাতক থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত মোট শিক্ষাকাল ৯-১০ বছর।

কাজের চাপ
প্রথমত, গবেষণার ক্ষেত্র বুঝে ‘কাজের চাপ’। যেমন: রাজনীতিবিজ্ঞানের কাজের চাপ আর প্রাণরসায়নের কাজের চাপ এক নয়! দ্বিতীয়ত, পরিবেশ ও সংস্কৃতির ওপরও নির্ভর করে কাজের চাপ। যেমনঃ চীন, জাপানে কাজ বেশি করতেই হবে। কারণ সেখানকার সংস্কৃতিটাই এভাবে গড়ে উঠেছে। আপনার আশপাশে সবাই যখন ১২ ঘণ্টা কাজ করবে, আপনি ৮ ঘণ্টা কাজ করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন! আমেরিকায়ও কাজের চাপ অনেক। সেখানেও অনেক প্রতিষ্ঠানে সপ্তাহে ছয় দিন, ১০-১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। ইউরোপে কাজের চাপ তুলনামূলক কম। সপ্তাহে পাঁচ দিন, ৮-১০ ঘণ্টা করে কাজ। ইউরোপের মধ্যে জার্মানিতে কাজের চাপ তুলনামূলক বেশি। আর কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর কাজ করে সেটা ভিন্ন। কাজের চাপ কখনো কখনো প্রফেসর  ও ইনস্টিটিউটের ওপর নির্ভর করেও ভিন্ন হয়। ফান্ড-গ্রান্ট-সেলারি ছাড়া পিএইচডি নিশ্চয় করা যায়। এ বিষয়ে আমার ধারণা কম। আর বিজ্ঞানে কেউ যদি পিএইচডি করতে চান, তাহলে ফান্ড ছাড়া না করাই উত্তম। কারণ গবেষণা করে তো আর জঠরজ্বালা মেটে না। চাই রুটি-মাখন এবং সে জন্য অর্থ। উন্নত দেশে জীবনযাত্রা খুবই ব্যয়বহুল। সুতরাং সেখানে ফান্ড ছাড়া গবেষণা অসম্ভব।

অনলাইনে পিএইচডি
ভ-, প্রতারকদের কাছ থেকে দূরে থাকুন! অনলাইন পিএইচডি হলো রাজনীতিবিদ, পয়সাওয়ালা আর প্রতারকদের জন্য। পিএইচডি’র জন্য ওরা মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করে। বিনিময়ে ডিগ্রি দেয়া হয়। তা ছাড়া সব বিষয়ে অনলাইন পিএইচডি হয় না। এক্সপেরিমেন্টাল-ফিজিকস, রসায়ন, প্রাণরসায়ন, অণুজীববিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে কীভাবে অনলাইন পিএইচডি কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
তথ্য জেনে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য লেগে যান। প্রস্তুতিটা আপনাকেই নিতে হবে। গবেষণার মুখ্য দিক হলো, ইচ্ছে ও পছন্দ অনুযায়ী গবেষণার ক্ষেত্র নির্ধারণ করা এবং মান সম্পর্কে সচেতন হওয়া। ফান্ডের পরিমাণ, কাজের চাপ ইত্যাদি গৌণ বিষয়। গবেষণা শিখতে হলে তরুণ বয়সে সময় ব্যয় করতেই হবে। এটা নিয়ে ভয় না পেয়ে, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। শুভকামনা!

-লেখকঃ রউফুল আলম,  ডক্টরাল গবেষক, স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়, মেইলঃ rflalam@yahoo. com


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img