বিশেষ খবর



Upcoming Event

নিজের সাথে নিজে কথা বলুন, নিজের সমস্যা নিজেই দূর করুন

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিশেষ নিবন্ধ

অধ্যায়
আগামী পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হবে সহজতা সংক্ষিপ্ততা অর্থাৎ ব্যক্তিগত, সামাজিক, জাতীয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সরল বা জটিল যেকোনো সমস্যাসহ সকল অসুবিধার সঠিক সংক্ষিপ্ত সমাধান এবং যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছার সহজ উপায় উদ্ভাবনই হবে অত্যাধুনিক বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী যে মানুষের ব্যক্তি জীবনসহ পৃথিবীর সকল সমস্যারই সমাধান রয়েছে; অর্থাৎ সমাধানহীন কোনো সমস্যাই পৃথিবীতে নেই সমস্যা শুধু ) সমস্যার মূলে পৌঁছতে না পারা; ) সমস্যার সমাধানে আন্তরিকতার অভাব; ) স্বার্থ ত্যাগের মানসিকতা না থাকা; ) সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা
আমার লেখার উপজীব্য বিষয় হচ্ছে, কীভাবে নিজের সমস্যা নিজেই দূর করা যায় এবং কত সহজ সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করা যায়
কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল অর্থাৎ Health is first. তাই স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে আমরা আলাপ করব আমাদের শরীরে কোনো ব্যথা-বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা বা অসুবিধা দেখা দিলে আমরা ডাক্তারের শরণাপন্ন হই অথবা হাসপাতালে যাই ডাক্তার সাহেব কেস হিস্ট্রি শোনার পর একগাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন; যার কিছু রিপোর্ট হয়ত দুএকদিনে পাওয়া যায়, আবার কিছু রিপোর্ট পেতে বহুদিনও লেগে যায় অধিকাংশ রিপোর্টে অসুখের Symptom প্রতিফলিত হলেও এসব পরীক্ষা অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরুপণে ব্যর্থ হয় তখন রোগীর ওপর চলে দীর্ঘ গবেষণা, এক বিশেষজ্ঞ রেফার করেন আরেক বিশেষজ্ঞকে; গঠিত হয় মেডিকেল বোর্ড অথবা রোগীকে পাঠাতে হয় বিদেশ-বিভূঁয়ে যাদের টাকা আছে, তারা তা Afford করতে পারে; যাদের টাকা নেই, তারা এগিয়ে যায় মৃত্যুর দুয়ারে
অথচ মানুষ যদি জীবনযাপনে স্বাস্থ্য লালনে সতর্কতা অবলম্বন করে, তাহলে ৯০% অসুস্থতা বা অসুবিধা থেকে মুক্ত থাকতে পারে আমার বিশ্বাস, অন্তত ৯০% অসুখ মানুষের নিজের সৃষ্ট অর্থাৎ ৯০% অসুখের জন্য রোগী নিজেই দায়ী আর সর্বোচ্চ ১০% অসুখ হয়ত প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক অসুখেরও কারণ আছে, যা পরবর্তী নং অধ্যায়ে বলা হয়েছে এর কিছু হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধস্বরূপ, আর কিছু হচ্ছে স্রষ্টার পরীক্ষা-নিরীক্ষার লীলাখেলা কথায় আছে, ঈমানদার মানুষকে স্রষ্টা প্রতি ৪০ দিনে একটি অসুবিধা দিয়ে পরীক্ষা করেন
উক্ত বিশ্বাসের সাথে যারা একমত, তারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন যে অসুস্থ ব্যক্তির ৯০% অসুখের পূর্ব-সমাধান রয়েছে তার নিজেরই হাতে আর অসুখ পরবর্তী সমাধান? আসুন, সমাধানের অন্বেষণ করি
যদিও সমাধানের নানা স্বরূপ রয়েছে, তবুও আমার দেখা বিভিন্ন কেস হিস্ট্রি অবলম্বনে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে রোগ নিরাময় সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে আলোকপাত করব প্রথমে আমার মাকে নিয়েই বলি


পর্ব
কেস স্টাডি -

প্রিয় পাঠক বিনিদ্র রজনীর ব্যুহ ভেদ করে আমি যখন কথাগুলো লিখছি, তখন আমার মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক, যিনি পাশের রুমে শুয়ে-বসে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন আর আনাড়ি আমি তাঁকে পাহারার পাশাপাশি রোগাক্রান্তি মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে নিরীক্ষা চালাচ্ছি আমার মায়ের প্রতিদিন সিলিন্ডার অক্সিজেন লাগে, আর কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করার জন্য মাঝে মাঝে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করাতে হয় তিনি শ্বাসকষ্টের রোগী, অর্থাৎ সফটওয়্যারের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবে তাঁর শরীর থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হতে অসুবিধা  হয় এই একটি প্রাকৃতিক কারণে গত মাস তাঁকে ঘিরে কত যে অপ্রাকৃতিক মহাকর্মযজ্ঞ চালাতে হয়েছে বহুজনকে; নানা দীক্ষা অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সব সম্ভাবনার বঙ্গে চিকিৎসা জগতের যে দৈন্য দেখতে হয়েছে আমাকে, তা লিখলে বড় ভলিউমের কয়েকটি বই হয়ে যাবে তাই সে মহাকাব্যে না গিয়ে শুধু মূল বিষয়টুকু বলছি
মা নিঃশ্বাসজনিত অসুবিধায় তাঁকে হাসপাতালে চেকআপ করাতে নিলে ডাক্তার জানান, তাঁর অবস্থা ক্রিটিক্যাল তাই তাৎক্ষণিক একটি নামকরা কার্ডিয়াক হসপিটালের সিসিইউতে তাঁকে ভর্তি করা হয় সেখানে ভেনটিলেশন মেশিনের সাপোর্টসহ বিভিন্ন চিকিৎসার পাশাপাশি দিনে ১৪৪টি ইনজেকশন দেয়া হয় ইনজেকশনের সুইয়ের খোঁচায় তাঁর দুহাত ফুলে কালো হয়ে যাওয়ায় শেষতক পায়েও পুশ করা হয় এতকিছুর পরও সেই সিসিইউ রেজাল্ট হচ্ছে  আমাদের এখানে তাঁর আর অধিক সুস্থ হওয়ার সুযোগ নেই; তাই তাঁকে অন্য কোনো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করানো উচিত অন্য হাসপাতাল এরূপ আধুনিক সিসিইউ থেকে ফেরৎ রোগীকে ভর্তি নিতে সংকোচ করতে থাকে এভাবে দিন কেটে যাওয়ার পর আমার আপন ভাইয়ের চেয়েও বড় শুভাকাক্সক্ষী, মানবতাবাদী সমাজসেবী ব্যক্তিত্ব ডাঃ বি এম হারুন এর সহযোগিতায় এবং শ্বাসরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ রাশিদুল হাসান এর তত্ত্বাবধানে আরেক আধুনিক হাসাপাতালের আইসিইউতে মাকে ভর্তি করি সেখানে দিন আইসিইউতে এবং দিন কেবিনে থাকার পর অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগিয়ে তাঁকে বাসায় নিয়ে আসি  
রোগীর অবস্থা জানতে / দিন পর এক্সরেসহ বিভিন্ন টেস্ট করিয়ে রাত ১২টায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে রিপোর্ট দেখাতে নিলে তিনি অবিলম্বে আরেকটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করাতে বলেন, যেখানে আছে বাইপাপ মেশিন এবং তা দিয়ে মা শরীরে জমে যাওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের করতে হবে যে কথা সেই কাজ; আর যাই হোক, মাকে হারাতে চাই না তাই মধ্যরাতেই এম্বুলেন্স কনফার্ম করে ভোরের প্রতীক্ষা  
সেই হাসপাতালের আইসিইউতে দিন এবং কেবিনে দিন মাকে রাখার পর ডিউটি ডাক্তার (যারা সাধারণত তরুণ বয়সী এবং চিকিৎসা-বাণিজ্যে নতুন অনভিজ্ঞ হয়ে থাকে) আমাকে বলেন আপনার মায়ের সমস্যা নমিন্যাল বাট ক্রিটিক্যাল তাঁর হার্ট, ব্রেন, লিভার, কিডনি সবই ভালো; শুধু সমস্যা হচ্ছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের জন্য লাং তাঁর ব্রেনের কমান্ড নিতে পারছে না তাই বাইপাপ দিয়ে আর্টিফিসিয়ালি কার্বন বের করার জন্যই তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে সিনিয়রের প্রেসক্রিপশনের সূত্রে তিনি বলেন বাইপাপ মেশিন কিনলে তাঁকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন অর্থাৎ বাইপাপ লাগবেই, তবে তাতেও সমস্যা আছে দীর্ঘদিন যন্ত্র লাগিয়ে রাখার ফলে তিনি যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়তে পারেন এবং এখন যতটুকুন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে কাজ করে, পরে তাও হারিয়ে ফেলতে পারেন
ডিউটি ডাক্তারের সরল-সুবোধ কথার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মনে মনে বললাম আপনি এর চেয়ে বড় ডাক্তার না হওয়াই ভালো কারণ বড় ডাক্তারদেরতো ধৈর্য সময় কম, রোগ সম্পর্কে রোগী বা তার সংশ্লিষ্টদের সাথে এককথার বেশি দুকথা বলার বা বুঝিয়ে দেয়ার এত সময় দিয়ে আপনি যা বললেন, তাতে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার মাকে সুস্থ করতে হলে তাঁর প্রাকৃতিক চিকিৎসা দরকার, তাঁর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করা দরকার, তাঁর ব্রেনের সাথে লাংয়ের কমান্ডিং রেসপন্ডিং কানেকশন দরকার
নিজের এরূপ বুঝ নিয়ে কনসালটেন্ট ডক্টরকে গিয়ে বললাম, মাকে কি বাসায় নিয়ে যেতে পারি? বললেন পারেন, তবে অবশ্যই সাথে বাইপাপ থাকতে হবে বাইপাপ যন্ত্র সংগ্রহের বিষয়ে তার কথায় রাজি হয়ে হাসপাতাল থেকে ছুটির প্রক্রিয়া শুরু করলাম কিন্তু বাইপাপ যন্ত্র কোথাও নেই বাংলাদেশে বাইপাপ একমাত্র আমদানীকারকের সাথে যোগাযোগ করে জানলাম যে, তাদের কাছে একটিমাত্র মেশিন আছে এবং দাম লক্ষ ২০ হাজার টাকা তাকে বললাম, আমি শুনেছি এর দাম ৮০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ লক্ষ টাকা তবুও আপনি যে দামই বলবেন সে দামে আমাকে কিনতেই হবে, মাকে বাঁচিয়ে রাখতে অনুগ্রহ করে দাম কিছু কমানো যায় কিনা, দেখুন বললেন, আমি অফিসে গিয়ে জানাচ্ছি
সুধী পাঠক, হয়ত ভাববেন যে বিক্রেতাকে এরূপ স্বাধীনতা দিলে সেতো দাম বেশি হাঁকাবেই কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, বিক্রেতা যদি আরেকজনের বিপদকে সুযোগ হিসেবে নেয়, তাহলেতো সে ভীষণ চালাক-বোকা কারণ তারও জানা থাকা উচিত কেউ কাউকে ঠকিয়ে লাভবান হতে পারে না, অন্যকে ঠকালে নিজকেই ঠকে যেতে হয়; আর ঠক-খাওয়া ব্যক্তি পেয়ে যায় স্রষ্টার কৃপা তথা প্রকৃতির আশীর্বাদ কিন্তু প্রকৃতির সেই ইঞ্জিনিয়ারিং আমরা বুঝতে পারি না বলেই যত বিপত্তি   
ধরুন, বিক্রেতা যদি বাইপাপ পূর্ব নির্ধারিত দামের চেয়ে ৪০ হাজার টাকা বেশি নেয় অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকা ঠকায়, তাহলে আমার বিশ্বাস যে আমি স্রষ্টার বিচারের কাছে সমর্পিত বিধায় স্রষ্টা আমাকে অন্যকোনো ক্ষেত্রে কমবেশি লক্ষ টাকা জিতিয়ে দেবেন আর ঠগ ব্যক্তিকে অন্যক্ষেত্রে কমবেশি লক্ষ টাকার ক্ষতি করে দিতে পারেন প্রকৃতির এসব অমোঘ বিধানকে পাগলের প্রগলভতা বলে কেউ উড়িয়ে দিতে চাইলে আমিও তাকে মনে রাখতে অনুরোধ করব প্রকৃতির বিচার কিন্তু সর্বদাই ন্যায়বিচার, প্রকৃতি বিচারে ভুল করে না; তাই তার প্রতিশোধ বড়ই নির্মম  
হাসপাতালের নানারকম বিল মিটিয়ে মাকে নিয়ে বাসায় যাবার প্রতীক্ষা এম্বুলেন্সও ঠিকঠাক কিন্তু বাইপাপ অপাপী ভাইটি ফোন করছেন না দেখে আমিই তাকে ফোন করলাম তিনি জানালেন আমাদের বাইপাপ যন্ত্র শেষটিও যে বিক্রি হয়ে গেছে, তা আমি জানতাম না
অগত্যা উক্ত হাসপাতালের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক জনাব মুজিবুর রহমানকে অনুরোধ করি ভাই, আমি বিদেশ থেকে বাইপাপ মেশিন আনাচ্ছি, ততদিন পর্যন্ত আমাকে আপনার কাছে থাকা একটি যন্ত্র ভাড়া দিন তিনি আমার প্রতি সমব্যথী হয়ে বুঝিয়ে বললেন, দেখুন দুটিমাত্র বাইপাপ দিয়ে আমার হাসপাতাল চলে আপনাকে যদি একটি দেই, তাহলে আমার নতুন রোগী এলে অসুবিধায় পড়ব তিনি পরামর্শ দিলেন আপনি বাইপাপটি কিনে নেন, আপনার যতদিন লাগে ব্যবহারের পর আমি আপনার কাছ থেকে কিনে নেব বললাম, বাইপাপতো বিক্রি হয়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছে তিনি বললেন আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি দেখছি এই বলে তিনি একই অপাপী ভাইকে ফোন করেন এবং ঠিক হয় যে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি যন্ত্রটি নিয়ে আসছেন, তবে আমাকে নগদ টাকা রেডি রাখতে হবে
ব্যবসা-বাণিজ্য না করা বা বিত্ত-বৈভবের চাকরি না করা আমার পক্ষে তাৎক্ষণিক নগদ সোয়া লক্ষ টাকা দেয়া সহজ না হলেও হাসপাতালে থেকেই ফোন করে টাকার ব্যবস্থা করে ফেললাম
মায়ের শরীরে লাগানো সব যন্ত্রপাতি খুলে সেই অপাপী ভাইয়ের শুভাগমনের প্রতীক্ষা; কিন্তু ভাইজানতো আসছেন না কিছুক্ষণ পর পর মুজিব সাহেবের রুমে যাই, আর তিনি ফোন করে করে অপাপীকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, ভাই আপনি আর কতদূর? ওপাশ থেকে উত্তর আসে ইস্কাটন রোড থেকে বাংলামটর, বাংলামটর থেকে সোনারগাঁও, সোনারগাঁও থেকে ফার্মগেট...; তারপর আর ফোনই ধরে না যা বোঝার তাই বুঝে আমি মুজিব ভাইকে আমার কনফিউশন প্রকাশের পর তিনি বললেন, আপনারা খালাম্মাকে  (রোগীকে) নিয়ে বাসায় চলে যান ভদ্রলোক এলে তাকে আপনাদের বাসায় পাঠিয়ে দিচ্ছি
ডাক্তারের নির্দেশ না মানার পরিণতির খানিক ভীতিসহ মাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম এবং শুরু করলাম প্রাকৃতিক পদ্ধতির শুশ্রƒষা মায়ের ব্রেনের সাথে লাংয়ের কমান্ড রেসপন্স বাড়ানোর প্রয়াস কাউন্সেলিংস্বরূপ মাকে বললাম, আপনি নিজেই নিজকে বলুন আমি বাতাস থেকে অক্সিজেন নিচ্ছি এবং সেই সাথে নাক দিয়ে একটি শ্বাস নিন আবার বলুন, আমি কার্বন ছাড়ছি; বলে নিঃশ্বাস ফেলুন অবসন্ন প্রায় নিথর মা কাতর কণ্ঠে বললেন বাবা, এসব কি এখন আর পারব? হাসপাতালে নার্সদের সর্বক্ষণ খোঁচাখুঁচি যন্ত্রপাতির চাপে সারা শরীর ব্যথা, ভীষণ দুর্বল খতিয়ে দেখলাম, মাস্ক রাখতে রাখতে তাঁর নাকে-মুখে ক্ষতের চিহ্ন তবুও বললাম আম্মা, যতটুকুন পারেন, এভাবে নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে বলতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের চেষ্টা করুন শ্বাস নেয়ার সময় বলুন, আমি প্রকৃতি থেকে শক্তি বা এনার্জি নিচ্ছি, আর ছাড়ার সময় বলুন আমার শরীরের সব অসুখ-অসুবিধা, জ্বালা-যন্ত্রণা ব্যথা-বেদনা চলে যাচ্ছে বলুন আমি দিনদিন ভালো হচ্ছি, আল্লাহ তুমি ভালো করে দাও স্বভাবজাত প্রোএকটিভ, সাহসী উদ্যমী মা চেষ্টা শুরু করে দিলেন
ওদিকে অপাপী ভাইতো আর আসছেন না ইফতারের পূর্বে মুজিব ভাই জানালেন যে, ইফতারের পরে আসবে বলে তাকে নাকি জানিয়েছে কিন্তু ইফতারের দুঘন্টা পরে ফোন করলে মুজিব ভাই অবাক হয়ে বলেন এখনো যায়নি? আমি বললাম অপাপী ভাইয়ের পাপ মোচন হয়ে যাচ্ছে, তাকে আপাতত লাগবে না তবে আপনি পারলে আমার কৌতুহলটুকু মেটাবেন তিনি যে সকালে আপনার হাসপাতালে আসছেন এবং পথে আছেন বলে আমার মুমূর্ষু মাকে অপেক্ষা করিয়ে রাখছিলেন, তার সেই শুভাগমনের কী হলো? তিনি কি আদৌ বাইপাপ নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন?
আমি জানি এসব প্রশ্নের জবাব মিলবে না, আর জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা নেই বলেই আমরা এখনও সমস্যা-জর্জরিত বাঙালি; প্রাগ্রসর পৃথিবীতে আমরা এত অনগ্রসর এজন্যই বাঙালির মনে আজ ক্ষোভের আগুন; অশান্তির আগুনে পুড়ছে বাংলার জনপদ জাতীয়ভাবে অনেক ক্ষেত্রে আমরা অক্ষমতার পরিচয় ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছি তাই আমার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র এখন আন্দোলন করছে বিশ্ব পরিসরে আমাদের জাতীয় সক্ষমতা অর্জনে এজন্যই ঘুরেফিরে সেই একই উপসংহার সাত কোটি মানুষেরে হে মুর্খ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি!
সেই দিন রাত গড়িয়ে আজ ১৬ দিন হাসপাতালে মাকে যেরূপ দেখেছি, স্রষ্টার কৃপায় মায়ের চেষ্টার ফলে এখন তার চেয়ে অনেক ভালো, বাইপাপ কিংবা যন্ত্রদানব ছাড়াই তিনি নিজের শক্তিতে নিজেই টিকে আছেন; বাকিটা ভবিতব্য, স্রষ্টার ইচ্ছা
ধন্যবাদ স্রষ্টাকে, বাইপাপ ছাড়া এখন পর্যন্ত মাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ধন্যবাদ মাকে, আত্মনির্ভরশীল হবার প্রাকৃতিক শক্তিতে বলীয়ান হবার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার জন্য; মরি মরি হরি হরি করেও বেঁচে থাকার জোর প্রয়াসের জন্য মাসে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, ঔষধ বা কেমিক্যালের পেছনে লক্ষ টাকার ব্যয়কে ফুঁ দিয়ে যিনি বলে যাচ্ছেন আমার বেঁচে থাকার জন্য আমার ভেতরের শক্তিই যথেষ্ট; বাইরের সাপোর্ট ছাড়াও আমি ভালো থাকতে পারি আমার আত্মশক্তি দিয়েই  
ধন্যবাদ লন্ডনপ্রবাসী ব্রিটিশ-বাঙালি . কামালকে, যিনি লন্ডন থেকে বাইপাপ কিনে পাঠানোর বিষয়ে বারংবার আমার সায় চাচ্ছেন; কিন্তু তাকে টাকা ফেরত দেয়া কঠিন বিধায় আমিও এড়িয়ে চলছি
ধন্যবাদ মায়ের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ এই হতভাগা আমাকেও; যে মানুষের ভেতরের শক্তিকে সকল যন্ত্র বিজ্ঞানের শীর্ষে চিন্তা করার প্রয়াস পেয়েছে; সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই কথার মর্ম বুঝতে পেরেছে
পৃথিবীর সকল দেশের সকল আণবিকের চেয়ে একজন মানুষের মানবিকের মূল্য মহাগুণ বেশি; আণবিককে তাই বেঁধে ফেলতে হবে মানবিকতার জালে মানবিকতা দিয়েই জয় করতে হবে নিজকে-পরিবার-সমাজ তথা বিশ্বকে এভাবেই সম্ভব সকল সমস্যার সমাধান  -চলবে

সুস্থতা শতায়ুলাভে
প্রাকৃতিক চর্চা চিকিৎসা  Be your own Doctor - বইটির
পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৪৬, মূল্যঃ ৩৫০ টাকা
প্রাপ্তিস্থানঃ ক্যাম্পাস পত্রিকা অফিস
৩৩ তোপখানা রোড, ১৩ তলা, ঢাকা
ফোনঃ ৯৫৫০০৫৫, ৯৫৬০২২৫


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img