বিভিন্ন হাসপাতালের সিসিইউ ও আইসিইউ থেকে ফেরত মা স্রষ্টার কৃপায়, নিজের চর্চায় এবং কারো কারো গাইডেন্সে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এখন বেশ ভালো আছেন।
হাসপাতালের ছাড়পত্রে ডাক্তার ঔষধের লম্বা তালিকা দিয়ে তার নিচে লিখেছিলেন এগুলো ১৫ দিন খাবেন, অবশ্যই বাইপাপ (কৃত্রিমভাবে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেয়ার যন্ত্র) ব্যবহার করবেন, দিনে ২ বার নেবুলাইজার ও ইনহেলার ব্যবহার করবেন এবং ১৫ দিন পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারে দেখা করবেন।
১৫ দিন পার হবার পূর্বদিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে মা’র সাক্ষাতের সময় নিতে তাঁকে ফোন করলাম, ধরলেন না। তাঁর খোঁজে অন্য হাসপাতালে ফোন করে জানলাম, তিনি বিদেশে আছেন। সেই হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছ থেকে এ অবস্থায় কী করা যায়, পরামর্শ চাইলে তিনি বললেন যেহেতু ক্রিটিক্যাল পেশেন্ট, তাই প্রফেসর সাহেব না আসা পর্যন্ত ঔষধ চালিয়ে যাওয়াই ভালো। আমি তার সাথে একমত হয়ে আরও ৪/৫ দিনের ঔষধ কিনতে গেলাম। সেখানে কোন্ ঔষধ কী অসুখের জন্য, তা জিজ্ঞেস করে বুঝলাম, প্রেসক্রিপশনে বিশেষ এন্টিবায়োটিক এবং তার সাপোর্টে বিভিন্ন ঔষধ দেয়া আছে যা সাধারণত কোর্স, ডোজ ও সময়মতো সেবন করতে হয়।
অনুমান-নির্ভর হয়ে এরূপ এন্টিবায়োটিকের কোর্স বাড়ানোর বিষয়ে সংশয়বোধ করায় সেই ঔষধ নিলাম না। দু’কদম ফিরে চিন্তা করলাম হঠাৎ ঔষধ বন্ধ করে দিলে বা ডাক্তার বিদেশে আছে বললে মায়ের নির্ভরশীলতা নষ্ট হতে পারে এবং মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে অবস্থা খারাপ হতে পারে। তাই ঐ তালিকার এমন দু’টি ঔষধ নিলাম, যা খেলে বেগতিক হবার সম্ভাবনা কম; যেমন গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট ও পুষ্টির ট্যাবলেট।
বাসায় ফিরে মাকে বললাম আপনার শরীরে সুস্থতার প্রক্রিয়া চলছে, ধীরে ধীরে আপনি ভালো হয়ে উঠছেন। ঔষধ কমিয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য ও পথ্য যেমন স্যুপ, দুধ, আনারস, আনার, আঙ্গুর, আমড়া, মধু দিয়ে লং ও আদার রস, মধু দিয়ে কাঁচা হলুদের রস, থানকুনি ও পুদিনার রস বেশি বেশি খান; আর নিজের সাথে নিজে কথা বলা বাড়িয়ে দিন। ক’দিন পর আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।
দু’দিন পর জানলাম, ডাক্তার দেশে ফিরেছেন। বারংবার ফোন করলাম, কিন্তু তিনি ফোন ধরলেন না। এ অবস্থা জেনে ডাঃ এ বি এম হারুনসহ কয়েকজন শুভাকাঙ্খী নিজেদের সেল থেকে ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করেও কাজ হলো না। জানা গেল, SMS করে তাঁর সাথে এপয়েন্টমেন্ট করতে হয়। তাই কয়েকবার SMS করলাম। একবার শুধু উত্তর পেলাম, রোগীর ঠিকানা দিতে। ঠিকানা দিলাম, কিন্তু তারপর আর সাড়া পেলাম না। SMS গিয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে Sent option এ গিয়ে যখন নিশ্চিত হলাম তখন অবাক হবার পাশাপাশি খুশিও হলাম। কারণ, এ যাত্রায় মাকে আর ডাক্তারের মুখোমুখি করাতে হলো না।
আপন শক্তিতে জেগে ওঠার প্রক্রিয়ায় মাকে উজ্জীবিত রেখেছি বলে এবং সে মুখ্য প্রচেষ্টায় জোর দিয়েছি বলে ডাক্তারের মুখোমুখি হবার বিষয়ে আমার মনের সায় ততটা ছিল না। সেজন্যই হয়ত প্রকৃতির আরেক কারিশমায় ডাক্তারের সাথে যোগাযোগে আমাদের বিঘœতা ঘটছিল। এ যেন সদা উচ্চারিত কথা আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন।
ডাক্তারের কাছে গেলে আবার একগাদা টেস্ট, এক্সরেসহ বিভিন্ন যন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পেষণ, ইনজেকশনের সিরিঞ্জের গুঁতোগুতি, কাটাছেঁড়া, রোগের বিরুদ্ধে ঔষধ এবং ঔষধের প্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধেও ঔষধ অর্থাৎ ঔষধে ঔষধে পেটের নাড়িভুঁড়ি ও শরীরের ইমিউনিটি, এনার্জি বা সফটওয়্যারের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলার মহাতেলেসমাতি কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে স্রেফ সাময়িক পরিত্রাণের প্রয়াস!
হাসপাতাল ছাড়ার সময়ে ডাক্তার লিখে দিয়েছিলেন, বাইপাপ ব্যবহার করতেই হবে; বারংবার বলেছিলেন, বাইপাপ ছাড়া রোগীর টিকে থাকা অসম্ভব। আমিও মায়ের বাঁচা-মরার সন্ধিক্ষণের প্রচন্ড শঙ্কা ও আবেগে পড়ে তক্ষণই অর্থাৎ ডাক্তার বলার সাথে সাথেই বাইপাপ কিনতে রাজি হয়েছিলাম; যত লক্ষ টাকাই লাগুক না কেন, পৃথিবীর যেখানেই পাওয়া যাক না কেন। কিন্তু প্রকৃতিইতো আমাকে বাইপাপ যন্ত্র কেনায় সায় দেয়নি বরং দিয়েছে বাধা। বাংলাদেশে বাইপাপ’র একমাত্র আমদানীকারকের জামদানী সিন্ডিকেটিং; লন্ডন প্রবাসী দরদী ও উদারপ্রাণ ড. কামাল দৈনিক ১৮ ঘন্টার লন্ডনী রোজা রেখে বাইপাপ মেশিন কী, কেন, কোথায় পাওয়া যায় এসবের পেছনে হন্যে হয়েও লন্ডন থেকে বাইপাপ না আসা; এমনকি সিঙ্গাপুর থেকেও তা আনাতে আমার ব্যর্থতা এত্তসব বাধা-বিপত্তি কিন্তু প্রকৃতি বা স্রষ্টারই কল্যাণলীলা হিসেবে আমার কাছে প্রতিভাত। কারণ বাইপাপ মেশিন মায়ের শরীরে লাগালে ঐ মেশিনের মাধ্যমে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে অভ্যস্ত হয়ে কিছুদিনের মধ্যে তিনি মেশিনের ওপর এমনই নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন যে, মেশিন সরালেই আর বাঁচতে পারবেন না। তাই স্রষ্টার প্রতি সুদীর্ঘ সেজদায় এবং শয়নে-স্বপনে-জাগরণে, নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে যে চেয়েছিলাম আমার মা’র প্রতি রহমত বর্ষণ করো, তাঁর মঙ্গলে ও শান্তিতে যা করার তাই করো (সিসিইউতে নানা যন্ত্রবেষ্টিত মায়ের কষ্ট দেখে এমনও বলতে হয়েছে আল্লাহ, তুমি মাকে এত কষ্ট দিও না, যে কষ্ট সইতে আমাকে ধৈর্যহারা হতে হচ্ছে; যদি তুমি তাঁকে রাখতে না-ই চাও, তাহলে...। আর যদি আমার বাসায় ফিরিয়ে নেবার একটি সুযোগ দাও, তাহলে এসব যন্ত্রপাতির গ্যাঁড়াকল থেকে মুক্তি দাও); মহান স্রষ্টা হয়ত সে ননস্টপ প্রার্থনাগুলো কবুল করেছেন বলে মা’র কাছে বাইপাপ যন্ত্র আসার সকল পথে বাধা দিয়ে রেখেছেন এ সবই স্রষ্টার কারিশমা, সবই প্রকৃতির ইঞ্জিনিয়ারিং বলে আমার বিশ্বাস।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে এপয়েন্টমেন্ট নিতে এবং বাইপাপ কিনতে ব্যর্থতার সেই পর্যায়ে কথা হয় সৃজনশীল নাট্যকার ও শিল্পী সাইদুর রহমান সজল এর সাথে। মা’র অসুস্থতার কথা শুনে বললেন, আমার শরীরেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমে থাকার সমস্যা আছে; কিন্তু বাইপাপ কী জিনিস, আমি জানি না। আমি হোমিও ঔষধেই ভালো আছি।
সজল ভাইয়ের থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে সেদিনই হোমিও ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়ার সাথে কথা বলি এবং পরদিন দেখা করি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সদালাপী ও মাইডিয়ার ব্যক্তিত্ব সাখাওয়াত সাহেব; যাঁর থেকে মা’র চিকিৎসার উছিলায় জানলাম চিকিৎসা জগতের আরো বহু কিছু। বললেন আধুনিক চিকিৎসার নামে কথায় কথায় মানুষের শরীর কাটাছেঁড়া হয়, যখন-তখন দেয়া হয় এন্টিবায়োটিক; ভূমিষ্ঠ হবার সাথে সাথে তথা প্রকৃতির আলো-বাতাসে আসতে না আসতেই শিশুকে দেয়া হয় নানা ভ্যাকসিন। এসব ভ্যাকসিনের প্রতিক্রিয়ায় শিশুর ক্ষুধামন্দা, পেট ফাঁপা, পেট খারাপ, খিটমিটে, প্রতিবন্ধতা ও অটিজমসহ নানা ম্যালফাংশনিং চলতে থাকে; নষ্ট হয়ে যায় তার অন্যান্য রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতাও। এতে শরীরের বিভিন্ন এনার্জি চ্যানেল বা মেরিডিয়ান লাইন ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে শিশুবেলা থেকেই শরীরের স্বাভাবিকতা হারিয়ে অস্বাভাবিকতা বা কৃত্রিমতার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন চলা। ফলে জীবনভর রোগ-শোক, ঝিমুনি, হাঁপানি, মাইগ্রেন, সর্দি-কাশি, নানা ব্যথা-বেদনা নিত্য-নৈমিত্তিক ও অবধারিত হয়ে যায়। মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন রোগবালাই তাকে আক্রমণ করবে বলে স্রষ্টা মানবদেহে দিয়ে রেখেছেন রোগ প্রতিরোধের অফুরন্ত ক্ষমতা ও পদ্ধতি যা অপরিণামদর্শী কিছু ডাক্তার ও ঠুনকো বিজ্ঞানীগণ ধ্বংস করে দেন।
মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী বহু উপাদান পানিতে থাকে বলেই পানির অপর নাম জীবন। অথচ মানুষের শরীরের রোগ-ব্যাধির প্রায় ৮০ শতাংশ হয় অনিরাপদ পানির কারণে। ২/১টি জীবাণু মারতে খাওয়ার পানি যে প্রচন্ড তাপে ফুটানো হয়, তাতে পানির বহু গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়; মানুষ বঞ্চিত হয় সৃষ্টির অমীয় সুধা ‘পানি’র আস্বাদন ও গুণাগুণ থেকে। ফুটানোর পরিবর্তে পানিকে যদি ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে পান করার ফরমান বা পরামর্শ চিকিৎসক মহোদয়গণ দিতেন, তাহলে এই একটি কারণেও মানুষ অনেক বেশি শক্তি ও শৌর্য-বীর্যের অধিকারী হতে পারত। এভাবে প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও ঔষধ-পথ্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আফসোসের সাথে ডাঃ সাখাওয়াত বললেনÑ মানবজীবনের জন্য কল্যাণকর এসব বিষয়ে কথা বলাও কারো কারো নিকট অপরাধতুল্য। বর্তমানে প্রচলিত ত্রুটিপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতির রমরমা বাণিজ্যেও রয়েছে নানা কূটকৌশল, সিন্ডিকেট, মাফিয়া তৎপরতা; সমাজের প্রচলিত বৃত্তে বসবাস করে এসব কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি প্রাকৃতিক খাদ্য-পথ্য-চিকিৎসায় অনুরাগী বলে আপনাকে এতসব বললাম। রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে যেমনি এসব নানা বিষয়ে বলছিলেন, তেমনি নিজ কথার সমর্থনে খুলে খুলে দেখাচ্ছিলেন ইংল্যান্ড-আমেরিকা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণা বই।
প্রায় সব ডাক্তার ও উকিলের চেম্বার বইয়ে ভরা থাকলেও কোনো ডাক্তার বা উকিলকে বই খুলে রোগী বা ক্লায়েন্টকে দেখাতে বা বোঝাতে দেখিনি। পেশাগত জীবনে এরূপ নিবিড় শেয়ারিং, কেয়ারিং ও লার্নিং আমাদের সমাজে নেই বললেই চলে। অথচ সাখাওয়াত সাহেব এক ব্যতিক্রমী চিকিৎসক। সব রোগীকেই খাবার-দাবার ও চাল-চলনের নানা কথা জিজ্ঞেস করেন, ঔষধের চেয়ে পথ্যের পরামর্শ দেন বেশি; আর শিক্ষিত রোগী পেলে ইংরেজি, আরবি, ফারসিসহ বিভিন্ন ভাষার বই খুলে দেখান। বিশাল ভলিউমের বিভিন্ন বইয়ের কোন্ পাতায়, কোন্ ভাষায়, কী লেখা রয়েছে সবই যেন তাঁর মুখস্থ। কেউ কপি করে নিতে চাইলে মানা নেই; এমনকি নিজ পয়সায় ফটোকপি করে বাঁধিয়েও দেন। নিজ খরচে আয়োজন করেন চিকিৎসা বিষয়ক সাপ্তাহিক ও মাসিক সেমিনার; নিজে বলেন, শোনেন, বিশ্লেষণ করেন, যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেন, লাঞ্চ- ডিনার খাইয়ে উপস্থিতদের বলেন আপনারা সুস্থ থাকুন এবং অন্যের মঙ্গল ও সুস্থতায় সাহায্য করুন।
আসলে যে চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের জন্য কল্যাণকর, সেই কল্যাণ-বিদ্যার কিছু বিশারদের অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী হাবভাবের কারণে এবং এ অঙ্গনের কর্তাদের মাঝে স্বচ্ছতা বা জবাবদিহি না থাকায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার অভাবের পাশাপাশি বাণিজ্য-পিপাসার কারণে মানুষ চিকিৎসা থেকে তাৎক্ষণিক উপকার যতটুকু পাচ্ছে, দীর্ঘজীবনে বা দীর্ঘমেয়াদে অপকার ও অকল্যাণ লাভ করছে তারচে’ ঢের বেশি।
রোগ-শোকে পড়ে অসহায় ও বিপন্ন মানুষ শরণাপন্ন হয় ডাক্তার ও হাসপাতালের। মানুষের এ অসহায়ত্বকে দুর্বলতা হিসেবে নেয় কিছু হাসপাতাল ও ডাক্তার, যা অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। মানবতাবাদী ও সেবাব্রতী চিকিৎসকগণও এরূপ চিকিৎসা-বাণিজ্যকে মেনে নিতে পারছেন না, যা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় ফুটে উঠতে দেখেছি। কিছু হাসপাতাল ও ডাক্তার যেমনি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক এমনকি শেষ ভরসাস্থল, তেমনি মানুষ ও মানবতা বিধ্বংসী কারখানা ও ব্যক্তিত্বেও ভরে রয়েছে এ অঙ্গন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিবিড় নিড়ানী দিয়ে এ অঙ্গনকে আগাছামুক্ত ও কলুষমুক্ত করে প্রোজ্জ্বল ও প্রোএকটিভ ডাক্তারদের মত ও পথকে সুগম করে দেয়া।
আমাদের দেশে ৯৯% রোগী জানতে পারে না তাদের অসুখের কারণ-পরিণাম-প্রতিকার; জানে না তার সেবনকৃত ঔষধের প্রতিক্রিয়া-বিষক্রিয়া ও ভয়াবহতা সম্পর্কে। চিকিৎসক মহোদয়দের যেন লেশমাত্রও দায় নেই রোগীর কাছে। অসুখ হলে ডাক্তারের চেম্বারে বা হাসপাতালে যাওয়া এবং প্রাণের ত্রাণকর্তাদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালাই কেবল রোগীর কাজ, কিছু জিজ্ঞেস করলে বা জানতে চাইলেই বিপত্তি; এতে চিকিৎসক মহাশয়ের মন ভার হয়ে যায়, ক্ষেত্রবিশেষে ধমকও খেতে হয়। মানুষের জীবন ও মানবতা নিয়ে এ অঙ্গনে যত অনাচার চলে অন্য কোনো অঙ্গনে ততটা চলে বলে আমার মনে হয় না, বিশেষত সব সম্ভবের এ বাংলাদেশে।
এখানে রোগীর টাকায় রোগীর পেট কেটে সেই পেটে গজ-ব্যান্ডেজ-তোয়ালে এবং কোনো কোনো সময় পেট কাটার ছুরি-কাঁচি পুরে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়েও অসুবিধায় পড়তে হয় না ডাক্তার সাহেবকে। কোনো টেস্ট দিলে সেই টেস্ট কেন করাতে হবে, তা জানতে চাওয়া মহাঅপরাধ। প্রেসক্রাইব করা ঔষধের কার্যকারণ বুঝতে চাইলে ভ্রু কুঁচকে ওঠে ডাক্তার সাহেবের। রোগী ভর্তির পূর্বে তথা চিকিৎসক রোগীকে দেখার পূর্বেই হাসপাতালভেদে ১,০০,০০০/৫০,০০০/ ৩০,০০০ টাকা অগ্রিম প্রদানের ফরমান থাকে। ভর্তির সময়ে অনুরূপ অগ্রিম প্রদান থেকে সেই মুহূর্তের জন্য রক্ষা পেলেও ভর্তির পরদিন সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় ফোনের পর ফোন ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসুন, ভর্তির ১ দিন পার হয়ে গেছে; ১ লক্ষ টাকা নিয়ে আসুন, ভর্তির ২ দিন পার হয়ে গেছে ইত্যাদি। চিকিৎসাশেষে বিদায়কালীন লক্ষ লক্ষ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়া হয় রোগীর এটেনডেন্টকে। রোগী নিয়ে তড়িঘড়ি বাসায় ফেরত যাবার সেই মুহূর্তে বিলের ব্রেকআপ ও ব্যাখ্যা পাবার বা দেয়ার ফুরসত কই?
একই রকমের চিকিৎসায় বহু রকমের চার্জ এবং এসব রকমারী চার্জে উচ্চবাচ্যের নেই কোনো সুযোগ। বলা হয় এটাই আমাদের চার্জ, এটাই নিয়ম। কিন্তু এ নিয়ম কে বানিয়েছে, কে চেক করেছে, কে অনুমোদন করেছে, কে বাস্তবায়ন করেছে, কবে থেকে শুরু হয়েছে, কবে পর্যন্ত চলবে এসব কোনো প্রশ্নেরই কোনো জবাব নেই; যেমনি নেই গজ-ব্যান্ডেজ পেটে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করা অসহায় রোগীর পক্ষে কথা বলার কেউ। জবাব দিতেতো কেউ বাধ্য নন, সবাই সার্বভৌম দেশের স্বাধীন নাগরিক।
ঘর—সংসারের ক্ষেত্রে তারাই যোগ্যতা ও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন, যারা নিজ ত্রুটি সংশোধনে বদ্ধপরিকর এবং অন্যের ত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর ও উদার দৃষ্টিতে গ্রহণ করে সেসব সংশোধনের অব্যর্থ প্রচেষ্টায়
...
ইউরোপের উচ্চশিক্ষার একটি অবিছেদ্য শর্ত হলো আপনি আর্থিক সাবলম্বী কি না। আপনি আপনার পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবেন কি না। ভিসা আবেদনের আগে আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমান টাকার ব্যাঙ্ক সলভেনসি সার্টিফিকেট ...
সমাজের সার্বিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করলে প্রতিভাবান অনেক ফুটন্ত গোলাপ অঙ্কুরেই ঝরে যেতে দেখা যায়। যথেষ্ট মেধা এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে এখনকার তরুন-তরণীদের অনেকের ক্যারিয়ার হয় অন্ধকারচ্ছন্ন।...
প্রতিটি মানুষের জীবনেই কখনো না কখনো খারাপ সময় আসে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দাঁড়ায় তখনই, যখন মানুষ ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়, দোষ না করেও হতে হয় দোষী। তখন না যায় কাউকে বোঝানো...