প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান তাঁর নতুন বই From Two Economies to Two Nations (দুই অর্থনীতি থেকে দুই দেশঃ বাংলাদেশের দিকে আমার অভিযাত্রা) এর মোড়ক উন্মোচন করেন ২৯ আগস্ট। দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে ডেইলি স্টার বুক্স।
রেহমান সোবহানের ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত লেখার সংকলন এ বইটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক গবেষক ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর রওনক জাহান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাস উদ্দিন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এর অনারারি রিসার্চ ডিরেক্টর ড. নাজনীন আহমেদ।
তাঁর নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাকিস্তান শাসনামলে নিজের লেখার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ওইসব দিনে ফিরে গেলে এটা ভাবি, কীভাবে এসব কথা সেদিন বলতাম। এসব কথা বলার সময় ডান-বাম চিন্তা করতাম না। এসব বলতে পারতাম, কারণ এগুলো ছিল মনের কথা।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী সাধারণ মানুষের রক্তের ঋণ শোধ করতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বগুণে সাধারণ মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। আর তা সাধারণ মানুষকে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস জুগিয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম আলোচক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এ বইটিতে স্থান পাওয়া অধ্যাপক রেহমান সোবহান এর ২৬ থেকে ৩৬ বছর বয়সে লেখা প্রবন্ধগুলো পড়লে অবাক হতে হয় তাঁর সাহসিকতা ও যুক্তিপূর্ণ চিন্তাশক্তির প্রকাশ দেখে। ষাটের দশকের পাকিস্তানী সামরিক শাসনের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধ্যাপক রেহমান সোবহান অনায়াসে লিখে গেছেন তখনকার পূর্ব-পাকিস্তানী জনগণ কীভাবে অর্থনৈতিক শোষনের শিকার হচ্ছিল সে কথা। তিনিই প্রথম লেখেন যে, দেশ একটি হলেও পাকিস্তানে তখন দুই অর্থনীতি বিরাজ করছিল। যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন পূর্ব-পাকিস্তানের আয়ের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠছিল পশ্চিম-পাকিস্তানের অর্থনীতি। ড. নাজনীন বলেন, অধ্যাপক রেহমান সোবহান তখনকার সরকারী নীতির কঠোর সমালোচনা করে যেভাবে লিখতে পেরেছিলেন, বর্তমানে স্বাধীন দেশেও অনেক ক্ষেত্রে এভাবে সত্য বলা কঠিন। ড. নাজনীন আশা করেন, এ বইটি যথেষ্ট আলোচিত হবে এবং অবশ্য পাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
অনেকের পক্ষেই প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেন, স্বাধীনতার সময় বিরোধী পক্ষকে কটাক্ষ না করে অর্থনৈতিক অনাচারের বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ লেখার মাধ্যমে রেহমান সোবহান মুক্তিযুদ্ধে বড় অবদান রাখেন। সব জাতীয় বিষয়ে তাঁর অংশগ্রহণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও স্বাধীন দেশে বিদ্যমান দুর্নীতি, শোষণ, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বর্তমান সময়েও কলম চালিয়ে যেতে অধ্যাপক রেহমান সোবহানের প্রতি অনুরোধ জানান অনুষ্ঠানের বক্তারা।