আসন সাত হাজার ৩৫৫টি। এর বিপরীতে ভর্তিযোগ্য প্রার্থী ৪৪ হাজার ৭৫৪ জন। সরকারিতে সুযোগ না পেলে ১৮ অক্টোবর থেকে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির আবেদন করতে পারবেন তাঁরা। আবেদনপত্র জমার শেষ তারিখ ২৭ অক্টোবর। মেধা ও কোটা অনুসারে ভর্তিযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩০ অক্টোবর। ভর্তি শুরু ৩১ অক্টোবর।
ভর্তির জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়েছে ৯৮টি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আসন আর প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেও ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে ৩৭ হাজার ৪০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর। আবার কোনো কোনো কলেজের আসন পূরণ হয় না। টাকা বা মানের অভাবে অনেকে এসব কলেজে ভর্তি হতে চান না। প্রাইভেট মেডিক্যালে সরকারের বেঁধে দেয়া ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।
আগে হাতেগোনা কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ওই পরিমাণ কিংবা অগোচরে এর চেয়েও বেশি নেয়। বেশির ভাগ প্রাইভেট মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এর চেয়ে অনেক কমে ভর্তি করে। এমনকি গত বছর পত্রপত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে, দুই-তিন লাখ টাকা ভর্তি ফি নিয়েও ডেন্টাল এবং চার-পাঁচ লাখ টাকায়ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ভর্তি করেছে। তাই ১৫ লাখ টাকার কথা শুনে ভয় পাওয়া কিংবা শুরুতেই হতাশ হওয়া ঠিক হবে না। বরং নিজের আর্থিক সামর্থ্য ও কলেজগুলোর শিক্ষার গুণগত মান যাচাই-বাছাই করে চেষ্টা করে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন মেডিকেল শিক্ষার বিশিষ্টজনরা। একইভাবে কলেজগুলোর প্রতিও কেবল টাকা পেয়েই ভর্তি না করে বরং মেধা বিবেচনায় নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করার পরামর্শ তাঁদের।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এবার ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮ সেপ্টেম্বর। এতে অংশ নেন ৮২ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষার্থী। পাস করেছেন ৪৮ হাজার ৪৪৮ জন। গড় পাসের হার ৫৮.৪ শতাংশ।
সরকারি হিসাব মতেই দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩০টি ও ডেন্টাল কলেজের সংখ্যা ৯টি। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৬৫টি ও ডেন্টাল কলেজ ৩৩টি। সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালে আসনসংখ্যা তিন হাজার ৬৯৪টি এবং বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালে আসনসংখ্যা সাত হাজার ৩৫৫টি।
নিয়ম অনুসারে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তিন হাজার ৬৯৪টি আসনে ভর্তি শেষ হওয়ার পরই কেবল বেসরকারি কলেজে ভর্তি শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির শেষ তারিখ ১৭ অক্টোবর। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ভর্তি শেষ হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আবদুল হান্নান বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই একটি সার্কুলার জারি করে দিয়েছি। যার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা সরকার অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর মধ্য থেকে যাঁর যাঁর পছন্দমতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবেন। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও নীতিমালা এবং সরকারের নির্দেশনা মেনেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা
সরকার অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ এবং ডেন্টাল ইউনিটগুলো ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ একাধিক বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। ভর্তি পরীক্ষায় ২০০ মধ্যে ১২০ নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হতে পারবেন। এক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ বা তদূর্ধ্ব প্রাপ্ত নম্বরধারীদের নম্বরের সঙ্গে প্রাপ্ত জিপিএ যোগ করে ভর্তির জন্য মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হবে। ভর্তির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটার নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীরা নির্ধারিত ফরমে (ফরম কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাবে) পছন্দের কলেজ বা ইউনিটে আবেদন করবেন।
মেডিকেলে ভর্তি কোথায় কেমন খরচ
সরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে খরচ হয় ৩৫ হাজার টাকা। ফাইনাল পরীক্ষায় পাস করার পর ১ বছরের ইন্টার্নশিপে মাসে দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা করে। ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী জানান, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সরকার নির্ধারিত ভর্তি ফি ১৩ লাখ ৯০ হাজার। এছাড়া ইন্টার্নশিপের জন্য গুনতে হয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ভর্তির সময় সর্বোচ্চ ১৫ লাখ ১০ হাজার টাকা নিতে পারে কোনো মেডিকেল কলেজ। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলে এর চাইতে কমেও ভর্তি করতে পারে।’
বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ ৮০ হাজার, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ১৫ লাখ ১০ হাজার, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজে ১৫ লাখ, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ১৬ লাখ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে ১৫ লাখ, নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে ১৫ লাখ, শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ১৬ লাখ ৭২ হাজার, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ, এনাম মেডিকেল কলেজে ১৪ লাখ, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজে ১১ লাখ ৯৮ হাজার, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ১৩ লাখ ২৫ হাজার এবং কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ১১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
ক্যাম্পাসের উন্নয়ন, টিউশন, অ্যাফিলিয়েশন ফি, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রেশন, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন, মার্কশিট ভেরিফিকেশন, কেন্দ্র ফি, কলেজ ম্যাগাজিন ফি, গেমস, স্পোর্টস ও অন্যান্য বিনোদন ফি, পরিচয়পত্র, কশন, লাইব্রেরি চার্জ, বিবিধ, সেশন, লাইব্রেরি, জেনারেল ল্যাব ফি, কম্পিউটার ল্যাব, মার্কশিট ভেরিফিকেশন, আবাসিক সুবিধা থাকা-খাওয়া বাবদ শিক্ষার্থীদের ফি জমা দিতে হয়। এসব ফি আবার জমা দিতে হয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়মে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অগ্রিম সব খরচ নিয়ে নেয়। কোথাও আবার মাসিক ফি দিতে হয়।
ভর্তির সময় লাগবে
ভর্তির জন্য নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ধারিত তারিখে সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে কলেজের স্টুডেন্ট সেকশন থেকে নির্ধারিত ফরম সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রে যেসব তথ্য ও সনদপত্রের উল্লেখ আছে, তার মূল কপি ভর্তির সময় জমা দিতে হবে। লাগবে অনলাইন আবেদনপত্রের স্টুডেন্ট কপি, অনলাইনে ডাউনলোড করা প্রবেশপত্র, চার কপি সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত রঙিন ছবি, এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সনদপত্র বা টেস্টিমোনিয়ালের মূল কপি। মুক্তিযোদ্ধা, জেলা কোটা, উপজাতীয় প্রার্থীদের কোটার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। ‘ও’ লেভেল ও ‘এ’ লেভেল বা সমমানের মার্কশিট স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক সমমানের সনদের মাধ্যমে স্বীকৃত হতে হবে।
শুধুই মেয়েদের মেডিকেল কলেজ
সারা দেশে এখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৬৪টি। এরমধ্যে কয়েকটি মেডিকেল কলেজ শুধুই মেয়েদের জন্য। মেয়েদের বেশির ভাগ মেডিকেল কলেজে আবাসিক হল থাকায় অভিভাবকরাও নিশ্চিন্ত হচ্ছেন। মেয়েদের মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, শিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, আদ-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অন্যতম।
মেয়েদের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জেড এইচ শিকদার মেডিকেল কলেজ। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এটি। কলেজটির মেডিকেল সেক্রেটারি মোঃ আসাদুল হকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, এখানে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছেন ৬০০ জন। এরমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী ১৩৫ জন। বিদেশিদের বেশির ভাগই ভারতের কাশ্মীর ও নেপালের। এখন এই মেডিকেল কলেজে ১৫৭ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক আছেন। এ বছর ভর্তি করানো হবে ২৪তম ব্যাচ।
টাঙ্গাইলের কুমুদিনী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আবদুল হালিম জানালেন, তাঁদের এখানে শিক্ষার্থীদের পড়তে পাঠিয়ে অভিভাবকরা নিশ্চিন্তেই থাকেন। এদিকে সম্পূর্ণ আবাসিক ক্যাম্পাস হওয়ায় এই মেডিকেল কলেজের সব কিছুই চলে খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে। এই মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয় ২০০১ সালে। আগে কুমুদিনী মেডিকেল কলেজে প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো ১২০ জন করে। এ বছর ভর্তি করা হয় ১৩০ জন। এখানে পড়ছেন অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী। পাশের দেশ ভারতের কাশ্মীর ও পশ্চিমবঙ্গ থেকেও পড়তে আসেন অনেকে। এখানে একটি ডেন্টাল ইউনিটও আছে। এই ইউনিটে পড়ছেন ৪০ জন শিক্ষার্থী।
কলেজটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রেবেকা আলম বললেন, ক্লাসে শুধু মেয়েরা থাকায় শিক্ষকদের কোনো রকম সংকোচ ছাড়াই প্রশ্ন করতে পারেন। কোনো ধরনের সমস্যা হলে শিক্ষকরাই বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। আর শুধু মেয়েদের ক্যাম্পাস হওয়ায় এখানে তাঁরা চলাফেরাও করতে পারেন নির্বিঘ্নে।
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম জানালেন, তাঁদের মেডিকেল কলেজটি বিশেষ একটি অবস্থানে পৌঁছার কারণ এখানকার অভিজ্ঞ শিক্ষকরা। এই মেডিকেল কলেজে বর্তমানে অধ্যয়নরত আছেন ৫০০ শিক্ষার্থী। এখানে ছাত্রীদের জন্য একটি আবাসিক হলও আছে। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলের সিলেবাস একই। তাই আরো অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মতো এখানেও ক্লাস নেন সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা। মেডিকেল কলেজটি স্থাপিত হয় ২০০৫ সালে।
পড়তে আসছেন বিদেশিরাও
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়তে আসছেন বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে।
কাঠমান্ডুর ছেলে উজ্জ্বল ঝাঁ। বাবার কাছে শুনেছিলেন বাংলাদেশের নাম। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পড়ালেখা করেছিলেন তাঁর বাবা। ছেলেকে বাংলাদেশের গল্প শোনাতেন। গল্প শুনতে শুনতেই বাংলাদেশে পড়ার প্রতি আগ্রহ। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করতে ভর্তি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে। এখন পড়ছেন তৃতীয় বর্ষে। আর এই ভিনদেশে পড়তে এসে যে ভুল করেননি এর প্রমাণ মেলে তাঁর কথায়ই, ‘ছোটবেলা থেকে বাংলাদেশ আমার পছন্দের। টেলিভিশনে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখতাম। এখানকার পড়াশোনা ভালো। খরচও অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক কম।’
বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা রয়েছে। মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কিছু বেসরকারি মেডিকেল কলেজে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থীও পড়ছেন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে নেপালি শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি। কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন এলাকারও বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী আছেন। এছাড়া সার্কভুক্ত দেশ এবং আফ্রিকা থেকেও পড়াশোনা করতে আসেন অনেকে।
নেপালের মিরাদনগরের মেয়ে রেবেকা পোখরাল। বইয়ে সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে পড়েছেন বাংলাদেশের নাম। তাঁর এক আত্মীয় বাংলাদেশে পড়াশোনা করেছিলেন। তাঁর কাছে বাংলাদেশের পড়াশোনার সুনাম শুনেই এখানে এমবিবিএস পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন পড়ছেন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে। প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করলেও ইতিমধ্যে ঘুরেছেন লালবাগ কেল্লা ও জাতীয় জাদুঘর। কলেজের বাংলাদেশি সহপাঠীদের সঙ্গেও এখন তাঁর দারুণ ভাব। ‘বাংলাদেশিরা প্রত্যেকে বন্ধুত্বপূর্ণ। পড়াশোনা বা ব্যক্তিগত কাজে চাইলেই তাদের সাহায্য পাওয়া যায়।’ বলেন তিনি, বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে পড়াশোনার খরচ নেপালের চেয়ে অনেক কম। বাংলাদেশের মেডিকেলে পড়াশোনা বিশ্বমানের বলে মনে করেন একই কলেজের ছাত্রী রোজিনা পোখরাল। ‘কলেজে পর্যাপ্ত ডাক্তার রয়েছেন। এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা আমার পছন্দ। যদিও প্রচুর খাটতে হয়। দু-এক দিন পর পরই পরীক্ষা থাকে। এ দেশের চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় আমরা সে কষ্ট মেনে নিচ্ছি।’
ভারতের তামিলনাড়ুর মেয়ে অর্চনা নটরাজন। পড়ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। চতুর্থ বর্ষে। তিনি বলেন, ‘চার বছর আগে আমি প্রথম যখন বাংলাদেশে আসি, তখন খুব ভয়ে ছিলাম। কিন্তু কলেজের পড়াশোনা, অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব-সব কিছু দারুণ। পরিবার ছেড়ে থাকার কষ্ট তাই কিছুটা কম লাগে।’
নেপালের অভি দেবকোটা পড়ছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে। বাংলাদেশে পড়তে আসার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আমার বাবার বন্ধুর ছেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়তেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মেডিকেল পড়াশোনা ভালো। শিক্ষকরা ক্লাসে ভালো পড়ান। ব্যবহারিকও ভালোভাবে শেখা যায়। তাঁর অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশে পড়তে আসি।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের মহান অগ্রবান বলেন, ‘পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগছে। বাংলাদেশে পড়তে পেরে আমি আনন্দিত।’