রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ক্ষেতের ফসলের পরিচর্যা করেন কৃষক। কিন্তু অনেক সময় কৃষকের শত কষ্টে ফলানো সেই ফসল কীটপতঙ্গের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যায়। তবে এবার দিন পাল্টাচ্ছে। আর কৃষককে সারাদিন পরিশ্রম করতে হবে না। কারণ কৃষিক্ষেত্রকে প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধশালী করার লক্ষ্যে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন এগ্রো রোবটিক্স সিস্টেম। এই রোবটিক্স সিস্টেম দিয়ে পুরো কৃষিক্ষেত্রকে মনিটরিং এবং পরিচর্যা করা সম্ভব।
‘এগ্রো রোবটিক্স’ শিরোনামে এ প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের শিক্ষক মৃণাল কান্তি ধর। এ ছাড়া সহযোগী সুপার ভাইজার ছিলেন শিক্ষক ইফতেখার আহমদ। উদ্ভাবক দলের সদস্যরা হলেন ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মৌ দেব, প্রিয়াঙ্কা দাস ও আবু বকর সিদ্দিক আবির।
তৈরি রোবোটিক সিস্টেমটি তিনটি ভাগে বিভক্ত। এ সিস্টেম গাছের পাকা ফল শনাক্ত, সংগ্রহ, কৃষিক্ষেত্রের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা নির্ণয় করে সেচের প্রয়োজনীয়তার নির্দেশনা প্রদান এবং ফসলের মাঠে কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও তার প্রতিকারে কীটনাশক প্রয়োগের নির্দেশনা দিতে পারে।
একজন মানুষের দৈনিক কর্মক্ষমতা নির্দিষ্ট পরিমাণ। মানুষকে খেতে, ঘুমাতে হয়। কিন্তু তাদের তৈরি রোবটটি দিনরাত ফসলের দেখাশোনা করতে পারবে। ফসলের মাঠে কোনো গাছে ফল পাকলে তা শনাক্ত করে নিজেই সংগ্রহ করে সঙ্গে থাকা ঝুড়িতে বোঝাই করতে পারবে। পাকা ফল নির্ণয় করার জন্য রোবটটির একটি ক্যামেরা সিস্টেম রয়েছে। সেই সঙ্গে রোবটটির জন্য রয়েছে একটি কন্ট্রোল প্যানেল।
কন্ট্রোল প্যানেলে লাইভ ভিডিওতে যদি দেখা যায় ফসল কোনো কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, তখন ড্রোনের মাধ্যমে ফসলে কীটনাশক ছিটানো যেতে পারে। এ ছাড়া কোনো কারণে ফসলের মাঠে তথ্য সংগ্রহে কিংবা প্রেরণে রোবটের কোনো সমস্যা হলে তখন সেটি নিজস্ব সার্ভারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে যাবে। প্রতি মিনিটে এ রোবট চারটি পাকা ফল সনাক্ত ও সংগ্রহ করতে পারে। ৫ মাসব্যাপী গবেষণা শেষে উদ্ভাবিত এ রোবটিক সিস্টেম তৈরিতে খরচ পড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। মাঠপর্যায়ে এই রোবটিক সিস্টেম চালু করতে পারলে দেশের কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি হবে এবং যদি ব্যাপকহারে এগ্রো রোবটিক চালু করা যায়, তবে খরচও কমে আসবে। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের সংযুক্তির চিন্তা থেকেই এ রোবটিক্স সিস্টেম তৈরির পরিকল্পনা করেন তারা। এই সিস্টেমে একইসঙ্গে ফসলের মাঠে সেচ কাজের জন্য ‘আর্টিফিশাল সেচ’ পদ্ধতি তৈরি করা হয়েছে। এই রোবটিক সিস্টেমটির উন্নয়নের মাধ্যমে সবধরনের ফসলের মাঠে ব্যাপকহারে ব্যবহার করা সম্ভব।