॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর -২৩ ॥
দিবালোকে কমে বাত ও হৃদরোগ ঝুঁকি
আপনার সামনে অকস্মাৎ কারো হার্ট এটাকের ঘটনা ঘটলে এখন আর দুশ্চিন্তার কারণ নেই। গবেষকরা এক্ষেত্রে খুব সহজ একটি পথের সন্ধান দিয়েছেন। তা হলো রোগীকে দ্রুত সূর্যের আলোয় রাখা। এতে তাৎক্ষণিক কিছুটা সুফল পাওয়া যায়। এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত শোচনীয় অবস্থার রোগীকেও সূর্যের আলো আসে এমন স্থানে রেখে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর গবেষকরা বলছেন হার্ট এটাকের পর রোগীকে চিকিৎসক অনেক সময় সেআরপি, এসপিরিন ও ক্লট বাস্টারের মতো চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এগুলোতে রোগীর যা উপকার হয়, একই উপকার পাওয়া যায় দিনের আলোয়। মানুষের দেহে বিশেষ এক ধরনের দেহঘড়ি বা সারকাডিয়ান রিদম অর্থাৎ জীবনচক্রের পরিচালন প্রক্রিয়ার ছন্দ লুকিয়ে রয়েছে। যার সঙ্গে আলো ও অন্ধকারের প্রভাবের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। এই চক্রের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পেরিয়ড ২ বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন সরবরাহ হয়; হৃৎপি- সচল রাখতে এটি প্রয়োজন। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার পেছনে দিনের আলো উপকারী ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল গবেষকদের মতে, তুলনামূলক বেশি সূর্যালোক আছে এমন আবহাওয়ায় বসবাস করলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী বাত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। সূর্যালোক যখন শরীরে এসে লাগে, তখন অতি বেগুনি রশ্মির মাধ্যমে যে ভিটামিন ডি’র তারতম্য তৈরি হয়, তাতেই নির্ভর করে রোগটি শরীরে জন্ম নেবে কিনা।
তাছাড়া এডিনবার্গ ইউন্ভিার্সিটির গবেষক ড. রিচার্ড ওয়েলার বলেন সূর্যরশ্মি সরাসরি গায়ে লাগলে তা রক্তচাপও কমায়।
হার্ট ভালো রাখতে টিপস
- যখনই খাবেন, কম করে খাবেন।
- কাজের জায়গায় দুপুরের খাবার নিয়ে যান।
- কাজের মধ্যে টি-ব্রেক নিতে ভুলবেন না।
- লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন।
- প্রতিদিন ফল ও সব্জি খান।
- দৈনন্দিন খাবার তালিকা থেকে সলিড ফ্যাট যেমন ঘি, বাটার, চর্বি বাদ দিন।
- ফ্যাট ফ্রি দুধ, ছানা, টক দই খান।
- বাদামি চাল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- খাবারে লবণের পরিমাণ যতটা সম্ভব কম রাখুন।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, গ্লুকোজ লেভেল নিয়মিত চেক করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে
ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে চিকিৎসকরা আবারও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতির ওপর এ রোগ প্রতিরোধ বা এর ঝুঁকি হ্রাস বহুলাংশে নির্ভর করে। প্রধানত দু’টি কারণে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। প্রথমত, পারিবারিক জীবনচক্রের ইতিহাস; দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত স্থূল হওয়ার কারণে। অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাসের ফলে অনেকের শরীরের ওজন বেড়ে যায়, যা থেকে ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে, নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পারিবারিক জীবনচক্রের কারণে কারও ডায়াবেটিস হলে তাকে নিয়মিত শরীরচর্চা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যতালিকা অনুসরণ করতে হবে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট বয়সের পর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পারিবারিক জীবনচক্রও ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। এ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা। ডায়াবেটিস ঝুঁকি এড়াতে ধূমপান ত্যাগ করা, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন বাধ্যতামূলক।
চিকিৎসকরা বলছেন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত হাঁটা, প্রতিদিন গড়ে ন্যূনতম আধাঘণ্টা ব্যায়াম এবং পরিমিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ জরুরি। এতে সুগার কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য চিকিৎসকরা আঁশজাতীয় খাদ্য বেশি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চিকিৎসকরা সতর্ক করে বলেছেন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে চোখ, কিডনি, ধমনি, হার্ট এবং স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি বা এর ঝুঁকি এড়াতে জীবনযাপনের পদ্ধতি পাল্টাতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার; যা আয়ু বাড়িয়ে দেবে।
ডায়াবেটিস নির্মূলে
শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ইয়োগা, আকুপ্রেশার, মেডিটেশন প্রভৃতির মাধ্যমে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। অনুরূপ এক সুসংবাদই দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
গবেষকদের মতে, খাদ্যাভ্যাসে বড়সড় পরিবর্তন আনলেই ডায়াবেটিস প্রথমে নিয়ন্ত্রণ এবং পরে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সফল হলে হয়ত রোগটি নির্মূলও করা যাবে। ১১ জন রোগীর ওপর ৩ মাস ধরে গবেষণা চালিয়ে তারা এ মতামত দেন।
চার বছরের বেশি সময় টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১১ জন রোগীকে ২ মাস ধরে কঠোর পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়। এসময় তাদের খাদ্যতালিকা একেবারেই বদলে দেয়া হয়। তাদের শ্বেতসারবিহীন শাক-সব্জি এবং প্রচুর পরিমাণে পানীয় দেয়া হয়। এতে তারা দৈনিক ৬০০ ক্যালরিরও কম পেত। গবেষকরা দেখতে পান, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার তাদের অগ্নাশয় ও যকৃতের চর্বি কেটে দিয়েছে এবং সেখানে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে। গবেষণার ১ম সপ্তাহের পরই রোগীদের রক্তে চিনির মাত্রা (ইষড়ড়ফ ঝঁমধৎ) স্বাভাবিক দেখা যায়। তিন মাস পর দেখা যায়, এই ১১ জনের মধ্যে ৭ জনই ডায়াবেটিস মুক্ত এবং তাদের অগ্নাশয় ও যকৃৎ সঠিকভাবে কাজ করছে।
রোদে একজিমা সারে
সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর নরম রোদে ভিটামিন ডি থাকে, এটি আমরা অনেকেই জানি। গবেষণায় জানা গেছে রোদের আরো কিছু নতুন গুণ। যেমন যেসব বাচ্চা একজিমাজাতীয় রোগে ভোগে, রোদে খেললে তাদের রোগ নিরাময় হবে তাড়াতাড়ি; আবার যাদের খাবারে এলার্জি আছে, সেই শিশুদের এলার্জি প্রশমনেও রোদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের শিশুদের জন্য একজিমা ও খাবারে এলার্জি সারাতে রোদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে না হলেও শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ তথ্য খুবই কাজে আসবে। কারণ রোদের অভাবে ঐসব অঞ্চলে বেশিরভাগ শিশুর ক্ষেত্রেই এ দু’টি অসুখ দেখা যায়।
অস্ট্রেলীয় কিছু শিশুর ওপর গবেষণা করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান হেলথ।
মনের ব্যথায়ও প্যারাসিটামল
প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ভগ্নহৃদয়ের কারণে সৃষ্ট ব্যথা সারাতে পারে প্যারাসিটামলের ছোট্ট ডোজ। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রত্যাখ্যান বা এ ধরনের সামাজিক অন্যান্য ঘটনায় মানুষ ব্যথা অনুভব করে। এ ব্যথা অনেকটা শারীরিক ব্যথার মতোই। শারীরিক ব্যথার প্রতি যারা বেশি সংবেদনশীল, তারা সামাজিক কারণে সৃষ্ট মনোবেদনায়ও বেশি কষ্ট পায়। গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের ব্যথায় মনোচিকিৎসকরা মূলত রোগীদের আশ্বস্ত করার জন্য ঘুমের বা ভিটামিন জাতীয় ঔষধ দিয়ে সেগুলোকে ‘মনের ব্যথা’ কমানোর ঔষধ বলে চালিয়ে থাকেন। এতে রোগীরা কিছুটা স্বস্তি পায়, মনের আঘাত থেকে সেরে ওঠার শক্তি পায়। তবে এগুলো সরাসরি ঐ কাজের কোনো ঔষধ নয়। কিন্তু দেখা গেছে এ ধরনের ‘ছদ্ম’ কোনো ঔষধ দেয়ার চেয়ে যদি রোগীদের প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ নিয়ম করে কয়েকদিন খেতে বলা হয়, তবে এতে উপকার ঐসব ঔষধের চেয়ে বেশি। খুব দ্রুত এ ধরনের কষ্ট কাটিয়ে ওঠা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক ব্যথা আর সামাজিক বা মানসিক কারণে সৃষ্ট ব্যথা মস্তিষ্কের একই অংশে প্রক্রিয়াকরণ হয়। আর তাই শরীরের ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত ঔষধ প্যারাসিটামল খেলে মনের ব্যথাও কমে আসে।
ফ্রিজে থাকা ৮,০০০ ব্যাকটেরিয়া থেকে সাবধান
সম্প্রতি গবেষকগণ হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে বলছেন আপনার ফ্রিজের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশটি হচ্ছে সব্জি রাখার প্লাস্টিক কনটেইনার। গবেষকরা সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, অপরিচ্ছন্ন সব্জি বা সালাদের কনটেইনারের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ৮,০০০ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ই-কোলি, সালমোনেল বা লিসটেরিয়ার মতো ভয়াবহ সব ব্যাকটেরিয়া। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফ্রিজে খাবার রাখার অংশগুলো নিরাপদ নয়। পরীক্ষার জন্য ৩০টি ফ্রস্ট-ফ্রি ফ্রিজ বেছে নেয়া হয়। এতে অধিকাংশ ফ্রিজের শাক-সব্জি এবং প্রস্তুত করা সালাদ রাখার কনটেইনারে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি দেখা গেছে।
ফ্রিজে ই-কোলির মতো প্রাণসংহারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি অত্যন্ত ভীতিকর বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা।
চলবে।