॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর -২৭ ॥
॥পর্ব ৩॥
বিভিন্ন প্রাকৃতিক চর্চা ও চিকিৎসা
আকুপ্রেশার
আমাদের শরীরে হাত ও পা হচ্ছে কম্পিউটারের কী-বোর্ড ও মাউসের ন্যায়। কী-বোর্ড ও মাউসের মাধ্যমে যেমনি কম্পিউটার অপারেট করা হয়, তেমনি হাত ও পায়ের তালুর বিভিন্ন পয়েন্টে চাপ দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রোগ নির্ণয়, নিরাময় ও প্রতিরোধ করা যায়। সুস্থতা ও শতায়ু লাভে এটি সহজ, বিজ্ঞানসম্মত, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও তাৎক্ষণিক উপকারী মনোদৈহিক চর্চা বা চিকিৎসা, যাকে আকুপ্রেশার বলা হয়। এ পদ্ধতি অবলম্বনে আপনি নিজেই নিজের ডাক্তার হয়ে সর্বদা সুস্থ থাকতে পারেন, হতে পারেন দীর্ঘজীবী।
আকুপ্রেশার একটি বিস্ময়কর ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যার পুরোটাই প্রাকৃতিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক। শরীরের হাত ও পায়ে রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সুইচ, যার সাথে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পৃক্ত। এ সুইচগুলোকে বলা হয় আকুপয়েন্ট। কখনো যদি আমাদের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দুর্বল বা রোগাক্রান্ত অনুভূত হয়, তাহলে ঐসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত হাত বা পায়ের সেসব আকুপয়েন্ট বা সুইচে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বা ভোঁতা কাঠি দিয়ে বিশেষ কৌশলে চাপের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এ বিশ্বজগতের সবচেয়ে বিস্ময়কর বস্তু হলো মানবদেহ। এ দেহের মধ্যে রয়েছে সেরামানের স্বয়ংক্রিয় সুইচ অর্থাৎ মহাশক্তিশালী সব যন্ত্র। যেমন হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস তথা বিরামহীন পাম্প ও বায়ু শোধনাগার। চোখ এক বিস্ময়কর ক্যামেরা তথা প্রজেক্টর-ব্যবস্থা। কান এক অত্যাশ্চর্য শ্রবণযন্ত্র। পেট এক রাসায়নিক গবেষণাগার। স্নায়ু বহু মাইল বিস্তৃত এক যোগাযোগ ব্যবস্থা। মস্তিষ্ক এক স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন যন্ত্র, অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন এক অদ্বিতীয় সুপার কম্পিউটার এবং শরীরের টেলিযোগাযোগ এক্সচেঞ্জ। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এ যন্ত্রগুলো অবিশ্বাস্যভাবে একযোগে কাজ করে চলেছে। প্রাকৃতিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ ক্রিটিক্যাল যন্ত্রগুলোর সচলতা ঠিক রাখতে পারলে শতাধিক বছর বাঁচা কোনো ব্যাপারই নয়।
আকুপ্রেশার চিকিৎসা মানব জাতির জন্য এক মহাসম্পদ। এ পদ্ধতিতে দেহ নিয়ন্ত্রক বহিঃস্রাবী, অনাল গ্রন্থিগুলোকে সঠিকভাবে সক্রিয় করে আমাদের দেহের সবকটি তন্ত্রকেই কার্যক্ষম রাখা যায়। দেহ অভ্যন্তরে অবস্থিত পিটুইটারি, পিনিয়াল, থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, থাইমাস, এড্রিনাল, প্যানক্রিয়াস, লিম্ব এবং যৌন গ্রন্থিসমূহ প্রয়োজনীয় রস উৎপাদন করে; যা রক্তে মিশে দেহ গঠন করে এবং সুস্থতা বজায় রাখে। এ গ্রন্থিগুলো মানুষের মন ও চরিত্র গঠনের কাজ করে থাকে। আকুপ্রেশার দ্বারা অনাল গ্রন্থিগুলোর ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করা যায়। দুর্ভাগ্য যে, আমরা আমাদের দেহ-ক্যাটালগের খোঁজই রাখি না। এ কারণে দেহ আমাদের অধীন নয়, বরং আমরাই দেহের অধীন হয়ে থাকি।
মানুষের দেহযন্ত্র বিদ্যুৎ শক্তি দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, যার নাম জৈব বিদ্যুৎ প্রবাহ। একটি শুক্রকোষ নারীর অ-বীজে প্রবেশ করলে তাতে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায়, ফলে শিশুর জন্ম হয়। তখন থেকেই বিদ্যুৎ প্রবাহ বা চেতনা সৃষ্টিকারী জীবন-ব্যাটারী দেহে সৃষ্টি হয় এবং তাতে দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিমিতভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রক্রিয়া সচল রাখে। কোনো কারণে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে বা প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে না পারলে অসুস্থতা দেখা দিতে পারে এবং রোগ-ব্যাধির জন্ম হয়। ঠিকমতো বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা গেলে রোগমুক্তি হয়, রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
আকুপ্রেশার পদ্ধতি প্রকৃতির সেই মহাবিজ্ঞান, যা শরীরের ভেতরের যন্ত্রকৌশল সম্পর্কে অবহিত করে এবং আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে এই বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরের যেকোনো অংশে প্রয়োজনবোধে পাঠানো যায়।
যেকেউ নিজের দেহ-যন্ত্র ক্যাটালগ পাঠ করে শরীরের সমস্যা, রোগ-ব্যাধি নিজে নিজেই শনাক্ত করতে পারে। জটিল ও কঠিন সব ধরনের রোগই নিরাময়যোগ্য। প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি ও জ্ঞানের। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনেও শরীরকে বাঁচিয়ে রাখা এবং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবধি এ চিকিৎসা দ্বারা শরীর নিরোগ রাখা সম্ভব।
আকুপ্রেশার চিকিৎসা দ্বারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, এজমা, স্ত্রীরোগ, কিডনি রোগ, ক্যান্সার, শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা, এইডস, প্যারালাইসিস, মাথা ব্যথা (মাইগ্রেন), ঘাড় ব্যথা, কোমর ব্যথা, হাঁটু ব্যথাসহ যেকোনো ব্যথা-বেদনা, জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আকুপ্রেশার চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য
১। যন্ত্রপাতি ছাড়াই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়; ২। ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন রোগ নিরাময়; ৩। ড্রাগ বা ঔষধমুক্ত জীবনলাভ;
৪। আজীবন সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা।
শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ জাতি গড়ার লক্ষ্যে ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে ফ্রি আকুপ্রেশার চর্চা করানো হয়। আপনিও সাদরে নিমন্ত্রিত এই ছোট্ট বিদ্যালোকে এবং প্রাকৃতিক চর্চালোকে। বাংলাদেশে আকুপ্রেশার চিকিৎসার অগ্রণী ব্যক্তিত্বগণ ক্যাম্পাস কার্যালয়ে আকুপ্রেশার সেশন পরিচালনা করে থাকেন।
রিফ্লেক্সোলজি
বিকল্প চিকিৎসার একটি আধুনিক ও সহজ পদ্ধতি রিফ্লেক্সোলজি; যা শরীরকে প্রকৃতির সাথে ছন্দময় করে রাখে। এর জন্য কোনো যন্ত্রপাতি বা উপকরণ দরকার হয় না; কোনো ড্রাগ বা ঔষধও লাগে না। যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে, যে কারও জন্য এর ব্যবহার বা প্রয়োগ সহজ ও নিরাপদ।
রিফ্লেক্সোলজির শক্তিশালী ও গভীর নিরাময় পদ্ধতি শরীরকে সুস্থ ও সতেজ করে তোলে; রোগ-ব্যাধি ও ব্যথা-বেদনা দূর করে; শারীরিক শক্তির নবায়ন করে; জীবনীশক্তি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
রিফ্লেক্সোলজির সূত্র হলো ঐবধষরহম ধঃ ুড়ঁৎ ভরহমবৎ ঃরঢ়ং নু মবহঃষব ঢ়ৎবংংঁৎব রং শবু ঃড় ঢ়বৎভবপঃ যবধষঃয. এর বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতি হচ্ছে ফিংগার প্রেসার দিয়ে শরীরের নির্ধারিত পয়েন্টে নির্ধারিত সময় ধরে জঁননরহম, ঢ়ৎবংংরহম, সড়ারহম, যড়ষফ ্ ৎবষবধংব করা। এ পদ্ধতিতে মেসেজ করলে কেবল নির্দিষ্ট ব্যথারই উপশম হয় না, অধিকন্তু এনার্জি লাইনের মধ্য দিয়ে সারা শরীরে নিরাময়সূচক শক্তি প্রবাহিত হয়। ফলে শরীরের যেসব অঙ্গ বা গ্ল্যান্ড বন্ধ বা ব্লক হয়ে শরীরকে অসুস্থ করে তুলেছিল, সেগুলো পুনরুজ্জীবিত হয় এবং নয়া জীবনীশক্তির সঞ্চার হয়; শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।
মানবদেহের প্রত্যেক অর্গান, গ্ল্যান্ড ও নার্ভের মূল পরিক্রমণ পথ রয়েছে এবং এসব পথের শেষও আছে। হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে এসব পথের সংযোগ রয়েছে। সব সূক্ষ্ম যন্ত্রেই অন্তর্নিহিত এমন ব্যবস্থা থাকে, যাতে বিপদের সময় সেটি আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায় এবং বোতাম টিপলেই সেটি আবার সক্রিয় হয়; অনেকটা রেফ্রিজারেটর বা গিজারের কার্যকারিতার ন্যায়। মানবদেহের মধ্যেও সেরূপ সংযোগ ব্যবস্থা রয়েছে, যার দ্বারা অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ হয় এবং প্রয়োজনে মেরামতও করা যায়।
রিফ্লেক্সোলজি পদ্ধতির জন্ম মানবদেহের নিজস্ব সংযোগ বিজ্ঞান থেকে। একে আকুপ্রেশার চিকিৎসার একটি উন্নততর সংস্করণ বলা যায়। রিফ্লেক্সোলজি পদ্ধতি অনুশীলন করে আপনি নিজেই আপনার এবং পরিজনদের চিকিৎসক হতে পারেন।
যেকোনো শারীরিক অবস্থায় রিফ্লেক্সোলজি দিতে পারে চমৎকার উপশম। এই হিলিং থেরাপি জীবনের প্রতি পদক্ষেপে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন-মানোন্নয়ন, শরীরের যথার্থ প্রয়োজনীয়তা পূরণ এবং চাপমুক্ত জীবনযাপনে সহায়তা করে। বৃদ্ধ, শিশু, শারীরিক বিকলাঙ্গ বা গর্ভবতী থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের যেকোনো অসুখ নিরাময়ে রিফ্লেক্সালজি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল পদ্ধতি। কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতে রিফ্লেক্সোলজির গুরুত্ব অপরিসীম।
ক্যান্সার রোগীদের কষ্ট লাঘবেও রিফ্লেক্সোলজির ভূমিকা দিনদিন বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের চ্যারিং ক্রস হসপিটাল, হ্যামারস্মিথ হসপিটাল, হারলে স্ট্রীট ক্লিনিক ও লিসটার হসপিটালের ক্যান্সার রোগীদের কমপ্লিমেন্টারি থেরাপি হিসেবে রিফ্লেক্সোলজি করানো হয়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি প্রকাশিত জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানকার ক্যান্সার রোগীদের এক তৃতীয়াংশ বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে রিফ্লেক্সোলজি চর্চা করে।
আমাদের দেশে রিফ্লেক্সোলজির ধারণা ও চিকিৎসায় মানুষ এখনো অভ্যস্ত হয়নি। তবে থাইল্যান্ড থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে জনাব এ কে এম আনওয়ারুল হক রিফ্লেক্সোলজি চিকিৎসা দিচ্ছেন।
রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা
হাজার বছর পূর্বে যাকে বলা হতো প্রাণশক্তি, আমেরিকা আজ তাকেই বলছে ইউনিভার্সাল লাইফ ফোর্স এনার্জি, রাশিয়া বলছে বায়ো প্লাসমিক এনার্জি; চীন বলছে চি; মাত্র দেড়শো বছর আগে জাপানে তার নাম হয় রেইকি।
রেই-কি (জবর-শর) জাপানী শব্দ; ‘রেই’ অর্থ বিশ্বব্রহ্মান্ড; ‘কি’ অর্থ জীবনীশক্তি। অর্থাৎ রেইকি হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মান্ডের জীবনীশক্তি তথা মহাজাগতিক শক্তি।
এই পৃথিবীতে সবল ও সুস্থ দেহ নিয়ে বাঁচার জন্য যে জীবনীশক্তি আমরা প্রতিনিয়ত বিনামূল্যে পাচ্ছি, তা আসছে প্রাকৃতিক ৩টি উৎস থেকে সূর্যরশ্মি, মুক্ত বায়ু ও মাটি। এ ৩ শক্তির মধ্যে প্রধান হলো সূর্যরশ্মি তথা সোলার এনার্জি। পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়া সূর্যের প্রাণশক্তিকে মানবদেহের অসুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবেশ করিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি পুনরুদ্ধার করেছেন আধুনিক রেইকির প্রবর্তক জাপানের ড. মিকাও উসুই।
মানবদেহে রয়েছে ৭টি চক্র ক্রাউন চক্র, থার্ড আই চক্র, থ্রোট চক্র, হার্ট চক্র, সোলার প্লেক্সাস চক্র, স্যাক্রাল চক্র, রুট চক্র। এই প্রত্যেকটি চক্র শরীরের একেকটি এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ডের সঙ্গে সংযুক্ত। রেইকির কাজ হলো বিশ্বব্রহ্মান্ডের বিশাল শক্তিকে শরীরের চ্যানেলের মধ্য দিয়ে আবাহন করিয়ে চক্রের মধ্যে প্রবাহিত করা। চক্র থেকে শক্তি সঞ্চালিত হয় এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ডে। প্রথম ৩টি চক্র হলো আধ্যাত্মিক চক্র, শেষ ৩টি চক্রের যোগাযোগ পৃথিবীর সঙ্গে। সোলার প্লেক্সাস চক্রটি যুক্ত আমাদের হার্ট বা হৃদয়ের সঙ্গে। পৃথিবী থেকে শক্তি আহরণ করে আধ্যাত্মিক চক্র থেকে তা প্রবাহিত হয় হার্টে। রেইকি মতে, হার্টের এক্সটেনশন হচ্ছে হাত। কাজেই ব্রহ্মান্ড থেকে আহরিত শক্তি গিয়ে জমা হয় হাতের ১০টি আঙুলের প্রান্তে। বেড়ে যায় আঙুলের শক্তি, যে শক্তি দিয়ে আরোগ্য হয় রোগের।
সূর্যরশ্মি বা মহাজাগতিক শক্তিকে আহরণ করে দু’হাতের মাধ্যমে তা ব্যাধিগ্রস্ত মানুষের শরীরে পৌঁছে দেয়ার মানেই হলো প্রাণশক্তি প্রদান অথবা ট্রান্সফার অব লাইফ ফোর্স এনার্জি তথা রেইকি। যুগ যুগ ধরে মহামানবগণ শুধুমাত্র হাতের স্পর্শেই জরাগ্রস্ত ও ব্যাধিগ্রস্ত মানুষকে নিরাময় করে এসেছেন। এতে কোনো যাদুমন্ত্রের ব্যাপার বা বিষয় নেই; বরং রয়েছে বিশেষ মানুষের বিশেষ জ্ঞান তথা বিজ্ঞান।
রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেই নিজের চিকিৎসক হওয়া যায়। সামান্য কাশি থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত বিনা ঔষধে, বিনা অস্ত্রোপচারে কেবলমাত্র হাতের স্পর্শ দিয়ে নিরাময় করা যায়।
যেকোনো পরিস্থিতিতে, যেকোনো স্থানে, যেকোনো সময়ে রেইকি শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব। তবে ভোর চারটা থেকে ছ’টার মধ্যে করলে বেশি কার্যকর হয়। এসময় ইউনিভার্স থেকে একটি বিশেষ রশ্মি পৃথিবীতে আসে, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ রশ্মির হিলিং পাওয়ার অনেক বেশি।
কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনায় রেইকি হতে পারে ফার্স্ট এইড। সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রে ৩ দিনের রেইকি চিকিৎসা যথেষ্ট। কঠিন রোগে চিকিৎসা করতে হয় ২১ দিন।
একজন রেইকি মাস্টার নিজের শরীরে কসমিক এনার্জি এবজর্ব করেন তার শরীরের বিভিন্ন এন্ডোক্রিন গ্রন্থির মাধ্যমে। এই এনার্জি হাতের মাধ্যমে বাহিত হয় অন্যের শরীরে বা বস্তুতে। রেইকি এনার্জি আপন গতিতে চলে। হয়ত শরীরের যে সমস্যার জন্য রেইকি করা হচ্ছে, তারচে’ বড় সমস্যা ঐ শরীরে আছে। তখন কসমিক এনার্জি বড় সমস্যার স্থানেই চলে যায়। বড় সমস্যার সমাধান শেষে অন্যান্য ছোট সমস্যার সমাধান করে। এ কারণে রেইকিকে বলা হয় স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি।
রেইকি হলো সেøা বাট স্টেডি চিকিৎসা পদ্ধতি; এটি কোনো ম্যাজিক নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। অন্যান্য চিকিৎসার পাশাপাশি রেইকি করলে রোগীর মানসিক ও শারীরিক কষ্ট দূর হয়। তাছাড়া এতে শরীর রেসপন্সও করে বেশি। অর্থাৎ রেইকি পরোক্ষভাবে চিকিৎসা পন্থার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এজন্যই বর্তমানে রেইকি মাস্টাররা হাসপাতালের আইসিইউতেও প্রবেশের অনুমতি পেয়ে থাকে।
মানবদেহের এনার্জি চক্র থেকে এন্ডোক্রিন গ্ল্যান্ড পর্যন্ত যোগাযোগে যখন বিঘœ ঘটে, তখনই শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। আর এই বিঘœতার কারণ আমাদের নেগেটিভ এটিচিউড, নেগেটিভ ফিলিংস এবং কনফিউশন এগুলোই বাধা তৈরি করে; এগুলো থেকেই খাওয়া-দাওয়া ও জীবনযাপনে নেগেটিভ এনার্জি চলে আসে, দেখা দেয় রোগ-শোক। সাধারণত রোগের লক্ষণ শরীরে থাকলেও এর মূল উৎস মনে। যেমন আর্থ্রাইটিসের কারণ মনের মধ্যে ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা, এজমার কারণ মনের মধ্যে বদ্ধতা ইত্যাদি। রেইকি মনের এই নেগেটিভ কারণগুলো দূর করে, ফলে রোগ সেরে যায়।
রেইকির প্রধান সূত্র হলো কুচিন্তা ত্যাগ করে নিরন্তর শুভচিন্তা নিয়ে জীবনযাপন। দীর্ঘদিনের নেগেটিভ চিন্তা আমাদের শরীরে এনার্জি গ্রহণের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। নেগেটিভ চিন্তার বদলে পজিটিভ এনার্জির প্রতিনিয়ত ব্যবহারই খুলে দিতে পারে শরীরে কসমিক এনার্জি গ্রহণের সবক’টি দ্বার। রেইকি পজিটিভ এনার্জি হওয়ায় মনের ওপর এর প্রভাব অপরিসীম। এতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায়। সে সবকিছু পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। রেইকি চিকিৎসায় শেখানো হয়
১। আজকের জন্য আমি এই বিশ্বের কাছ থেকে যা পেয়েছি, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব;
২। আজকের জন্য আমি কোনো দুঃশ্চিন্তা করব না;
৩। আজকের জন্য আমি মোটেই রাগ করব না;
৪। আজকের জন্য আমি প্রতিটি কাজ সৎভাবে করব;
৫। আজকের জন্য আমি প্রতিটি প্রাণির প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রদর্শন করব।
রেইকির মাধ্যমে এজমা, আর্থ্রাইটিস, এলার্জি, আলসার, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে যেকোনো ক্রনিক রোগ সারানো যায়। রেইকি চিকিৎসা নিতে শারীরিক কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তবে মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে, কারণ এতে মাইন্ড কনসেনট্রেশন করতে হয়। রেইকি মাস্টারের মাধ্যমে সোলার এনার্জি গ্রহণের আস্থা বা বিশ্বাস এখানে জরুরি বিষয়।
যেকোনো এডিকশন বা আসক্তি ছাড়াতে, বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করতে, সম্পর্ক উন্নয়নে, ওজন কমাতে রেইকি চমৎকার ফল দেয়। রেইকি মন ও শরীরের মধ্যে সমন্বয় সাধন তথা ভারসাম্য রক্ষা করে। শরীর ও মনের ভারসাম্য থাকলে শরীরে অসুখ বাসা বাঁধতে পারে না।
খাবারের ওপরও রেইকি করা যায়। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ বাড়ে। রেইকির শক্তি খাবারের ক্ষতিকর উপাদান মুছে ফেলে। তাই রেইকি করলে খাবার হজম হয় ভালো।
রেইকি চিকিৎসা গ্রহণের সময় এমন খাবার খাওয়া উচিত নয়, যা খেলে শরীরে টক্সিন জমে। যেমন চা, কফি, সিগারেট, এলকোহল প্রভৃতি। বরং কাঁচা বা সেদ্ধ সব্জি ও ফল খাওয়া উচিত। কারণ এগুলোর ‘র’ এনজাইম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া এসময় প্রচুর পানি পান করা উচিত।
বাংলাদেশে রেইকি চিকিৎসার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ডাঃ ফজলুর রহমান শান্তিনগরে কসমিক ফাউন্ডেশন চেম্বারে রেইকি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
চলবে।