বিশেষ খবর



Upcoming Event

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল -২৮

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিশেষ নিবন্ধ

॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর -২৮ ॥ ॥পর্ব ৪॥
এপিথেরাপি বা মৌ-চিকিৎসা
চিকিৎসা ক্ষেত্রে মৌমাছি এবং মৌচাক থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভেষজ উপাদান ব্যবহারের ঐতিহ্য অতি প্রাচীন। পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য জ্ঞানের নিদর্শন রয়েছে মধু ও মৌমাছির মধ্যে। বাইবেলে মৌমাছি ও মধু সম্পর্কে ৬০ বার উল্লেখ রয়েছে। সনাতন ধর্মশাস্ত্রে মৌমাছিকে দেবতার সহচর বলা হয়েছে এবং দেবতা বিষ্ণুকে পদ্মফুলের ওপর বসা একটি ছোট মৌমাছি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
মৌমাছি ও মৌচাক ব্যবহারের একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি বর্তমানে চালু হয়েছে, যা এপিথেরাপি নামে পরিচিত। অর্থাৎ এপিথেরাপি হলো মৌ-চিকিৎসা তথা মৌমাছি দিয়ে অসুস্থতা দূরীকরণ পদ্ধতি। Apitherapy simply depends on the use of bee products to prevent, heal or recover somebody from one or more diseases. It is also the art & science of treatment and holistic healing through the honey bee & her products for the benefit of mankind and all the animal kingdom. বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশে এপিথেরাপি চিকিৎসা চালু হয়েছে এবং এ সম্পর্কে গবেষণাও চলছে। এপিথেরাপির ইতিবাচক কার্যকারিতার কারণে এর প্রসার দিনদিন বাড়ছে এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যৌক্তিকভাবে উন্মোচিত হচ্ছে। বর্তমান আধুনিক সভ্যতায় যে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হচ্ছে, তার নিরাময়ের ক্ষেত্রে এপিথেরাপি একটি উৎকৃষ্ট চিকিৎসা হতে পারে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। এপিথেরাপির মাধ্যমে মানব শরীরের ৫০০ রকমের রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাময় সম্ভব। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এপিথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। কারণ এর মাধ্যমে স্বল্প খরচে অনেক জটিল রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রবর্তন করাও সহজ। এপিথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতিতে মৌমাছির যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, তা নিম্নরূপ।
১। মধুঃ রোগ প্রতিরোধের সকল উপাদান বিদ্যমান মধুতে। প্রতিফোঁটা মধুতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফেট, কপার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন (এ, বি ১, বি ২, বি ৩, সি, ডি) ছাড়াও গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ বিদ্যমান। সর্দি-কাশি, টাইফয়েড, জ্বর, নিউমোনিয়া, অম্ল, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয়ে মধু উপকারী। মধুতে রয়েছে ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, ময়শ্চারাইজিং ও এন্টিবায়োটিক গুণাবলি যার কারণে সৌন্দর্য চর্চায়ও মধু ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসক ও দার্শনিক ইবনে সিনা তাঁর `কানোন` গ্রন্থে মধু দিয়ে অসংখ্য রোগের ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। ২। বী ভেনম বা মৌমাছির হুলের বিষঃ মৌমাছির হুলের বিষে বিভিন্ন ধরনের উপকারী এনজাইম, পেপটাইডস, বায়োজেনিক এমাইডসহ ১৮ ধরনের উপাদান রয়েছে; যা মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। মানুষের হাঁটু ও বিভিন্ন জয়েন্টে আর্থ্রাইটিস ব্যথা, ক্যান্সার, টিউমার এবং ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি রোগ নিরাময়ে এই বিষ সাফল্যের সাথে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকা মহাদেশে এসকল রোগের চিকিৎসায় মৌমাছির হুলের বিষ সাফল্যজনকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সেখানে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত ও অনুমোদিত।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনও এ চিকিৎসা শুরু হয়নি। তবে অভিজ্ঞ মৌচাষীগণ হাঁটুতে ব্যথা নিরাময়ে হুলের বিষ ব্যবহার করছেন। ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বিকীপার্স কোঅপারেটিভস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বিআইএ`র অভিজ্ঞ মৌচাষী নুরুল হক মাস্টার তার গ্রামের লোকজনের হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে জীবন্ত মৌমাছির হুল প্রয়োগ করেন। এতে অধিকাংশেরই হাঁটুর ব্যথা নিরাময় হচ্ছে। ৩। রয়েল জেলীঃ এটি রানী মৌমাছির নিয়মিত খাবার। রয়েল জেলী এতই পুষ্টিসমৃদ্ধ যে, মৌমাছির একটি সাধারণ ডিমে নার্স বী কর্তৃক তা নিয়মিত প্রয়োগের ফলে উক্ত ডিম থেকে একটি সাধারণ মৌমাছি না হয়ে রানী মৌমাছি জন্মলাভ করে। জন্মের ২৫-৩০ দিন পর থেকেই সে রানী মৌমাছি প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৫০০০টি ডিম পাড়ে।
মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে এবং পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে রয়েল জেলী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শারীরিক দুর্বলতা, দীর্ঘমেয়াদি ক্লন্তি রোধে; প্রজনন অক্ষমতা (ফার্টিলিটি) বৃদ্ধিকল্পে; ত্বক-চুল ও নখের রোগ নিরাময়ে; সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে; এজমা ও হরমোন নিয়ন্ত্রণে; কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হতাশা দূরীকরণে; লিভার ফাংশন নিয়ন্ত্রণে রয়েল জেলী প্রাচীন যুগ থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ৪। পোলেনঃ শ্রমিক মৌমাছি কর্তৃক সংগৃহীত পরাগরেণুর সমষ্টিকে পোলেন বলে। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। পৃথকভাবে বা মধুর সঙ্গে মিশ্রিত করে বী-ব্রেড তৈরি করা হয়, যা ক্যান্সার ও এজমা রোগ চিকিৎসায় এবং কসমেটিকস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। পোলেনকে বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ মাল্টি ভিটামিন ও মাল্টি মিনারেল সাপ্লিমেন্ট বলা যায়। এলার্জিজাতীয় রোগের প্রতিষেধক টিকা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়।
৫। প্রপলিসঃ শ্রমিক মৌমাছি বিভিন্ন ফুলের কুঁড়ি, কচি ডাল ও গাছের আঠালো কষ থেকে প্রপলিস বা মৌআঠা সংগ্রহ করে তা মৌচাকের আশপাশে সঞ্চয় করে রাখে। এর দ্বারা মৌমাছি মূলত চাকের ফাটল জোড়া লাগায়, মৌচাককে স্থায়ীভাবে কোনো কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখে এবং বায়ু চলাচল ও রোগজীবাণু থেকে কলোনি রক্ষা করে। এটি টারপিন, ভলাটাইল অয়েল, বালসাম ও মোমের সমন্বয়ে গঠিত বলে এর রোগজীবাণু বিধ্বংসী ক্ষমতা অনেক। সাধারণত ঠান্ডা, গলা ব্যথা, চর্ম ও দন্তরোগ, আগুনে পোড়া ঘা শুকাতে, এজমা ও পাকস্থলীর হজমশক্তি বৃদ্ধিতে প্রপলিস ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি ছত্রাকনাশক ও জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৬। মোমঃ শ্রমিক মৌমাছির বিশেষ গ্রন্থির সাহায্যে মধু থেকে মোম তৈরি হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদার্থ হওয়ার কারণে যেকোনো প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদনে মোম ঔষধ ধারক ও বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৭। এপিনার্লিনঃ মৌমাছির ডিমের এক্সট্রেনাক্টকে এপিনার্লিন বলে। বর্তমানে এটি নিয়ে গবেষণা চলছে। আশা করা হচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে মৌমাছির বিভিন্ন উপাদানের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে এইডস নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ পথ্য আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এপিথেরাপি চিকিৎসার উদগাতা জনাব আবদুর রাজ্জাক; ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় নিজস্ব খামারে ৩০ বছর ধরে এপিথেরাপির ওপর গবেষণা করছেন এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এবং তাঁর মিশন সহকারী আবিদ হোসেন, খায়রুল বাশারসহ অনেকে এ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারসহ বহু দূরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ে সাফল্য দেখিয়েছেন।
আমার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস`র স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচির অধীনে নিয়মিত আয়োজিত হয় রিফ্লেক্সোলজি, রেইকি ও এপিথেরাপি বিষয়ক ওয়ার্কশপ এবং সেমিনার। প্রাকৃতিক চর্চার এ সেশনসমূহে নিখরচায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদেরকে ক্যাম্পাস কার্যালয়ে যোগাযোগের অনুরোধ রইল।
অটোসাজেশন
অটোসাজেশন হলো কিছু সহজ-সরল কথা, যা বারংবার আওড়ানোর মাধ্যমে অন্তর্জগতের পরিবর্তন করা যায়। ইতিবাচক কথা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও সৃষ্টিশীলতা অর্জনের এ বিষয়টি প্রাচীন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বগণ খুব ভালো জানতেন। অবিরাম অটোসাজেশনের মাধ্যমে সুস্থতা, শতায়ুলাভ, রোগমুক্তি থেকে শুরু করে জীবনে সবকিছুই অর্জন করা সম্ভব। কেবল অর্জন করতে চাই কিনা সেটিই মুখ্য বিষয়। এজন্য প্রথমে মনস্থির ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে, তারপর বিশ্বাস আনতে হবে যে এটি আমি পারি, আমি এটি করব; আমি নিজেকে পরিবর্তন করতে পারি। প্রথম প্রথম এটি কষ্টকর হতে পারে, সাফল্য কম হতে পারে, এমনকি নাও হতে পারে। সাফল্যের এ পথে বিরাট বাধা হচ্ছে সন্দেহ ও অনিশ্চয়তা। তাই প্রথমেই সন্দেহ ও সংশয় ঝেড়ে ফেলতে হবে। সন্দেহের গ্যাঁড়াকলে পড়ে হতাশ হওয়া যাবে না।একটি অস্ত্রই এসব দুর্বলতা দূর করতে পারে; আর তা হলো অটোসাজেশন।
কালজয়ী সাহিত্যিক ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন সত্যিকারের সাফল্য কিছু ইতিবাচক অনুশাসন ছাড়া আর কিছু নয়, যা প্রতিনিয়ত চর্চা করতে হয়। ফ্রেঞ্চ সাইকোলজিস্ট এমিল কো তাঁর গবেষণায় পেয়েছেন যে মানুষ যখন ভালো কথা বারবার বলে, তখন ভালো জিনিস তার কাছে আসতে থাকে। ফলে জীবনে পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯১০ থেকে ১৯২৬ সালের মধ্যে তিনি বহু রকমের রোগীকে এ চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তোলেন; যেখানে মাইগ্রেন, এজমা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ইনসমনিয়া, টিউমারের রোগীও ছিল। একটিমাত্র অটোসাজেশন আওড়ে এসব রোগী আরোগ্যলাভ করেছে। সেটি হলো Day by day and in every way I am getting better, better & better. সকাল-বিকাল ২০ বার করে এটি আওড়ানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের রোগ সেরে যায়। তখন থেকেই অটোসাজেশনের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ছাত্রত্ব শেষে প্রফেসর এম ইউ আহমেদের আজিমপুরস্থ বাড়িতে আমি ভাড়া থাকতাম। সে সুবাদে তাঁর সম্পর্কে জানার সুযোগ লাভ করি। প্রফেসর আহমেদ বাংলাদেশে ফলিত মনোবিজ্ঞানের পথিকৃৎ। তিনি প্রথম অটোসাজেশন প্রয়োগ করেন নিজের ওপর। ১৯৩৪ সালে প্যারাটাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে প্রফেসর এম ইউ আহমেদ ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ৪ মাস চিকিৎসার পর ডাক্তাররা তাঁর বাঁচার আশা ছেড়ে দেন এবং জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলো বাড়িতে গিয়ে কাটানোর পরামর্শ দেন। বুড়িগঙ্গা দিয়ে নৌকায় করে যখন গ্রামের বাড়ি বরিশালে যাচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ বেঁচে থাকার প্রচন্ড আকুতি অনুভব করলেন তিনি। তাঁর আত্মার গভীর থেকে অনবরত আওড়াতে লাগলেন আমি বাঁচতে চাই, আমি বাঁচব...। এতে তিনি ভালো হয়ে গেলেন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষিত হবার পরও ঠিক একইভাবে পুনরায় বেঁচে উঠেছিলেন তিনি। তাই বলা যায় জীবনে পজিটিভ পরিবর্তন বা সাফল্য আনতে চাইলে প্রথমে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন চাইলে বিশ্বাস করতে হবে যে, আমি বদলাতে পারি। এ বিশ্বাস আনয়ন মোটেও কঠিন কিছু নয়। এর আগে অনেকেরই এভাবে পরিবর্তন হয়েছে। দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম নিয়ে, ভয়াবহ অভাব আর অনটনে বেড়ে উঠেও পরবর্তীতে ধনবান, কীর্তিমান বা ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে। অনুরূপ বহু সফল মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক`জন হচ্ছেন ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, হোন্ডা মোটরস`র ফাউন্ডার সইচিরো হোন্ডা, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এঁরা কেবলমাত্র নিজেদের ইচ্ছাশক্তি খাটিয়ে এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে নিজ অবস্থা ও অবস্থানের বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। হতাশার গভীরতা থেকে তাঁরা নিজেদের নিয়ে গেছেন সাফল্যের শীর্ষে। শূন্য থেকে শুরু করে অর্জন করেছেন সবকিছু। আর এ অর্জন বাইরের কেউ তাঁদের করে দেয়নি। বিশ্বাস, দৃঢ়তা আর মস্তিষ্কের অসীম ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা নিজেরাই নিজেদের জীবন পরিবর্তন করেছেন। এগুলো মিরাকল মনে হতে পারে, কিন্তু আসলে মিরাকল নয়। এরূপ সাফল্যে বা অর্জনে অতি প্রাকৃতিকতারও কিছু নেই। তবু যদি কারো মনে হয়, এগুলো মিরাকল বা ভাগ্যবানদেরই কেবল এমন হয় তাহলে নিজেকে সেই ভাগ্যবানদের একজন করে গড়ে তুলতে বাধা কোথায়? নিজের জীবনেও এমন মিরাকল আপনি অনায়াসেই ঘটাতে পারেন; হতে পারেন সে ভাগ্যবানদের একজন। কারণ আপনার হাতে আছে অটোসাজেশনের শক্তি।
কিছু শব্দ বা একটি বাক্য কীভাবে জীবনে পরিবর্তন আনে? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে। বিজ্ঞানীরা এর রহস্য উন্মোচন করছেন ধীরে ধীরে। মানবদেহের নার্ভাস সিস্টেম আসলে কল্পনা ও বাস্তবের পার্থক্য করতে পারে না। আমরা বাস্তবে দেখি বা কল্পনা করি, ব্রেনে তার একই প্রভাব পড়ে। এজন্যই আমরা সিনেমা বা নাটক দেখে হাসি বা কাঁদি, অথচ আমরা জানি এটা বাস্তব নয়। সমগ্র শরীরের মধ্যে ব্রেন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ-সরল ও বোকা প্রকৃতির। তাকে আপনি যেভাবে কমান্ড দেন, সেভাবেই সে পরিচালিত হয়। ব্রেনে পজিটিভ বা নেগেটিভ যেরূপ ইনফরমেশনই পাঠানো হয়, ব্রেন সেরূপ তরঙ্গই সৃষ্টি করে এবং শরীরে তার প্রতিফলন ঘটায়। আমরা যখন ব্রেনে নতুন ইনফরমেশন দেই, তখন মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যে নতুন যোগাযোগের পথ তৈরি হয়। যখন আমরা লাগাতার ঐ একই পজিটিভ মেসেজ পাঠাতে থাকি, তখন ব্রেনের কাজের কাঠামো পরিবর্তন হয় এবং ইনফরমেশন অনুযায়ী ব্রেন নতুন বাস্তবতা তৈরি করে। তাই সুস্থতার জন্য, জীবনে সাফল্য অর্জন বা বড় হবার জন্য ওসধমরহধৎু ঢ়ড়ংরঃরাব রহভড়ৎসধঃরড়হ ব্রেনে যত বেশি সম্ভব প্রেরণ করতে হবে।
অটোসাজেশনের মাধ্যমে মনের লুক্কায়িত শক্তিকে জাগিয়ে তোলা যায়, একই পজিটিভ বাক্য বারংবার আওড়ে। শরীর ও মন উভয়ই তখন ব্যক্তিকে সাহায্য করে এবং তাকে সেভাবে তৈরি করে সে যা চায়, তা পেতে। এভাবে শরীর ও মনে যখন রূপান্তর আসে, তখন ইচ্ছাটি বাস্তবে রূপ নেয়। মনে হয়, এ যেন এক মিরাকল। অটোসাজেশন দিয়ে জীবনে পরিবর্তন আনার সহজ পন্থা হলো মেডিটেশন। মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে ব্রেনের আলফা লেভেলে গিয়ে আপনি বারংবার নিজ লক্ষ্যের কথা আওড়ালে এবং মনের চোখে তা দেখতে থাকলে একসময় এটি আপনার শরীরে ও মনে এক ছন্দ তৈরি করবে; যা ধীরে ধীরে ও নীরবে আপনাকে পরিবর্তিত করে তুলবে। শুরু হবে আপনার সুস্থ, সুন্দর ও নিরোগ জীবনযাপন; শতায়ু লাভের পথে যাত্রা। সাফল্য তখন অনায়াসে ধরা দেবে আপনার হাতে।
দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কিছু অটোসাজেশন
১. Day by day and in every way I am getting better, better & better; I am getting richer, richer & richer by the grace of Almighty.
২. I know I can change my life by changing my attitude. Everyday I am creating a better life by changing my attitude..
৩. If I can`t control my anger, I will be the loser. I will curb my anger and be the winner..
৪. I am free from the influence of all negative & reactive thoughts & words.
৫. Positive thoughts, ideas & actions will ensure my wellbeing. I am getting everything I want through positive thoughts, ideas & actions.
৬. Faith is the source of power. I believe, so I will achieve..
৭. A critic just criticizes but a model shows the way. I am becoming a model of my believes..
৮. In response to `How are you?` I will always say, `Thank God, I am fine.`
৯. Today I will play a positive role in the life of everyone I meet.
১০. The past is already lost. The future is just a promise. Only the present is within my control. I am using it wisely.
উপরোক্ত অটোসাজেশনগুলো থেকে আপনার প্রয়োজনীয় বাক্য বা কথাটি বেছে নিন এবং অনবরত ব্রেনকে তা শুনিয়ে নিজেই নিজের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিন। সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাসের এ জগতে সবাইকে স্বাগত।
চলবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img