॥ পূর্ব প্রকাশিতের পর -৩৪ ॥
অধ্যায় ৮
॥পর্ব ১॥
পুরুষ ও নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের কয়েকটি রোগের প্রতিকার
মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি বাবা বা পুরুষদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতাও আবশ্যক। শরীরবৃত্তের পার্থক্যের কারণে নারীদের তুলনায় পুরুষের স্বাস্থ্যসমস্যা একটুু পৃথক। স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে পুরুষের কিছু বিশেষ রোগ এবং সেসবের প্রতিকার সম্পর্কে বলছি।
হৃদরোগঃ পুরুষের প্রধান শত্রু হৃদরোগ। এটি প্রতিরোধ করতে হলে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
-প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ সব ধরনের ধূমপান পরিত্যাগ করা;
-স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা; শাক-সব্জি, ফলমূল, আকাঁড়া শস্যদানা, অতিরিক্ত আঁশযুক্ত খাদ্য ইত্যাদি বেশি খাওয়া। চর্বি ও লবণযুক্ত খাবার পরিহার করা;
-উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা;
-প্রতিদিন ব্যায়াম করা; তা যেকোনো ধরনের শরীরচর্চা কিংবা খেলাধুলা, যা কিছু হোক না কেন;
--শরীরের ওজন সীমিত রাখা;
-অতিরিক্ত এলকোহল রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং তা হৃৎপি-ের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। তাই এলকোহল থেকে দূরে থাকা;
-মানসিক চাপ এবং উদ্বেগমুক্ত থাকা।
ক্যান্সারঃ ফুসফুস, ত্বক, প্রোস্টেট, অন্ত্র ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্যান্সারে অকালমৃত্যু হয় বহু পুরুষের। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো বেশি কার্যকর।
-ধূমপান পরিহার করা;
-অতিরিক্ত ওজন কমানো;
-প্রচুর শাক-সব্জি এবং ফলমূল খাওয়া; শাক-সব্জি ও ফলমূল ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে;
-প্রখর সূর্যরশ্মি এড়িয়ে চলা এবং সৌরালোক থেকে সুরক্ষার জন্য ছাতা ব্যবহার করা।
ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধিঃ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, বিশেষ করে ক্রনিক ব্রংকাইটিস এবং পালমোনারি এমফাইসিমায় অনেক পুরুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এজন্য
-ধুলোবালি-ধোঁয়াযুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলা। এমন স্থানে বাস করতে হবে, যা রাস্তার ধুলোবালি থেকে মুক্ত;
-শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে হবে; ঘন ঘন শ্বাসনালীর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
দুর্ঘটনাজনিত স্বাস্থ্য সমস্যাঃ মোটর বা যানবাহন দুর্ঘটনা পুরুষদের মৃত্যুর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। তাই পথেঘাটে চলাফেরার সময় সতর্ক থাকতে হবে। যানবাহন ব্যবহারের সময় সিটবেল্ট বাঁধা এবং মাথায় হেলমেট পরা গুরুত্বপূর্ণ। মদ্যপান কিংবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় যানবাহন চালানো একদম উচিত নয়। তাছাড়া ড্রাইভিংয়ের সময় সেলফোনে কথা বলাও একদম অনুচিত।
মস্তিষ্কের পাঘাত বা স্ট্রোকঃ মস্তিষ্কের পক্ষাঘাতের অনেক ঝুঁকি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, জাতি ইত্যাদি। কিন্তু কিছু ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণযোগ্য। যেমন
-ক্রনিক রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা;
-অতিরিক্ত ধূমপান পক্ষাঘাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে;
-এলকোহল সেবন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, তাই মদ্যপান একেবারেই নিষিদ্ধ।
ডায়াবেটিসঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে হৃদরোগ, চোখের সমস্যা, স্নায়ুরোগ এবং আরো অনেক জটিলতা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অধিকাংশ পুরুষ তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। এজন্য যা করা উচিত
-নিয়মিত জীবনাচরণ মেনে চলা;
-স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা;
-নিয়মিত ব্যায়াম করা;
-অতিরিক্ত ওজন কমানো।
বিষণœতা ও আত্মহত্যাঃ সাধারণত বিষণœতা থেকে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা জাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে বিষণœতা দূর করার মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যঝুঁকি চিহ্নিত করা সহজ, কিন্তু প্রতিরোধের পদক্ষেপ নেয়া সহজ নয়। তবে সবক্ষেত্রে পুরুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল সূত্র একই; আর তা হচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা, ধূমপান পরিহার, মদ্যপান না করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
পুরুষ বাঁচবে নারীর সমান
পুরুষের চেয়ে নারী তুলনামূলক বেশিদিন বেঁচে থাকে এমনটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়। তবে এবার পুরুষের জন্য সুসংবাদ হলো, সামনে পুরুষের আয়ু নারীর চেয়ে কিছু বেশি বা অন্তত সমান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এতদিন গড়ে হরমোনজনিত কারণে পুরুষের চেয়ে নারী ৬ বছর বেশি আয়ুর অধিকারী ছিল। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে, দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রক্রিয়ায় নারীরা স্বাস্থ্য বিষয়ে কিছুটা অসচেতন হওয়ায় এবং পুরুষরা কিছুটা স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
গবেষকরা বলছেন, দিন দিন নারীদের মধ্যে মাদকে আসক্তির পরিমাণ বিশেষত ধূমপান ও মদ্যপান বেড়ে যাচ্ছে। এতে তাদের ফুসফুসের ক্যান্সার ও হৃদরোগ বাড়ছে; দেহে মেদ বেড়ে যাওয়ায় কমছে শারীরিক সামর্থ্য। পক্ষান্তরে পুরুষের মধ্যে বাড়ছে স্বাস্থ্য সচেতনতা। আর এর ফলেই তাদের আয়ু দিন দিন বাড়ছে। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসের জরিপের প্রেক্ষাপটে এ ধারণা করছেন গবেষকরা।
নারীদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেশি
সমাজের প্রচলিত ধারণায় পুরুষের তুলনায় নারীকে শারীরিকভাবে দুর্বল মনে করা হয়ে থাকে। কি গঠনে, কি শক্তিতে, এমনকি রোগবালাই মোকাবেলায়ও। কিন্তু নতুন এক গবেষণার ফল বলছে, রোগবালাই প্রতিরোধের ক্ষেত্রে নারীর দেহ পুরুষের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। আর নারীদেহে এ শক্তি আসলে বংশানুক্রমিকভাবে বয়ে চলে। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই সংক্রামক রোগ-ব্যাধি মোকাবেলা করার ক্ষমতা পেয়ে থাকে নারীরা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীরা দীর্ঘায়ু হয়।
বেলজিয়ামের গেন্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, জন্মগতভাবেই নারীদেহের গঠন প্রক্রিয়া পুরুষের তুলনায় আলাদা। নারীর জন্মের পেছনে রয়েছে এক্সএক্স ক্রোমোজম অর্থাৎ দু’টো এক্স ক্রোমোজমের সংযোগের ফলেই ঘটে নারী জন্ম। আর পুরুষের বেলায় এক্সওয়াই ক্রোমোজম অর্থাৎ একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজমের সংযোগের ফলে ঘটে পুরুষের জন্ম। দু’টো এক্স ক্রোমোজমের উপস্থিতি থাকায় নারীর দেহে অধিক মাত্রায় মাইক্রো আরএনএর উপস্থিতি থাকে, যা কিনা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়তা দেয়।
গবেষক দলের প্রধান ডাঃ ক্ল্যদে লিবার্ট বলেন স্তন্যপায়ী প্রাণিজগতে বিশেষত মানুষের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি আয়ুর অধিকারী হয় এবং রোগ বালাইয়ের সংক্রমণ, দেহের ক্ষতে পচনরোধ, ক্যান্সার কিংবা স্নায়ু রোগ মোকাবিলায় তারা অধিক পারঙ্গম। এক্স ক্রোমোজমের আধিক্যের কারণেই এটি সম্ভব হয়।
কোন্্ নারী দীর্ঘায়ু
যেসব মেয়ের দেরিতে শারীরিক পরিপক্কতা আসে অর্থাৎ যারা দেরিতে যৌবনবতী হয়, তারাই বেশিদিন বাঁচে। তেমনি যাদের তাড়াতাড়ি যৌবন শুরু হয়, তারা মারাও যায় তাড়াতাড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও মেইনে অবস্থিত জ্যাকসন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন আইজিএফ-১ নামের হরমোন দৈহিক বৃদ্ধি ও যৌবনের পূর্ণতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষক দলের প্রধান ড. রাঙ ইউয়ান বলেন নারীদের বেলায়ও নিম্নমাত্রার আইজিএফ-১ হরমোন থাকলে তাদের যৌবন দেরিতে আসে এবং তারা বেশিদিন বাঁচে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘায়ু নারী ছিলেন বেরি কপার। ১৮৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া কপারের বয়স ছিল ১১৬ বছর। কপারের ভাষায় সারাজীবনই আমি দামি ও মসলাযুক্ত খাবার বর্জন করেছি; খাবার-দাবারের বেলায় নিয়মের বাইরে আজও সামান্য ব্যত্যয় ঘটে না। হয়ত এ কারণেই মৃত্যু আমাকে স্পর্শ করতে সাহস পায় না!
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বয়স্ক নারী মৌলভীবাজারস্থ কমলগঞ্জের আকল বিবি। তার বর্তমান বয়স ১৩৫ বছরের বেশি। আকল বিবিকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়সি ব্যক্তি হিসেবেও গিনেস বুকে স্থান দেয়ার দাবি ঐ এলাকার বাসিন্দাদের।
নারীদের সবচেয়ে সুখের সময়
নারীর জীবনে সবচেয়ে সুখের সময় আসে ২৮ বছর বয়সে। তারুণ্যের আত্মবিশ্বাসে ভরপুর নারী এ সময় নিজের দেহসৌষ্ঠব নিয়েও থাকেন পরিতৃপ্ত। কিন্তু ৩০ বছরে পৌঁছানোর পর থেকে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে থাকে। বার্ধক্যের দুশ্চিন্তা তাকে ক্রমেই অবসাদগ্রস্ত করে ফেলে।
বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৪০ হাজার নারীর ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে কেশর রঞ্জন ব্লান্ড কাইরোল পারফেক্ট টেন। প্রতিষ্ঠানটির এক মুখপাত্র জানান, জীবনের কোনো না কোনো সময় পরিতৃপ্তি তুঙ্গে ওঠার একটা পর্যায় আসে। নারীর ক্ষেত্রে সময়টা আসে ২৮ থেকে ৩০ বছর বয়সে। এসময় তারা নিজেদের অবয়ব নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকায় কাজেও একাগ্রতা আসে।
নারীদের বিষণœতা ও স্বাস্থ্যহানি
পুরুষের চেয়ে নারীরা বিষণœতায় বেশি ভোগে। কয়েক দশক ধরেই নারীর বিষণœতায় ভোগার হার পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। এ হার বাড়ার পেছনে নারীদের বিষণœœতায় ভোগাই একমাত্র কারণ নয়, ঔষধ কোম্পানিগুলোও এর জন্য দায়ী বলে গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে।
ইউরোপিয়ান নিউরো সাইকোফার্মাকোলজি সাময়িকীতে বলা হয়েছে, আধুনিক জীবনের কারণে নারীরা অধিক বিষণœতায় ভোগে। আধুনিক নারীরা সংসার ও ক্যারিয়ারকে একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে এ সমস্যায় পড়ে। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে এন্টিডিপ্রেস্যান্ট জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করে থাকে।
আগের দিনে নারীদের কাজ করতে হতো বৈরী পরিবেশে; জেন্ডার বৈষম্য ছিল অনেক বেশি। তাই ঐ সময়ের নারীদের চেয়ে এখনকার নারীদের অধিক বিষণœতায় ভোগার প্রকৃত কোনো কারণ নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু কাউন্সেলিং বা কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির (সিবিটি) মাধ্যমেই বিষণœতার চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু তা না করে শুরুতেই ঔষধ প্রয়োগ করা হয়, যা নারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
নারীর ডায়াবেটিস
অলস জীবনযাত্রার সঙ্গে ডায়াবেটিসের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। এ বিষয়ক এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারী দিনে সাত ঘণ্টারও বেশি সময় শুয়ে-বসে কাটায় বা একটানা সাত থেকে আট ঘণ্টা বসে কাজ করে, তাদের ডায়াবেটিস টাইপ-২ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে পুরুষের ডায়াবেটিস হওয়ার সঙ্গে অলস জীবনযাপনের যোগসূত্র খুব কম।
যুক্তরাজ্যের লাইসেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার ও বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি ৫০৫ জন নারী ও পুরুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, যেসব নারী দিনে ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় বসে থাকে বা শুয়ে-বসে কাটায় তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি একই ধরনের জীবন যাপনকারী পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি। গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যেসব নারী প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৭ ঘণ্টা এবং যেসব পুরুষ দিনে গড়ে ৪ থেকে ৮ ঘণ্টা টিভি দেখে, কম্পিউটারে গেম খেলে, কিংবা কোনো প্রকার শারীরিক পরিশ্রম না করে সময় কাটায়, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি।
নারীর ডায়াবেটিস ঝুঁকি কমে আখরোটে
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয় বাদাম জাতীয় ফল আখরোট। সপ্তাহে দুই বা তিনবার আখরোট খেলে নারীদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে অন্তত চার ভাগের এক ভাগ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ স্কুলের গবেষকরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসাপাতালে কর্মরত ৩৫ থেকে ৭৭ বছর বয়সি ১ লাখ ৪০ হাজার নার্সের ওপর জরিপ চালান গবেষকরা। প্রায় ১০ বছর ধরে তাদের খাদ্যাভ্যাসের ওপর খুব ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখা হয়। তারা কতটা বাদাম জাতীয় খাবার বিশেষ করে আখরোট খান, তা হিসাব রাখা হয়। গবেষণায় দেখা যায় যেসব নারী সপ্তাহে অন্তত দুইবার ২৮ গ্রাম করে আখরোট খেয়েছেন, তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ২৪ শতাংশ কম।
গবেষকরা আরও পর্যবেক্ষণ করেন মাসে যারা এক থেকে তিনবার আখরোট খেয়েছেন, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমেছে ৪ শতাংশ। যারা সপ্তাহে একবার খেয়েছেন, তাদের কমেছে ১৩ শতাংশ এবং যারা সপ্তাহে দুইবার বা তার বেশি খেয়েছেন, তাদের ঝুঁকি কমেছে ২৪ শতাংশ।
পূর্বের এক গবেষণায় আখরোটে ডায়াবেটিস প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে বলে জেনেছিলেন গবেষকরা। বর্তমান গবেষণায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন সেই প্রতিরোধী ক্ষমতা কতটা। এবার তারা ধারণা করছেন শুধু নারী নয়, পুরুষের বেলায়ও একই সাফল্য পাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিসে কান খাটো
ডায়াবেটিসের কারণে নারীদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের হেনরি ফোর্ড হাসপাতালের এক গবেষণায় জানা গেছে, ৬০ থেকে ৭৫ বছর বয়সি ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের ভেতর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকাদের শ্রবণশক্তি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই এমন নারীর তুলনায় বেশ ভালো। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রয়েছে তাদের শ্রবণশক্তি একই বয়সের অন্য নারী যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের মতোই এক। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স কোনো বড় বিষয় নয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষদের শ্রবণশক্তি যেকোনো বয়সেই নারীদের চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থায় থাকে।
গবেষকরা বলছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে আসার ব্যাপারটি স্বাভাবিক। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে এতে বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
হ্যালি বেরি
যার সৌভাগ্যের চালক ডায়াবেটিস
বিশ্বের বেশিরভাগ সিনেমা পাগল মানুষই হলিউডের নামকরা অভিনেত্রী হ্যালি বেরিকে চেনে তার প্রতিভার প্রাচুর্য, নিখুঁত ও অপরূপ সৌন্দর্য এবং অস্কার পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই হ্যালি একজন রোগী, যাকে প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয়। ছোটবেলাতেই হ্যালির টাইপ-১ ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তারপর থেকেই হ্যালি অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যান। হ্যালি কখনই ডায়াবেটিসকে চলার পথে বাধা মনে করেননি। সত্যি বলতে কি হ্যালি মনে করেন, ডায়াবেটিসই তার সাফল্যের পেছনে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
একবার হলরুম ভর্তি বিখ্যাত সব মানুষের সামনে হ্যালি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলেছিলেন ১০ বছর বয়সে আমার শিক্ষক আমাকে বললেন, আমি একটি উপহার পেতে যাচ্ছি, যার নাম ডায়াবেটিস; এটি সারাজীবন আমাকে প্রচন্ড শক্তি আর দৃঢ়তা দেবে।
এভাবেই হ্যালি বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিকদের আশা ও উৎসাহ জোগান। বোঝান ডায়াবেটিস হলে ভেঙে পড়ার কিছু নেই, একে গ্রহণ করতে হবে শান্তভাবে; মোকাবিলা করতে হবে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার অনুশীলন করে।
আমেরিকার বিখ্যাত পিপল ম্যাগাজিনের জরিপে সারা পৃথিবীর ৫০ জন সুন্দরীর নামের তালিকায় ৭ বার নাম এসেছে হ্যালি বেরি’র। তিনি আমেরিকান কিশোরীদের সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ‘মিস টিন’ খেতাব পেয়েছেন। রানার্সআপ হয়েছেন মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতায়। অভিনয় করেছেন জেমস বন্ডসহ ১০টিরও বেশি হলিউডের বিশ্বখ্যাত সিনেমায়। হ্যালি বলেন, ডায়াবেটিস না থাকলে অস্কার জয় করার মতো স্ট্যামিনা বা প্রাণশক্তি আমার থাকত কিনা সন্দেহ।
ডায়াবেটিস জয় করতে বেরি ৩টি উপায়ের ওপর জের দেন। ডায়েট বা পরিমিত খাবার, প্রয়োজনীয় ব্যায়াম এবং লেগে থাকা। ডায়েটের ক্ষেত্রে তার যে দুর্বলতা নেই তা নয়; মাখনের আইসক্রিম আর লবণ মাখা পটেটো চিপস ছিল তার প্রিয় খাবার, কিন্তু এখন তিনি ওসব খান খুবই অল্প পরিমাণে। ‘আমি প্রচুর পরিমাণে তাজা শাক-সব্জি খাই। আর খাই মুরগির মাংস ও মাছ; আমার খাদ্য-তালিকা থেকে লাল মাংস আর অতি মিষ্টি ফল কেটে দিয়েছি; কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে’ জানান হ্যালি বেরি। প্রতিদিন ৬০ থেকে ৯০ মিনিট ব্যায়াম করেন তিনি। কখনো ব্যায়ামের মেশিনে, কখনো ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ।
ডায়াবেটিসের ন্যায় একটি সারাজীবনের রোগকে সৌভাগ্যের চালক হিসেবে গ্রহণ করে হ্যালি বেরি জীবনের সব বাধা টপকে পৌঁছে গেছেন সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায়।
চলবে।