শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারি বিধায় আজকের শিশুর প্রতিভা বিকাশের ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি যা নিশ্চিত করা সম্ভব অভিভাবকের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার মাধ্যমে। অভিভাবকের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও কৌশল যদি যথার্থ হয় তাহলে শিশুকে তারা যেভাবে গড়ে তুলতে চান, অবশ্যই সেভাবে বেড়ে উঠবে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন শিশুটি তথা দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি।
বর্তমানে কিশোর-তরুণদের মধ্যে সেলফোন বা স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতিতে অধিক আসক্তি লক্ষণীয়। অথচ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসবে আসক্তি মস্তিষ্কের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাদের মতে, ইন্টারনেট বিশেষত ফেসবুকের অধিক ব্যবহার মানুষের মস্তিষ্কের গঠন বদলে দেয় এবং স্বল্পমেয়াদে ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর মানসিক প্রভাব ফেলে।
পার্সোনাল ফোন, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, নোটবুক, ট্যাব ইত্যাকার গতিশীল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি শিশু-কিশোরদের জন্য যেমনি শিক্ষণীয় হতে পারে তেমনি তার ধ্বংসও ডেকে আনতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে ভালো-মন্দ বোঝার মতো তার বয়স ও বুদ্ধির বিষয়টি অভিভাবকদের বিবেচনা করা বাঞ্ছনীয়। কারণ এসবের নেশায় একবার পড়ে গেলে সন্তানের মস্তিষ্কের ব্যালেন্স বা সুস্থতা ফিরে পাওয়া দুরূহ। যেমন বেশিক্ষণ টেলিভিশন দেখলে এবং কম্পিউটার বা মোবাইলে গেম খেললে বাচ্চারা অলস হতে পারে এবং তাদের সৃজনশীলতা লোপ পেতে পারে। তাছাড়া সাধারণ ভিডিও গেমের বদলে এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছে অনলাইন গেম। অনলাইনে মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণের ফসলই হচ্ছে আজকের এই ‘ব্লু হোয়েল’ গেম। অবাক করার মতো বিষয় হলেও এটাই সত্য যে, গেম খেলতে খেলতে একসময় আত্মহত্যা করতেও হৃদয় কাঁপছে না তাদের। সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ‘ব্লু হোয়েল’ গেম সম্পর্কে আমাদের সবারই জানা। কম্পিউটার ও ইন্টারনেটভিত্তিক এক ধরনের গেম এটি। এই মরণখেলার নেশায় পড়ে আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে বাংলাদেশে।
Seniors are followed by the Juniors. একথা যদি স্বতঃসিদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে পরিবারে-সমাজে বা জাতিতে কিশোর-তরুণদের বর্তমান অবক্ষয় কিংবা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ইভটিজিং বা অনুরূপ নিগেটিভ ভূমিকার জন্য তারা যতটা না দায়ী, তার চেয়ে কম দায়ী নই আমরা অভিভাবকরা।
বিভিন্ন পরিবারে বাবা-মা ও সন্তানদের পর্যবেক্ষণ করে আমি বুঝতে পেরেছি বিত্তের প্রতি অভিভাবকের উন্মত্ত আসক্তি এবং বিত্তের কাছে সব নৈতিকতার পরাজয় তার সন্তানদের মাঝে জাগিয়েছে লোভের আগুন। বিত্ত অর্জনে মরিয়া হয়ে উঠেছি আমরা। নীতি-আদর্শ-বিবেক কোনো কিছুর স্থান নেই এ অন্ধ নেশার কাছে। সেসাথে অভিভাবকের অনৈতিক কিংবা নৈতিক অঢেল উপার্জনে গড়ে তোলা হচ্ছে সন্তানদের; তাদের পেছনে ঢালছে অঢেল টাকা, টেনে নিচ্ছে নিজেরই অনৈতিক ধ্যান-ধারণার পথে, হার মানছে সন্তানদের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে, নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছে অন্যায়-আবদার। এভাবে আমরাই নিজ সন্তানদেরকে খাইয়ে চলছি বিষ-বটিকা।
লক্ষ্যহীণ এক সর্বনাশী প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছি আমরা। কি আত্মীয়, কি বন্ধু, কি স্বজন; সবার সঙ্গেই আমাদের অঘোষিত যুদ্ধ, নিত্য প্রতিযোগিতা, সমানে সমান হতে হবে; অর্জন করতে হবে লেটেস্ট মডেলের গাড়ি, ফ্যাশনের বাড়ি। আর এই প্রতিযোগিতার যুদ্ধংদেহী ডামাডোলে জড়িয়ে পড়েছে আমাদের শিশুরাও। তারা জানে না একসঙ্গে হেঁটে স্কুলে যাওয়ার কী আনন্দ, মাঠে খেলার আনন্দতো উবেই গেছে কবে। সহপাঠী-বন্ধুর সঙ্গে পারস্পরিক ভাগাভাগির যে সম্পর্ক, তাও তারা জানে না। একজনের সঙ্গে অন্যজনের বইয়ের আদান-প্রদান নেই, নেই ভালো লেখা বা নোটের দেয়া-নেয়া; সুখ-দুঃখের ভাগাভাগি তারা জানে না। অভিভাবকরাও বাচ্চাদের এ ধরনের আদান-প্রদানে নিরুৎসাহিত করেন। ‘শুধু আমার সন্তান শ্রেষ্ঠ হোক’ এরূপ আত্মকেন্দ্রিক বা ক্ষুদ্র চিন্তায় সংকীর্ণ করে ফেলেছি আমাদের সমষ্টিগত বিশাল স্বার্থকে। ফলে স্বার্থপরতা, হীনম্মন্যতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষালাভ করছে আমাদের সন্তানরা। তাই কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মাথায় লেখাপড়ার বিষয় কিঞ্চিৎ খেলা করলেও কল্যাণকর জ্ঞানের বিষয় কাজ করে না মোটেও। সৃজনশীল বিষয় নিয়ে কথা বলে না তারা সহপাঠীর সাথে, এমনকি পিতা-মাতার সাথেও। পাঠের ভালো নোট তৈরির চেয়ে চকচকে ও নজরকাড়া লেটেস্ট ফোনসেট-ট্যাব-ল্যাপটপ এবং কড়কড়ে টাকার নোটের গন্ধ তাদের বেশি প্রিয়; নিজ মস্তিষ্ক (Necktop) উন্নতির খেয়াল নেই, অথচ সারাক্ষণ এসব যন্ত্রে নিজ জীবন-যৌবন নিঃশেষ করে চলেছে। ফলে আমাদের সন্তানের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত আচরণ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্র্রযুক্তির কিংবদন্তী স্টিভ জবস ও বিল গেটস নিজ সন্তানদের প্রযুক্তি ব্যবহারে ছিলেন রক্ষণশীল
প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তি পণ্য মানুষের মাঝে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে বিশ্বে কিংবদন্তী হয়ে আছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। সারা বিশ্বের মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য ছড়িয়ে দিলেও নিজের পরিবারের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ছিল একেবারেই উল্টো। উঠতি বয়সে তাদের সন্তানরা যেন খুব বেশি প্রযুক্তির সংস্পর্শে আসতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন প্রযুক্তি বিশ্বের এই দুই দিকপাল।
বিল গেটস শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাতে সবসময়ই কাজ করেছেন। একবার তিনি দেখলেন তার মেয়ে জেনিফার ক্যাথেরিন কম্পিউটারে বেশ আসক্ত হয়ে পড়েছে। কম্পিউটার ঘেঁটে দেখা গেল, তাতে বেশ কিছু গেম রয়েছে, যার পেছনে জেনিফার কাটিয়ে দিচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর মধ্যে ভিভা পিনাটা নামের একটি গেম খেলেই সে কাটিয়ে দিতো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।
এমন পরিস্থিতিতে মেয়ের কম্পিউটার ব্যবহার দিনে ৪৫ মিনিটে নামিয়ে আনলেন গেটস ও তার স্ত্রী। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ১৪ বছর বয়সের আগে সন্তানদের মোবাইল ফোন ব্যবহারেও ছিল বিল গেটসের নিষেধাজ্ঞা। যদিও তাতে সন্তানদের ছিল ঘোর আপত্তি।
এক সাক্ষাতকারে বিল গেটস বলেন আমরা প্রায়ই তাদের একটি সময় বেধে দিতাম, যে সময়ের পরে এ জাতীয় সব ডিভাইস বন্ধ করে ফেলতে হবে। এর ফলে তারা সময়মতো ঘুমাতো এবং তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হতো।
স্টিভ জবসও তার সন্তানদের প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে একেবারেই দূরে রেখেছিলেন। ২০১১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার সন্তানদের জন্য আইপ্যাড ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল। শুধু তাই নয়, অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহারও ছিল অনেক সীমিত। এর পরিবর্তে তিনি তাদের নিয়মিত সময় দিতেন। একসাথে রাতের খাবার খেতেন এবং প্রযুক্তির বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতেন।
শুধু বিল গেটস বা স্টিভ জবসই নন, সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নামকরা সব ব্যক্তিদের মাঝেই এই প্রবণতা দেখা যায়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর দু’মেয়ে মালিয়া ও সাশাকে ফেসবুক ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন বলে পত্রিকান্তরে জানা গেছে।
এসব উদারপ্রাণ মহান বিজ্ঞানীদের কেন এরূপ রক্ষণশীলতা?
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য যারা সারাজীবন কাজ করলেন, তারা নিজেদের সন্তানদের কেন প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখছেন। এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে শিক্ষাবিদ জো ক্লিমেন্ট এবং ম্যাট মাইলসের লেখা ‘Screen Schooled: Two Veteran Teachers Expose How Technology Overuse Is Making Our Kids Dumber’ বইতে।
বইটিতে বলা হয়, সিলিকন ভ্যালির ধনকুবেররা বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের আসক্তির ভয়াবহতা সাধারণ মানুষের তুলনায় একটু বেশিই অনুধাবন করতে পারেন। আর তাই নিজেদের সন্তানদের আসক্তি থেকে দূরে রেখে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা বিকাশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তারা।
যদিও বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার অংশ হিসেবেই প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, সেখানে এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বনিম্ন। এমনই একটি স্কুল হলো ওয়ালডর্ফ স্কুল। এ স্কুলের ক্লাসরুমে চক ও ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করা হয়। লেখার জন্য এখানে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে পেন্সিল। কোডিং শেখানোর পরিবর্তে তাদের শেখানো হয় কীভাবে অন্যকে সম্মান করতে হয় এবং সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করতে হয়।
এমন আরও একটি স্কুল হলো ব্রাইট ওয়ার্কস স্কুল। এখানে শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশে হাতে কলমে বিভিন্ন কিছু বানানো শেখায় শিক্ষকরা। দেয়াল ঘেরা ক্লাসরুমের পরিবর্তে তাদের ক্লাস হয় ট্রি-হাউজে।
মজার বিষয় হলো, এসব স্কুলে নিজেদের সন্তানদের ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে ক্রমেই আগ্রহী হচ্ছেন সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা।
প্রযুক্তিঃ কত ভয়ঙ্কর অভিশাপ!
শিশু-কিশোরদের মাঝে প্রযুক্তির অত্যধিক ব্যবহার প্রবণতা কতটা ক্ষতিকর, তা নিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে গবেষণা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অষ্টম গ্রেডে পড়–য়া যেসব টিনএজার অতিমাত্রায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তাদের মধ্যে হতাশা বাড়তে থাকে এবং অন্য সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি হতাশ থাকে তারা।
এছাড়া যেসব শিশু-কিশোর দিনে ৩ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের জন্য বিষয়টি ভয়ংকর রকমের ক্ষতির কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার টিনএজারদের আত্মহত্যার পরিমাণ অন্যান্য হত্যাকান্ডকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর এর মূল কারণ হিসেবে স্মার্ট ফোনকেই দায়ী করছেন মনোবিজ্ঞানীরা।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে নিবিষ্টতা ও সার্বক্ষণিক ব্যবহার কীরূপ ক্ষতিকর তা একনজর দেখে নেয়া যাক। তার আগে বলে রাখছি যে, এসবই কিন্তু আমার ব্যক্তিগত মতামত।
মোবাইল ফোনঃ স্বাস্থ্যনাশক বোমা; মস্তিষ্কে টিউমার ও ক্যান্সারের কারণ
মাত্র ২৫ পয়সায় কথা বলুন সারারাত; কথা বলতেই থাকুন; কথা বলার উৎসবে মেতে উঠুন এরূপ লোভনীয় বা নেশাযুক্ত বিজ্ঞাপন-চমকে বিশ্বাসী ও নির্ভরশীল হয়ে বহু মানুষ বিশেষত তরুণ প্রজন্ম বখে যাচ্ছে। ছেলেতে-মেয়েতে এক অসুস্থ সম্পর্ক তৈরি হয়ে তরুণ-তরুণীরা দিশেহারা ও সর্বহারা হয়ে পড়ছে। বাবা-মায়ের কোনো সেলফোন থাকুক বা না থাকুক একজন সন্তানের হাতে একাধিক ফোন; বিভিন্ন পকেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনসেট এবং ব্যাগে ব্যাগে বিভিন্ন অপারেটরের নানা সিমকার্ড নিয়ে ঘুরে ঘুরে এখন তারা হয়ে পড়ছে ভবঘুরে। সেলফোন ও সিমকার্ডের এ অসুস্থ নেশা থেকে তরুণ প্রজন্মকে উদ্ধারের এমনকি সচেতন-সতর্ক করার কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সেলফোন ব্যবসা করে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এদেশ থেকে বছরে কত টাকা যে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে, সেই হিসাব সরকার এবং অর্থ-কড়ি নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছেই থাকার কথা। আমি কেবল ভাবছি দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের বিভ্রান্তি ও পাগলামির পরিণাম-ফল নিয়ে।
সেলফোন কোম্পানির ‘Be Connected’ বিজ্ঞাপন-আহ্বানে সাড়া দিয়ে তথা আফিমরূপী নেশার ঘোরে পড়ে নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে Disconnected হয়ে পড়ছে এদেশের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা। এতে পারস্পরিক অস্বাভাবিক ও অনৈতিক সম্পর্কের ভয়াবহতার পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যহানির ভয়াবহতাও কম নয়। ‘সারাদিন-সারারাত’ মোবাইল ফোনে কথা বলার পরিণামের বিষয়ে আমার উক্ত মতামতের সাথে যারা দ্বিমত করবেন, তাদের সাথে বিতর্কে না গিয়ে মোবাইল ফোনে অত্যধিক কথা বলায় স্বাস্থ্যহানিও যে অনিবার্য, সে প্রসঙ্গেই শুধু থাকি। ...এবং তা কিন্তু আমার নিজের কথা নয়, এমনকি ভবের হাটের কথাও নয়; খোদ যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা-ফলের কথা।
স্বাস্থ্যের ওপর মোবাইল ফোনের প্রভাব নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। অনেক গবেষণায়ই বেরিয়ে এসেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারে শরীরের ওপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবের কথা।
বিজ্ঞানীরা মোবাইল ফোনকে তুলনা করেছেন টাইম বোমার সঙ্গে। তাদের ভাষায়, মোবাইল ফোন হলো ‘হেলথ টাইম বোমা’ বা ‘স্বাস্থ্যনাশক সময় নিয়ন্ত্রিত বোমা’। বিজ্ঞানীরা তাই প্রযুক্তির এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০টি গবেষণায় মোবাইল ফোনকে মস্তিষ্কের টিউমার ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অন্যদিকে ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মোবাইল ফোনের ব্যবহার মানুষের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।
ডেইলি মেইলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মোবাইল ফোনের কারণে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশুরা। বিজ্ঞানীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সরকারগুলো এই ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সিগারেটের মোড়কে যেমন স্বাস্থ্য সমস্যার কথা লেখা থাকে, ঠিক তেমনি মোবাইল ফোনের গায়ে কিংবা দোকানে ‘মোবাইল ফোন ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ এ ধরনের সেøাগান লেখা উচিত।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে যুক্তরাজ্য সরকার এরই মধ্যে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বলছেন, মানব ভ্রƒণের ওপর মোবাইল ফোনের তরঙ্গের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে; গর্ভাবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপারেও তাই সীমা বেঁধে দেয়া উচিত।
ফোনের অপেক্ষায় কীরূপ স্বাস্থ্যহানি!
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা এত সহজ যে, চাইলেই কাক্সিক্ষত মানুষের সাথে সংযোগ ঘটে যায়। আর এই যোগাযোগের কাজটি দ্রুত করে মোবাইল ফোন। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে যদি ফোনে কারও জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৬ মিনিটের বেশি, তাহলেই ঘটে যত বিপত্তি।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানান ফোনে কারুর জন্য অপেক্ষমাণ মানুষটি এমন এক পরিস্থিতিতে পড়ে, যা তার স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ফোন করতে গিয়ে যদি কারুর ফোন লাইন পেতে অথবা কারুর ফোনের জন্যে ৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের বেশি অপেক্ষা করতে হয়, তবে অপেক্ষমাণ ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। গবেষকরা জানান জরুরি ফোন করতে গিয়ে যখন এভাবে অপেক্ষা করতে হয়, তখন সৃষ্ট বিরক্তি তার স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বিলম্বের কারণে উদ্রেক হয় হতাশা আর অস্থিরতা। ফলে দেহে রক্তের চাপ অনেক বেড়ে যায়, শুরু হয় স্বাস্থ্যগত নানা বিপত্তি।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রজার হেন্ডারসন বলেন এমন পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকারীর হার্টবিট বাড়তে থাকে, কারুর শরীরে ঘাম ঝরে ও প্রচ- মাথাব্যথা হয়। তিনি বলেন এ অবস্থা চলতে থাকলে স্বাস্থ্যের অবস্থা এতই খারাপের দিকে যাবে যে, অদূর ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী কোনো মারাত্মক রোগের কবলেও পড়তে পারে। বিশেষ করে মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা এবং পাকস্থলীর সমস্যাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এসএমএস মস্তিষ্ক সংকোচন করে এবং পড়া ভোলায়
শর্ট টেক্সট মেসেজ বা খুদে বার্তা, প্রচলিত শব্দে এসএমএস যেভাবেই বলা হোক না কেন, আমাদের জীবনে এখন এ বিষয়টির গুরুত্ব বা ভূমিকা মোটেই খুদে নয়। মোবাইল ফোনের টেক্সট মেসেজে সামান্য কথায় অনেক সময় অনেক জরুরি কাজই সেরে ফেলা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর অতিরিক্ত ব্যবহারের পরিণাম মোটেই ভালো নয়। এটি মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ক্ষতির ফলে বই বা এমন কিছু পড়ার কাজটি কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোন বা এ ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে টেক্সট মেসেজ লিখতে সাধারণ ও প্রচলিত অনেক শব্দের সংক্ষিপ্ত এবং কখনো কখনো বিকৃত রূপ ব্যবহার করা হয়। মৌখিক ভাষা না হওয়ায় সহজে লেখা যায়, এমন অল্প কয়েকটি শব্দ ও কথাই খুব বেশি ব্যবহার করা হয়। ফলে সীমিত পরিসরের এ ভাষার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে গিয়ে এসব মেসেজ লিখতে ও পড়তে যারা খুব বেশি অভ্যস্ত, তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়া অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়ে। গবেষকরা বলছেন, এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পড়ার বেলায় জটিলতার সম্মুখীন হতে দেখা গেছে। কোনো কিছু পড়তে দিলে সেখানে নতুন নতুন শব্দ চিনতে পারা বা গ্রহণ করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়ে।
গবেষকরা বলছেন, টেক্সট মেসেজ জরুরি একটি বিষয়। তবে খেয়াল রাখা দরকার, সেটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা। সচেতন না হলে উপকারী এ বিষয়টি অন্য অনেক ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ফেসবুকে মস্তিষ্কের ক্ষতি
সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম ওয়েবসাইট বলে প্রচলিত ফেসবুকে অধিক আসক্তি মানব-মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন ইন্টারনেট, বিশেষত ফেসবুকের অধিক ব্যবহার মস্তিষ্কের গঠন বদলে দেয় এবং ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এর বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েব সাইটগুলোতে বিশেষত ফেসবুকে যাদের বন্ধুসংখ্যা বেশি, তাদের মস্তিষ্কের ভেতর গ্রে-ম্যাটারের ঘনত্ব বেড়ে যায়। এতে মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন হয়ে যায়। বিজ্ঞানীরা জানান, থ্রি-ডি ব্রেন স্ক্যানার দিয়ে স্বাস্থ্যবান ১২৫ জন কলেজ ছাত্রের মস্তিষ্ক স্ক্যান করা হয়। এতে দেখা যায় যাদের ফেসবুক-বন্ধু বাস্তবের বন্ধুর তুলনায় বেশি, তাদের মস্তিষ্কের গ্রে-ম্যাটার অংশের গঠন বদলে গেছে।
গবেষণায় বলা হয় ফেসবুকের বন্ধুদের নাম, ছবি ও ছবির নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক দখল করে থাকে স্মৃতি হিসেবে। আর ফেসবুক-বন্ধুর সংখ্যা বেশি হলে তারা মস্তিষ্কের বেশি অংশ জুড়ে থাকে। গবেষক দলের প্রধান জেরেইন্ড রেইস বলেন এ গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইন্টারনেটে সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো মস্তিষ্কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
মোবাইল ফোন, এসএমএস, ফেসবুক, চ্যাটিং প্রভৃতির যান্ত্রিকতায় আবিষ্ট হয়ে গেছে মানব জীবন। তাই দেখা যায়, প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী সশরীরে একত্রে থাকলেও মনোরাজ্যে একের ভুবনে নেই অন্যজন। পাশাপাশি বসে থাকা প্রেমিক যুগলের দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা পরস্পরের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে দু’জনেই ব্যস্ত নিজ নিজ ফোনের স্ক্রীনে, হয়ত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিচ্ছে কিংবা এসএমএস করছে। কিংবা আপনভূমে পরবাসী হয়ে অন্য কারুর সাথে...।
শেষ কথা
স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, মরণঘাতী গেম, ফেসবুক এসবের ওপর সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ বা Concentration হতে দেখে সুবোধ বালকটি ও ছোট্ট বালিকাটিও এখন এগুলোতে মনোযোগী হয়ে উঠছে, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার নামে কচি প্রাণের আত্মাহুতি দিচ্ছে ব্লু হোয়েল নামক সর্বনাশা ফাঁদে।
ক্লাসে যে অর্ধেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে, কেবল তাদের নিয়ে শিক্ষক-অভিভাবকদের হা-পিত্তেশ, মাতামাতি ও মনোযোগ দেখে ক্লাসে উপস্থিতরাও ক্রমান্বয়ে অনুপস্থিতির খাতায় নাম লেখাতে থাকবে এটি কিশোর মনস্তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য। গ্লাসের যে অর্ধেক অংশ খালি, সেদিকে কম তাকিয়ে যে অর্ধেকে পানি আছে, সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলে তাতে খালি অংশ ভরাটের সুযোগ তৈরি হয় এ Common Psychology এবং Power of Positive Thinking বিদ্যার কথা আমরা সবাই ভুলে বসলে কি চলবে? অনলাইন গেম, ফেসবুক কি নিগেটিভ না পজিটিভ জিনিস, কোমল ও সুবোধ প্রাণগুলো তা না বুঝেই একে গ্রহণ করছে Popular Idea হিসেবে; এ Idea সংক্রমণের জন্য আমাদের Strategy-ই দায়ী নয় কি? এ যেন ‘পাগলা, সাঁকো নাড়িস না’ প্রবাদের ন্যায়।
গ্লাসের খালি অংশ পছন্দ না করলে তা যেমন পানি দিয়ে ভরতে হয়, তেমনি সকল কুকর্ম ও কুচিন্তা দূর করতে হলে কিশোর-তরুণদের মাঝে ভালো কথা-চিন্তা-কর্মের সন্নিবেশ ঘটাতে হবে। তাহলেই কেবল এসব সামাজিক ব্যাধি দূর করা সম্ভব। বড়দের Mis-strategy ও Mis-handling এর কারণেই কিন্তু যুব-অবক্ষয় বৃদ্ধি পেতে পারে।
তাই এসব নিগেটিভ বিষয়কে স্লোগানে-বক্তৃতায় বা প্রচার-প্রপাগান্ডায় না এনে তৎপরিবর্তে পারিবারিক ভালোবাসা আন্দোলনে এবং প্রগতিশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও জাগ্রত করলেই এক্ষেত্রে দ্রুত সুফল মিলত বলে আমার বিশ্বাস। আমার প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস’র শিক্ষানবিশ কার্যক্রম এবং ‘প্রোএকটিভ এন্ড পজিটিভ এটিচিউড’ এর ওপর নিয়মিত সেমিনার পরিচালনা করে অনুরূপ সুফল সম্পর্কে আমি নিশ্চিত হয়েছি।
সেরা বিজ্ঞানীগণের উচ্চারিত ‘যন্ত্রদানবের মোহ’; এটি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান-অভিজ্ঞতায়ও এক নিদারুণ ট্রাজেডি। কারণ এসব যন্ত্রদানবের মোহে পড়ে পারিবারিক জীবনে কোনো কোনো স্পাউজকেও দানব হয়ে উঠতে দেখেছি এবং ধ্বংসম্মুখ করতে দেখেছি নিজ সন্তানদের। এরূপ ক্ষেত্রেও গঠনমূলক জীবনাচারে বিশ্বাসী অসহায় অভিভাবকগণের প্রতি আমার পরামর্শ বিচলিত না হয়ে ধৈর্য ও পজিটিভ এটিচিউডে বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। এ বিষয়েও আমি লিখেছি ‘পরিবার ভাঙ্গন-বিশৃঙ্খলার দায় ॥ সন্তানের বেড়ে ওঠার বয়সে বাবা ও মা এর ভালোবাসার তারতম্য’ শীর্ষক আর্টিকেল; যা ক্যাম্পাস পত্রিকার মার্চ (২য়) ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে http://helal.net.bd/bangla/special_col_details.php? Special_ID=51.
মুরগির খাঁচার ন্যায় রিক্সা ভ্যানে বা কাভার্ড ভ্যানে ভরে শিশুকে স্কুলে নেয়া-আনা করালে সে শিশুর কাছ থেকে Chicken Heart ছাড়া উদার বা বড় কিছু আশা করা যায় না। তাই শিশু-মেধার বিকাশ ও লালনকে রাস্তার যানজটে আটকে রেখে, শিশুকে গাড়ির ধোঁয়া ও ধুলিবালি খাইয়ে যে শিশুস্বাস্থ্য ও শিশুমেধা বিনষ্ট করা হচ্ছে এবং জাতির সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, তা রক্ষার্থে এখনই প্রয়োজন এলাকাভিত্তিক স্কুলিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন।
১৯৯৯ সালে ক্যাম্পাস’র প্রণীত এলাকাভিত্তিক স্কুলিং মডেল এখনই বাস্তবায়ন করলে এটি শিশু-কিশোরদের আত্মোন্নয়ন ও মানোন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদে নিশ্চিত ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি দুর্বিষহ যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে, জ্বালানি তেল আমদানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অপচয় রোধ হবে; বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে; অভিভাবকের শ্রম-সময় টেনশন-হয়রানি হ্রাস পাবে; স্কুলে ভর্তি-দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে; কোচিং-বাণিজ্য ও শিক্ষা-ব্যবসার অবসান হবে; শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক ও মৌলিক মানোন্নয়ন ঘটবে; ড্রপআউট-টিজিং ও মাদকসহ কিশোর অপরাধ হ্রাস পাবে; শিশু-কিশোরদের মধ্যে শৃঙ্খলা- দেশপ্রেম-মূল্যবোধ-টিমস্পিরিট-শেয়ারিং-কেয়ারিং-স্মার্টনেস ইত্যাকার শিক্ষালাভ হবে; শিশুর জন্ম ও ক্রমবৃদ্ধির সঠিক ও যথাযথ পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে; নকলমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত-জঙ্গিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন তৈরি হবে; সর্বোপরি মেধাবী-প্রতিভাবান-আলোকিত জাতি এবং জ্ঞানভিত্তিক-ন্যায়ভিত্তিক-শ্রেণিবৈষম্যহীন-কল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে।
এতো গেল আগামীর কিশোর-তরুণদেরকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। আর যারা বর্তমানে কিশোর-তরুণ-যুবক, তাদেরকে অবক্ষয় থেকে রক্ষায় কী করণীয়?
বর্তমানের কিশোর-তরুণ-যুব সমাজকে নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক চিন্তা থেকে ফিরিয়ে পজিটিভ এন্ড কনস্ট্রাকটিভ এটিচিউডে নিবিষ্ট করে তাদের সামগ্রিক আত্মোন্নয়ন ও মানোন্নয়নে এখনই জরুরি প্রয়োজন মফস্বলের প্রতি ইউনিয়নে এবং শহরের প্রতি ওয়ার্ডে পাবলিক ট্রেনিং এন্ড মোটিভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা; যে সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছি ‘বাংলাদেশের সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধান’ মডেলে (www.helal.net.bd/model)।
সরকার কর্তৃক প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এরূপ প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে তাতে কিশোর-তরুণসহ আপামর সাধারণ নাগরিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য-সুরক্ষা, আত্মোন্নয়ন ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মধ্যে দেশপ্রেম, ঐক্যবদ্ধতা, নীতি-নৈতিকতাসহ বিভিন্ন মানবিক গুণাবলি অর্জনের প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন সার্ভিস বিনামূল্যে দেয়া উচিত। অর্থাৎ জীবনকে যাপনযোগ্য করার যাবতীয় প্রোগামিং তথা Human Wiring এর পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য-ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নিয়মিত নিবিড় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে।
এভাবেই অপরাধ করার মানসিকতাকে নিষ্ক্রিয় ও সমূলে উৎপাটন করে এমনকি আত্মঘাতী মানসিকতাকে সংশোধন ও সংস্কার করে দিয়ে আমাদেরকে ফিরে আসতে হবে সৌন্দর্যের কাছে, মানবিক মূল্যবোধের কাছে। বর্তমান ও আগামীর কিশোর-তরুণ সমাজকে দিতে হবে অনন্ত সৌন্দর্যময় জগতের সন্ধান; দেখাতে হবে সৃজনশীল আনন্দের জগৎ; নিয়ে যেতে হবে দেশ গড়ার উৎপাদনশীল আনন্দালোকে; শেখাতে হবে দেশপ্রেম, মানবতা ও ভালোবাসার মাধুর্য। তবেই তারা জ্বলে উঠবে আপন শক্তিতে এবং হয়ে উঠবে পরিপূর্ণ মান-হুঁশ; দেশ যাদের নিয়ে গর্ব করবে এবং যারা গর্ব করবে দেশ ও জাতিকে নিয়ে।
লেখকঃ
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক
ফোনঃ ৯৫৫০০৫৫, ৯৫৬০২২৫
web: www.helal.net.bd
e-mail: m7helal@yahoo.com