বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার ৩৬ বর্ষপূর্তি উৎসব চলছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর, বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী, ডায়নামিক ও প্রতিভাদীপ্ত সফল উদ্যোক্তা, শিল্প-বাণিজ্যের পুরোধা, দেশপ্রেমী ও ছাত্র-যুবকদের প্রেরণা বেঙ্গল গ্রুপ ও আরটিভি’র সুযোগ্য চেয়ারম্যান জনাব মোরশেদ আলম এমপি এর সাথে সম্প্রতি সৌজন্য সাক্ষাৎ হয় ক্যাম্পাস প্রতিনিধিদলের। সাক্ষাৎকালে তারা দেশ উন্নয়ন ও জাতি জাগরণে ক্যাম্পাস’র বহুমুখী কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন। তাছাড়া, একজন নীতিনিষ্ঠ উদ্যোক্তা ও মৌলিক শিক্ষা উন্নয়নের পুরোধা হিসেবে মোরশেদ আলমের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা হয়।
কঠোর পরিশ্রম, সততা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা ও কমিটমেন্ট দিয়ে জনাব মোরশেদ আলম গড়ে তুলেছেন একের পর এক সফল শিল্প-প্রতিষ্ঠান; যা দেশে এবং বিদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশের। তার প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল গ্রুপ; বাংলাদেশের প্রাচীন এবং সর্ববৃহৎ আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। ছোট একটি মোল্ডিং মেশিন দিয়ে যে কোম্পানির যাত্রা শুরু, সেই বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে বেঙ্গল গ্রুপের একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীল সম্প্রসারণের পাশাপাশি তিনি বহু সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সেই সাথে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ অবদান রাখছেন। সরকার অনুমোদিত মোরশেদ আলম ট্রাস্ট গঠন করে তিনি দরিদ্র ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান, চিকিৎসা সাহায্য, অসচ্ছল পরিবারের বিবাহযোগ্যা কন্যাদের বিবাহে আর্থিক সহায়তা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সাহায্য, হজ্বপালনে সহায়তা, গ্রামের রাস্তাঘাট নির্মাণে অনুদান প্রদান করে থাকেন।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি ক্যাম্পাস প্রতিনিধিকে বলেন, আমাদের দেশে যত জনসংখ্যা সে পরিমাণ স্কুল কলেজ নেই। কিন্তু শিক্ষা এখন বাণিজ্য হয়ে গিয়েছে। আমার নিজের একটা স্কুল আছে, এছাড়া কয়েকটি স্কুলে সভাপতি হিসেবে আছি। তাই জানি, শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়। শিক্ষকদের মধ্যে ইদানিং দুর্নীতি করার প্রবণতা বেশি। ভর্তি-বাণিজ্য, সনদ-বাণিজ্যতো আছেই। ভালো স্কুলে পড়তে হলে ডোনেশন দেয়াসহ অনেক কিছুই করতে হচ্ছে যা আসলে সঠিক শিক্ষা বিকাশের অন্তরায়।
ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- বিদ্যার্জন ছাড়া এখন মানুষের আর কোনো মূল্য নেই। এখন গ্রামে কৃষিকাজে শ্রমিক পাওয়া যায় না। ধান রোপণ করার মেশিনও চালু হয়ে গেছে। অনেক আগে বের হয়েছে ধান কাটার মেশিন। ধান মাড়াইয়ের মেশিনও ব্যবহার করা হচ্ছে। গ্রামে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যায় না। আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি মানুষ খুব পরিশ্রম করতে পারতো, এখনকার মানুষ তা পারবে না। শিক্ষার্থীদের তাই পড়ালেখা করতে হবে মনোযোগ সহকারে, মেধা কাজে লাগাতে হবে। শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম এখন বেশি করতে হয় না, এখন ব্রেইন দিয়েই কাজ করতে হবে।
আমি কিন্তু বেকারদের সহায়তা করি, বিনা বেতনে এক-দেড়শ ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখাই। মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিয়ে বিনা বেতনে উচ্চশিক্ষায় সহায়তা করি, যাতে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে। এভাবেই আমি একটি প্রদীপ থেকে লক্ষ প্রদীপ জ্বালাই।
আমি মনে করি মানুষের বড় হতে, প্রতিষ্ঠিত হতে ৪টি জিনিস লাগে। প্রথম হচ্ছে সততা বা Honesty। দ্বিতীয় হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা। তারপর যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, আপনাকে কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে হবে। আর সবার শেষে কাজের প্রতি Sincerity।
গাইডেন্স জিনিসটাও মানুষের বড় হওয়ার জন্য জরুরি বিষয়। আমি বড় হওয়ার জন্য গাইডেন্স পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। উনাকে সবাই দরবেশ সাহেব বলত সততার কারণে। ব্যবসা শিখেছি আমি হাজী আকবর এর কাছে, সেসময়ের অনেক বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। আমি কমিটমেন্ট শিখেছি তাঁর কাছে, সেটা সারাজীবনের মত আমার মাথায় গেঁথে গেছে, চলার পথে পাথেয় হয়েছে।
ক্যাম্পাস’র সততা জাগরণী কার্যক্রম ও পুরস্কার এর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে মোরশেদ আলম বলেন, ক্যাম্পাস সততা পুরস্কার কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে ওয়ান-ইলেভেন এর সময় ব্যবসায়ীরা যখন পলাতক তখন আমাকে বেস্ট এন্টারপ্রাইজের পুরস্কার দেয়া হয়। তারা আমার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের আমি বললাম, আমি অনেক পরিশ্রম করে সৎভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছি। ভাবিনি এর কখনো কোনো স্বীকৃতি পাবো। আপনাদের মাধ্যমে আজ আমি সেই স্বীকৃতি পেলাম।
আমার জীবনে সবচেয়ে বড় কথা, আমি হেঁটে হেঁটে এগিয়েছি, দৌঁড়াই নাই। এজন্যে আমার বেইজ শক্ত হয়েছে। এই পজিশনে আসতে আমার ৪৮ বছর সময় লেগেছে। ’৮৮-’৮৯ এ যারা আমার সঙ্গে এসেছে তাদের অনেকেরই এখন অনেক টাকা। মাঝে-মধ্যে ভাবি, কি করলাম জীবনে! কিন্তু এটাও ভাবি, আমার সততা আছে, সুনাম আছে। যে কোনো ব্যাংকে গিয়ে লোন চাইলে কোনো য়ঁবৎু ছাড়াই দিয়ে দেয়। কারণ আমাদের পারফরম্যান্স ভালো, সততার সাথে পরিশোধ করি সব। এই গুডউইলটা ধরে রাখার জন্য বলি আমার ছোট ভাই ও সন্তানদের। সততার কোনো বিকল্প নেই, সবার জন্যই এটা প্রযোজ্য।
ক্যাম্পাস’র সততা জাগরণী কর্মসূচি নামে যে কার্যক্রম শুরু করেছেন সেটি ভালো উদ্যোগ। ভালো কাজের জন্য আপনারা ভালো মানুষদের স্বীকৃতি দেন। যাকে দেন সে নিজে উজ্জীবিত হয়, আরো দশজনকেও উজ্জীবিত করে। দেশের মানুষের যথার্থ মূল্যায়ন করছেন এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে। সততার জয় হবেই হবে।