বিশেষ খবর



Upcoming Event

ব্যাপক কর্মখালি ॥ নেই দক্ষকর্মী

ক্যাম্পাস ডেস্ক কারিগরি শিক্ষা

প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সিরাজুল ইসলামের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে আশা জেগেছিল, উচ্চশিক্ষা নিয়ে ছেলে পরিবারের হাল ধরবে, সংসার আনন্দে ভরে উঠবে। উচ্চশিক্ষা শেষে নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিলেও একটি ভালো চাকরি হয়নি তাঁর। চাকরি না জোটায় যেন পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ান তিনি। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবও নেয় মুখ ফিরিয়ে। এই লজ্জায় ঈদ বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাওয়া বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। তিনি বলেন, চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘোরা কতটা মানবেতর ও কষ্টের, তা কাউকে বলে বোঝানো যাবে না।
সিরাজুল জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করে ২৫-৩০টি সরকারি পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত গেছেন। সবগুলোতেই ভালো পরীক্ষা দিয়েছেন, কিন্তু কোথাও চাকরি হয়নি। জীবন চালানোর তাগিদে সরকারি চাকরির বয়স শেষে বর্তমানে একটি প্রকল্পের আওতায় সামান্য বেতনে চাকরি করছেন তিনি। অন্যদিকে তৌহিদুর রহমান নামের একজন ২৮তম বিসিএসে নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষা দেন। তাঁর দাবি, পরীক্ষা ভালো হলেও চাকরি হয়নি তাঁর। পাঁচবার বিসিএস পরীক্ষায় মৌখিক পর্যন্ত গিয়েও বাদ পড়েছেন। সরকারি চাকরির বয়স শেষে এখন বেকার ঘুরছেন, মানসিকভাবেও কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
শুধু তৌহিদুর বা সিরাজুলই নয়, দেশের উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বড় অংশই ভালো একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে। দিন দিন এই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি চাকরির পদসংখ্যা কম, নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা, কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি, ঘুষ ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ বা মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীর ভাগ্যে ভালো চাকরি জুটছে না বলে অভিযোগ চাকরিপ্রত্যাশীদের। তাঁদের ভাষ্য, উচ্চতর লবিং কিংবা তদবির না থাকায় তাঁরা বারবারই বঞ্চিত হচ্ছেন। মেধার জোরে নৈর্ব্যক্তিক ও লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েও মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে বাদ পড়ে যাচ্ছেন।
যদিও সরকারি বা বেসরকারি চাকরির আবেদনে ব্যাংক ড্রাফট ও পে অর্ডার বাবদ ব্যয় হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। বেকারদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে ঘন ঘন বিজ্ঞাপন দিয়ে পে অর্ডার ও ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। দু-একটি পদের বিপরীতে হাজার হাজার আবেদন থেকে প্রতিষ্ঠানের আয় লাখ লাখ টাকা। যদিও বেকারদের কথা চিন্তা করে সরকারি ব্যাংকের নিয়োগে অর্থ নেওয়ার রাস্তা বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিনা মূল্যে আবেদন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা, তবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
দেশে উচ্চশিক্ষিত মানবসম্পদ বাড়লেও বাড়ছে না কর্মসংস্থানের সুবিধা। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে পদ ফাঁকা থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। এতে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পরও মিলছে না কাক্সিক্ষত চাকরি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সহকারী সচিবের ছয়টি পদের বিপরীতে ২২ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী আবেদন করেন। সকালে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা দেওয়ার পর বিকেলে ফল প্রকাশিত হলে ১৫১ জনকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের পর প্রকাশিত ফলে ৩৪ জন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। সেখান থেকে ছয়জন চাকরিপ্রত্যাশী নিয়োগ পাবেন। শুধু বিআরইবিতেই নয়, এমন প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট পদের বিপরীতে কয়েক শ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ে, যেখান থেকে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে খুব কমসংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়।
চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, সরকারি চাকরিতে নানা রকম কোটা পদ্ধতি সংরক্ষণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে সাধারণের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। আবার রয়েছে একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। মেধার চেয়ে জালিয়াত করা শিক্ষার্থীই সহজে চাকরির সুযোগ পাচ্ছে। আর চাকরির পরীক্ষা উপলক্ষে গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা শিক্ষার্থীরা সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। রাত-দিন পরিশ্রম করার পরও সুযোগ পায় না অনেক মেধাবী। চাকরিদাতারা খুঁজছেন দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থী। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে পদভেদে হাজার হাজার, এমনকি লাখো আবেদন পড়ে।
কিন্তু পছন্দমতো যোগ্য প্রার্থী অনেক সময়ই পান না তাঁরা। অথচ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসাবেই দেশে বেকার ও আংশিক বেকারের সংখ্যা প্রায় ৭১ লাখ। মাস্টার্স পাস কোনো কোনো বেকার অষ্টম শ্রেণি পাসের চাকরির জন্য আবেদন করেন, এমন কথাও শোনা যায়। উল্টা দিকে দক্ষ শ্রমিকের অভাব দেশের প্রধান প্রধান শিল্প খাতগুলো। দেশের মোট আটটি খাতে চাহিদার তুলনায় বর্তমানে শ্রমিক কম রয়েছে ১৭ লাখ ২৭ হাজার। সঙ্গে রয়েছে মধ্যম সারির কর্মকর্তার সংকটও। ফলে অনেক বেশি বেতন দিয়ে বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে আনতে হয়।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img