বিশেষ খবর



Upcoming Event

সুচিন্তা ও সুস্থ আচরণের মাধ্যমে বিশেষ মানুষ হয়ে সুস্থতা ও শতায়ুলাভ-৪৪

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিশেষ নিবন্ধ

আশাবাদে স্বাস্থ্যলাভ, হতাশায় স্বাস্থ্যহানি
জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আশাবাদ কেবল রোগমুক্তিই নয় বরং রোগকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কারণ মানুষের ইচ্ছাশক্তি অনেক অসাধ্য কাজকে সহজ করে তোলে। ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, জীবনের সংগ্রামমুখর পথ চলতে সাহায্য করে। মানব মস্তিষ্ক ইতিবাচক সংবাদ যতটা সক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে, নেতিবাচক সংবাদ প্রত্যাখ্যানে ততটাই সচেষ্ট থাকে। আশাবাদই মস্তিষ্ককে নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে ঠেলে ইতিবাচক চিন্তায় সচেষ্ট করে তোলে। জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আনন্দময় জীবন হার্টকে সুস্থ-সবল রাখে। এমনকি বৃদ্ধ বয়সে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার সঙ্গেও প্রাণোচ্ছলতা বা আশাবাদী মনোভাবের যোগ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন- স্ট্রোক এবং করোনারী সংক্রান্ত রোগে আশাবাদী মানুষের ঝুঁকি ৫০% কম। হতাশা, ক্রোধ, উদ্বেগ, বৈরিতা হৃৎপিন্ডের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে হার্ট এটাক বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শুধু ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয় নয়- সন্তুষ্টি, আনন্দময় জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তাবোধ এগুলোও মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি ব্যক্তির সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, আর্থ-সামাজিক অবস্থান, ধূমপান পরিহার এবং দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণ -এসবও হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। তাই মূল্যবান হৃদযন্ত্রের দীর্ঘায়ু ও তাকে কর্মক্ষম রাখতে হাসিখুশি থাকুন, পরিকল্পনামতো দৈনন্দিন কাজ ও জীবনযাপন করুন।
শুভ চিন্তায় দীর্ঘজীবন
যাদের চিন্তা শুভ এবং নিজের স্বাস্থ্য ভালো বলে আত্মবিশ্বাস রয়েছে, তারা দীর্ঘদিন বাঁচেন। মানুষের আয়ু সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের পরিচালিত এক সামাজিক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। ধূমপান, জনস্বাস্থ্যের ওপর কোরিন গ্যাসের প্রতিক্রিয়া, উচ্চ রক্তচাপের নেতিবাচক প্রভাব এবং নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যক্তির নিজের মনোভাব সম্পর্কে এক সামাজিক সমীক্ষা চালিয়েছেন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। গবেষণায় তারা দেখতে পান, তিন দশক আগে যারা তাদের স্বাস্থ্য ও জীবন সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তাদের দেহ-মন বেশ চাঙ্গা রয়েছে। গবেষকরা ডাক্তারি পরীক্ষা করে দেখেছেন, শুভ চিন্তা ও জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট -এরূপ মানুষের স্বাস্থ্য বেশ ভালো এবং শরীরে দীর্ঘজীবী হওয়ার লক্ষণ রয়েছে। গবেষণা প্রকল্পের প্রধান ডেভিড ফাহ বলেন- যারা জীবন সম্পর্কে ভালো চিন্তা করেন এবং সুখী জীবনযাপনে অভ্যস্ত, তারা অসুখী মানুষ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণকারীদের তুলনায় ৩.৩ শতাংশ বছর বেশি বাঁচেন। চিন্তার মাধ্যমে শুধু দীর্ঘজীবন লাভই নয়, শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও কাজে লাগানো যায়। সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি জুরিখের বিজ্ঞানীরা এমনটি দাবি করেছেন। তাদের মতে- চিন্তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরে প্রোটিন উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এই প্রক্রিয়াটিই মানুষের রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কাজে লাগানো সম্ভব।
নেয়ার চেয়ে দেয়া ভালো
ভোগে নয়, ত্যাগেই সুখ -স্কুলজীবনে এমন ভাবসম্প্রসারণ লিখে আসার অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। পরীক্ষার খাতায় লিখে এলেও ব্যাপারটিতে যাদের ঠিক আস্থা জন্মেনি, তাদের ভাবনা পরিবর্তনের সময় এসেছে। গবেষকরা বলছেন, সবসময় শুধু নিজের সুখ লাভের জন্য কাজ করলে সুখ মেলে না; প্রকৃত সুখ মেলে অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাওমি আইসেনবার্জার জানিয়েছেন, সাধারণভাবে বেশিরভাগ মানুষ অন্যের চেয়ে নিজেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তাই সে নিজের জন্যই সবসময় সবচেয়ে বেশি চিন্তা করে। এ কারণেই মানুষ নিজের সুখের জন্য বিভিন্ন কাজ করে, অন্যের ভালো-মন্দ নিয়ে তেমন একটা ভাবে না। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে- মানুষ যদি নিজের কথা না ভেবে অন্যের জন্য কাজ করে, তাতেই সে বেশি উপকৃত হয়। তিনি আরো জানিয়েছেন- মানুষ সাধারণত টাকা-পয়সা, সেক্স এসবের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি খোঁজার চেষ্টা করে। ছোট-বড় এমন নানা অনুষঙ্গই মানুষকে সুখী বা অসুখী করে তোলে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে অন্যকে সহায়তা করে, সাহচর্য দেয়, বিপদে কারো পাশে দাঁড়ায় -তবে সে একই ধরনের তৃপ্তি পেয়ে থাকে। অন্যের পাশে দাঁড়ানোর সময় মানুষের মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ উদ্দীপিত হয়, যা পুরস্কৃত হওয়ার তৃপ্তি অনুভব করলে হয়। বিষয়টি মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক। এছাড়া এভাবে পরোপকারী পরিচয় মানুষকে সামাজিকভাবেও উপকৃত করে। এ গবেষণা প্রমাণ করেছে- অন্যের উপকারের মাধ্যমেও নিজেকে উপকৃত করা যায়, সুখী ও স্বাস্থ্যবান করা যায়। তাইতো আমার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস একটি সোগান নিয়মিত প্রচার করে থাকে- অন্যকে সাহায্য করতে থাকুন, আপনার সমস্যাও কেটে যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে আমার রচিত সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি এবং সাফল্যের শীর্ষ পথে বইয়ে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য কৃতজ্ঞতাবোধ
কৃতজ্ঞতাবোধ কেবল সামাজিক আচারের অংশই নয়, এরূপ অনুভূতি স্বাস্থ্যের জন্যও দারুণ উপকারী। গবেষকদের মতেও আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন বা কৃতজ্ঞতাবোধ শারীরিক-মানসিকভাবে দেহের উপকার করে। এর উপযোগিতা প্রমাণ করতে তারা কতগুলো দৃষ্টান্তের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন- মজার মজার প্রবাদবাক্য আবৃত্তি করলে মস্তিষ্ক জটিল ভাবনা থেকে মুক্ত থাকে এবং তার ক্রিয়াকর্মকে আরো সক্রিয় করে তোলে। কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পন্ন মানুষ কখনোই বোকা কিংবা দায়িত্ব¡জ্ঞানহীন হতে পারে না। গবেষকরা আরো উল্লেখ করেছেন- কেউ যদি কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ১৫ মিনিটের একটি চিঠিও লেখে, তবে তার মানসিক ও শারীরিক উন্নতি সাধিত হয়। পরিবার, বন্ধু, কিংবা সহকর্মী যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই তথা যেখানেই মানুষের সামাজিক সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেখানেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার সুযোগ রয়েছে। গবেষকরা অবশ্য কৃতজ্ঞতা জানানোর পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন, কাউকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হলে কাছে গিয়ে জানানোই সবচেয়ে ভালো এবং অধিক কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. পি মুরালি দোরাইস্বামী বলেন- কৃতজ্ঞতা যদি কোনো ঔষধ হতো, তবে তা আমি শ্রেষ্ঠ পণ্য হিসেবে বাজারজাত করতাম। কৃতজ্ঞতার একটি বিশেষ আবেশ আছে, যা দেহের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই দৈনন্দিন জীবনে পরিবার-পরিজন, সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব এমনকি আয়া-বুয়া, ড্রাইভার-দারোয়ান, লিফটম্যান, রিকশাওয়ালা, বাস কন্ডাক্টরসহ সকলকে যদি আমি ঞযধহশং দিতে থাকি, তাহলে তার প্রতিফল কিন্তু আমারই। ক্ষমায় ভালো থাকে হার্ট
ক্ষমা মহৎ গুণ -এমন কথা আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। মানুষে মানুষে সুসম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ক্ষমা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অনেকের মধ্যেই এই বিশেষ গুণ আছে; আবার অনেকের নেই। কিন্তু যাদের নেই, তাদের এখন নিজ প্রয়োজনেই এ মহৎ গুণটি রপ্ত করার সময় এসেছে। কারণ ক্ষমা শুধু সম্পর্ক অটুটই রাখে না, এটি আমাদের হার্টও ভালো রাখে। এ কারণে হার্ট ভালো রাখতে মনোযন্ত্রণা বা মানসিক আঘাতের স্মৃতি ভুলে গিয়ে ক্ষমা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে- কারুর কাছ থেকে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাকে যদি ক্ষমা করে দেয়া হয়, তাহলে ক্ষমাকারীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। রাগ বা ক্ষোভ লালন না করে ক্ষমা করে দিলে রক্তচাপের মাত্রাও কমে যায়। তাই যেকোনো ক্ষেত্রে ক্ষমা করে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ; কারণ দীর্ঘসময়ের জন্য উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
শপথের মাধ্যমে ব্যথা জয়
দৈনন্দিন ব্যস্ততা ও ঘাত-প্রতিঘাতে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা কষ্টকর। কিন্তু সবকিছুতে বিমুখ হয়ে অনবরত না বললে চলে না বরং অনেক না-কেই হ্যাঁ-তে রূপান্তরের প্রয়োজন পড়ে। শপথ করার মাধ্যমে না-কে হ্যাঁ-তে রূপান্তর করা একেবারে সহজ। অর্থাৎ কেবল প্রতিজ্ঞা, শপথ বা অটোসাজেশনই সহজভাবে পারে ভেতরের সুপ্ত শক্তি, আকাক্সক্ষা ও একাগ্রতাকে বাস্তবে জাগিয়ে তুলতে ও সফল করতে। এ সাফল্যের ফল বহুমুখী, দীর্ঘস্থায়ী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন, প্রাকৃতিক ও স্বর্গীয়। শপথের জোরে অনেক অসুখের ন্যায় শরীরের ব্যথাও যে জয় করা যায়, তার প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়। যুক্তরাজ্যের কিইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন- একটি শপথের মাধ্যমেই প্রতিদিনের যাপিত জীবনের অনাকাক্সিক্ষত যন্ত্রণা ও ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। প্রতিদিনের কাজকর্মে যারা ব্যথা বা যন্ত্রণা ভোগ করেন এবং ধীরে ধীরে হতাশায় নিমজ্জিত হতে থাকেন, তারা শপথ করে তা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কিইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজির গবেষকরা ৭১ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি পরীক্ষা চালান। তারা শিক্ষার্থীদের দু’ভাগে ভাগ করেন। এরপর দু’দলকেই প্রচন্ড ঠান্ডা পানির এক পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেন। পরীক্ষার পর গবেষকরা দেখতে পান- যারা নিয়মিত বা ঘন ঘন শপথ বা প্রতিজ্ঞা করেন না, তারা শপথ করলে প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতে তাদের হাত ১৪০ সেকেন্ড ডুবিয়ে রাখতে পারেন। আর শপথ না করা অবস্থায় তারা ঐ পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখতে পারেন ৭০ সেকেন্ডের মতো। যারা ঘন ঘন প্রতিজ্ঞা করেন তারা প্রতিজ্ঞা করার পর ঐ পানিতে হাত ডুবিয়ে রাখতে পেরেছিলেন ১২০ সেকেন্ড। গবেষকরা দেখতে পান, প্রচন্ড ঠান্ডা পানিতে দু’দলই ব্যথায় কাতর ছিল। কিন্তু শপথ নেয়ার পর তারা ব্যথাকে জয় করতে পেরেছে। নতুন এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব পেইন এ। ডাক্তার-বৈদ্য ছাড়া আপনি নিজেই কীভাবে নিজের অসুখ-বিসুখের উপশম করতে পারেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে এ বইয়ের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের বিভিন্ন পর্বে। শুধু কর্মক্ষেত্রের ক্লান্তি বা ঝক্কি-ঝামেলা কাটাতে নয়, সর্বক্ষেত্রেই জঞ্জাল ও বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উচ্ছল গতিতে সম্মুখে চলতে হলে বলতে থাকুন-Day by day and in every way I am getting better, better & better; I am getting richer, richer & richer by the grace of Almighty. এরূপ অটোসাজেশনে অভ্যস্তরা শঙ্কা-ঝামেলা ও রোগমুক্ত থাকে, সুস্থ এবং সুখী থাকে।
রাগে ক্ষতি ফুসফুসের
সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাগ ও বদমেজাজ যেমনি নেতিবাচক ও সম্পর্ক ভাঙার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর। গবেষকরা বলছেন- রাগ ও উত্তেজনা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের একদল বিজ্ঞানী বদমেজাজি লোকদের ওপর ৮ বছর ধরে গবেষণা চালান। তারা দেখতে পান, স্বভাবগতভাবে বেশি রাগী ও উত্তেজিত লোকদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা যারা সহজে রাগে না তাদের তুলনায় অনেক কমে গেছে। গবেষক ড. জন মুরে গিলান বলেন- যখন কোনো ব্যক্তি রেগে যায়, তখন শরীরের ভেতর কিছু হরমোন নিঃসৃত হয়। এই রাসায়নিকগুলো ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাস নালির কোষের ক্ষতি করে। ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের তুলনায় এর মাত্রা কম হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি ফুসফুসের অপূরণীয় ক্ষতি করে।
সুস্বাস্থ্য ও সফলতার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রোগ-শোক ও টেনশনের অন্যতম কারণ হলো রিএকটিভ এটিচিউড অর্থাৎ রাগ, ক্ষোভ, দুঃখবোধ ও হতাশা। রাগ বা রিএকশন মানুষের ব্রেনকে ঐধহম করে দেয়। তাই রেগে গেলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, মাথা গরম হয়ে যায়। তখন বুদ্ধি বা যুক্তি কাজ করে না, কোনো গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না; পতন ও ধ্বংস হয় অনিবার্য। আমরা যা আশা করি, তা না পেলে আসে হতাশা; নিজের মনের মতো কিছু না হলে আসে বিরক্তি। এরপর আসে রাগ; ...এবং রেগে গিয়ে অনেক সময়ে নিজেকে আত্মহননের দিকে নিয়ে যাই। রাগের পূর্ব মুহূর্তের বিরক্তি ও হতাশা -এ দু’টো ধাপকে ম্যানেজ করতে পারলে মানুষ বিপর্যয়মুক্ত থাকতে পারে। সারাদিনে মানুষের মস্তিষ্কে ৬০ হাজার রকমের চিন্তা আসে। এরমধ্যে ৮০% চিন্তাই আসে রিএকটিভনেস থেকে। এরূপ চিন্তায় থাকলে মানুষ অস্বস্তিতে থাকে, অসুবিধাবোধ করে, অন্যের সাথে খারাপ আচরণ করে। এতে গুরুতর শারীরিক সমস্যা হয়। গবেষণায় প্রমাণিত যে- ভালো চিন্তা থেকে সিক্রেশন হয় ভালো গুণের হরমোন; খারাপ চিন্তা করলে বের হয় খারাপ মানের হরমোন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে- হৃদরোগ, স্ট্রোক, টেনশন, এংজাইটি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস -এসব রোগের প্রধান কারণ নিরানন্দ মন, হাসিহীন গোমড়া মুখ, রাগারাগি, বিশৃঙ্খলা তথা রিএকটিভনেস। এতে একটির পর একটি রোগ সৃষ্টি হতেই থাকে। সুশীল, সংস্কৃতিবান ও সুস্থ মানুষের সর্বপ্রধান গুণ হলো- যেকোনো পরিবেশ-পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকা; অর্থাৎ নিজের মধ্যে রিএকশন না আনা, রাগারাগি না করা কিংবা ক্ষেপে না যাওয়া। সুস্থ চিন্তার স্বাস্থ্যসচেতন ও বিবেকবান মানুষরা যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত থাকে। যা কিছু ঘটুক না কেন, তারা রেগে না গিয়ে, উত্তেজিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেয় ও কাজ করে, পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে। নবী-রাসুল, মুণি-ঋষি বা সফল মানুষরা কখনো রেগে যাননি, কোনো সীন ক্রিয়েট করেননি, গালাগালি করেননি। নিওরো বিজ্ঞানীরা বলেছেন- মানুষ যখন রেগে যাবে বা ক্ষেপে যাবে, তখন তারা ভুল করবে; ভুল সিদ্ধান্ত নেবে। রেগে গেলে, ইমোশনালি কাজ করলে পরে পস্তাতে হয়; পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, শারীরিক-মানসিক ক্ষতিতো আছেই। তাই যত বেশি শান্ত থাকা যায়, সুস্বাস্থ্য ও সাফল্যের নিশ্চয়তা থাকে তত বেশি।
রাগ নিয়ন্ত্রণে হাতের উল্টো ব্যবহার
বাস বা ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের চেঁচামেচি অথবা ধূর্ত সহকর্মীর কারণে হয়ত আপনার মেজাজ চরমে; কিছুতেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। তখন একটি সহজ উপায়ে নিজেকে শান্ত করতে পারেন। আর সেটি হচ্ছে- আপনি স্বভাবজাতভাবে যদি ডানহাতি হন, তবে বাঁ হাতে কাজ করার চেষ্টা করুন; আর যদি বাঁহাতি হন, তবে ডান হাতে কিছু করার চেষ্টা করুন। উদ্ভট মনে হচ্ছে? কিন্তু বাস্তবে এর কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, যেকোনো বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ‘ভুল’ হাতে কাজ করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মাত্র দুই সপ্তাহ এভাবে চর্চার মাধ্যমে আপনি সুফল পেতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. থমাস ডেনসন ১০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে বলেন- গলফ খেলা বা পিয়ানো বাজানোর ক্ষেত্রে যেমন দিন দিন ভালো করা যায়, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাটাও ঠিক তেমনটি এক কাজ। ডানহাতি কেউ মাত্র দুই সপ্তাহ বাঁ হাতে কম্পিউটারের মাউস ব্যবহার করলে অথবা চায়ের কাপে চিনি নাড়লে বা দরজা খুললে তার রাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। অন্যদিকে বাঁহাতি কেউ ঠিক উল্টোটা করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
-চলবে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img