॥ পর্ব ৪॥
বিশেষ মানুষ হয়ে সুস্থতা অর্জনে ১০ দিগদর্শন
শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত থেকে বুঝতে পেরেছি যে, এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে শিক্ষিত করার পাশাপাশি অশিক্ষিতও কম করে না। তাইতো আমাদের মধ্যে অসুস্থতা বা অসুন্দরের চর্চা কম নয়। সেজন্য সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর ক্ষেত্রে শরীরচর্চা, পথ্য ও প্রাকৃতিক চর্চাকে প্রাধান্য না দিয়ে আমরা এখনও রাসায়নিক ঔষধ বা হাসপাতালকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি বেশি। অথচ অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ব্যবস্থা হচ্ছে সুস্থ ও সুন্দর চিন্তা-চেতনা তথা কল্যাণ মানসিকতা এবং নীতি-আদর্শ ও দর্শনবহ জীবনযাপন।
তাই নিজের সুস্থতা, মঙ্গল ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যের কল্যাণ সাধনের জন্য প্রয়োজন নিম্নরূপ কিছু মানবিক ও আত্মিক গুণ বা শক্তির সঞ্চয়ন ও লালন। এগুলো চর্চার মাধ্যমে আমার পরিবার এবং ক্যাম্পাস’র সদস্যগণ ব্যক্তিগত-পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে প্রভূত উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন তারাই বলে যে- ক্যাম্পাস মানুষের নেতিবাচক সব ধারণা বদলে দেয়, ক্যাম্পাস-এ এলে পরিবর্তন হতেই হয়। তাদের অনুরোধে ক্যাম্পাস’র লালিত সেরূপ কিছু দর্শন পাঠকের উদ্দেশ্যে এখানে উল্লেখ করছি।
১। সহজ-সরল ও স্বাভাবিক থাকা তথা ন্যাচারাল হওয়া
দ্রুতগতির যানবাহনের জন্য যেমনি সোজা রাস্তা দরকার, তেমনি মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশ এবং স্রষ্টার আনুকূল্যের জন্য সরল মন দরকার। কারণ গভীর ও দূরের লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে আঁকা-বাঁকা পথ তথা দ্বিধান্বিত চিন্তা-চেতনা বা মন-মানসিকতা বিরাট প্রতিবন্ধক। দূরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছার জন্য গাড়িকে যেমনি সোজা রাস্তায় তেজী গতিতে চলতে হয়, মানবজীবনেও লক্ষ্য অর্জন বা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তেমনি সরল চিন্তা ও সরল বিশ্বাস অত্যাবশ্যক। সরল চিন্তা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রকৃতি ও স্রষ্টার মহাশক্তির সাথে নিজকে সংযোগ বা অষরমহ করে আত্মশক্তি বৃদ্ধিতে সক্ষম হওয়া যায়। তাই ‘সরল চিন্তা’ জীবন যুদ্ধের জ্বালানিরূপে কাজ করে, যে ‘জ্বালানি’ সর্বদাই শক্তিতে পরিণত হয়ে লক্ষ্য অর্জনকে করে তোলে সহজ ও নিশ্চিত।
জনৈক ইংরেজ কবি বলেছেন- প্রকৃতির যত কাছে মানুষ যাবে, ততই সে স্রষ্টার নিকটবর্তী হবে। তাই ন্যাচারাল বা সহজ-সরল মানুষরা অন্যদেরতো বটেই, স্রষ্টার নিকটও প্রিয়। সহজ-সরলদের জীবন-কর্মের আউটপুটও বেশি। অথচ শৈশব-কৈশোর ও যুব বয়সেই চারপাশের নানা নেগেটিভ তথ্য এবং শয়তান বা ইবলিস আমাদের মস্তিষ্ককে এমনই জটিল করে ফেলে যে- সবকিছুতেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি জটিল ও কনফিউজড হয়ে পড়ে; সহজতা ও সৃজনশীলতার গতি সøথ হয়ে যায়। চিন্তার সারল্য এবং রুচি-বুদ্ধির সৌন্দর্য কমে গিয়ে জীবন-কর্মের আউটপুট হ্রাস পায়। চড়ংরঃরাব ঃযরহশরহম ঢ়ড়বিৎ কমে যায় বলে রোগ-শোক, ব্যথা-বেদনা জয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, সুখের জীবনের অনেক সময়ই কাটে দুঃখে, নিরানন্দে ও ট্র্যাজেডিতে।
আমাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে ব্রেন হচ্ছে সবচেয়ে সহজ-সরল। আমি তথা আমার আত্মা ব্রেনকে যে তথ্য দেই, ঐ তথ্যের ভিত্তিতেই ব্রেন আমার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নির্দেশনা পাঠায় তথা পরিচালনা করে।
যে ব্রেন আমাদের সমগ্র দেহের পরিচালক, তাকে যদি কনফিউশন বা জটিলতা-কুটিলতায় আবদ্ধ ও নিবদ্ধ করে ফেলি, তাহলে ব্রেন ঐধহম হয়ে যাবে। ফলে সৃজনশীলতাতো দূরের কথা, স্বাভাবিক কাজকর্মের গতিও নষ্ট হয়। তখন কনফিউজড ও অস্বাভাবিক ব্রেনের কমান্ডে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে পরিচালনা দুরূহ; সুস্থতা বা রোগ প্রতিরোধতো দূরের কথা। ব্রেন নিজেই অস্বাভাবিক ও অসুস্থ হয়ে শরীরে দুর্বল ও অসুস্থ কমান্ড পাঠাতে থাকে। সহজ-সরলতার স্থলে আমারই সৃষ্ট জটিলতা-কুটিলতা ব্রেনকে জটিল করে ফেলার কারণে শারীরিক নানা উরংড়ৎফবৎ, বৈকল্য ও অসুস্থতা জন্মে। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সেই অসুখ ভালো করতে ডাক্তার-ফার্মেসী আপাতত সক্ষম হলেও ঐ রোগের মূলোৎপাটন হয় না। এ রোগ সমূলে দমন করার জন্য চাই ব্রেনকে সুস্থ-স্বাভাবিক ও সহজ-সরল পথে নিয়ে যাওয়া।
নিজের ভুবনে সহজ-সরলতা বা ন্যাচারালিটি হারিয়ে যারা জটিলতা ও কৃত্রিমতা তৈরি করে নিজ ব্রেনকে ঐধহম করে দেয় অথবা ব্রেনের কার্যকারিতার গতি কমিয়ে দেয় এবং স্রষ্টা প্রদত্ত ব্রেনের মহাশক্তিকে ব্যবহারে ব্যর্থ হয় -তারা কত বড় হতভাগা! সরলতাই স্বাভাবিকতা, আর স্বাভাবিকতাই সুস্থতা। অন্যদিকে জটিলতা, কুটিলতা ও অস্বাভাবিকতা মানেই অসুস্থতা।
আমরা জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে কাজ করব; কূটবুদ্ধি বা জটিলতার আশ্রয় নেব না। বুদ্ধি ও কূটবুদ্ধি সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়, সরল অংক ও জটিল অংকের ন্যায় কিংবা সুন্দর ও অসুন্দরের ন্যায়। বুদ্ধিমান মানুষ সরলতার আশ্রয়ে জ্ঞানী-বিজ্ঞানী হয়ে ওঠে। আর কূটবুদ্ধিমানরা জটিলতায় পড়ে বোকা ও ব্যর্থ হয়ে যায়। সরল সুবুদ্ধি যেমনি সৃষ্টি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন, কুবুদ্ধি তেমনি ধ্বংস ও অমঙ্গলের ছায়াসঙ্গী। তাইতো হিন্দু ধর্মের সাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন- আমি তোমাকে সব দেব, তুমি আমাকে শুধু সরলতা দাও।
প্রিয় পাঠক, আসুন- সরলবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে জ্ঞানী হয়ে উঠি, উন্নততর বিশেষ মানুষ তথা বিশেষ জ্ঞানী বা বিজ্ঞানী হই। কারণ সরলতাই সৌন্দর্য, সরলতা চলে গেলে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
তাই জীবন চলার পথে সর্বক্ষেত্রে সর্ববিষয়ে জটিলতা-কুটিলতা, সন্দেহ-সংশয় পরিহার করে সহজ-সরল হোন, ন্যাচারাল থাকুন; এতে আপনার সুস্থ-সবল থাকা, দীর্ঘজীবী হওয়া এবং সৃজনশীল ও জনপ্রিয় হওয়ার পথ সুগম হবে।
২। যুক্তিভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক আচার-আচরণ করা
Man is rational animal. তাই মানুষের সকল আচরণই যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। যুক্তিবাদী হওয়াটা আধুনিক মানুষের বড় গুণ। যুক্তিভিত্তিক জ্ঞানের বদলে যিনি খাসলত, অন্ধবিশ্বাস কিংবা কুসংস্কারকে আঁকড়ে থাকেন, তিনি আধুনিক মানুষ নন।
মানুষের কোনো আচরণই অযৌক্তিক বা অবৈজ্ঞানিক হওয়ার কথা নয়। যুক্তির বাইরে কোনো আচরণ থাকলে সেটি অসদাচরণ বলে পরিগণ্য। সেই অসদাচরণ তথা অন্যের সাথে অযৌক্তিক ও অন্যায় আচরণের কারণে নিজকে অসুস্থ করে তুললে অশান্তি ভোগ করতে হয়। এতে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক দৃঢ়তা বা স্থিরতা নষ্ট হয়; মনোজগতে স্থিরতার পরিবর্তে উত্থিত হয় অস্থিরতার কম্পন। এ কম্পন অত্যন্ত মৃদু হলেও পরিণাম এতই ক্ষতিকর -যা শরীরবৃত্তে ভূমিকম্পের চেয়েও মারাত্মক। এর ফলে নানারকম মানসিক রোগ তৈরি হতে থাকে; শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হতে শুরু করে এবং দেহাভ্যন্তরে প্রোথিত হয় রোগের বীজ।
তাই আমাদের সকল কথা ও কাজ হতে হবে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত। অর্থাৎ আমার কোনো কথা বা কাজ যেন অযৌক্তিক না হয় এবং আমার সকল কথা ও কাজের উদ্দেশ্য হবে কল্যাণ ও ন্যায়ের স্বার্থে। প্রথম প্রথম এরূপ চর্চা কষ্টকর হতে পারে, এমনকি এরূপ চর্চা শুরু করলে আপনি অন্যের নিকট দুর্বোধ্য বা কঠিন বলেও চিহ্নিত হতে পারেন। কিন্তু ধৈর্য ধরে এ চর্চা চালিয়ে যেতে পারলে একসময়ে আপনি হয়ে উঠবেন অন্যের নিকট প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়।
উপরন্তু সর্বদা যৌক্তিক ও ইতিবাচক আচরণের ফলে আপনার মনে আনন্দানুভূতি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যক্তিত্বে দৃঢ়তা কাজ করবে। মন ভালো থাকলে, মনে আনন্দ থাকলে, স্বচ্ছতা থাকলে সে মনে হতাশা ভর করতে পারে না। আর হতাশামুক্ত মন যিনি লালন করেন, তার শরীরও ভালো থাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তখন কর্মসাফল্য, শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুলাভ অনেক সহজ হয়ে যায়।
তাই আমাদের সকল কাজকর্ম এবং আচার-ব্যবহার যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে করতে ও করাতে পারলে একদিকে আমরা সুস্থ-সবল ও দীর্ঘায়ু হয়ে উঠব, অন্যদিকে ন্যায়ভিত্তিক ও আলোকিত সমাজ এবং কল্যাণ রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
তবে যুক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহার কোনোক্রমেই এমন হওয়া উচিত নয়, যা খারাপকে বা নেগেটিভ বিষয়কে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। সুযোগসন্ধানী বা সুবিধাবাদীরাই এমনটি করে থাকেন।
যেমনঃ কেউ তার বন্ধুদের বলল- তোমরা আমার জন্য দোয়া করো, আমি চাকরি পেলে তোমাদের মিষ্টি খাওয়াব। বন্ধুদের আশীর্বাদে এবং স্রষ্টার কৃপায় চাকরির ইন্টারভিউতে তিনি টিকলেন, নিয়োগপত্র পেলেন, চাকরিতে যোগদান করলেন, মাসশেষে বেতন পেলেন, বৎসরান্তে বোনাসও পেলেন...।
এক্ষেত্রে চাকরি লাভের কোন্্ পর্বে বন্ধুদের প্রতি তার দায় পরিশোধ হবে, এটি নির্ভর করে তার নিজস্ব ইচ্ছা ও যুক্তির ওপর। মাসশেষে বেতন পাওয়ার পর ঐ দায় পরিশোধ করলেও চলবে। এমনকি বৎসরান্তে প্রাপ্ত বোনাস দিয়ে দায় পরিশোধ করলেও কাজা নামাজ আদায়ের মতো দায়মুক্ত হওয়া যাবে। এরূপ প্রাসঙ্গিক নানা যুক্তিতে দায়মুক্তির শর্তপূরণ করা কঠিন নয়। অথচ এমন অনেকে আছেন, যারা চাকরিতে যোগদান করেই বা চাকরির নিয়োগপত্র পেয়েই বন্ধুদের প্রতি প্রতিশ্রুতির দায় শোধ করে ফেলবেন। আবার এমনও কেউ আছেন, যিনি ইন্টারভিউতে টেকার খবর শোনামাত্রই বন্ধুদের মিষ্টি খাইয়ে দিলেন।
এক্ষেত্রে সবার দায় পরিশোধের যুক্তি কি একইরূপ কল্যাণ ও বিচারিক চিন্তা থেকে উত্থিত? মোটেই না। অধিক স্বচ্ছ, সরল, সুস্থ ও সুবিচারিক উদার চিন্তার মানুষ হলে তিনি যত দ্রুত সম্ভব তার প্রতিশ্রুতি পূরণ বা দায় পরিশোধে তৎপর থাকবেন এবং দায়পালন শেষে ভারমুক্ত হবেন। এর ফলে তার কোনো পিছুটান থাকল না, ইৎধরহ যধহম হওয়ার বা মানসিক জটিলতার কোনো সুযোগ থাকল না। সুস্থতা-সৃজনশীলতা ও সর্বক্ষেত্রে মনোযোগের মহানন্দে তিনি সম্মুখে ধেয়ে চলেন। নিজে এগিয়ে যান, সমাজ সংসারকেও ধাক্কা দিয়ে সম্মুখে এগিয়ে দেন।
তবে সুবিধাবাদীদের স্বার্থপর যুক্তির ব্যাপারে অন্যদেরকে সচেতন থাকতে হবে এবং তাদেরকে মিথ্যা আত্মপ্রসাদ বা অহমিকার গন্ডি থেকে বের করে এনে বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিতে এবং প্রকৃত সত্য ও ন্যায়ের পথে উদ্বুব্ধ করতে হবে। অর্থাৎ নিজের মনগড়া ও একপেশে যুক্তির পরিবর্তে নিরপেক্ষ ও বিচারিক যুক্তি প্রয়োগে অনুপ্রাণিত করতে হবে। নিরপেক্ষ, বিচারিক এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য কল্যাণকর না হলে তা আর যৌক্তিক থাকে না; তখন তা হয়ে যায় অযৌক্তিক, অসংগত ও অন্যায়।
একপেশে খামখা যুক্তি দিয়ে অকল্যাণ, অসুন্দর ও অন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রবণতা বা চেষ্টা এক ধরনের অপরাধ। এ ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা প্রতিপক্ষের নীরবতা, ভদ্রতা কিংবা দুর্বলতায় আপাত সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হলেও স্থায়ী সুখ, সুস্বাস্থ্য ও শান্তি এদের জন্য সুদূরপরাহত।
অর্থাৎ একপেশে বা স্বার্থপর যুক্তি দিয়ে এককভাবে নিজের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা প্রকৃতই অন্যের প্রতি জুলুম ও জবরদস্তি। যুক্তি হতে হবে নিরপেক্ষ তথা দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক, একতরফা নয়। নিজের স্বার্থে প্রয়োগকৃত যুক্তির যাঁতাকলে যদি অপরের ক্ষতি বা অকল্যাণ পরিলক্ষিত হয়, তাহলে সে যুক্তি প্রহসন ও অন্যায়।
অন্যের অধিকার ও কল্যাণ বিবর্জিত নিজের একতরফা যুক্তি প্রয়োগের প্রবণতা স্থায়ী শান্তি, সুস্থতা ও সমৃদ্ধি অর্জনে প্রতিবন্ধক। একতরফা যুক্তি অন্যের জন্য প্রহসন, নিজের জন্য আত্মপ্রবঞ্চনা এবং সমাজ-সংসারের জন্য অকল্যাণ, বিভ্রান্তি ও অশান্তির কারণ।
আর নিরপেক্ষ যুক্তি তথা কল্যাণ চিন্তার যুক্তি সর্বদাই সর্বজন গ্রহণযোগ্য এবং এরূপ যুক্তির মানুষকে বলা হয় বিচারিক বুদ্ধির মানুষ, নিরপেক্ষ ও ভালো মানুষ। এরূপ মানুষ বিধির সমতুল্য অর্থাৎ তিনি নিজেই আইন।
এভাবে পারস্পরিক কল্যাণের নিরপেক্ষ যুক্তির নিঃস্বার্থ উদার ব্যক্তিত্বরা স্রষ্টার আশীর্বাদপুষ্ট, মানুষের পূজনীয়, মানবতার অহংকার, সভ্যতার অলংকার। এরূপ বিচারিক চিন্তার সপ্রতিভ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ যে সমাজে যত বেশি থাকবে, সে সমাজ তত বেশি প্রাগ্রসর ও সুউন্নত হবে।
তাই আসুন, আমরা সবাই এরূপ যুক্তিভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের সদস্য হই। যুক্তিকে সর্বদা ব্যবহার করি ন্যায়ের পক্ষে; অবান্তর যুক্তি দিয়ে কল্যাণকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যাব না।
-চলবে।