৩। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার চর্চা
অন্যের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও কৃতজ্ঞতার মানসিকতা পোষণ নিজের সহজতা, উদারতা ও সুস্থতার জন্যই প্রয়োজন। উপকারীর উপকার স্বীকার না করা এবং তাকে কৃতজ্ঞতা না জানানো কিংবা অন্যের নিকট নিজ ঋণের কথা স্বীকার ও প্রকাশ না করা মানসিক সংকীর্ণতা ও অনুদারতার পরিচায়ক।
যার যা প্রাপ্য, তাকে তা প্রদান ও পরিশোধ সাপেক্ষে লেনদেনে স্বচ্ছ বা পরিষ্কার থাকা নিজের মানসিক ঔদার্য ও শারীরিক সুস্থতার জন্য বিশেষ প্রয়োজন। নাহলে অন্যের কাছে যে ঋণ বা দায় নিজের অজান্তেই থেকে যায়, সে দায়ে বা ঋণে নিজকে হতে হয় জর্জরিত। অন্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো মানে দায় পরিশোধের সার্টিফিকেট তথা স্বস্তিলাভ।
নিজের বিবেককে যদি বলা যায় যে- আমি যার কাছ থেকে যে কর্ম, সেবা, সুযোগ-সুবিধা বা সহযোগিতা গ্রহণ করে দায়ে পড়েছি, তজ্জন্য তাকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে পেরেছি -তাহলে আপন অন্তর্জগত ভারমুক্ত হবে। পিছুটানহীন এই সহজ-সরল, স্বস্তিকর অনুভূতি মস্তিষ্কে আনন্দ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্ক থেকে সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র দেহ-মনে; যে আনন্দের আতিশয্যে শারীরিক-মানসিক জ্বালা-যন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা দূর এবং রোগব্যাধি প্রতিরোধের শক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তৈরি হতে থাকে নিজের ভেতরে।
দৈনন্দিন জীবনযাপনের প্রতি পদে পদে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এবং স্রষ্টা ও প্রকৃতি থেকে আমরা কত রকমের সার্ভিস যে গ্রহণ করে চলেছি, তার হিসাব কষতে গেলে কাগজ-কলম ফুরিয়ে যাবে।
ধরুন, সকালে ঘুম থেকে উঠে যে কাজটা দিয়ে বা যে সার্ভিসটি গ্রহণ করে দিনের যাত্রা শুরু করি.., সেই বাথ-টয়লেট সার্ভিসের সাথে কত্তগুলো মানুষ জড়িত -তা কি খেয়াল করি? সেই সার্ভিসের জন্য তাদের কাছে আমি কি ঋণী নই? কেবলই পয়সার বিনিময়ে অনুরূপ কাজ তাদেরকে আমি কি করে দেব?
অন্যের সেবা গ্রহণ করতে আমাদের অনেকেরই লজ্জা হয় না, অথচ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে লজ্জিত হই কিংবা কুণ্ঠিত হই; এটি হীনম্মন্যতা তথা এক ধরনের মানসিক রোগ। আমরা নিশ্চয়ই নিজকে মানসিক রোগী বা নির্বোধ বলে পরিচিত করতে চাই না। মহাকবি শেখ সাদীও বলেছেন- যার বুদ্ধি নেই, তার থেকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা আশা করো না।
যে সেবাটি যে মানুষকে আমি দিতে পারব না কিংবা যে কাজটি করার সক্ষমতা আমার নেই -সেই সেবা, সেই কাজ ঐ মানুষ থেকে গ্রহণ করা বা ভোগ করা মানে তার কাছে আমার ঋণগ্রস্ত হওয়া নয় কি? তাই অন্য অনেকের পাশাপাশি সুইপার বা ক্লিনারের কাছেও কি আমি ঋণী নই? তার বা তাদের কাছে ঋণ স্বীকার নাইবা করলাম, কিন্তু নিজের মধ্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার মানসিকতা এবং মানবিক গুণ তৈরি ও লালনে অসুবিধা কোথায়? সেই গুণ অর্জনে অনীহা ও ব্যর্থতা মনুষ্যত্বহীনতার পরিচায়ক নয় কী? মনুষ্যত্বহীন মানুষ অবিরাম সাফল্যের পথে এগুবে কী করে?
টয়লেট সেরে নাস্তার টেবিলে এসে যে নাস্তা সাবাড় করি, একবারও কি ভাবি- সে নাস্তার পেছনে কতজনের গলদঘর্ম পরিশ্রম ও সেবা জড়িত? যে ভাত-রুটি, সব্জি প্রতিদিন খাবার টেবিলে আমি পেয়ে যাই, সে ভাত-সব্জি তৈরির সাথে রাখাল, চাষী, কৃষক, মজুর, দোকানি, রাঁধুনী, আয়া-বুয়া কতজনের শ্রম ও সেবা জড়িত? সে খাবার আমি যতটা খেলাম আর যতটা ফেলে দিলাম বা নষ্ট করলাম (ছি! লজ্জা) -এ সবই কিন্তু তাদের কাছে আমার ঋণ।
কেবলই অর্থের বিনিময়ে এ ঋণ শোধ করার মানসিকতা কিন্তু অমানবিকতা বলে পরিগণ্য। এটি স্বার্থপরতা, ঔদ্ধত্য, গোঁড়ামি ও অবৈজ্ঞানিক মানসিকতার পরিচায়ক। এত্তসব সেবা যাদের কাছ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিয়ত গ্রহণ করে যাচ্ছি -তাদের সবার কাছে গিয়ে ঋণ পরিশোধের বা দায় মোচনের কিংবা কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ তৈরি নাইবা করলাম; অন্তত নিজের ভেতরে কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি বা বিনয়বোধ জাগাতে সমস্যা কোথায়? এসব সেবা-সংশ্লিষ্টদের জন্য মনে মনে ডরংয বা শুভকামনা জানাতে সমস্যা কী? আমার ঋণ স্বীকারে ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে তাদের লাভ হোক বা না হোক -আমার দায়মোচন তথা আমার প্রশান্তি ও আমার লাভ নিশ্চিত হয়ে গেল। কারণ তাদেরকে শুভ ইচ্ছা জানানোর আকাক্সক্ষা আমার মস্তিষ্কে তৈরি হলে, তা মস্তিষ্ক থেকে আমারই দেহ-মনে সঞ্চারিত হয়ে তাদের উছিলায় আমার সবকিছুতে শুভ ও কল্যাণ ঘটতে থাকবে। অন্যদিকে নিজকে দায়মুক্ত, ভারমুক্ত ও ব্যালেন্সড মনে হবে। এতে আমার মানবিক গুণ তৈরি হলো, আমি উন্নত মননের স্তরে পৌঁছে গেলাম, আমি আলোকিত হলাম এবং সেই আলোয় আমি সুস্থ ও সমৃদ্ধ হলাম; আমার আশপাশের মানুষদেরও ঐ আলোয় আলোকিত ও সমৃদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হলো। কারণ চিন্তা ও মননের উচ্চ পর্যায়ে যারা পৌঁছাতে সক্ষম হন, তারা যা চান -তাই হয়ে যায়। স্রষ্টার নিকট তাদের চাওয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পূরণ হয়ে যায়।
কি আরাম, কি শান্তি, কি সহজ-সরল পথ এগুলো! অথচ এ সরল পথে না গিয়ে এবং নিশ্চিত শান্তি ও সমৃদ্ধি থেকে আমরা বঞ্চিত হয়ে নিজের স্বাস্থ্যহানি ও আয়ুক্ষয় করে চলেছি, সমাজকে করছি বিভ্রান্ত ও কলুষিত -সে ধারণা আমাদের ক’জনের বোধে আসে? যাদের বোধে আসে, তারা এ দর্শন বা নীতি কতটা মান্য করছি? অন্যদেরকে এ সত্য-সুন্দরের পথে কতখানি উদ্বুদ্ধ করছি? এরূপ দৃঢ়কণ্ঠের দাবিদার এ সমাজে পাওয়া যাবে কতজন? যদি পাওয়া না যায়, তাহলে এ সমাজ বা জাতির গন্তব্য কোথায়? কারণ এসবই আমাদের স্বাস্থ্যসুখের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক কল্যাণ এবং জাতিগত সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্ববহ বিবেচ্য বিষয়। তাইতো কারও উপকার করার পর তিনি উপকার পেয়ে ধন্যবাদ দিক বা না দিক, উপকার গ্রহণের জন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ দিয়ে নিজে আরো বড় হতে বাধা কোথায়? আমার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস’র বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্র-যুবকদেরকে এরূপ চর্চায় আমরা উদ্বুদ্ধ করি। রবী ঠাকুরের একটি রোমান্টিক বন্দনার সাথে ক্যাম্পাস’র এ দর্শনের বেশ মিল রয়েছে।
তোমারে যা দিয়েছিনু, সে তোমারই দান
গ্রহণ করেছ যত, ঋণী তত করেছ আমায়।
অতীতে যাই করে থাকি না কেন, এখন থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের দর্শনে সবাই নিজ নিজ মানবিক গুণাবলি তৈরি ও বৃদ্ধির মাধ্যমে সুস্থ, নিরোগ, আলোকিত, সমৃদ্ধ জীবনের পথে পা বাড়াই। রিক্সাপুলার, ড্রাইভার, লিফটম্যান, দারোয়ান, মালি, কুলি, চাষী, মেথর, ঝাড়–দার, চাকর-চাকরানী সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ হই। যার কাছ থেকে যা পাই, তজ্জন্য তাকে ধন্যবাদ দেই; স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। সবাই সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিজের অহংকার ও ঔদ্ধত্যজনিত অসুস্থতা ঝেড়ে ফেলি। নিজ সুস্থতা ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করি, সমাজে-জাতিতে শান্তি ও সমৃদ্ধি আনি।
তাছাড়া পরিবারের মধ্যেও পরস্পরকে ধন্যবাদ দেয়া এবং পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মানসিকতা গড়ে তোলা দরকার। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, শ্বশুর-শাশুড়ি -যাদের ত্যাগ ও সহযোগিতাকে আমরা Taken for granted বলে মনে করি এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে কুণ্ঠাবোধ করি। এরূপ হীন মানসিকতা ঝেড়ে ফেললে পারিবারিক শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
তাই আসুন, সামাজিক জীব হিসেবে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমরা যাদের ওপর নির্ভরশীল এবং যাদের কাছে ঋণী, তাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মানসিকতা তৈরি করে সুস্থ ও ভারসাম্য জীবনযাপনে অভ্যস্ত হই।
আর দেখুন না, এই আমিওতো ঋণী আপনাদের সবার কাছে -নিশীথ নিদ্রা ত্যাগ করে লেখা আমার এ কথাগুলো পড়ার জন্য। তাই এ ভবঘুরের সহজ-সরল চেতনাকে লালন করার জন্য আগাম ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
৪। ক্ষমাশীল ও ধৈর্যশীল হওয়া
মানুষের মহৎ গুণাবলীর অন্যতম হচ্ছে ‘ক্ষমা’। অন্যকে ক্ষমা করা কেবল মহত্বের লক্ষণই নয়, আপন অন্তর্জ¡ালা ও দুঃখ-কষ্ট কাটিয়ে রোগমুক্ত, সুস্থ ও ব্যালেন্সড লাইফের প্রধান নিয়ামক ও শক্তি হচ্ছে ক্ষমা। ক্ষমা চাইতে পারা এবং ক্ষমা করতে পারা -দু’টোই সহজ-সরল ও উদার মনের পরিচায়ক; যা বড় মাপের মানুষদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
‘আমার আমি’ এর সাথে অন্যের সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট যোগ করে যে অন্তর্জ্বালা, রোগ-ব্যাধি বা অসুস্থতা তৈরি হয় -তা থেকে আত্মরক্ষা ও আত্মবিকাশের প্রধান অবলম্বন হচ্ছে ক্ষমা। ক্ষমার মানসিকতা তৈরি করতে না পারলে এবং অন্যকে ক্ষমা করে দিতে ব্যর্থ হলে অন্তরে লালিত দুঃখ-কষ্টের প্রতিক্রিয়ায় শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা, দেখা দেয় নানা রোগ-শোক। এজন্যই বিশ্বখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন-
ক্ষমা করা ভালো,
ভুলে যাওয়া আরও ভালো।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর অমর উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’র শেষে লিখেছেন-
যে আমারে দেখিবারে পায়
অসীম ক্ষমায়
ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি,
এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
অর্থাৎ বিশ্বকবি নিজকে বলি দিতে বা আত্মোৎসর্গ করতে চান তারই কাছে, যে তাঁকে দেখবে অসীম ক্ষমার দৃষ্টিতে।
ক্ষমা করতে পারেন তারা -যাদের বুকের বারান্দা বিশাল এবং যে বুকে লালন করেন ততোধিক বড় হৃদয়, চিন্তা-চেতনায় যারা উদার ও অত্যাধুনিক, শান্তি ও সম্প্রীতি লালনে যারা বদ্ধপরিকর। তাই যারা অনেকাংশে ক্ষমাশীল, তারা মহৎ; আর যারা সম্পূর্ণ ক্ষমা করতে পারেন, তারা দেবতুল্য। তাই বলা হয়, অন্যায় করা মানবিক আর ক্ষমা করা দেবধর্ম। হাদীসে আছে- আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা তিনি, যিনি প্রতিশোধ নেয়ার মতো ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অপরকে ক্ষমা করে দেন। অন্যদিকে আল্লাহর নিকট তিনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার অসদাচরণের কারণে মানুষ তার থেকে দূরে থাকতে চায়।
আল্লাহ মহান এজন্য যে, তিনি সর্বদাই ক্ষমাশীল এবং ক্ষমার সৌন্দর্যে আপ্লুত। অন্যদিকে আমরা এজন্যই সাধারণ মানুষ, কারণ আমাদের মধ্যে ক্ষমার সৌন্দর্য কম। যার দৃষ্টি যত বেশি ক্ষমাসুন্দর, তিনি তত বেশি উন্নততর বিশেষ মানুষ।
প্রিয় পাঠক, ৩ বছর পূর্বে আমার বৃদ্ধা মায়ের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কঠিন অসুখ হয়েছিল। হাসপাতালের আইসিইউ থেকে মাকে বাসায় এনে সেসময়ে যেসব কাউন্সেলিং করেছিলাম, তন্মধ্যে ক্ষমার মানসিকতা তৈরিই ছিল অন্যতম। মাকে বলতে থাকলাম- মা, আপনি সবাইকে ক্ষমা করে দিন; আপনার ছোটবেলা থেকে এ পর্যন্ত যতজনের কাছ থেকে যত দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা পেয়েছেন, তাদের সবাইকে একেবারে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দিয়ে নিজকে জ্বালা-যন্ত্রণামুক্ত, সংশয়হীন, নিষ্কন্টক, স্বচ্ছ ও পবিত্র করে ফেলুন; দেখবেন অন্তর্জগতে কত আরাম, কত সুস্থতা, কত আনন্দ! এরূপ পরিচ্ছন্ন ও দ্বিধামুক্ত মনে স্রষ্টাকে ডাকতে পারলে আপনার সকল অসুখ-বিসুখ, বেদনা ও বিস্বাদ দূর হয়ে যাবে।
এভাবেই নিজের সাথে নিজে কথা বলে, সকল অসুখ ও অসুবিধা তাড়ানোর ফলে স্রষ্টার মেহেরবানীতে ৩ বছর ধরে বৃদ্ধা মাকে তেমন ঔষধ খেতে হচ্ছে না।
অনেকের ধারণা, ক্ষমা করলে অন্যে লাভবান হয়, আর নিজকে হতে হয় সুবিধাবঞ্চিত। ...ভুল, সবই ভুল। এভাবে জীবনের পাতায় পাতায় আমরা কত যে ভুল লিখে চলেছি, তার ইয়ত্তা নেই। আত্মঅহংকার ও প্রবৃত্তির কারণে যে ভুল আর শোধরানো হয়ে ওঠে না।
তাই ক্ষমা যত বেশি করতে পারবেন, তত বেশি লাভবান হবেন আপনি নিজে; অন্যদিকে যাকে ক্ষমা করলেন তিনি কতটুকু লাভবান হবেন, তা নির্ভর করে তার জ্ঞান-বুদ্ধির ওপর। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় যে- তিনি লাভবান হোন বা না হোন, ক্ষমার মহিমায় আপনি কিন্তু লাভবান হয়ে গেলেন; স্বাস্থ্যে ও সুখে নিজ জীবনকে করলেন মহিমান্বিত।
তাই আসুন- আমরা সবাই ক্ষমাসুন্দর, সুস্থ ও নিরোগ জীবনযাপন করি। আমার শরীরে ততক্ষণই অন্যের কু-আচরণ ক্রিয়া করে বা প্রভাব বিস্তার করে, যতক্ষণ আমি অন্যের সৃষ্ট কষ্টকে নিজ চিন্তায় ও দেহ-মনে লালন করি। তাই অন্যে যাই করুক না কেন, আমি যদি আমার শরীরে কোনো নেগেটিভ বা রিএকটিভ উপাদান নিজে প্রবেশ না করাই, তাহলে আমি সুস্থ ও স্বাভাবিক। আর যে জ্বালা-যন্ত্রণা ইতোমধ্যেই দেহ-মনে প্রবেশ করিয়ে ফেলেছি, তা দূর করতে অত্যাশ্চর্য টনিক ক্ষমার আদর্শে উজ্জীবিত হই।
আর ধৈর্যের কথা? ধৈর্যহীনতা বা অস্থিরতা যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, লক্ষ্য অর্জন বা সাফল্যকে বিঘিœত করে। কথায় বলে- সবুরে মেওয়া ফলে। অর্থাৎ ধৈর্যধারণকারী তার ধৈর্যের সুফল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পেয়ে যান। এটি কোনো আবেগী বিষয় বা কথার কথা নয়; এটি যুক্তি ও বিজ্ঞানের কথা। তাই অধৈর্য ও অস্থিরতার সকল আবেগকে ঢেকে দিতে হবে যুক্তি ও বিবেক দিয়ে। কারণ ধৈর্য হারিয়ে ফেললেতো ইৎধরহ পড়হপবহঃৎধঃব করা যায় না, মনোসংযোগ বা মন নিয়ন্ত্রিত থাকে না। ফলে লক্ষ্যস্থির, পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল নির্ধারণ এবং গন্তব্যে পৌঁছা কষ্টকর হয়ে যায়; ঝঢ়রৎরঃঁধষ ষবাবষ বাধাগ্রস্ত হয়; কাক্সিক্ষত অর্জন বা সাফল্য আসে না। তাইতো বলা আছে, ধৈর্যের ফল স্রষ্টা নিজেই দিয়ে থাকেন।
আমাদের উচিত যেকোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে টিকে থাকা এবং দেহ-মনকে স্থিরতা দান করা। এরূপ স্থির ও শান্ত মন আমাদের সুস্থতা ও সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।
আপনার সকল পরিস্থিতি নির্ভর করে আপনার নিজের স্থিতির ওপর। তাই ভাবুন- আপনি কি ধৈর্য ও স্থিতি বজায় রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন, নাকি পরিস্থিতির দ্বারা আপনি নিয়ন্ত্রিত হবেন! ইচ্ছা করলে আপনি দুধ বিক্রি করে মদ কিনতে পারেন; আবার এই আপনিই মদ বিক্রি করে দুধ খেয়ে সুস্থ-সমৃদ্ধ-ব্যালেন্সড ও ছন্দময় জীবন উপভোগ করতে পারেন। সবই আপনার নাগালে, সবকিছুই আপনার দ্বারা সম্ভব।
-চলবে।