ফ্রিজে রেখে ও ফ্রিজে না রেখে দুভাবেই খাবার সংরক্ষণ করা যায়। কোনো কোনো খাবার হয়তো রান্না না করেও কিছুদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। কোনো খাবার হয়তো দ্রুত রান্না করে নিলেই ভালো থাকবে কিছুদিন। জেনে নেওয়া যাক গরমে খাবার ভালো রাখার পদ্ধতি।
রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের প্রভাষক তাসমিয়া জান্নাত খাবার সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন—
এ সময় ফ্রিজের তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হবে। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করার পরপরই গরম করতে পারবেন। তবে ডিপ ফ্রিজ থেকে বের করার পর খাবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এলে তারপর খাবার গরম করলে ভালো। কোনো খাবার ফ্রিজ থেকে বের করার পর স্বাভাবিক ঘ্রাণের ব্যতিক্রম হলে যেমন, টকজাতীয় ঘ্রাণ হলে বা রঙের অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে অবশ্যই সেই খাবার খাবেন না।
সবজি সংরক্ষণ
এই সময় সবজি ও ফলমূল খুব বেশি দিন ভালো থাকে না। ফ্রিজে চার-পাঁচ দিন ভালো রাখতে পারবেন। ফ্রিজের বাইরে আরও তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।
সবজি সংরক্ষণ করতে চাইলে বাজার থেকে সবজি আনার পরপরই দেখতে হবে কোনগুলো একটু নরম হয়ে গেছে বা খানিকটা পচে গেছে। বেছে আলাদা করে ফেলুন। ভালো সবজিগুলো ধুয়ে নিন। সবজিগুলো ফ্রিজে ঢোকানোর আগে যেন অবশ্যই ভালোমতো শুকিয়ে নেওয়া হয়। সবজির বোঁটা সহজেই পচে যায়। সবজি ফ্রিজে রাখার আগেই বোঁটা ফেলে দিন।
কাঁচা মাছ কাঁচা মাংস
কাঁচা মাছ বা মাংস অবশ্যই ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এভাবে মাছ দুই সপ্তাহ, মুরগি এক মাস এবং গরু ও খাসির মাংস ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
* মাছ ও মুরগির মাংস ফ্রিজে রাখার আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। গরু ও খাসির মাংস সাধারণত একটু লম্বা সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হয়, তাই এগুলো বাজার থেকে আনার পরপরই ফ্রিজে উঠিয়ে রাখলে ভালো।
রান্নার পর
* রান্না করা খাবার রাখতে চাইলে রান্নার পরই পরিবেশনের অংশটুকু বাদে বাকি খাবার বাক্সে ভরে নিন। বাক্স অবশ্যই পরিষ্কার ও শুকনো হতে হবে। প্লাস্টিকের বাক্সের চেয়ে কাচের বাটি (ঢাকনাসহ) খাবার রাখার জন্য ভালো।
* বড় বাক্সে খাবার রাখা হলে বারবার চামচ দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়, এর ফলে খাবার সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। সম্ভব হলে ছোট ছোট বাক্সে ভরে রাখুন। কোনো বাক্সের খাবার একবার খাওয়া হলে সেই বাক্সের খাবার আর ফ্রিজে না রেখে একবারে খেয়ে নেওয়াই ভালো।
* খাবার নাড়াচাড়া করার পর আবার যদি ফ্রিজে রাখতেই হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চুলায় জ্বাল দিয়ে নিতে হবে।
* •বাক্সে রাখা খাবার গরম অবস্থায় ঢেকে দিলে ঢাকনার নিচে বাষ্প জমা হয় এবং এই বাষ্প আবার পানি হয়ে খাবারের মধ্যে পড়লে খাবার দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই রান্না করা খাবারের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ার পর ঢেকে নিয়ে ফ্রিজে উঠিয়ে রাখতে হবে।
* রান্না করা মাছ-মাংস ডিপ ফ্রিজে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।
* বিরিয়ানি ও খিচুড়ির মতো খাবার ফ্রিজে এক-দুই দিনের জন্য রাখা যায়।
দুধ ও দুধের তৈরি খাবার
* দুধ ও দুধের তৈরি খাবার ফ্রিজে রাখলেও দিনে দুই-তিনবার চুলায় জ্বাল দেওয়া প্রয়োজন।
* ডিপ ফ্রিজে দুধ রাখলে খাওয়ার আগে বের করে নিয়ে তরল হলে তা জ্বাল দিয়ে খেতে হবে।
* দুধের তৈরি খাবারও রান্নার পরই পরিবেশনের জন্য আলাদা করে নিয়ে বাকি অংশ ছোট ছোট বাক্সে রাখতে হবে। চামচ ব্যবহার করার বিষয়ে রান্না করা অন্যান্য খাবারের মতোই সতর্কতা প্রয়োজন।
ডিম সংরক্ষণ
* কাঁচা ডিম ফ্রিজে রাখলে ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।
* ফ্রিজ থেকে বের করার পর পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ব্যবহারের আগেই বোঝা যায়, এটি ভালো আছে কি নেই। পানিতে ভেসে উঠলে ধরে নিতে হবে ডিম নষ্ট হয়ে গেছে।
* ডিম ভেঙে নুডলস বা অন্য কোনো খাবারে দিতে চাইলে সরাসরি চুলায় দেওয়ার চেয়ে আলাদা একটি বাটিতে ডিম ভেঙে নেওয়া ভালো।
* রান্না করা ডিম ফ্রিজে রাখলেও খুব একটা ভালো থাকে না। নুডলসে ডিম দেওয়া হলে সেই নুডলসও এক দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা যাবে না।
ফল সংরক্ষণ
আনারস বা তরমুজ বাসায় আনার পর ছোট ছোট টুকরো করে বাক্সে ঢুকিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ভালো থাকবে। তবে দুই দিনের জন্য।
মসলাপাতি
বাটা মসলা ডিপ ফ্রিজে ১০-১২ দিন ভালো থাকে। এমনিতে মসলা ফ্রিজে রাখলে অন্য খাবারেও মসলার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। তাই মসলা ফ্রিজে রাখলেও এয়ারটাইট বাক্সে রাখা প্রয়োজন। অন্যান্য মসলা ফ্রিজে রাখা গেলেও টুকরো করে রাখা পেঁয়াজ বা বেটে রাখা পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখলে বিষক্রিয়া হয়ে যেতে পারে।
ফ্রিজে না রেখে খাবার সংরক্ষণ
•* লবণ ও হলুদ দিয়ে গরু বা খাসির মাংস কিছুটা কষিয়ে রাখা যেতে পারে। এভাবে মাংস সংরক্ষণ করতে হলে প্রতিদিন দুইবার জ্বাল দিতে হবে। তবে মুরগির মাংস বা মাছ এভাবে করতে গেলে ভেঙে যাবে এবং সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না।
* •সবজি ধুয়ে নেওয়ার পর শুকনো হয়ে গেলে এমনিতেই দু-তিন দিন পর্যন্ত রাখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে সবজির স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমে গিয়ে শুকনো ভাব চলে আসে।
* •পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাসায় আনার পর পাতলা কাপড় বা কাগজ বিছিয়ে নিয়ে সেটির ওপর এগুলো ছড়িয়ে রাখতে পারেন। এগুলো এমনভাবে রাখতে হবে, যেন ঘেমে না ওঠে।
* এই সময়টাতে নরম করে ভাত রান্না করার চেয়ে ঝরঝরে করে রান্না করা ভালো। এভাবে রান্না করলে ভাত ভালো থাকে।
* অতিরিক্ত গরমে ভাত নষ্ট বা নরম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে ভাতে পানি দিয়ে রাখা যায়। তবে পানি দেওয়া ভাত অনেকে খেতে পারেন না। তাই পানি দেওয়ার পর চুলায় অল্প আঁচে তাওয়ায় দমে রাখতে পারেন। এরপর ফ্যানের বাতাসে ভাত ছড়িয়ে রেখে ঠান্ডা করে নিন। খাওয়ার আগে হাঁড়িতে পানি নিয়ে সেই ভাত একবার ফুটিয়ে মাড় ঝরিয়ে খেতে পারেন।
* এ সময় সহজেই রান্না করা ডাল টক হয়ে যায়। তাই ডাল ভালো রাখতে চুলায় জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। মাইক্রো ওভেনে গরম করে রাখলে খাবার ভালো থাকে না। চুলায় জ্বাল দেওয়ার পর ডাল খোলা অবস্থায় ফ্যানের নিচে রেখে দিন। ঠান্ডা হলে জালি দিয়ে ঢেকে রাখার পরও ফ্যানের নিচে রাখতে পারলে ভালো হয়।
* মাছ-মাংস বা তরকারি দুই বেলার জন্য রান্না করা হলে এক বেলার খাবারটুকু আলাদা বক্সে উঠিয়ে রাখুন। খোলা অবস্থায় ফ্যানের নিচে রেখে ঠান্ডা করুন। এরপর একটি স্টিলের পাত্রে পানি নিয়ে সেই পাত্রের ওপর বাক্সটি রেখে দিন। বাক্সের ওপর জালি দিয়ে ঢেকে রাখুন। এ ক্ষেত্রেও ফ্যান চালিয়ে রাখা ভালো।
* দুধের তৈরি খাবার পরিবেশনের পর চামচ সরিয়ে রেখে আবার চুলায় জ্বাল দিয়ে নিন। এরপর ফ্যানের নিচে ঠান্ডা করে স্টিলের পাত্রে পানি নিয়ে পানির ওপর বাক্সে করে খাবারটুকু রাখুন। বাক্সটি জালি দিয়ে ঢেকে ফ্যানের নিচে রাখতে পারেন।
* শুকনো মিষ্টি জাতীয় খাবার এয়ারটাইট বাক্সে রাখলেই বেশ কিছুদিন ভালো থাকে।
* এক বেলার খাবারের খানিকটা বেঁচে গেলে খাবারের পাত্র থেকে চামচ সরিয়ে ফেলুন। চুলায় ২-১ বার ফুটিয়ে ভালোভাবে গরম করে ফ্যানের নিচে ঠান্ডা করুন। ঠান্ডা হলে জালি দিয়ে ঢেকে ফ্যানের নিচে রাখা ভালো।
* ভর্তা জাতীয় খাবার, যেগুলোতে কাঁচা পেঁয়াজ বা কাঁচা রসুন দেওয়া থাকে, সেগুলো অন্য বেলার জন্য রেখে দিলে সাধারণত নষ্ট হয়ে যায়।