আপনি হতে পারেন
মাইকেল জ্যাকসনের চেয়েও জনপ্রিয়
২৫ জুন ২০০৯, মাইকেল জ্যাকসন দেহত্যাগ করেছে। তার দেহত্যাগের পূর্বে আমার ভাবনার আকাশে কখনো তাকে আবিষ্কার করিনি। আফ্রো-আমেরিকান এ পপ-সম্রাটের পরপারে যাবার সংবাদে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। গ্লোবাল ল্যাংগুয়েজ মনিটর এর জরিপমতে, একুশ শতকের অন্যতম প্রধান ঘটনা জ্যাকসনের মৃত্যু। তার মৃত্যুর খবর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নির্বাচনের চেয়েও পাঁচগুণ বেশি কভারেজ পেয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায় এবং ইরাক যুদ্ধের চেয়ে কভারেজ পেয়েছে দ্বিগুণ। জ্যাকসনের মৃত্যু ঘটনায় আত্মাহুতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তার ডজনখানেক শোকবিহ্বল ভক্ত। তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে এক ঘন্টায় অনলাইনে আবেদন করেছে ৫০ কোটি ভক্ত; অথচ টিকিট পেয়েছে ১৭,৫০০ জন। সে টিকেটের দাম আবার ২৫ ডলার (১,৭৫০ টাকা)। টিকেটের লটারিতে হেরে গিয়ে এক ভক্ত অন্যের কাছ থেকে টিকিট পাবার জন্য এক লক্ষ ডলার (৭০ লক্ষ টাকা) প্রদানের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছে।
মাত্র এক ব্যক্তির জন্য বিশ্ববাসী এত শোকাহত! অর্থাৎ জ্যাকসন পৃথিবী থেকে চলে গিয়ে বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে, আবার বেঁচে থাকতেও কাঁপিয়েছে বিশ্ব; যেন হাতি বাঁচলেও লাখ টাকা, মরলেও লাখ টাকা।
গানতো বহুজনই গায়। এ পৃথিবীতে লক্ষ জনপ্রিয় শিল্পী রয়েছে, রয়েছে কোটি পেশাদার শিল্পী। এমনকি আমরাও স্বভাবজাত গায়ক-গায়িকা; অনেকেই বাথরুম সিঙ্গারও বটে। এখন কথা হচ্ছে, লক্ষ-কোটি পেশাদার শিল্পী বেঁচে থাকতে এক ‘কালো’ জ্যাকসনকে নিয়ে বিশ্ববাসীর এত তোলপাড় কেন?
এ পর্যন্ত পড়ে অনুগ্রহপূর্বক একটু চিন্তা করুন উক্ত প্রশ্ন নিয়ে; খুঁজুন এর সম্ভাব্য উত্তরগুলো।
শুধু গান গেয়ে একজন মানুষ এত বিশ্বনন্দিত বা বিশ্বজয়ী! এর নেপথ্য রহস্য কী? চলুন, সে রহস্য উদঘাটনে। জ্যাকসন কি গানের বাইরে বিশ্ব-কল্যাণ, মানবতা বা সৃষ্টির সেবায় তেমন কিছু করেছে? এর আগাম উত্তর ‘না’। তাহলে এরোপ্লেন বা রেডিও-টিভির আবিষ্কারক অথবা কোনো বিজ্ঞানী বা রাষ্ট্রনায়কের চেয়ে জ্যাকসন বেশি জনপ্রিয় কেন? এ প্রশ্নে আমার ব্যক্তিগত উত্তর নিম্নরূপ।
‘বেশি’ এর কারণ হচ্ছে অধিকাংশ মানুষের হুজুগে স্বভাব, যে হুজুগের আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে প্রায় একই সময়ে দেহত্যাগী মাদার তেরেসার চেয়ে লেডি ডায়ানার অধিক জনপ্রিয়তা-আলোড়ন ও মিডিয়া কভারেজ। অন্যদিকে জ্যাকসনের ‘জনপ্রিয়তা’ এর কারণ হচ্ছে সে ব্যতিক্রম তথা তার ব্যতিক্রমী চিন্তা। সঙ্গীতের সাথে মুন-ওয়াকিং বা ব্রেক ড্যান্স তাকে করে তুলেছে পর্বতসম জনপ্রিয়। ব্যতিক্রমী নাচ-গান পরিবেশনই তাকে দিয়েছে বিশ্বশীর্ষ জনপ্রিয়তা, যা লক্ষ-কোটি শিল্পীর মাঝেও তাকে করেছে অনন্য ও ব্যতিক্রমী। এ ব্যতিক্রমটা এসেছে কোথা থেকে? ব্যতিক্রমটা এসেছে তার ব্যতিক্রমী চিন্তা থেকে। তার মানে সব সাফল্যের মূলে রয়েছে ব্যতিক্রমী চিন্তা বা চিন্তার ব্যতিক্রম। মোদ্দাকথা, সকল সাফল্যের মূল বিষয় হচ্ছে ‘চিন্তা’। চিন্তাশক্তিই হচ্ছে বিশ্বজয়ের প্রধান সোপান, যার কোনো বিকল্প নেই। তাহলে এ পর্বের উপসংহার হলো, জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে বা বিশ্বজয়ের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী চিন্তার কোনোই ব্যতিক্রম নেই। এখন প্রশ্ন হলো-
কীভাবে জনপ্রিয় হওয়া যায়
জনপ্রিয় হতে হলে জনমনে পছন্দের বা জনগণের কল্যাণে কিছু করতে হবে। চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে বা সৃজনশীলতার উন্মেষ ঘটিয়ে যেকোনো মানুষই জনপ্রিয় বা বিশেষ মানুষ হতে সক্ষম। প্রশ্ন হলো, চিন্তাশক্তি বা সৃজনশীলতা বাড়ানো যায় কীভাবে? তাও কিন্তু কঠিন কিছু নয়। আপনার দেহের ওপর মস্তিষ্করূপী যে সুপার কম্পিউটার রয়েছে, তা দিয়েই আপনি সবকিছু করতে পারেন। এজন্য একে প্রোগ্রামিং করে নিলেই হয়; এ প্রোগ্রামিংও একেবারেই সহজ।
আমরা প্রতিদিনই অনেক কিছু দেখছি-শুনছি বা পড়ছি। এই দেখা-শোনা ও পড়াকে চিন্তার খোরাক হিসেবে ব্যবহার করা উচিত। দেখা-শোনা ও পড়ার বিষয়ের মধ্যে বেশি গুরুত্বপূর্ণটিকে নিয়ে বেশি চিন্তা করব, আর কম গুরুত্বপূর্ণটিকে নিয়ে কম চিন্তা করব। প্রতিটি বিষয়ে চিন্তা করে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর নিজেই তৈরি করে ঐ পড়াশোনা বা দেখার উপসংহার টানব। নিজ চিন্তায় এরূপ উপসংহার টানা ছাড়া এখন থেকে নাটক-সিনেমা-টকশো দেখা বা পড়াশোনা শেষ হয়েছে বলে মনে করব না। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্বচ্ছ করা যায়।
জ্যাকসনের জনপ্রিয়তার সংবাদ টিভিতে দেখা বা খবরের কাগজে পড়ার পর আপনি নিজের কাছে নিজেই কিছু প্রশ্ন ও উত্তর তৈরি করতে পারেন। যেমন- জ্যাকসনের এত জনপ্রিয়তার কারণ কী? জ্যাকসন এরূপ না নেচে-গেয়ে অন্য কোনোরূপে নাচলে বা গাইলে কেমন হতো? জ্যাকসনের স্থলে আমি হলে কী করতে পারতাম? আমি কি এরূপ বা অনুরূপ নাচতে বা গাইতে পারি বা পারতাম? সেরূপ গাইলে বা নাচলে আমাকে কেমন দেখাতো? জ্যাকসনের অকাল মৃত্যুর কারণ কী? তার ড্রাগ-নেশার কারণ কী? এ নেশার কথা জেনেও আমি কি জ্যাকসনকে পছন্দ করি? কী কারণে মানুষ নেশাগ্রস্ত হয়? হতাশা বা প্রতিকূলতা কীভাবে জয় করা যায়? এরূপ বিপথগামী মৃত্যু-পথযাত্রীর জন্য আমি কি কিছু করতে পারি? মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য আমাদের কী করণীয় আর কীইবা করছি? -ইত্যাকার সংগত-অসংগত নানা প্রশ্নোত্তর পর্ব নিজেই পরিচালনা করে ‘মাইকেল জ্যাকসন পর্ব’ শেষ করার পর অন্য প্রসঙ্গে বা অন্য কাজে যাব। প্রতিটি অনুষ্ঠান দেখার পর এবং যেকোনো বিষয় পড়া বা শোনার পর সেটির মূল বক্তব্যের উপসংহার টানব। এখন থেকে নাটক-টকশো দেখেই ঘুমাতে চলে যাব না। নাটক দেখার পর কাহিনী ও চরিত্র নিজ চিন্তায় বিশ্লেষণ করে সে নাটক-পর্ব শেষ করে তারপর অন্য কাজে যাব। ঐ নাটকের ঘটনা বা চরিত্র বা অভিনয় এরূপ না হয়ে অন্যরূপ বা ঐ ঐ রূপ হলে কেমন হতো? আমার জীবনে এরূপ ঘটনা ঘটলে কী করতাম? এভাবে নিজের সাথে নিজেরই কত কথা! কত আবিষ্কার! কত সৃষ্টি!
যেকোনো বিষয়ে পড়াশোনা বা দেখার পর এভাবে নিজের সাথে নিজেই কথা বলার অভিনয় করে করে আপনি যখন নিজের কাছে নিজেই প্রিয় অভিনেতা বা অভিনেত্রী হয়ে উঠবেন, নিজের ওপর আস্থায় নির্ভরশীল হবেন -তখন ভাববেন বা অন্তত ভান (চৎবঃবহফ) করবেন যে, ‘আমি অবশ্যই ক্রিয়েটিভ হচ্ছি, ডায়নামিক হচ্ছি, বিশেষ মানুষ হচ্ছি’।
এরূপ আত্ম-অভিনয়ের ফলে নিজ মস্তিষ্ক প্রোগ্রামিং হয় দ্রুত ও ডায়নামিকভাবে; অর্থাৎ আমরা হয়ে উঠি ক্রিয়েটিভ ও ডায়নামিক। কারণ কয়েক ঘন্টা সময় ব্যয় করে একটি নাটক বা ছবি দেখা অথবা একটি গল্প-উপন্যাস পড়ার ফলে যদি ব্রেনে প্রোগ্রামিং হয় একটি, তাহলে কয়েক মিনিট সময় ব্যয় করে ঐ সাবজেক্টকে চিন্তার রাজ্যে বিভিন্ন ডায়মেনশনে বিভিন্নরূপে ও রংয়ে-ঢংয়ে চিন্তা করে তার ফলাফল বা ঊভভবপঃ দেখার ফলে মস্তিষ্কে প্রোগ্রামিং হয় বহুগুণ বেশি।
এ যেন রংয়ের খেলা। একটি রং দিয়ে ছবি আঁকা আর সাত রং দিয়ে ছবি আঁকার ফলাফলের মতো। এক রংয়ের ঊভভবপঃ যদি ধরা হয় একটি, তাহলে সাত রংয়ের সংমিশ্রণের ঊভভবপঃ হবে সহস্রটি। এমনকি সাত রংয়ের পারস্পরিক মিশ্রণে যে কত রকমারি ফলাফল হতে পারে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। একটি গল্প পড়া মানে মস্তিষ্কে একটি রং তৈরি করা। আর ঐ গল্প পড়ার পর তার বিষয়বস্তু নিয়ে বিভিন্ন ডায়মেনশনে চিন্তা করা মানে সাত রংয়ের সহস্র ঊভভবপঃ এর অনুরূপ ফলাফল তৈরি করা।
এভাবে রংয়ের খেলায় শিশুদেরকে মাতিয়ে তোলা খুবই জরুরি। সে বয়সে এ খেলার সুযোগ বঞ্চিত হয়ে আমার মতো হতভাগারা খুবই মিস করেছি। শিশুদেরকে খেলাচ্ছলেই ব্রেন প্রোগ্রামিং করে মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলা খুবই সহজ। ধনী-গরিব সব মানুষই সহজে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। যেমন- ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুকে চোখ বুঁজে তার পরনের জামা-কাপড়ে কী কী রং-ফুল-ছবি বা ডিজাইন রয়েছে, তা জিজ্ঞাসা করে করে তার চিন্তা থেকে উত্তর বের করা। চোখ বুঁজে শিশুকে দিয়ে প্রশ্নোত্তর খোঁজানো মানে মস্তিষ্ক-চর্চা করা অর্থাৎ মস্তিষ্কে প্রোগ্রামিং করা। এরূপ বহুবিধ উপায়ে চেতনা ও চিন্তার চর্চার মাধ্যমে ব্রেন প্রোগ্রামিং করা যায় অনায়াসে। এতে ব্রেনের কার্যকারিতা ও স্মৃতিশক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ছোটবেলা থেকে মস্তিষ্ক ও চিন্তার এই চর্চায় অভ্যস্ত একটি মানুষ পরিণত বয়সে কত যে মাল্টি-ডায়নামিক ও প্রোজ্জ্বল-প্রতিভাদীপ্ত বা শক্তিশালী হতে পারে, তা ভাবতেই বিস্মিত হই।
আপনি যে কক্ষে থাকেন, তার দেয়ালের প্রকৃত রং আপনি দেখেছেন বটে। কিন্তু সে দেয়াল অন্য রংয়ের হলে বা সাত রংয়ের হলে তার ফলাফল কীরূপ হতো, তা দেখেননি হয়ত। আর এজন্যতো রংমিস্ত্রি ডেকে ৫০ দিন সময় নিয়ে দেয়ালের রং পরিবর্তন করে করে দেখার দরকার নেই। চোখ বন্ধ করে মনের চোখ তথা চিন্তা দিয়ে প্রথমে একেক দেয়ালের একেক রং পরিবর্তন করে চার দেয়াল সাত রংয়ে পরিবর্তনের ফলাফল দেখতে পারেন, এরপর এক রং থেকে অন্য রংয়ে ফিরে ফিরে রংয়ের পরিবর্তনের ফলাফল দেখতে পারেন এবং এতে সময় লাগবে ২/৩ মিনিট। অর্থাৎ বাস্তবে বা ফিজিক্যাল ডায়মেনশনে যে কাজ আপনি ৫০ দিনে করেন, মেন্টাল ডায়মেনশনে তা ২/৩ মিনিটে করতে পারেন। এবার ভাবুনতো, অন্য মানুষদের তুলনায় আপনি কত এগিয়ে! কত ডায়নামিক! কত ক্রিয়েটিভ!
বাস্তবে দেখে-শুনে-পড়ে কোনোকিছু বুঝতে যদি ১ দিন লাগে, তাহলে চিন্তা দিয়ে সে বিষয় বুঝতে লাগবে ১ সেকেন্ড বা ১ মিনিট। এরূপ চর্চার মাধ্যমে নিজের চেতনাবোধ ও চিন্তাশক্তি ডায়নামিক করে অল্পদিনেই আপনি হতে পারেন বিশেষ মানুষ তথা উন্নততর মানুষ (ঝঁঢ়বৎরড়ৎ ঐঁসধহ ইবরহম)।
আমাদের নবীজীর মেরাজ গমন হয়তবা সেরূপ। তিনি আল্লাহর দিদারলাভের পর ফিরে এসে দেখেন যে- যাত্রার পূর্বে তিনি যে অজু করেছিলেন, সে অজুর পানি তখনো গড়াচ্ছে। অর্থাৎ তিনি ফিজিক্যাল ডায়মেনশনে অজু করে মেন্টাল বা স্পিরিচুয়াল ডায়মেনশনে মেরাজ গমন করেছেন বলে বিশ্বাস। আর সে কারণেই মেরাজ গমনের সময়টি ফিজিক্যাল ডায়মেনশনের হিসেবে অত্যল্প মনে হলেও স্পিরিচুয়াল ডায়মেনশনের হিসেবে সপ্ত আসমান ভ্রমণের ঐ সময়টুকু ছিল ব্যাপক ও যথেষ্ট।
নবীজী বা মহামানবদের অনুসরণে আমরাও এখন থেকে সবকিছু নিজ চিন্তাশক্তি দিয়ে দেখব, শুনব, বুঝব। চিন্তাশক্তির এ জগতে বা স্পিরিচুয়াল ডায়মেনশনে অমঙ্গল ও অকল্যাণকর কিছু নেই। অন্যের মঙ্গলের কথা ভাবলে নিজেরই মঙ্গল হয়। আর অন্যের প্রতি খারাপ চিন্তা করলে তার খারাপ হবার পূর্বে নিজেরই অমঙ্গল হয় এবং নিজের স্পিরিচুয়াল লেভেল (অঁৎধ-নূর-আলো বা জ্যোতি) তথা চিন্তাশক্তি হয় ক্ষতিগ্রস্ত। সৎভাবে বহুগুণে লাভবান (গঁষঃরনবহরভরপরধৎু) হবার সুযোগের কথা জেনেশুনেও আমরা কি মিথ্যা, অসত্য ও অসুন্দর পথে থেকে যাব? না, কিছুতেই না। আসুন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকি, বহুগুণে লাভবান হবার পথ আঁকড়ে ধরি।
সে আমলে নবী-রাসুলগণ বা মহা-মনীষীরা চেতনাবোধ বাড়িয়ে চিন্তাশক্তি বা আধ্যাত্মিক শক্তি (ঝঢ়রৎরঃঁধষ ঢ়ড়বিৎ) বৃদ্ধি করতেন এবং সেই শক্তি দিয়েই সত্য আবিষ্কার করে তা মানুষের কল্যাণে প্রচার করতেন। সে সময়ে কোনো কম্পিউটারতো ছিলই না, এত বই-পত্র, সিনেমা-নাটকও ছিল না; থাকলেও সবকিছু পড়াশোনা করার মতো অত লম্বা আয়ুতো মানুষের নেই। কারণ মানবজীবন যত সংক্ষিপ্ত, লক্ষ্য ও কর্ম তত সংক্ষিপ্ত নয়।
মহামানবগণ প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে ধ্যানচর্চার মাধ্যমে সত্যে উপনীত হতেন বা সত্য আবিষ্কার করে তা প্রচার করতেন। তাঁরা মহামানব হয়েছেন চিন্তার জগতে নানা ডায়মেনশন তৈরি বা সৃষ্টির মাধ্যমে। এরূপ চিন্তার শীর্ষে অবস্থানের একটি বিশেষ ক্ষণে আমাদের জাতীয় কবি নজরুল অনুভব করলেন- মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি, চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা ছাড়ি, ভূলোক দ্যুলোক গোলোক ভেদিয়া, খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
স্রষ্টা-প্রকৃতি-সত্য ও মহামানুষদের অবস্থান কিন্তু একই বলয়ে। অর্থাৎ যা সত্য, তা-ই প্রকৃতি, তা-ই স্রষ্টা এবং যাঁরা সেখানে পৌঁছে গিয়ে পারস্পরিক সম্বন্ধ স্থাপন বা ঈড়হহবপঃ করতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁরাই হয়েছেন মাল্টি-ডায়নামিক মানুষ, বিশেষ মানুষ; কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহামানব।
মেডিটেশন বা ধ্যান চর্চার মাধ্যমে যেকোনো মানুষই নিজকে বিশেষ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে অনায়াসে। এরূপ ব্যতিক্রমভাবে নিজকে তৈরি করতে পারলে অনায়াসেই হওয়া যায় জনপ্রিয়, এমনকি বিশ্বনন্দিত।
বিনাব্যয়ে এরূপ আত্মোন্নয়ন-চর্চায় আগ্রহী হলে আমার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ক্যাম্পাস অফিসে প্রতি শনিবার বিকেলে আসুন (ফোনঃ ৯৫৫০০৫৫, ৯৫৬০২২৫); বিনামূল্যে পরিচালিত ধ্যান বা মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম-প্রাণায়াম কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন। দেখবেন, অল্পদিনেই আপনি হয়ে উঠছেন কেমন প্রোএকটিভ ও ডায়নামিক মানুষ, বিশেষ মানুষ; আপনার নানা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি প্রতিভাদীপ্ত সম্ভাবনার দ্বার আপনি নিজেই উন্মোচন করে ফেলছেন। দেখুন, আপনার জনপ্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ কত অবারিত ও উন্মুক্ত এবং তা আপনার হাতেই। এরূপ সত্য ও সুন্দরের পথে স্বাগত।