৯ অক্টোবর ক্যাম্পাস পত্রিকার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ফ্রি ডায়নামিক কম্পিউটার ট্রেনিং ১৫০তম ব্যাচের উদ্বোধন অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আবাসন শিল্পের সৃজনশীল ও ডায়নামিক উদ্যোক্তা, দেশপ্রেমী ভিশনারী লিডার, দক্ষ ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট, পূর্বাচল মেরিন সিটির সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোঃ শাহ আলম।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (সিএসডিসি) এর মহাসচিব ড. এম হেলাল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্যামিলি লাভ মুভমেন্ট এর চেয়ারপার্সন মিসেস তাজকেরা খায়ের; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর নাজমা বেগম; শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ড. মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী এবং ক্যাম্পাস’র ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস ফর লিডারশিপ কোর্সের রিসোর্স পারসন এডভোকেট গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথিকে পুষ্পমাল্যে বরণ করে নেয়া হয় এবং উপহার হিসেবে অর্পণ করা হয় ক্যাম্পাস’র জ্ঞানমেলা সিরিজে প্রকাশিত সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, আত্মোন্নয়ন ও জাতি জাগরণমূলক বিভিন্ন বইয়ের সেট; ক্যাম্পাস’র নিজস্ব গবেষণায় প্রকাশিত দেশোন্নয়নের ২টি মডেল, বিভিন্ন সিডির সেট ও স্যুভেনির।
স্বশিক্ষার আলোয় প্রোজ্জ্বল, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান মেরিন ড্রাইভ বিশেষজ্ঞ, দূরদর্শী চিন্তার ডায়নামিক উদ্যোক্তা, বহুমুখী প্রতিভার ও বর্ণিল গুণাবলির কর্মযোগী এবং ছাত্র-যুবকদের প্রেরণা ব্যক্তিত্ব ক্যাপ্টেন মোঃ শাহ আলমকে ক্যাম্পাস’র সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণের মাধ্যমে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক ড. এম হেলাল।
ভালো কাজে পুরস্কার ও মন্দ কাজে তিরস্কার ক্যাম্পাস’র চিরায়ত রীতি। সে ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির মাধ্যমে ক্যাম্পাস’র দু’সদস্যকে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকা ক্লাবে লায়নদের অনুষ্ঠান সবদিক থেকে চমৎকার কাভারেজ পারফরমেন্স এর জন্য ক্যাম্পাস’র উপ-পরিচালক সাইফুল হককে প্রথম পুরস্কার এবং সেলফ ডেভেলপমেন্ট বা আত্মোন্নয়নের অবিরাম প্রচেষ্টায় একদিনে ৮ বার মেডিটেশন করায় ক্যাম্পাস’র ড্রাইভার মোহাম্মদ মঈনউদ্দিনকে দ্বিতীয় পুরস্কার অর্পণ করা হয়।
সবশেষে প্রধান অতিথিকে দেয়া হয় একটি বিশেষ উপহার। ল্যান্ড ও ম্যারিটাইম লিগ্যাল সেক্টরে বিশেষজ্ঞ, জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ও দক্ষ সংগঠক, ফায়ার ফাইটিং ও সিকিউরিটি এক্সপার্ট ক্যাপ্টেন শাহ আলমকে ক্যাম্পাস’র বিশেষ উপহার অর্পণ করেন সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল।
কম্পিউটার কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা যেন স্মার্ট এন্ড গ্লোবাল ইয়ুথ জেনারেশনরূপে দেশ ও জাতির অন্ধকার দূরীকরণে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে, সে কামনায় প্রধান অতিথির হাতে আশা জাগানিয়া মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। এরপর কম্পিউটার কোর্সের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এবং অতপর শুরু হয় বক্তৃতাপর্ব।
প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন মোঃ শাহ আলম
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন মোঃ শাহ আলম বলেন- আমি চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সারা পৃথিবী ঘুরে আজ আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। মনে পড়ে যাচ্ছে, আমার ছোটবেলার সেইসব সংগ্রামী দিনগুলোর কথা।
আমাদের পায়ে হেঁটে কয়েক মাইল দূরে গিয়ে স্কুলে পড়তে হতো। ক্লাস ফাইভে আমি স্কলারশিপ পেয়েছিলাম। আমি আমার ব্যাচের ছাত্রদের পড়িয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালাতাম। নিজ হাতে বানানো তালপাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস গ্রামের মেলায় বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে পড়াশোনা করেছি।
আমি ক্লাস এইটে উঠে প্রথম প্যান্ট পরেছি; তার আগে লুঙ্গি পরেই স্কুলে যেতাম। ক্লাস এইট থেকে আমি গানের স্টেজ প্রোগ্রাম করে অর্থ উপার্জন করেছি। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনী ও বিভিন্ন প্রকার সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছি। প্রাইভেট টিউশনী করালে নিজের জ্ঞান ধারালো হয়, অভিজ্ঞতা ও অর্থ উপার্জনের সহায়ক হয়।
এসএসসি পাসের পর আমি রাজশাহী কলেজে ভর্তি হই। তখন আমার মামা আমাকে ঢাকায় আসতে বলেন। কিন্তু আমার কাছে তখন ঢাকা ছিল স্বপ্নের শহর। তারপরও মামার কথায় ঢাকায় এসে পুনরায় সিটি কলেজে ভর্তি হই। ঢাকাতেও টিকে থাকার জন্য আমি টিউশনি করেছি, আমার ব্যাচের স্টুডেন্টদেরকে পড়িয়েছি, সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছি। যথারীতি ইন্টারমিডিয়েটেও ভালো রেজাল্ট করেছি। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানে, ৪৯তম বিএমএ লং কোর্সে এবং মেরিন একাডেমিতে চান্স পেয়েছি। এরমধ্যে ক্যাপ্টেন হওয়ার এডভেঞ্চার এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণ আমাকে মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেছে; তাই আমি মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হই।
মেরিন একাডেমিতে খুব ভালো রেজাল্ট করায় আমাকে স্কলারশীপ দিয়ে জাপানের মেরিন একাডেমিতে পাঠানো হয়। জাপান মেরিন একাডেমিতে আমি ২০০৭ সালে বেস্ট মেরিন অফিসার নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার লাভ করি। এরপর ২০০৯ সালে Youngest Captain নির্বাচিত হই এবং ২০১২ সালে জাপানের সর্ববৃহৎ শিপিং কোম্পানি এমেকা লাইনের জাহাজে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দেই। শিক্ষা-জীবন কিংবা কর্ম-জীবনের সব সাফল্যের পেছনেই রয়েছে প্রচুর অধ্যবসায়। আমার ব্যাচমেটরা যখন অবসরে আড্ডা দিত, মোবাইল-ইন্টারনেট নিয়ে ব্যস্ত থাকতো; আমি তখন পড়াশোনা করেছি, না হয় টিউশনি করিয়েছি কিংবা সৃজনশীল কাজ করে নিজের জ্ঞান বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। এতেই আমি সফল হয়েছি।
ছাত্র-যুবকদের উদ্দেশ্যে সফল জীবনের ব্যাখ্যায় ক্যাপ্টেন শাহ আলম জীবনধর্মী ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বলেন- প্রকৃত শিক্ষালাভের মধ্যেই জীবনের সাফল্য নিহিত। শিক্ষার্থীদের সফল হতে হলে সর্বপ্রথমে সত্যিকারের শিক্ষিত হতে হবে।
বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ, আর আগামী শতাব্দী হলো আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের। আগামী দিনগুলো হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাথে মানুষের বসবাসের দিন। সেই দিনগুলোতে তারাই টিকে থাকবে, যারা প্রযুক্তির সাথে একাত্ম হতে পারবে। তাই আমাদের সকলের প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ভবিষ্যৎ পৃৃথিবীতে আমাদের প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখতে হলে তাদেরকে অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। ক্যাম্পাস ২০০৪ সাল থেকে বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ছাত্র-যুবকদের তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলে প্রকারান্তরে দেশকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে- ফেসবুক-ইন্টারনেট সবকিছুরই ভালোদিক, মন্দদিক উভয়ই আছে। ভালো দিকটাকে গ্রহণ করতে হবে, আর মন্দদিক বর্জন করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা ইন্টারনেট-ফেসবুক ব্যবহার করব, কিন্তু ইন্টারনেট-ফেসবুক যেন উল্টো আমাদের ব্যবহার না করে। ইদানিং দেখছি, শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট-ফেসবুকে আসক্ত। এসব তাদের গ্রাস করেছে। এর থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ক্যাম্পাস’র কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে দেশ গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
জীবনে বড় হতে হলে, সফল হতে হলে অবশ্যই পরিকল্পনা থাকতে হবে; জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। কেননা পরিকল্পনা ও লক্ষ্য ছাড়া সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। একজন ছাত্র যদি পরিকল্পনা করে সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, তাহলে তাকে অবশ্যই সায়েন্স গ্রুপে এইচএসসি পাস করতে হবে। বায়োলোজিতে ভালো করতে হবে। আবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। এতসব প্রক্রিয়া অতিক্রম করে তাকে মেডিকেলে শুধু ভর্তি হলেই হবে না। মেডিকেলে ব্যাপক পড়াশোনা করে ভালোভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। তাহলে সে ভালো ডাক্তার হতে পারবে; তার পরিকল্পনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে।
সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাইলে দিনের কাজ দিনেই শেষ করতে হবে। আর গতিশীল ও অবিরাম সাফল্যে আরো বেশি এগিয়ে যেতে চাইলে কালকের কাজও আজকে এগিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে কাজ জমতে জমতে আগামী ও বর্তমান বলে কিছু থাকবে না; সবসময় পেন্ডিং কাজ করতে থাকলে ক্রমান্বয়ে পেছনের দিকে চলে যেতে হবে এবং একসময় কাজের ভারে পেছন থেকেও হারিয়ে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন- আজ আমি এই অনুষ্ঠানে আসব, সেজন্য আমি গতকালই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি; এখানে এসে কী বলব, তাও গতরাতেই যতটাসম্ভব রিহার্সেল দিয়ে রেখেছি। আমার এই পূর্ব-প্রস্তুতির কারণে আজকে আমার এখানে আসা সম্ভব হয়েছে; এখানে এসে গুছিয়ে কথা বলতে পারছি।
সময় অত্যন্ত মূল্যবান। কথায় বলে- ঞরসব রং গড়হবু. কাজেই সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলে সময়ও আপনাকে সফলতার পথ দেখাবে। দেহঘড়ি নামে একটি কথার প্রচলন আছে। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই এই দেহঘড়ি বিদ্যমান। এই দেহঘড়িটাকে সবসময় একটিভ রাখতে হবে। দেহঘড়ি একটিভ রেখে সময়ের সদ্ব্যবহার করলে জীবনে সফল হওয়া সহজ হবে।
জীবনে ৪টি জিনিসের বিশেষ প্রয়োজন আছে। এগুলো হলো- ১. অথরিটি, ২. অ্যাসারটিভ, ৩. রেসপন্স, ৪. চ্যালেঞ্জ। সবকিছুর একটি অথরিটি বা কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে। যেমন- ক্যাম্পাস’র কর্তৃপক্ষ ড. এম হেলাল, আর আমরা যারা এখানে উপস্থিত আছি সবাই হলাম অ্যাসারটিভ। আর আমরা যখন মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব, সেটি হলো রেসপন্স এবং অনুষ্ঠানের ক্রটিসমূহ ধরিয়ে দেয়াটা হলো চ্যালেঞ্জ। আমাদের সকলের জীবনে এই ৪টি জিনিস অত্যাবশ্যকীয়।
সফলতার জন্য যোগাযোগ বা Communication একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- Close look communication এবং Responsive communication. যেমন- আপনি কাউকে একটি কলম আনতে বললেন; কিন্তু তিনি নিয়ে এলেন একটি পেন্সিল। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সাফল্য আসেনি। কারণ এখানে Close look communication এবং Responsive communication এর সমস্যা ছিল। আপনি যখন তাকে কলম আনতে বলেছিলেন, তখন নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল তিনি শুনেছেন কিনা -এটা হলো Close look communication. আবার যাকে বলেছেন, তার উচিত ছিল আপনি কলম আনতে বলার পর এরূপভাবে Response করা- ‘জ্বী, কলম নিয়ে আসছি বা কলম আনতে যাচ্ছি’ -এটা হলো Responsive communication. এ দু’টির সমন্বয় থাকলে সাফল্য সুনিশ্চিত।
যেকোনো কাজে সফল হতে হলে ঐ কাজের ওপর গভীর জ্ঞান থাকতে হবে এবং কাজটি খুবই মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। যেমন- বাংলাদেশের পাওয়ার প্ল্যান্টে যারা কাজ করেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান থাকুক বা না থাকুক -ঐ কাজের ওপর গভীর জ্ঞান থাকতে হবে; আবার গভীর জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তারা যদি গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ না করেন, তাহলেও ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। অর্থাৎ গভীর জ্ঞান ও গভীর মনোযোগের সমন্বয়ে যে কাজ করা হবে, তাতে সাফল্য ধরা দিবেই।
সফল হতে হলে যেকোনো কাজের উদ্যোগ নিতে হবে। উদ্যোগ নিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকির ভয়। তবে ভয়কে জয় করে কাজের উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়নে লেগে পড়তে হবে- তাতে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা যাই আসুক না কেন। কিন্তু উদ্যোগ না নিলে সফলতা কিংবা ব্যর্থতা কোনোটাই আসবে না।
কাজে-কর্মে, চিন্তায়-মননে সর্বদা সৎ থাকতে হবে। সত্য কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না, সত্যের জয় চিরকাল। তাই জীবনে জয়ী হতে হলে সততার কোনো বিকল্প নাই। এ বিষয়ের একটি উদাহরণ হচ্ছে- একবার এক ইমাম সাহেব খুব ভোরে ওযু করতে গেলে পথিমধ্যে এক লোককে দ্বিখন্ডিত অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে একটি ছুরি ছিল। ইমাম সাহেব ছুরিটি হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলেন, এই লোকটিকে কে মারলো। ছুরি হাতে থাকা অবস্থায় এলাকাবাসী তাঁকে দেখতে পেয়ে খুনী হিসেবে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এরপর বিচারে তার ফাঁসি হয়। ফাঁসি কার্যকরের জন্য যে জল্লাদ ছিল, সে ইমাম সাহেবকে চিনত। জল্লাদ তখন জিজ্ঞেস করলো- হুজুর আমি আপনাকে চিনি, আমার মনে হয় না আপনি খুন করেছেন। তখন ইমাম সাহেব বললো- আমি এই খুন করিনি, তবে অনেকদিন আগে আমি একটি খুন করেছিলাম; সেই খুনের বিচার হয়নি। সেই লুকায়িত সত্য আজ বেরিয়ে এলো। আল্লাহ আমাকে দুনিয়াতেই শাস্তি দিলেন।
আমাদের দেশ এখন উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারায় বেগবান হয়ে এগিয়ে চলছে। এই ধারাকে আরো বেগবান করতে প্রয়োজন ব্যাপক টেকনিক্যাল শিক্ষা। প্রতিটি শিক্ষার্থীই যাতে টেকনিক্যালি সাউন্ড নলেজের অধিকারী হতে পারে, সেরূপ শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে সরকারকে; আর শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত আগ্রহের সাথে কর্মমুখী শিক্ষায় গভীর জ্ঞান আহরণ করতে হবে। তরুণ শিক্ষার্থীরাই এদেশের চালিকাশক্তি। তারা কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করে যতবেশি কর্মমুখর থাকবে, দেশ তত দ্রুত উন্নয়ন-অগ্রগতির শীর্ষে পৌঁছাবে।
ক্যাম্পাস কার্যক্রম সম্পর্কে ক্যাপ্টেন শাহ আলম বলেন- ক্যাম্পাস’র কার্যক্রম দেখে আমি মুগ্ধ, বিস্মিত এবং অভিভূত। ক্যাম্পাস’র জাতি-জাগানিয়া কার্যক্রমসমূহ খুবই উদ্দীপনামূলক। বিশেষত তরুণ ছাত্র-যুবকদের বিনামূল্যে ডায়নামিক কম্পিউটার ট্রেনিং এবং ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস কোর্স করিয়ে অত্যাধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলছে ক্যাম্পাস। এসব কার্যক্রম বেগবান করতে আমি সাধ্যমতো সহযোগিতা করব। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে এখানে নিয়ে আসবো, ক্যাম্পাস’র কল্যাণ কার্যক্রমসমূহ দেখার জন্য। আশা করি, তিনিও তাঁর সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করবেন।
তিনি বলেন- ক্যাম্পাস’র স্টাডি সেন্টার নির্মাণ একটি মহৎ উদ্যোগ। ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ যদি এটি পূর্বাচলে নির্মাণ করতে চায়, তাহলে পূর্বাচল মেরিন সিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
মিসেস তাজকেরা খায়ের
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফ্যামিলি লাভ মুভমেন্ট এর চেয়ারপার্সন মিসেস তাজকেরা খায়ের বলেন- ক্যাম্পাস হলো আলোয় আলোয় সম্মিলন কেন্দ্র; উজ্জ্বল আলোর অনন্য বাতিঘর। এই আলোকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তারুণ্যদীপ্ত ডায়নামিক উদ্যোক্তা ক্যাপ্টেন শাহ আলম। ক্যাম্পাস’র আলোকচ্ছটায় তরুণ শিক্ষার্থীরা যেমন আলোকিত হচ্ছে, তেমনি এখানে আসলে আমাদের মনও আলোকিত হয়ে যায়, মনের হতাশা দূর হয়ে যায়।
প্রফেসর নাজমা বেগম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র প্রফেসর নাজমা বেগম বলেন- আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন শাহ আলম জীবনযুদ্ধে বিজয়ী একজন সফল মানুষ। তাঁকে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরাও সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস। ছাত্র-যুব উন্নয়নে ক্যাম্পাস’র উজ্জীবনী কর্মকান্ডে ক্যাপ্টেন শাহ আলম উদার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে আমি আশা করি।
ড. শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী
শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব ড. মোঃ শরীফ আব্দুল্লাহ হিস সাকী বলেন, ক্যাপ্টেন শাহ আলম জীবনে টাইম, প্রায়োরিটি এবং মানি ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে করেছেন বিধায় তিনি সফলতা লাভ করেছেন। আমাদের শিক্ষার্থীদেরও তার মতো সবকিছু ম্যানেজ করার কৌশল শিখতে হবে। তাহলে তারাও সফল হবে।
এডভোকেট গোলাম কিবরিয়া
ক্যাম্পাস’র ইংলিশ এন্ড স্মার্টনেস ফর লিডারশিপ কোর্সের রিসোর্স পারসন এডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন- বর্ণিল গুণাবলীর ও বহুমুখী প্রতিভার কর্মযোগী ক্যাপ্টেন শাহ আলম সারা পৃথিবীর সবদেশে গিয়েছেন, তাই তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক। ক্যাম্পাস’র শিক্ষার্থীদেরও তাঁর মতো কৌশলী ও অভিজ্ঞ হতে হবে। তাঁকে অনুসরণ করে ক্যাম্পাস’র শিক্ষার্থীরা জীবনে সফলতা লাভ করতে সক্ষম হবে।
এডভোকেট কিবরিয়া বলেন- ক্যাম্পাস ছাত্র-যুব উন্নয়নে যুগোপযোগী বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রম আরো ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ঢাকায় একটি স্টাডি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পূর্বাচল মেরিন সিটির ডায়নামিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আমাদের অনুরোধ থাকবে- পূর্বাচলে ক্যাম্পাস স্টাডি সেন্টার নির্মাণে তিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।
ড. এম হেলাল
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক এবং সিএসডিসি’র মহাসচিব ড. এম হেলাল বলেন, প্রধান অতিথি ক্যাপ্টেন শাহ আলম জীবনযুদ্ধে জয়ী এক আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ। তিনি জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফল ও বিজয়ী হয়েছেন। তিনি এসেছেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে, যেখানে একসময় কেরোসিনও ঠিকমতো পাওয়া যেত না। সেই অজপাড়া গাঁ থেকে উঠে এসে তিনি জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে পৃথিবীর সবদেশ ঘুরে জীবনযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন।
সারা পৃথিবীতে যতো ক্যাপ্টেন আছে, সব ক্যাপ্টেনের ডাটাবেজ তিনি মেইনটেইন করেন। পৃথিবীর যেকোনো ক্যাপ্টেনের নাম বললে তিনি তাঁর ডাটাবেজ থেকে সঙ্গে সঙ্গে তা বের করে দিতে পারেন। এটা তাঁর কর্মকুশলতার একটি অনন্য দিক। তিনি আজ নিজেই একটি বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন তাঁর কাজের মধ্যমে। তাঁরও দু’টো হাত, দু’টো পা, একটিমাত্র মাথা; তিনি যেহেতু সফল হয়েছেন, তাঁকে অনুসরণ করে আমাদের ছাত্র-যুবকরাও অবশ্যই সফল হবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
ক্যাপ্টেন শাহ আলম স্বশিক্ষিত এবং সুশিক্ষিত একজন মানুষ, তিনি পড়াশোনা করেছেন জ্ঞান আহরণের বাসনায় গভীর আনন্দের সাথে। ছাত্র-যুবকদেরও তাঁর মতো জ্ঞানপিপাসু হতে হবে। জীবনে ঝুঁকি নিতে হবে। ঝুুঁকি ছাড়া জীবনে উন্নতি হয় না। ক্যাপ্টেন শাহ আলম যার প্রকৃত উদাহরণ।
ড. এম হেলাল বলেন- ক্যাম্পাস শুধু কম্পিউটার শেখানোর জন্যই এ কোর্স চালু করেনি; এ কোর্সের মাধ্যমে পরিবির্তত বিশেষ মানুষ গড়ে তোলাই এর মূল লক্ষ্য। কম্পিউটার ট্রেনিং ছাড়াও যুগোপযোগী নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্টিফাইড ছাত্র-তরুণদেরকে কোয়ালিফাইড করে গড়ে তুলছে ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস’র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-যুবকরা নিজেদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে কর্মে ও চিন্তায় সম্পূর্ণ নতুন মানুষরূপে গড়ে উঠছে। এসব ছাত্র-যুবক নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশকেও সমৃদ্ধ করছে। এভাবে জ্ঞানভিত্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ এবং আলোকিত জাতি গঠনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।