কসোভোতে দক্ষ জনশক্তির প্রকট সঙ্কট রয়েছে এবং তা পূরণের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চায় ওই দেশের বেসরকারী খাত। এ বিষয়ে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠনের অনুরোধও করেছে তারা। ওই দেশে বাংলাদেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সম্প্রতি তিনদিনের কসোভো সফরে বেসরকারী খাতের সঙ্গে আলোচনার সময় উভয় দেশের জয়েন্ট ভেঞ্চার নিয়েও কথা বলেন।
দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সফরে রাষ্ট্রদূত ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনিকা গারভায়া শোয়ার্জ, ইকনমি ও এনার্জি মিনিস্টার আরতানে রিজভানোলি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী রোজেটা হাজদারির সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি একটি বক্তব্য রাখেন।
ডোনিকা গারভায়ার সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ওপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কসোভোর প্রধানমন্ত্রীকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণের বিষয়টিও উত্থাপন করেন রাষ্ট্রদূত। এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে কসোভোকে সমর্থন জানানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। কসোভোর ইকনমি ও এনার্জি মিনিস্টার এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হোম টেক্সটাইলস, তৈরি পোশাক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া সফরকালে রাষ্ট্রদূত মোঃ মোশাররফ হোসেন বিভিন্ন শিল্পউদ্যোক্তা ক্লাবের সাথেও ফলপ্রসু বৈঠকে মিলিত হন এবং আলোচনান্তে শিল্প উদ্যোক্তারা তাঁদের শিল্প-কারখানাগুলোতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ লোক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।
এ সময় সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য যৌথ বিজনেস কাউন্সিল, দ্বৈতকর পরিহার চুক্তি ও বিনিয়োগ প্রমোশন চুক্তি করার বিষয়ে জোর দেয়া হয়।
সততা ও নীতি-আদর্শে উদ্ভাসিত রাষ্ট্রদূত জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ততোধিক গুণান্বিত ছাত্র মোশাররফ হোসেন বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ১৯৮১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি চাকরি জীবন শুরু করেন এবং অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগে সহকারি কন্ট্রোলার মিলিটারি একাউন্টস পদে যোগদান করেন। চাকরি জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি প্রতিরক্ষা অর্থ বিভাগ এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সদস্য, অর্থ) পদে এবং বাণিজ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কাজ করেন। তিনি ২০১০ সালের ৩ ফেব্রæয়ারি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব পদে যোগদান করেন। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই সরকারের সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং ২০১১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সেতু বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। অতঃপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগদান করেন এবং ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩০তম সচিব ছিলেন। এছাড়াও তিনি পদাধিকারবলে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড (KAFCO) এর পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী লিমিটেড (BAT) এর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এরপর মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তাঁকে ২ বছরের চুক্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব পদে নিয়োগ দিয়ে ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ সালে আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি চাকরিরত অবস্থায় ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স অঙ্গরাজ্যের উইলিয়াম্স কলেজ হতে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া তিনি দেশে-বিদেশে বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগদান করেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের হনুলুলুতে অনুষ্ঠিত ১২ সপ্তাহ মেয়াদি ‘এশিয়া-প্যাসিফিক কোর্স অন সিকিউরিটি স্টাডিজ’, ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ৮ সপ্তাহ মেয়াদি ‘ম্যানেজমেন্ট এট দি টপ (MATT)’ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ, ঢাকায় ১ বছর মেয়াদি এনডিসি কোর্স অন্যতম।
জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া তাঁর দীর্ঘ চাকরিজীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি দায়িত্ব পালনকালে পৃথিবীর বহু দেশ ভ্রমণ করেন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। বিদেশে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি ভ্রমণ কাহিনীমূলক দু’টি সুখপাঠ্য গ্রন্থ রচনা করেন। প্রকাশনা সংস্থা বিদ্যাপ্রকাশ থেকে তাঁর ‘দেশ-বিদেশের ভ্রমণ কথা’ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ এবং ‘মার্কিন মুলুকে মনোভ্রমণ’ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ এ প্রকাশিত হয়।
জনাব ভূঁইয়ার পৈত্রিক নিবাস নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার বালুসাইর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মোঃ মোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া এবং মাতার নাম মমতাজ বেগম। জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী মাহফুজা বেগম এবং তাঁরা ৩ সন্তানের জনক। প্রথম সন্তান আশরাফ হোসেন ভূঁইয়া পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছে, দ্বিতীয় সন্তান সামিয়া ভূঁইয়া এবং তৃতীয় সন্তান সাদিয়া ভূঁইয়া স্কুল/কলেজে পড়ে। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের পাশাপাশি জনাব মোশাররফ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সাথেও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। দেশপ্রেমী ও মানবতাবাদী জনাব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সবিস্তারিত প্রকাশিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার আগষ্ট ২০১৯ সংখ্যায়। তা পড়তে আগ্রহী হলে ভিজিট করতে পারেন www.campus.org.bd/online