বিশেষ খবর



Upcoming Event

স্বাস্থ্যসেবাকে সুউন্নতরূপে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ফরাজী হাসপাতালের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান স্বাস্থ্যবন্ধু ডাঃ আনোয়ার ফরাজী ইমন

ক্যাম্পাস ডেস্ক প্রিয় মানুষের মুখোমুখি
img

যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো তখন বয়সের কারণে যুদ্ধে যেতে পারিনি; কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমি যখন বুঝতে শিখেছি, তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভেবেছি, গবেষণা করেছি। ‘ফিরে দেখা বিজয়’ নামে একটি ডকুমেন্টারি দেখে আমার এমনও মনে হয়েছে, যদি থাকতে পারতাম সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে! আমার বড় ছেলে যখন জন্মগ্রহণ করে ইতালির রোম শহরে, তখন সেই নিষ্পাপ শিশুকে কোলে নিয়ে আমি একটা নিয়ত করেছিলাম, যদি সুযোগ হয় তবে আমার এই ছেলেকে একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বানাবো; সেভাবেই গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।

উপরের কথাগুলো বলছিলেন ফরাজী হাসপাতাল লিঃ এর ডায়নামিক চেয়ারম্যান, অত্যন্ত বিনয়ী ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিত্ব, মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মহানুভব গুণের অধিকারী, তরুণ প্রজন্মের অনুকরণীয় উদ্যোক্তা স্বাস্থ্যবন্ধু ডাঃ আনোয়ার ফরাজী ইমন। দেশপ্রেমের দৃপ্তশপথে বলীয়ান ফরাজী ইমন বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু অনেক মুক্তিযোদ্ধার পাশে বসে তাঁদের কথা শোনার সুযোগ হয়েছে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। আমার হাসপাতালে যদি কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা আসে তবে চেষ্টা করি যথেষ্ট ছাড় দিয়ে কিংবা বিনামূল্যে তাঁদের ভালো সেবা দিতে; এমনকি আমি যদি কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত থাকি এবং সেখানে যদি কোনো মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত থাকে তবে আমি আমার চেয়ার ছেড়ে সেই মুক্তিযোদ্ধাকে বসতে দেই এবং আমি পাশের চেয়ারে বসি অথবা দর্শকদের আসনে গিয়ে বসি।

আবেগে আপ্লুত হয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের মানবিক এই উদ্যোক্তা আরো বলেন, অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আমার বিভিন্ন সময় দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে, তাঁদের জন্য আমি কিছু করার চেষ্টা করছি বা করতে পারছি। তবে আমার সন্তান যখন আমার বয়সের হবে, যখন এদেশের রাজনীতিতে তার ভ‚মিকা অটল থাকবে, তখন এ স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার মনের ভেতরে যে কষ্ট-আক্ষেপ অনুভব হয় তার ভেতরেও হয়তো সেধরণের অনুভ‚তি হবে এই ভেবে যে; এদেশটা কারা স্বাধীন করেছে, তাদের কাউকে যদি কাছে পেতাম, তাদের যদি একটু ছুয়ে দেখতে পারতাম, তাদের জন্য যদি কিছু করতে পারতাম! সেই চিন্তা এবং উপলব্ধি থেকে আমার মনের ভেতরের একটা ভাবনা, একটা আকুতি; এখন হয়েতো অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছে কিন্তু আগামী ২০ বছর পরে এদের অনেককেই হয়তো আর পাওয়া যাবেনা। সেই জায়গা থেকে আমি চাই আমার সন্তানকে সাথে নিয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংস্পর্শে থাকা স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সন্তানের উপস্থিতিতে তাঁদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে সন্মানিত করতে।

মহৎ এই মানুষটির চিন্তা-ভাবনা অন্য অনেকের থেকে আলাদা, ব্যতিক্রম তাঁর জীবন দর্শনও। সব কিছুকে সহজ করে ভাবতে পারা পরোপকারী এই ব্যক্তিত্ব মনে করেন,‘জীবন সহজ নয়, জীবনকে সহজ করে নিতে হয় কখনও প্রার্থনা করে, কখনও অপেক্ষা করে, কখনও ক্ষমা করে আবার কখনওবা কাউকে এড়িয়ে চলে’। প্রচন্ড মানসিক শক্তি ও মানবিক বোধসম্পন্ন একজন স্বপ্নবাজ মানুষ তিনি, যার সুদক্ষ নেতৃত্বে শূণ্য থেকে শুরু করে ফরাজী হাসপাতাল ও ফরাজী ডেন্টাল আজ সারা বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় এক আস্থার নাম। তাঁর এই হাসপাতালটির ব্যাপক জনপ্রিয়তার রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা ব্যক্তি ইমনের যে দর্শন খুঁজে পাই তা অনেকটা তাঁর নিজের বানীতেই পরিস্ফ‚ট। তিনি বলেন, ‘যারা তোমাকে সাহায্য করছে তাদের কখনও ভুলে যেওনা, যারা তোমাকে ভালোবাসে তাদের কখনও ঘৃনা করোনা, যারা তোমাকে বিশ্বাস করে তাদের কখনও ঠকিও না’। আজকের দিনে কিছু কিছু চেম্বার, হাসপাতাল, ডায়গনস্টিক সেন্টার লোক ঠকানোর মেশিন হিসেবে পরিচিতি পেলেও ফরাজী হাসপাতাল ও এর কর্ণধার বর্তমান সময়ের এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

মানুষ ও মানবতার পরম সেবক এই মহান হৃদয়ের কর্মযোগী উদ্যোক্তার সাথে ক্যাম্পাস পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ তোফায়েল হোসেন প্রাণবন্ত সাক্ষাৎকার-বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে আলোচিত বিষয়সমূহের উল্লেখযোগ্য অংশ প্রিয় পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসঃ কেমন চলছে ফরাজী হাসপাতাল? ফাউন্ডার-চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার অনুভ‚তি জানতে চাচ্ছি?

ফরাজী ইমনঃ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকে ফরাজী হাসপাতালের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি বিষয় সম্পর্কে সাক্ষাৎকারের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। আলহামদুুলিল্লাহ আমাদের ফরাজী হাসপাতাল খুবই ভালো চলছে। আমরা ২০১২ সাল থেকে অদ্য পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবায় আছি। বিগত কয়েক বছর ধরে সকলেই আমরা কঠিন সময় পার করেছি। আপনারা জানেন কোভিড-১৯ শুরুর প্রথম সময়ে অনেক হাসপাতালেই চিকিৎসাসেবা বন্ধ ছিল। কিন্তু সেই মহামারীর শুরুর দিকেও অর্থাৎ ২০২০ সালেও ফরাজী হাসপাতালের সকল দরজা রোগীদের জন্য খোলা ছিল এবং আমাদের সকল ম্যানেজমেন্ট একটিভ ছিল। আমি প্রতিদিন অফিস করেছি, আমাদের এমডি সাহেব অফিস করতেন, আমাদের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ নিয়মিত চেম্বার করেছে। দুই-একজন চেম্বার করতে চায়নি। আমার বাবা তখন বেচে ছিলেন। তাদেরকে আমি বলেছি, আমার বৃদ্ধ বাবার ৯০ বছর বয়স। আমার বাবা আছে, মা আছে, স্ত্রী ও তিনটা সন্তান আছে। আমি যদি এই সময়ে অফিস করতে পারি আপনাকেও অফিস করতে হবে। এই প্রফেশনে থেকে এই সময়ে আমরা যদি মানুষের পাশে না থাকি, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? সাধারণ মানুষকে সাহায্যদানের উদ্দেশ্যে আমাদের কার্যক্রম আমরা চালিয়ে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের যারা স্টাফ ছিল, চিকিৎসক ছিল তারাও এই মনোবলে তাদের কাজ করে গেছে। আরেকটা বিষয় হলো মহামারীর এই সময়টিতেও আমাদের ফরাজী হাসপাতালে যতজন স্টাফ ছিল সবাইকেই আমরা সাথে রেখেছি এবং একজন স্টাফকেও চাকুরিচ্যুত করিনি। তাছাড়া তাদের নিয়মিত বেতন, বোনাস, ইনক্রিমেন্টসহ অন্যান্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আমরা অব্যাহত রেখেছি। এটিই আমাদের শক্তি ও মনোবল। আমরা যে কথাটি বলি বা বিশ্বাস করি, আন্তরিকতায় এবং মানবিকতায় ফরাজী হাসপাতাল নিয়ে আমরা বাংলাদেশে ১ নাম্বার হতে চাই এবং সেই স্থান দখল করতে চাই।

বি ক্যাঃ কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে বলে মনে করেন?

ফরাজী ইমনঃ আলহামদুলিল্লাহ আমাদের লক্ষ্য হলো সবার আগে সুস্থতা। আর মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সুস্থতা। এই সুস্থতার লক্ষ্যেই আমরা আমাদের হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেছি। তবে আমি যেহেতু দীর্ঘদিন থেকে হেলথ সেক্টরে রয়েছি, আমার কাছে মনে হয়েছে সাধারণ মানুষের সেবা পাওয়ার পথ কিংবা প্রক্রিয়াটি এখনো অনেক কঠিন। মানুষ এখনো খুঁজে ফিরে কোথায় গেলে সে ভালো সেবা পাবে, কার কাছে গেলে সে ভালো সেবাটা পাবে। আমাদের ডক্টর সমাজের কিছু কিছু ডক্টর রয়েছেন যারা রোগীদের ভালো সময় দেয়না। তারা রোগীদের সাথে ভালোভাবে কথা বলেনা। আমরা ঐ জায়গা থেকে বের হয়ে আন্তরিকতা ও মানবিকতা দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি চালাতে চাই। এই স্বাস্থ্য সেবাটাকে একদম সহজ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে ঋধৎধুু গধী ওঞ নামে একটি ডিপার্টমেন্ট চালু করেছি। ইতোমধ্যে সেটির কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আমরা শিঘ্রই আমাদের ফরাজী হাসপাতালকে একটা ডিজিটালাইজড হাসপাতালে রূপান্তরিত করবো। যেখান থেকে আপনি আপনার মোবাইলের মাধ্যমে সমস্ত সেবাগুলো গ্রহণ করতে পারবেন। ইচ্ছা করলে আমাদের যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছে আপনি তাকে হোমকলে কল করে বাসায় ডেকে নিতে পারবেন অথবা চেম্বারে আসতে পারবেন। ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে প্রত্যেকটা রোগের চিকিৎসার জন্য কী ধরণের খরচ হতে পারে সে সম্পর্কে টোটাল একট ধারণা পূর্ব থেকেই পেয়ে যাবেন। মূল কথা হলো আমরা স্বাস্থ্য সেবাটাকে সহজ করতে চাই। রোগীদের সাথে আন্তরিকতা বাড়াতে চাই এবং এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই যেখানে রোগীরা আসলে তারা যাতে ভালো থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অনেক ক্ষেত্রে অপারেশন পরবর্তী সময়ে কিছু রোগীকে ডাক্তাররা বলে থাকে হাটার কথা। আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে আমারা একটি হেলথ জোন করবো। সেখানে রোগীদের জন্য একটা পার্ক থাকবে, ফুল থাকবে, ফল থাকবে, সেখানে রোগীরা হাটবে। তাদের ভালো লাগার যে অনুভ‚তি সে জায়গা থেকে আমরা কাজ করতে চাই। সে লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

বি ক্যাঃ এ হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

ফরাজী ইমনঃ আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো। এরা খুবই আন্তরিক। তারা রোগীদের কথা খুবই মনযোগ দিয়ে শোনে এবং তাদেরকে যখনই আমরা চেম্বারে বসার সুযোগ করে দেই তখনই তাঁদেরকে জানিয়ে দেই সর্বদা ফার্স্ট প্রায়োরিটি রোগীদেরকে দিতে হবে। আপনি যত বড় ডাক্তারই হন, রোগীদের যদি কোনো অভিযোগ আসে তাহলে চেম্বারটি আপনার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এটাও বলি যে আমরা খালি চোখে অনেকদূর পর্যন্ত দেখতে পাই কিন্তু নিজের ভেতরের হার্ট কেমন আছে, কিডনি কেমন আছে, লিভার কেমন আছে এসব নিজে দেখতে পাইনা। এক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা এর রোগ সম্পর্কে জানতে আমাদের অনেক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার হয়। কিন্তু এমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষ যেনো না দেয়া হয় যেটা রোগীর জন্য অপ্রয়োজনীয়। এরকম কোনো ঔষধ না দেয়া যেটা রোগীর প্রয়োজন না। এই কথাগুলো আমরা বলে থাকি এবং আমার বিশ্বাস আমাদের ডাক্তাররা সেই পথেই হাটছে।

বি ক্যাঃ বিশেষ কী কী কারণে অন্য হাসপাতালের চেয়ে রোগীরা এটিকে প্রাধান্য দিবে?

ফরাজী ইমনঃ প্রথম কথা হলো আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা হলো অনেক শক্তিশালী। আমাদের সেøাগান হচ্ছে We care Allah cure অর্থাৎ আমরা সেবা দেই, সুস্থ করার মালিক আল্লাহ। আর একটু আগেই বলেছি, মানুষ আমাদের প্রতিষ্ঠানকে এই কারণেই গ্রহণ করবে যে, আন্তরিকতায় ও মানবিকতায় আমাদের কোনো ঘাটতি নেই। এই ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশে ১ নাম্বার হতে চাই। কয়েকদিন আগে আমি বিবাড়িয়াতে গিয়েছিলাম একটা হেলথ ক্যাম্পে। সেখানে এক এডভোকেট খুব সুন্দরভাবে আমাকে এসে বললো, আমি ঢাকায় থাকি। আমার গ্রামের বাড়ি বিবাড়িয়া। শুনলাম এখানে হেলথ ক্যাম্প হবে তাই গ্রামের বাড়িতে এসেছি। আমি আপনাদের নিয়মিত রোগী। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি থাকেন কোথায়? তিনি জানালেন, ‘আমি থাকি ধানমন্ডিতে’। আমি কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, আপনি সেই ধানমন্ডি থেকে ফরাজীতে নিয়মিত কেন? তিনি বললেন, ‘আপনাদের হাসপাতালের কাছাকাছি আমার এক আত্মীয় থাকে। সেই আত্মীয়র মাধ্যমে শুনতে পেলাম আপনারা নাকি খুব ভালো সেবা দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে আমি নিজে সেবা গ্রহণ করতে এসে এর সত্যতা পেয়েছি। আমি একবার চিকিৎসার জন্য আপনার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। ডাক্তার আমাকে দেখে মেডিসিন দিয়ে বললো, আপনি এখন চাইলে বাসায় চলে যেতে পারেন আবার চাইলে থাকতেও পারেন। আমি তাঁদের আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হয়ে আরো দুইদিন হাসপাতালে থেকে গেলাম’। ঐ ব্যক্তির কথা শুনে আমি খানিকটা অবাক হয়েছি, আবার ভালোও লেগেছে।

বি ক্যাঃ এ হাসপাতালের আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন?

ফরাজী ইমনঃ আইটি নির্ভর ডিজিটাল হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি আমাদের আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যাওয়ার পূর্বে একটা রেফারেন্স টেনে বলতে চাই, একসময় ঢাকায় উবার কিংবা পাঠাও ছিলনা। এখন কিন্তু উবার, পাঠাওসহ এজাতীয় আরো নানা সার্ভিস রয়েছে। এসময় একজন মানুষ যদি তার মর্যাদা বজায় রেখে ধানমন্ডি যেতে চায়, তাহলে একটা উবার কল করে তিনি সেখানে যেতে পারছেন। এতে যিনি যাবেন তিনি যেমন সার্ভিসটি পাচ্ছেন আবার এতে আরেকজন লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। আমরা ঐজায়গা থেকে আমাদের হাসপাতালটিকে তৈরি করতে চাই। আমাদের বাংলাদেশে অনেক ডাক্তার আছে যাঁরা চেম্বারে রোগী দেখে শেষ করতে পারেনা। আবার অনেক ডাক্তার আছে যাঁরা চেম্বারে রোগী পায়না। অন্যদিকে অনেক সময় দেখা যায় কারো মা কিংবা বাবা হয়তো সামান্য অসুস্থ, নরমাল সেলাইন দিলেই তার অসুখটি ভালো হয়ে যাবে; মোটামুটি টেক কেয়ার করার জন্য বাসায় থাকলেই হয়। সেক্ষেত্রে ঐ বাবা যদি বাসায় থাকে এবং এই সার্ভিসটি যদি বাসায় থেকেই পাওয়া যায়, যদি নার্স পাওয়া যায়, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাওয়া যায়, বাসাতেই বাবাকে ডাক্তার দেখানো যায়, তাহলে হাসপাতালে নিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকা, নিয়ে যাওয়া এগুলো আর প্রয়োজন পড়ছেনা। তাছাড়া এতে করো একজন রোগীর সাথে আরো তিন-চারজনকে জড়িত হয়ে যেতে হয়। আমাদের লক্ষ্য আছে এই সার্ভিসটাকে সহজ করার লক্ষ্যে হোমসার্ভিস সিস্টেম চালু করা। বড় ধরণের যেসব সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন আপারেশন, সিটিস্ক্যান, এক্স-রে এই জাতীয় বিষয়গুলো ছাড়া অন্যান্য সেবাগুলো বাসায় বসেই নেয়া যাবে। এতে হোমকল করারও সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে আপনি আমাদের সফটওয়্যারে গিয়ে দেখতে পারবেন কোন ডাক্তার ফ্রী আছে। চাইলে আপনি সে ডাক্তারকে হোম সার্ভিসে নিতে পারবেন, সেক্ষেত্রে হয়তো ভিজিট একটু বেশী হবে। আবার চাইলে আপনি তার চেম্বারেও আসতে পারবেন। আমরা চাই স্বাস্থ্য সেবাটাকে একদম সহজ করে ব্যাপক মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। এ ধরণের সেবার ক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশ করে একজন তার রোগ সম্পর্কে ও রোগের চিকিৎসার খরচ সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিতে পারবে। তখন তার চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়াটাও অনেক সহজ হবে। কঠিন এই ব্যাপারটি তখন অনেক সহজ হবে সাধারণের জন্য। শুধু ফরাজী নয় আমি এমন একটি প্ল্যাটফরম তৈরি করতে চাই যেটি সারা বাংলাদেশে ব্যবহার করে অনায়াসে সেবা নেয়া সম্ভব হবে।

বি ক্যাঃ অবস্থাপন্ন রোগীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ উন্নত চিকিৎসার জন্যে ভারত, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে চলে যায়। এর কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বলবেন কি?

ফরাজী ইমনঃ প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি হেলথ সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া এখন অনেকটা কমে এসেছে। কোভিডকালীন সময়ে রোগীরা খুব বেশি দেশের বাহিরে যেতে পারেনি। সেসময়ে তাহলে কি এখানে চিকিৎসা হয়নি, অবশ্যই হয়েছে। তবে একটা জায়গায় কিছুটা গ্যাপ রয়েছে। আমি যেহেতু হেলথ সেক্টরে রয়েছি, বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি ইউরোপে দেখেছি; সেখানে ডাক্তারদের, নার্স ও স্টাফদের রোগীর প্রতি যে পরিমাণ আন্তরিকতা রয়েছে, রোগীদের যে গুরুত্ব তাঁরা দেয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। তবে মেধার দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমাদের দেশের ডাক্তাররা তাদের থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। আবার প্রযুক্তির দিক দিয়ে যদি চিন্তা করেন, একসময় হয়তো আমাদের দেশ চিকিৎসাসেবায় প্রযুক্তিগত দিক থেকে খুব বেশি শক্তিশালী ছিলনা। কিন্তু বর্তমানে এক্ষেত্রে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি।

আমি আরেকটি বিষয় বলতে চাই, আমরা যারা রোগী আমাদেরও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে কি রোগী মৃত্যুবরণ করছেনা, অবশ্যই করছে। তবে কেন আমরা বিদেশ নির্ভর হবো! বর্তমানে আমাদের দেশেই সব ধরণের চিকিৎসা আছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন হলে আমার বিশ্বাস যে অংশটা রয়েছে সেটাও কমে যাবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবায় যাঁরা রয়েছি, আমরা যদি আন্তরিকতা দিয়ে, মানবিকতা দিয়ে রোগীদের সেবা দেই, তাহলে আমার বিশ্বাস বাহিরের দেশ থেকে আমাদের দেশে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য বিদেশীরা আসবে।

জেনারেল চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি আমরা আরো একটা পার্ট নিয়ে কাজ করছি। সেটি হলো ফরাজী ডেন্টাল হসপিটাল এন্ড রিসার্চ সেন্টার। এটি একমাত্র চিকিৎসাসেবা, যা বিদেশ থেকে রোগীরা বাংলাদেশে এসে এ সেবা গ্রহণ করে। বিশেষ করে বাংলাদেশী প্রাবাসী যারা রয়েছে, এই মানুষগুলোর অনেকেই কেবল দাঁতের চিকিৎসা করানোর জন্য বাংলাদেশে আসে; বিশেষত ইউরোপের দেশগুলোতে দাঁতের চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। প্রবাসীরা বলে যে, দাঁতের চিকিৎসার জন্য সেখানে আমি যে টাকা খরচ করবো সেই টাকায় বিমান ভাড়া দিয়ে বাংলাদেশে পরিবারের কাছে এসে ঘুরে-বেড়িয়ে দাঁতের চিকিৎসা করে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া যায়। আমরা সেই জায়গা থেকেও কাজ করছি। ফরাজী ডেন্টাল সাউথ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় দাঁতের চিকিৎসাকেন্দ্র। আমাদের দুইটি শাখা রয়েছে। একটি বনশ্রীতে এবং অন্যটি মিরপুরে। এই সেক্টরেও আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো করছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে দেশের ৬৪টি জেলায় আমাদের ৬৪টি শাখা করার। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও আমাদের শাখা থাকবে এবং ঢাকার প্রধান প্রধান এলাকাগুলোতে আমাদের ডেন্টাল ইউনিটের শাখা থাকবে।

বি ক্যাঃ এ হাসপাতালকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

ফরাজী ইমনঃ আমরা একটি হেলথ জোন করতে চাই; যেখানে মেডিকেল কলেজ থাকবে, নার্সিং ইন্সস্টিটিউট থাকবে, হসপিটাল থাকবে এবং রোগীদের জন্য পার্ক থাকবে। রোগীদের বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে। পূর্ণাঙ্গ একটা হেলথ জোন বলতে যা বুঝায় সেরকম আমরা গড়ে তুলতে চাই। আমরা যখন রিসোর্টে যাই বিনোদনের জন্য, সেখানে যেমন আমরা অনেক ধরণের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকি, তেমনি রোগীদের জন্য একটা হেলথ জোন হবে যেখানে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। সেখানে রোগীরা হাটবে, ঘুরবে অর্থাৎ এমনভাবে সেটি তৈরি করা হবে যেখানে রোগীরা গেলে এমনিতেই অনেকটা সুস্থ অনুভব করবে। জানিনা আমার ভাগ্যে হবে কিনা; যদি আমার ভাগ্যে নাও থাকে, হয়তো আমার স্বপ্ন একদিন এই দেশের মানুষই পূরণ করবে বলে বিশ্বাস করি। আমি চাই দেশে রোগীদের জন্য হেলথ জোন হোক এবং সেখানে গবেষণাধর্মী কাজ হোক। আমাদের দেশে রোগীদের নিয়ে গবেষণা খুব কম হয়। গবেষণা হওয়াটা খুব জরুরি। সিঙ্গাপুরের কথাই ধরুন আমাদের একটি জেলার সমান দেশ, সেখানে স্বাস্থ্যখাতে তারা কত এগিয়ে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করছে কেবল হেলথ সেক্টর থেকে। আমাদের দেশের মানুষ কি তাহলে পারবেনা, অবশ্যই পারবে। আমি সেরকমটাই স্বপ্ন দেখি, আল্লাহ আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার তৌফিক দিক সেই দোয়া করি।

বি ক্যাঃ শিক্ষা ও যুব উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকা ও ক্যাম্পাস সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ৪ দশক থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের ৩ যুগপূর্তিতে আপনার পরামর্শ ও প্রতিক্রিয়া জানাবেন কি?

ফরাজী ইমনঃ আমি অভিবাদন জানাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকাকে। এটিকে চমৎকার একটি পত্রিকা বলব এই কারণে যে, এই পত্রিকাটি বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ এরকম নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যেভাবে কর্মমুখী করে দিয়েছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। এই ক্যাম্পাসের মাধ্যমে ছাত্র-যুবকদের বিভিন্ন বড় মাপের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এই ক্যাম্পাস পত্রিকা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পর্যন্ত যাচ্ছে, সচিবালয়ের প্রত্যেকটা রুমে যাচ্ছে। এই যে একটা প্ল্যাটফরম তৈরি করে দিয়েছে এবং এই জায়গাটিতে কাজের সুযোগ করে দিয়েছে সেইজন্য ক্যাম্পাস’র প্রতি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তাদের সাধুবাদ জানাচ্ছি, তাদের অভিবাদন জানাচ্ছি এই ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য।

আমি দোয়া করি এই প্রতিষ্ঠান যুগ যুগ ধরে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক এবং বিশেষ করে এ পত্রিকার সম্পাদক ড. এম হেলাল ভাই তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ, বিনয়ী মানুষ। তাঁদের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। খুব মোটিভেটেড একজন মানুষ। একটা মানুষকে লক্ষ্য স্থির করে দেয়ার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সেই জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়ার জন্য আমি আবারও ক্যাম্পাসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img