বিশেষ খবর



Upcoming Event

সকালে খালিপেটে যেসব খাবার ভীষণ ক্ষতিকর এবং যেসব খাবার খুব উপকারী

ক্যাম্পাস ডেস্ক স্বাস্থ্য

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের পেট খালি থাকে। যখন আমাদের খিদে লাগে, সে সময়ও আমাদের পেট খালি থাকে। এই পেট খালি থাকার সময় এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো খেলে আমাদের শরীরের খুব উপকার হয়; আবার এমন কিছু খাবার আছে, যেগুলো খেলে আমাদের শরীরের ভীষণ ক্ষতি হয়। খালিপেটে এসব ক্ষতিকর খাবার খেলে তার প্রভাব আমাদের শরীরে অনেক দিন ধরে চলতে থাকে। তাই আমাদের জানা থাকা দরকার, কোন কোন খাবার খালিপেটে খাওয়া খুব ক্ষতিকর, আর কোন কোন খাবার খালিপেটে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। আসুন, জেনে নিই, কোন কোন খাবার খালি পেটে খাওয়া ভীষণ ক্ষতিকর।

১. টমেটোঃ খাবার পর বা খাবারের সাথে সালাদ বানিয়ে যত খুশি টমেটো খান। কিন্তু খালিপেটে খাবেন না। টমেটোর মধ্যে যে এসিড থাকে, তা খালিপেটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। ফলে পেটে পাথর জমার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ট্যানিক এসিড থাকে, যার ফলে খালিপেটে টমেটো খেলে এসিডিটির সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

২. সাইট্রাস ফলের জুসঃ সকালে খালিপেটে পেয়ারা বা লেবু জাতীয় সাইট্রাস ফলের জুস খাবেন না। কারণ, ফলের রস খেলে শরীরে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া এসিডিটির সমস্যা এবং ওজন বেড়ে যেতে পারে। কমলালেবু বা ওই ধরণের সাইট্রাস ফলে প্রচুর অ্যাসিড থাকে। তাই সকালে উঠেই যদি এইসমস্ত ফল বা ফলের রস খেলে গ্যাস্ট্রিক আলসারের মতো গুরুতর সমস্যাও কিন্তু হতে পারে।

৩. কফিঃ সকালে উঠে অনেকেই এক কাপ গরম কফি নিয়ে বসেন। কিন্তু এটা মোটেই ভালো স্বভাব নয়। খালিপেটে কফি মারাত্মক হতে পারে। এসিডের মাত্রা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়া ছাড়াও হরমোনাল ইমব্যালেন্স হতে পারে। এর ফলে স্ট্রেস আর উদ্বেগের মাত্রা অনেকটা বেড়ে যায়।

৪. টক দইঃ দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান স্বাস্থ্যকর। তবে যদি দই খালি পেটে খাওয়া হয়, তবে কোনভাবেই তা স্বাস্ব্যকর নয়। দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলির আবরণের রসের সাথে মিশে পেটকে খারাপ করতে পারে।

৫. কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসঃ সকালের খালিপেটে কৃত্রিম চিনি বা মিষ্টিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত মাংস সকালে খালিপেটে না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার শরীরে অতিরিক্ত মেদ সৃষ্টি করে; সেই সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৬. মসলাযুক্ত খাবারঃ খালিপেটে মসলাযুক্ত খাবার খেলে পেটব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। আর মশলাযুক্ত খাবার হজম হতেও সময় লাগে।

৭. কলাঃ কলা সারাবছরই পাওয়া যায়। বহু খাদ্যগুণ থাকা সত্তে¡ও খালিপেটে কখনই কলা খাওয়া উচিত নয়। কলায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য নানা মিনারেল থাকে। তাই খালিপেটে কলা খেলে রক্তে মিনারেলসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে হার্টের নানা সমস্যা হতে পারে।

৮. মিষ্টি আলুঃ মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে ট্যানিন এবং পেকটিন। খালিপেটে এই ট্যানিন এবং পেকটিন বেশি পরিমাণে এসিড নিঃসরণ করে পাকস্থলির দেয়ালকে সংকুচিত করে। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের সমস্যা এবং বুকে জ্বালাপোড়া হয়।

৯. চাঃ কফির মতোই খালিপেটে চা খেলে এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে এসিডিটি এবং পেটে আলসার হতে পারে। চায়ের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রায় এলকালি উপাদান, যা পাকস্থলির আবরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১০. ঝাল খাবারঃ খালি পেটে ঝাল খাবার খেলে এই মশলা আপনার পাকস্থলীর আবরণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। তাই ঝাল খাবার খাওয়ার আগে দুধ খেতে পারেন। এতে সরাসরি ঝালের প্রভাব পাকস্থলীর ওপর পড়বে না। খালিপেটে ঝাল জাতীয় খাবার খেলে এসিডিক বিক্রিয়া হয়ে পেটে ভীষণ জ্বালাভাব তৈরি হয়।

১১. বিস্কুট বা চিপসঃ বিস্কুট বা চিপস খালিপেটে একেবারেই খাবেন না। কেননা, এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট কিছুক্ষণের মধ্যেই হজম হয়ে যাবে। ফলে আপনার খিদে খিদে ভাব দ্রæত ফিরে আসবে।

১২. লেমন সোডাঃ লেমন সোডার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ কার্বনেটেড এসিড। খালিপেটে সোডা খাওয়া হলে লেমন সোডার এই এসিড স্বাস্থ্যের সমস্যা এবং বমিবমি ভাবের উদ্রেক করে।

১৩. পেস্ট্রি বা অন্যান্য ইস্টযুক্ত খাবারঃ সকালে উঠেই খালিপেটে পেস্ট্রি বা প্যাটিস, পাউরুটি বা যে সমস্ত খাবারে ইস্ট আছে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। এই খাবারগুলি আপনার শরীরের ইস্টের মাত্রাকে স্বাভাবিকভাবেই বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া ইস্ট আপনার শরীরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকেও বাড়িয়ে তোলে ।

১৪. মিষ্টিঃ সকালে খালি পেটে কক্ষণো মিষ্টি খাবেন না। মিষ্টি আপনার শরীরে ইনসুলিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে আপনার অগ্ন্যাশয়ের ওপর চাপ পড়ে। এর ফলে আপনার ডায়াবেটিসও হয়ে যেতে পারে।

১৬. নাশপাতিঃ নাশপাতি খালিপেটে খেলে ওতে যে ফাইবার থাকে তা কিন্তু আপনার শরীরের মিউকাস মেমব্রেনের ক্ষতি করতে পারে।

১৭. ফারমেন্টেড খাবারঃ খালিপেটে নানা ধরনের ফারমেন্টেড খাবার খেলে তা পেটে গিয়ে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি করে, যা ল্যাক্টিক অ্যাসিড ও উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে ও আপনার শরীরের ওভারঅল যে স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়াল সিস্টেম, তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১৮. শসা ও অন্যান্য সবুজ সবজিঃ শসা ও অন্যান্য সবুজ সবজি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো, কিন্তু তা অবশ্যই ভরাপেটে। ঘুম থেকে উঠেই খালিপেটে শসা খাওয়া মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ শসা ও অন্যান্য সবুজ সবজিতে প্রচুর পরিমাণ অ্যামাইনো এসিড থাকে -যা খালিপেটে খেলে অম্বল, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদির কারণ হয়।

১৯. কোল্ডড্রিঙ্কসঃ কোল্ডড্রিঙ্কসে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড আপনার পেটের মিউকাস মেমব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাকস্থলীতে রক্ত সঞ্চালনও কমিয়ে দেয়। এর ফলে খাবার হজম হতে দেরী হয় ও হজমের নানা সমস্যা হয়।

২০. মৌসুমি ফলঃ খালিপেটে ফল খেতে নেই। আপনি যদি ফল খেয়েই থাকেন, তাহলে এর সঙ্গে আপনার খাওয়া উচিত কোনো প্রোটিন ধরণের খাবার। সামান্য পরিমাণ বাদাম, পিনাট বাটার বা পনির ফলের সঙ্গে খেতে পারেন।

২১. অ্যালকোহলঃ মদ্যপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর খালিপেটে মদ্যপান আরো ক্ষতিকর। মদের মধ্যে যেসব এলকালি উপাদান রয়েছে, সেগুলো অন্ত্রের জ্বালাভাব তৈরি করে। অ্যালকোহল লিভারের চ‚ড়ান্ত ক্ষতি করে।

২২. বিশেষ কিছু ওষুধঃ বেশ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে, যা ইনটেস্টাইন বা অন্ত্রের আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসিডের মাত্রাও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে পেটের আলসার হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা বেড়ে যায়। এছাড়া খালিপেটে এসিডের মাত্রা যেহেতু বেশি থাকে, তাই অ্যান্টিবায়োটিক তাড়াতাড়ি গলে যায়; ফলে তাদের গুণ অনেক কমে যায়। যখন খালিপেটে ওষুধ খাওয়া হয়, তখন তা পাকস্থলিতে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে।



যেসব খাবার খালিপেটে খাওয়া অত্যন্ত উপকারী

সকাল বেলা ভারী নাস্তা খেতে হয়। তবে শুরুতেই ভারী খাবার না খেয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে হালকা গরম পানি ও হালকা কোনো খাবার খেতে হবে। এর ঘণ্টাখানেক পর ভারী খাবার খেতে পারেন। খালিপেটে কি কি খাওয়া উপকারী জেনে নিন।

১. মধুঃ খালিপেটে মধু খাওয়া খুবই উপকারী। মধু শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সকালবেলা খালিপেটে একচামচ মধু কিন্তু আপনার সারাদিনের এনার্জি বুস্টার হয়ে উঠতে পারে! কীভাবে? মধু আসলে আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় ও ‘ফিল গুড’ হরমোন সেরাটোনিনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। ফলে এক চামচ মধু সকালে উঠে খেয়ে দেখুন। দেখবেন, গোটা দিনটা আপনার ওই ‘ফিল গুড’ এফেক্টেই কেটে যাবে!

২. কাঠ বাদামঃ কাঠ বাদাম আগের দিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকাল বেলা পানি ঝরিয়ে খালিপেটে বাদাম খেতে হবে। এতে অনেক বেশি ভিটামিন ও মিনারেলস পাবেন। কাঠ বাদাম বা আমন্ড নিয়ম করে প্রতিদিন খেলে সারাদিন সতেজ থাকতে পারবেন। শরীরে দুর্বলতা আসবে না।

৩. আমলকির জুসঃ খালিপেটে যদি আমলকির জুস খেতে পারেন, তাহলে আয়ু বৃদ্ধি পাবে। আমলকিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। এতে ত্বক পরিষ্কার হবে, চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ও চোখ ভালো থাকবে। তবে আমলকির জুস খাওয়ার ৪৫ মিনিটের মধ্যে কোনোভাবেই চা বা কফি খাওয়া যাবে না।

৪. পাকা পেঁপেঃ খালিপেটে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করবে ও পেট পরিষ্কার রাখবে। সেই সঙ্গে পেঁপে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করবে।

৫. তরমুজঃ তরমুজ খালিপেটে খেতে পারেন। কারণ তরমুজে থাকে ইলেকট্রলাইট, যা সারারাতের পানির অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালরি খুবই কম থাকে। তরমুজ আমাদের শরীরে প্রচুর জলীয় উপাদান বা ফ্লুয়িড সরবরাহ করতে পারে। তাছাড়া তরমুজে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন থাকে, যা আপনার চোখ ও হার্টের জন্য ভালো হতে পারে। তাই গরমের দিনে খালিপেটে তরমুজ খান। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানিও পাবেন আর সারাদিন তরতাজাও থাকবেন!

৬. খেজুরঃ ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে খেজুর খেতে পারেন। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করতে পারে। খেজুর হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। ডায়রিয়া বা পেট খারাপ এই ধরণের কোনো সমস্যা থাকে না। কারণ খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে।

৭. চিনাবাদামঃ সকালে উঠে চিনাবাদাম ভেজানো খাবার অভ্যেস যদি থাকে, তাহলে অভ্যেসটা ছাড়বেন না। বাদাম কিন্তু আপনার হজমের সমস্যাকে দূর করে ও পেটে পিএইচ এর মাত্রাও স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

৮. ইস্ট ছাড়া হোল গ্রেনঃ হোল গ্রেনে থাকা কার্বোহাইড্রেট ও অন্যান্য নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ কিন্তু আপনার ব্রেকফাস্টের জন্য একদম আদর্শ হতে পারে। দুধ দিয়ে একবাটি ওটস কিন্তু আপনার হেলদি ব্রেকফাস্ট অপশন হতেই পারে!

৯. সেদ্ধ ডিমঃ সকালে সেদ্ধ ডিম খাওয়াও কিন্তু আপনার রোজকার ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা কমাতে পারে। তাই ব্রেকফাস্টে ডিম কিন্তু আপনার জন্য অটোমেটিক চয়েস হতেই পারে।

১০. ওটসঃ ব্রেকফাস্টে ওটসও কিন্তু আপনার জন্য দারুণ একটা অপশন হতে পারে। আপনার পেটের মধ্যে হাইড্রোক্লোরিক এসিড তৈরি হলে তা আপনার পাকস্থলীর প্রাচীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওটসে কিছু দ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রাকে কম করতেও সাহায্য করে।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img