বিশেষ খবর



Upcoming Event

কীর্তিনাশা পদ্মা এখন হবে কীর্তিমান পদ্মা নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ জিডিপিতে যোগ করবে -বাণিজ্যমন্ত্রী

ক্যাম্পাস ডেস্ক বিশেষ প্রতিবেদন
img

পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে, এই স্থাপনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে তিনগুণ অর্থ যোগ হবে বলে ‘জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এই সেতুর কারণে জিডিপিতে যোগ হবে মোট ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার। ডলারের বিপরীতে টাকার বর্তমান বিনিময় হারে এটি দাঁড়ায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যা পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ। দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি নির্মাণে শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সেমিনারে আরও বলা হয়, পদ্মা সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু থেকে যে টোল আদায় হবে তার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে বিনিয়োগ। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটি এই সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পদ্মা ছিল কীর্তিনাশা পদ্মা, এখন হয়ে যাবে কীর্তিমান পদ্মা। এর ওপর দিয়েই তো আমাদের নতুন সফলতা গাথা হবে, নতুন ইতিহাস তৈরি হবে। পদ্মা সেতুর নামকরণ নিয়ে অনেকে বলেছেন, শেখ হাসিনার নামে করার জন্য। তিনি বলেন, ‘পাথরে না লিখে হৃদয়ে লেখা হোক না শেখ হাসিনার নাম। পদ্মা সেতু যতদিন থাকবে, আমরা এই নাম হৃদয়ে নিয়েই চলে যাব। এটাও তাঁর বিশালতা যে, তিনি তাঁর নাম যুক্ত করতে চাননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দাবায় রাখতে পারবা না।’ তাঁর উত্তরস‚রি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু একই সুরে বলেছিলেন, ‘বন্ধ করতে পারবা না। বিশ্বব্যাংক অনেক কথা বলল, টাকা দিল না, কিন্তু আমরা অতিক্রম করবই।’ যে কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, একইভাবে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘আমরা অতিক্রম করবই।’ সেই সাহস, তেজদীপ্ত ঘোষণাই আজকের পদ্মা সেতু। আমরা জানি যে, অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়বে, আমাদের ভাগ্য বদলাবে। এটা নিশ্চিত যে, পদ্মা সেতু আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে। এই সাহস দেখিয়ে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন যে, আমরা মাথা নত করার লোক নই। বাঙালী জাতি আমরা আবার গর্বের সঙ্গে বলব যে, ‘আমাদের দাবায় রাখতে পারবা না। এটা কিন্তু কম পাওয়া না।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালীকে বলা হয় শংকর শ্রেণীর জাতি। সব ভালকেও ভাল বলতে রাজি না। এই যে পদ্মা সেতু হলো, তারপরও কিন্তু সমালোচনার শেষ নেই। এসব মিলিয়েই বাঙালী। এসব না থাকলে বাঙালী কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। এগুলো নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। আমরা এগিয়ে যাব।’

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মধ্যেই শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি তখন তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে ছিলাম। ষড়যন্ত্র যেটা হয়েছে, এটা সত্য। এটা খুবই গভীর ম‚লের ষড়যন্ত্র ছিল। এটা এমন ছিল না যে, কেউ কাউকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এমন করেছে। ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে যেন এত বড় অবকাঠামো না হয়।’ বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ তখনও শুরু হয়নি, কনস্ট্রাকশন শুরু হয়নি; তারা (বিশ্বব্যাংক) বলছে কনসালটেন্সিতে দুর্নীতি হয়েছে। যেটা (কনসালটেন্ট) তখন নিয়োগই করা হয়নি। সেটা করার আগেই দুর্নীতি করার নাকি ইচ্ছা ছিল! দুর্নীতি হয়েছে- এমনটাও অভিযোগ ছিল না তাদের। দুর্নীতি করার ইচ্ছা ছিল, এই ভিত্তিতে তারা অর্থায়ন বন্ধ করে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এই সেতু যেন বাংলাদেশ না করতে পারে সেটাই ছিল ম‚ল উদ্দেশ্য।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘কানাডার আদালত পর্যন্ত গড়াল বিষয়টা। সেখান থেকে রায় আসল যে, কোন দুর্নীতি হয়নি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস করে বললেন, তাদের টাকার দরকার নেই, আমরা নিজের টাকায় করব। তখন সরকারের অনেকেই বলেছিল যে, না এরকম না করার জন্য, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলা না করার জন্য, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখা উচিত। আমাদের মধ্যেই কয়জন ছিল যে, নিজের টাকায় সেতু করতে বাধা দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, যে বিশ্বব্যাংক টাকা দিবে না, তোমরা চেষ্টা করছো কর, কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি বিশ্বব্যাংক টাকা দিবে না। ঠিকই দিল না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, আমাকে খামোখা ছয় মাস পেছালে। আমি তো আগেই এটা করতে পারতাম। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা নিয়েও সুশীল সমাজ অনেক সমালোচনা করেছে।

বিএনপি পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) আগে বলেছে, সেতু ভেঙ্গে যাবে, পড়ে যাবে, এটা কনস্ট্রাকশন করা যাবে না। যখন কনস্ট্রাকশন হয়ে গেল তখন তারা ক্রেডিট নিতে চাইল যে, এটার ভিত্তিপ্রস্তর তারা করেছে। কিছুদিন আগে তাদের আমলের যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিবৃতি দিলেন যে, এমন কিছু হয়নি। বিএনপি কী বলছে, সেটা নিয়ে যত কম কথা বলা যায় তত ভাল। পদ্মা সেতু দিয়ে বাংলাদেশের একটা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং হয়েছে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি সেদিন পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট দেখছিলাম। সেটি প্রধানমন্ত্রীকে ফরোয়ার্ড করেছিলাম। যে তারা কিভাবে দেখছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন পাকিস্তানী ব্যবসায়ী বলছিলেন যে, শেখ হাসিনা পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হয়ে গেছেন। আমি বলব- প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকুক আর না থাকুক এটি শেখ হাসিনা সেতু।’

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বক্স, ড. জামালউদ্দীন আহমেদ, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক ড. শামসুল হক। সেমিনারে পদ্মা সেতু নিয়ে আয়ের একটা হিসাব দেখিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এই সেতুর কারণে জিডিপিতে যোগ হবে মোট ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার। ডলারের বিপরীতে টাকার বর্তমান বিনিময় হারে এটি দাঁড়ায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা, যা পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের তিনগুণ। দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটি নির্মাণে শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ রাখা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। এটি শুধু সেতুই নয়, পদ্মা সেতু হবে অর্থনীতির ম‚ল চালিকাশক্তি। এই সেতুর ফলে আমাদের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে।’ আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপির আকার ৪২০ বিলিয়ন ডলার। পদ্মা সেতুকে চিন্তা করতে হবে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে। এই সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি দারিদ্র্যপীড়িত জেলার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু থেকে যে টোল আদায় হবে তার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে বিনিয়োগ।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন, এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, বিএসএমএ চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন, মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক।


বিশ্ববিদ্যালয় কম্পাস পত্রিকার সংখ্যা সমূহ

আরো সংবাদ

শিশু ক্যাম্পাস

বিশেষ সংখ্যা

img img img