দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ
৮ কোটি ১৭ লাখ পুরুষ, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ, তৃতীয় লিঙ্গ ১২ হাজার ৬২৯
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বিবিএসের মাধ্যমে বাস্তবায়িত প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আগের শুমারি অনুযায়ী, ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। অর্থাৎ গত ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষের তুলনায় দেশে নারীর সংখ্যা বেশি। ৮ কোটি ১৭ লাখ পুরুষের বিপরীতে বাংলাদেশে এখন নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ। ঢাকা বিভাগে সর্বাধিক ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন মানুষের বসবাস।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মোঃ দিলদার হোসেন।
প্রকল্প পরিচালক মোঃ দিলদার হোসেন মূল প্রবন্ধে বলেন, বর্তমানে দেশে প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৮ জন। দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। যেখানে ৮ কোটি ১৭ লাখ পুরুষ ও ৮ কোটি ৩৩ লাখ নারী। ১২ হাজার ৬২৯ জন আছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তিনি বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন।
এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ২১ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ জন এবং নারীর সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯০১ জন। আগের শুমারি অনুযায়ী ২০১১ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন। অর্থাৎ গত ১১ বছরে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। তবে জনশুমারিতে ভুল থাকতে পারে বিষয়টি স্বীকার করে সেটি দেখিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জনশুমারি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে। তবু, আমাদের ভুল থাকতেই পারে। আপনারা সেটি দেখিয়ে দিন। আমরা সংশোধন করব। মন্ত্রী বলেন, জনশুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে। এসব তথ্যের অনেক কমার্শিয়াল ভ্যালু আছে।
জনশুমারি তথ্যের প্রকৃতি নিয়ে তিনি বলেন, এবারের ডিজিটাল জনশুমারিতে ৪ লাখ অত্যাধুনিক ট্যাব ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমপক্ষে এইচএসসি পাস, এমন কর্মীদের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখান থেকে মাত্র ৬৪টি ট্যাব নষ্ট হয়েছে বা ফেরত আসেনি। এটি একটি ম্যাজিক ফিগার। এম এ মান্নান বলেন, আমার অফিসারদের আমি বলেছি, ১ মাসের মধ্যেই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। তারা ঘাবড়ে গিয়েছিল। আমি বলেছি ‘লেট আস ট্রাই’।
জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম আদমশুমারিতে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন। এ সংখ্যাটা ৫০ বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০১ সালে দেশে জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৬৩ জন। ১৯৯১ সালে ছিল ১০ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জন। ১৯৮১ সালে ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ ১৯ হাজার ৯৬৫ জন এবং ১৯৭৪ সালের প্রথম শুমারিতে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭১ জন। শুমারির তথ্যানুযায়ী দেশে জনসংখ্যার বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার কমেছে। এবারের শুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২২ শতাংশ। যা ২০১১ সালে ছিল ১.৪৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ছিল ১.৫৮ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ছিল ২.০১ শতাংশ, ১৯৮১ সালে ছিল ২.৮৪ শতাংশ। এবারের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে মোট পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারী ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের জনসংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন। জনশুমারি অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ বেশি। শুমারির তথ্যানুযায়ী, বিভাগ হিসেবে ঢাকায় সর্বাধিক ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন মানুষের বসবাস। এর মধ্যে পুরুষ ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮২২ জন। আর নারী ২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৫৫৬ জন। এ বিভাগে ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭৭ জন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনসংখ্যা ৫৯ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৭ জন। বিপরীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংখ্যা ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৫। সে হিসেবে দুই সিটি কর্পোরেশনের মোট বাসিন্দা ১ কোটি ২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮২ জন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, দেশের সঠিক জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ। এতদিন যারা ১৮ কোটি ও ২০ কোটি জনসংখ্যার কথা বলেছেন, সেগুলো অনুমাননির্ভর ছিল। স্পীকার বলেন, জনশুমারি দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেশের মোট জনসংখ্যার তথ্য পেয়েছি। কতভাগ নারী, কতভাগ পুরুষ সব তথ্য পেয়েছি।
তথ্যে দেখলাম নারীর সংখ্যা বেশি। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমরা জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন পেয়েছি। খুব দ্রুততম সময়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। জনশুমারির রিপোর্ট চমৎকারভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। জাতির পিতা সর্বপ্রথম ১৯৭৪ সালে বিবিএস প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বের সব দেশেই জনশুমারি হয়। কাজটি খুবই জটিল, এটি সূক্ষ্মভাবে সম্পাদন করতে হয়। সবার হাতে একটা মোবাইল জীবনের অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্রুত সময়ে আমরা নানা তথ্য-উপাত্ত জানতে পারি মোবাইলে। ১০ বছর পর জনশুমারি করে থাকি। জনশুমারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
নানা গবেষণা ও পরিকল্পনা গ্রহণে এর তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্পীকার বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে বড় অংশ বয়স্ক মানুষ। কিন্তু আমরা দেখেছি আমাদের দেশে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী জনসংখ্যা বেশি। এটা আমাদের জন্য বড় পাওয়া। কাজেই আমাদের তরুণ শক্তি বেশি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, অনেকে বিবিএসের তথ্য নিয়ে কথা বলেন। আমরা দেখেছি, সফলভাবে বিবিএস তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। এসডিজি বাস্তবায়নের ১০৫টি সূচক এ জনশুমারি থেকে নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ছে। দেশের উৎপাদিত ট্যাবে ডিজিটাল জনশুমারি করেছি।
দেশে বস্তিবাসী মাত্র ১৮ লাখ। এ সংখ্যা আগে বেশি ছিল। তার মানে বস্তি থেকে বেরিয়ে মানুষ অন্য জায়গায় বসবাস করছেন, দেশে দ্রুতহারে দারিদ্র্যতা কমছে। বর্তমানে দেশে ভাসমান মানুষ মাত্র ২২ হাজার। অনেক উন্নত দেশে এ সংখ্যা আরও বেশি।
৫ বছরের বেশি বয়সীদের ৫৫.৮৯ শতাংশের হাতে মোবাইল ফোন ॥ দেশের জনগোষ্ঠীর পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সীদের মধ্যে মোবাইল ফোন আছে ৫৫ দশমিক ৮৯ শতাংশের। এই বয়সী পুরুষদের মধ্যে মোবাইল ফোন আছে ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশের, আর নারীদের মধ্যে আছে ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশের হাতে। বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা আট কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন, নারীর সংখ্যা আট কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। এছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ১২ হাজার ৬২৯ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮ বিভাগের মধ্যে পাঁচ বছর ও তদুর্ধ, ১৮ বছর ও তদুর্ধ- এই দুই ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ঢাকা বিভাগে। ওই দুই ক্যাটাগরিতে সর্বনি¤œ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সিলেট বিভাগে। ঢাকার পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৬২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের মোবাইল ফোন রয়েছে। আর এই বিভাগে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশেরই মোবাইল ফোন আছে। অন্যদিকে সিলেট বিভাগে পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশের মোবাইল ফোন রয়েছে, আর ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশের মোবাইল ফোন আছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের হিসেবে দেখা গেছে, দেশের জনগোষ্ঠীর পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩০ দশমিক ৬৮ শতাংশই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ১৮ বছর ও তদুর্ধ বয়সী অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের ৭২ দশমিক ৩১ শতাংশই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।
প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৩৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এই বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ নারী।
দেশে মুসলিম জনগোষ্ঠী ৯১.০৪ শতাংশ, হিন্দু ৭.৯৫ শতাংশ ॥ দেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা এক দশকে বেড়েছে ০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। একই সময়ে কমেছে অন্য ধর্মাবলম্বী জনসংখ্যা। বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। যেখানে ৮ কোটি ১৭ লাখ পুরুষ ও ৮ কোটি ৩৩ লাখ নারী। ২০২২-এর জনশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যার ৯১ দশমিক ০৪ শতাংশ মুসলমান, ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ হিন্দু, ০ দশমিক ৬২ শতাংশ বৌদ্ধ, ০ দশমিক ৩০ শতাংশ খ্রীস্টান এবং অন্যান্য ০ দশমিক ১২ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১১ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৯০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ০ দশমিক ৬২ শতাংশ, ০ দশমিক ৩১ শতাংশ ও ০ দশমিক ১৪ শতাংশ। বিভাগওয়ারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মুসলমান ময়মনসিংহ বিভাগে ৯৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সবচেয়ে কম সিলেটে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
জনশুমারিতে তৃতীয় লিঙ্গ ১২ হাজার ৬২৯ জন ॥ ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো জনশুমারি (আদমশুমারি) হয় বাংলাদেশে। এরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১, ২০১১ ও ২০২২ সাল মিলে মোট ৬ বার জনশুমারি হয়। তবে এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সে তালিকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্থান পেল তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ক্ষেত্রে মূল্যায়ন পেতে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের যে দাবি তা বাস্তবায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল তারা। ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, ১২ হাজার ৬২৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের। এলাকাভিত্তিক বিবেচনায় ৪ হাজার ৫৭৭ জনই বাস করেন ঢাকা বিভাগে।
সবচেয়ে কম ৮৪০ জনের বাস সিলেটে। অন্য বিভাগের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ৫৬৩ জন, চট্টগ্রামে ২ হাজার ২৬, খুলনায় ১ হাজার ১৪৮, ময়মনসিংহে ৯৭২, রাজশাহীতে ১ হাজার ৫৭৪ আর রংপুরে ৯২৯ জন বসবাস করেন। সিটি কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএনসিসি) ৯০৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বসবাস। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ৬৫৩ জন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) ৩৬৭, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে (জিসিসি) ৩৯৫, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে (কুসিক) ৪৭, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে (বিসিসি) ৩৯, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে (রাসিক) ৫১, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে (রসিক) ৪৭, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে (সিসিক) ১১৪, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে (মসিক) ৮৭, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে (কেসিসি) ১০৯, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে (নাসিক) ৯৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বসবাস করেন।
নতুন সংসার বেশি রাজশাহীতে, বিচ্ছেদ খুলনায় ॥ দেশে নতুন সংসার ও বিবাহিতদের আনুপাতিক হারের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে রাজশাহী বিভাগ। সেখানে ৬৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ বিবাহিত। অপরদিকে, সংসার ভাঙ্গা ও বিয়ে-বিচ্ছেদের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে খুলনাবাসী। জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বিবাহিতদের গড় ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। জাতীয় গড়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ২ দশমিক ৩১ শতাংশ বিবাহিত রয়েছে রাজশাহীতে। অল্প ব্যবধানে দ্বিতীয় অবস্থানে খুলনা।
এর পরের অবস্থানে থাকা রংপুর, বরিশাল, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম রয়েছে জাতীয় গড়ের ওপরে। অন্যদিকে বিবাহিতদের জাতীয় গড়ের চেয়ে কমপক্ষে ১০ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে সিলেট। সেখানে নতুন সংসার পাতার হার ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিয়ে-বিচ্ছেদের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে খুলনা। হার শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। সংসার ভাঙ্গার ক্ষেত্রে জাতীয় গড় হচ্ছে দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিয়ে-বিচ্ছেদ সবচেয়ে কম পছন্দ করেন বরিশালের মানুষ। সেখানে সংসার ভাঙ্গার হার দশমিক ৩১ শতাংশ। চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেটের বাসিন্দাদের অবস্থান এরপর। জনশুমারি অনুযায়ী, দেশে মোট জনসংখ্যার ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বিবাহিত। আর ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ অবিবাহিত।