|| এম হেলাল ||
দৈনন্দিন জীবনযাপন তাদেরই সফল হয়, যারা
কর্মযোগী ও স্বাস্থ্য-সচেতন। এরূপ
মানুষ অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা, অর্থাৎ এরা ব্যতিক্রমী বিশেষ মানুষ। তাই রমজান ও ধর্মকর্ম সব মুসলমানের জন্য প্রযোজ্য
হলেও বিশেষ মানুষদের রোজা রাখা বা
ধর্ম পালনও একটু ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রম মানে কিন্তু মনগড়া কিছু নয়, বরং বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যচর্চা এবং
সময়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধ
কর্মজীবনের কলাকৌশল।
রমজানের সদ্ব্যবহার ও অপব্যবহার
কেউ কেউ বলেন, বছরের অন্য ১১ মাসের তুলনায় রমজান মাসে কাজ করার
সুযোগ কম। আবার কারো মতে, রমজান
মাস কর্মের অনুকূল নয়। এসবই নেতিবাচক কথা, আলসেমী
ও কর্মফাঁকির কথা, সাধারণের
সাধারণ কথা; বিশেষ মানুষের কথা নয়। রমজানে অফিসের ও কর্মের সময়সূচি পরিবর্তন হয় বলে কাজ কম হবে -এ
কথাটি কাজ করতে না চাওয়ার বাহানা
তথা অকর্মণ্যের অজুহাত মাত্র। ইংরেজীতে প্রবাদ আছে- Those who want to
achieve, will find a way; but those who don’t, will find many excuses.
কর্মযোগীরা যেকোনো পরিবেশের সাথে ও পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নয়া পরিকল্পনা ও কৌশলে নিজের কার্যসূচি সাজিয়ে নেন।
তারা কাজের পরিমাণ হ্রাসতো করেনই
না, বরং গুণগত মানও বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকেন; কাজ
করতে চান বলে কর্মের কৌশল ও সুবুদ্ধি তাদের কাছে ধরা
দিয়ে থাকে। অন্যদিকে যারা কাজ করতে চান না,
তাদের সুবুদ্ধি পালিয়ে বেড়ায় এবং কুবুদ্ধি, কুমতলব,
শত রকমের অপকৌশল
ও হাজার রকমের অজুহাত তাদের চিন্তায় এসে ভর করে। তারা ভুলে থাকেন যে- What you are, is God’s gift to you;
but what you become is your gift to God. আরও কিছু কারণের পাশাপাশি উক্ত কারণেও
সমাজে তৈরি হয় শ্রেণিবৈষম্য, যেমন-
ধনী ও দরিদ্র, সফল ও ব্যর্থ মানুষ। আমাদের ন্যায় ক্যালাস, রিএকটিভ
ও তর্কপ্রিয় তথা ক্ষয়িষ্ণু সমাজে অনুরূপ শ্রেণিবৈষম্য সংগত
কারণেই বেশি।
আমাদের সমাজে অনেকেই রমজান মাসকে ইবাদত-দান-ত্যাগ ও সংযমের মাস হিসেবে
না নিয়ে বরং মুনাফালাভ ও সুবিধা ভোগের মাস হিসেবে
নিয়ে থাকে। যার ফলে পণ্যের উৎপাদন
ব্যয় ও আমদানী মূল্য না বাড়া সত্ত্বেও রোজাদারকে কেনাকাটা করতে হয় চড়া দামে; রোজাদারের
ভাষায়- গলাকাটা দামে বা অগ্নিমূল্যে।
বাজারে গিয়ে ইফতার ও খাদ্য-সামগ্রীর অগ্নিমূল্য দেখে এবং বিক্রেতা
কর্তৃক ওজনে কম দেয়ার অপকৌশল ও প্রতারণা দেখে রোজাদার
তার মানসিক যন্ত্রণা ও হা-পিত্যেশের
অসহনীয় যে নিঃশ্বাস ছাড়েন, সে অভিশাপ কি আরেক মুসলিম বিক্রেতার ওপর পড়ে না? এভাবে
রমজানে সওয়াব কামাইয়ের পরিবর্তে আমরা অনেকেই কি
গোনাহ্গার হচ্ছি না? এরূপ মুনাফা ক্রেইজি বাণিজ্য, স্বার্থপরতা
ও সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অবসান কি একেবারেই
অসম্ভব?
রমজান এলেই চাকরির অঙ্গনে দৈনিক ২/৩ ঘন্টার অফিস টাইম হ্রাস হয়ে যায়।
সকাল ৯টা বা সাড়ে ৯টার মধ্যে অফিসে উপস্থিতি নির্ধারিত
থাকলেও অনেকেই রোজা রাখার অজুহাতে
১০টা বা ১১টার পর অফিসে যান। আবার অনেকে যোহরের নামাজে যাচ্ছেন বলে বাসায় চলে যান; এভাবে
ইচ্ছামতো অফিসে আসা-যাওয়াকে অন্যায় বা অনিয়ম বলেও মনে
করেন না। বাসায় গিয়ে ইফতার-উৎসব সেরে টেলিভিশনের সামনে বসে যান অথবা ঘুমিয়ে পড়েন; আলসেমি
ও হেলাফেলায় বেহিসেবীভাবে কাটিয়ে দেন ফজিলত ও কর্তব্য কর্মের
হিসাবে থাকা সময়গুলো। এরূপ বা অনুরূপ ফাঁকি ও প্রতারণার ফন্দি-ফিকির অবাধে চলে রমজান মাসে।
অন্যদিকে রমজানে শুক্রবারে মসজিদ উপচে রাস্তা অবধি জুম্মার নামাজের
কাতার দেখে এক নামাজী আরেক নামাজীকে প্রশ্ন করেন-
রমজানে আমাদের মুসলমানের সংখ্যা এত বাড়ে
কীভাবে? তাহলে কি সারাবছর এরা মুসলিম থাকে না? ..এভাবে
আমাদের অনেকেই রমজান মাসকে সুবিধা ভোগের মাস হিসেবে
গ্রহণ করেন, যা ইসলাম ধর্ম-দর্শন
ও রোজার আদর্শের পরিপন্থী।
রমজানের বিশেষ উপকার
মাহে রমজানে কর্মযোগী মানুষরা জাগতিক কর্মের সাথে আধ্যাত্মিক চর্চার
অনুপম সমন্বয় ঘটিয়ে এ মাসকে রহমত, বরকত,
আত্মিক ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে কাজে
লাগান।
রমজান মাসের ফজিলত বা উপকারিতা বহুবিধ, যার
ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কমবেশি
আমরা সবাই জানি। তাই সে বিষয়ের আলোচনায় আর যাব না। তবে রমজানে তিনটি বিশেষ ফজিলতের কোনো বিকল্প আমি খুঁজে পাইনি।
এক, অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে এবাদত ও সুকর্মে ৭০ গুণ
বেশি সওয়াব। দুই, শরীরে সারাবছরে জমে যাওয়া মেদ বা চর্বি ভেঙ্গে
যায় এবং ডিটক্সিফিকেশন ঘটে; অর্থাৎ শরীরে জমে যাওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো
মল-মূত্র-ঘাম ইত্যাদি বডি-ফ্লুইডের
সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। রোজায় শরীরে চর্বি কমে যায় বলে কোলেস্টেরল হ্রাস পায়, উচ্চ
রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
সহজ হয়। কিছুদিন রোজা পালনের পর রক্তে এনডোরফিনসের মতো কয়েকটি হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যে
হরমোন মানুষকে অধিক সক্রিয় করে এবং শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখে।
রোজায় সেহরীর পর থেকে ইফতার পর্যন্ত উপোস থাকা হলেও প্রকৃতপক্ষে রোজার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কার্যকারিতা শুরু হয় সেহরীর
৮ ঘন্টা পর থেকে। কারণ সেহরীর
পর ৮ ঘন্টা পর্যন্ত ঐ খাবার হজম হতে থাকে এবং তা থেকে শরীরে শক্তি সরবরাহ হয়। ৮ ঘন্টা পর সেহরীর প্রভাব সরাসরি থাকে
না এবং তখন থেকে লিভার ও মাংসপেশীতে
পূর্বের জমে থাকা গ্লুকোজ ভেঙ্গে শক্তি উৎপন্ন হতে থাকে। গ্লুকোজ
শেষ হয়ে গেলে শরীরের বিভিন্ন অংশে জমে থাকা চর্বি ভেঙ্গে শক্তি তৈরি হয়। এই সকল প্রক্রিয়াই শরীরের জন্য খুব
উপকারী, যা ফাস্টিং স্টেট তথা রোজার
মাধ্যমে লাভ করা যায়। তবে ফাস্টিং স্টেট ২৪ ঘন্টার বেশি হলে মাংসপেশী শুকাতে পারে। সে প্রক্রিয়া কিন্তু শরীরের ওপর
ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তথা হিতে
বিপরীত হয়। অবশ্য ২৪ ঘন্টার কম বা বেশির এ সময়টা নির্ভর করে শারীরিক ক্ষীণতা বা স্থূলতার ওপর।
তিন, রমজানে তারাবী ও নফল নামাজের উপকারিতার কথা বলে
শেষ করার নয়। আধ্যাত্মিক সিদ্ধিলাভ ছাড়াও শরীরকে সুস্থ
রাখতে এবং মনে প্রশান্তি আনতে তারাবী
নামাজ বিশেষ সহায়ক। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে- দৈনিক ৩ কিলোমিটার হাঁটা বা দৌড়ানোর সমান পরিশ্রম হয় তারাবী নামাজ পড়লে।
অন্যান্য নামাজের মতো তারাবীও
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যালরি বার্ন তথা শক্তি ক্ষয় করে, ক্ষুধার
উদ্রেক করে, মানসিক শান্তি আনে।
তাই রমজানে নিয়মিত তারাবী নামাজ পড়া এবং অন্তত ফজরের নামাজ শেষে কয়েক
রাকাত নফল আদায় অশেষ সওয়াবের পাশাপাশি মাংসপেশীর শক্তি
বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকর।
ধর্ম-দর্শন এবং স্বাস্থ্য-বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী আমরা যদি রোজা পালন
করি, তাহলে শারীরিক বহুবিধ উপকার ছাড়া কোনো অপকার বা
অসুবিধাতো হয়ই না বরং সুস্বাস্থ্য
ছাড়াও পারিবারিক-সামাজিক-জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নতি বেড়ে যাবে এ রমজান মাসে। কল্যাণকামী চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে,
রমজান লোভ সংবরণের এবং সুস্বাস্থ্য
চর্চার মাস। এক্ষেত্রে আমার চিন্তা ও অভিজ্ঞতা এরূপ- সঠিক
খাদ্য তালিকা মানলে রোজা উপকারী, আর না
মানলে অপকারীও হতে পারে। তাছাড়া আমি মনে
করি- রোজা হতে পারে আমাদের জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, মানসিক
সুস্থতা, সম্প্রীতি, সাম্যের
মনোভাব, মানবতার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কর্মশালা। কিন্তু কি করছি আমরা? মানবতা
উজ্জীবনের অপূর্ব সুযোগকে কি মানব বিধ্বংসে ব্যয় করছি না?
রমজানে বেশি কাজ করা যায় যেভাবে
দিনলিপির দিক থেকে অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে ৩টি বিশেষ কাজ করতে হয়।
সেহরী ও ইফতার গ্রহণ এবং তারাবী নামাজ আদায়।
নির্দিষ্ট সময়ের এই ৩টি কর্মের সাথে অন্যান্য
কাজের সুসমন্বয় ঘটিয়ে থাকেন কর্মসফল মানুষরা। রোজায়
সাধারণত ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে অফিস-আদালতের কাজ শেষ করে আমরা বাসা-বাড়িতে ফিরি। এই অফিস সময়ের পর থেকে পরদিন
সকাল ৯টায় অফিসে যাওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত সময়টাকে সুপরিকল্পিত ও সুউন্নতভাবে কাজে লাগানোর কারিশমাই হচ্ছে কর্মযোগী-সফল মানুষের বৈশিষ্ট্য। বিকাল ৪টা
থেকে পরদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত
এই ১৭ ঘন্টার নির্ধারিত কাজ হচ্ছে- ইফতার ও মাগরীবের নামাজ ১ ঘন্টার কম; তারাবী
নামাজ ১ ঘন্টার বেশি; সেহরী, ফজরের
নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত
১ ঘন্টা এবং ঘুম ৬/৭ ঘন্টা। মেয়েদের ক্ষেত্রে রান্না ও ইফতার আয়োজনের কাজে আরো ঘন্টা দু’য়েক
লাগতে পারে; এটি ব্যক্তিভেদে কমবেশি হতে পারে এবং তা নির্ভর করে ‘হাউজ
এন্ড কিচেন ম্যানেজমেন্ট’ -এ দক্ষতা ও পারদর্শীতার
ওপর। এই সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ ঘন্টা ব্যয় হয়। বাকি ৫/৬ ঘন্টার যথাযথ বা কর্মপোযুক্ত ব্যবহার,
সেটিই সাধারণ মানুষের সাথে বিশেষ মানুষের
মধ্যকার পার্থক্য টেনে দেয়। আর প্রতিদিন এই ৫/৬ ঘন্টা সময় আলসেমী ও অপচয়ে না কাটিয়ে কর্মসাফল্যে কাটানোর উপায়ই হচ্ছে
আমার এ লেখার উদ্দেশ্য।
উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী সাধারণের চেয়ে কর্মযোগীরা দৈনিক ৫/৬ ঘন্টা
অর্থাৎ ৩০ দিনে ১৫০-২০০ ঘন্টা বেশি সময় কাজের মধ্য
দিয়ে কাটানোর সুযোগ তৈরি করেন। কাজের
ধরন মোটামুটি নিম্নরূপ।
রমজানে অফিসে ২ থেকে ৪ ঘন্টার যে কাজ কম হয়, তা
বাড়িতে নিয়ে করা; অধ্যয়ন, লেখালেখি
বা অনুরূপ সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা; ইয়োগা,
মেডিটেশন ও স্বাস্থ্যচর্চা;
পারিবারিক-সাংসারিক-সামাজিক কল্যাণকর কাজ; পরিবার-পরিজন
বা পড়শীদের নিয়ে জিকির বা ধর্মসভা করা ইত্যাদি।
নারী-পুরুষভেদে ব্যতিক্রম সাপেক্ষে উপরোক্ত কাজের সময়গুলো হতে পারে
এরূপ- বিকেলে বাসায় পৌঁছার পর থেকে ইফতারের আধাঘন্টা
পূর্ব পর্যন্ত; মাগরীব নামাজের
পর থেকে তারাবী নামাজের পূর্ব পর্যন্ত; তারাবীর পর থেকে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত; ফজরের
নামাজের পর থেকে অফিসে যাবার প্রস্তুতি পর্যন্ত।
উল্লেখিত ৪টি বিকল্প ও সম্পূরক সময়ের মধ্যে ইফতার পর্ব এবং ইফতারের
পরের এক ঘন্টা সময়কে রোজার ক্লান্তিজনিত বিশ্রাম
হিসেবে কেউ কেউ গ্রহণ করলেও বাকি ৪/৫
ঘন্টাতো খুব সহজেই কর্মতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কিন্তু তা না করে বহুজনই প্রতিদিনের এ ৪/৫ ঘন্টার অনেকটাই হেলাফেলা
ও আলসেমীতে কাটিয়ে দেন, যা কর্মময় জীবন থেকে অপচয় হয়ে সফল হবার সুযোগকে
নষ্ট করে দেয়। সময়ের অপচয়ের প্রতিশোধ
হিসেবে সময় তাকে বঞ্চিত করে অফিসিয়াল বিশেষ বোনাস থেকে, শিক্ষা-প্রশিক্ষণ
ও জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে এবং সর্বোপরি ক্রমঅগ্রসরমান সাফল্য
থেকে।
এ প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন- ক্লান্তিজনিত বিশ্রাম ১০/১৫ মিনিটের বেশি এবং দৈনিক ঘুমের সময় ৪/৫ ঘন্টার বেশি তাদের দরকার হয়
না, যারা মেডিটেশনের ‘বিটা লেভেল রিলাক্সেশন’ টেকনিক
জানেন। মেডিটেশনের এরূপ সেশন ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে
মাসের ১ম ও ৩য় শনিবার আয়োজিত হয়।
বুদ্ধিমান রোজাদারের স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার ও সেহরী
ইফতারের নামে বাঙালির খাদ্যোৎসব রমজানের সংযমকে ম্লান করে দেয়।
সারাদিন রোজা রেখে আমরা যেভাবে ইফতার সাবাড় করি
এবং ইফতারে যে ধরনের খাবার গ্রহণ করি,
তা উন্নত রুচি ও শিক্ষা-সংস্কৃতির দৃষ্টিকোণ থেকে শোভনীয় নয়।
ইফতারে ভাজা-পোড়া খাওয়া উচিত নয়, বরং
উদ্ভিদজাত খাবার সেদ্ধ-ভাপা-কাঁচা খাওয়া
উচিত। ইফতারে পেঁপে-আনারস-গাজর-শশা-তরমুজ ইত্যাকার মৌসুমী সব্জি ও ফল স্লাইস করে বা জুস বানিয়ে যথেষ্ট খাওয়া উচিত।
পেঁপে কাঁচা-পাকা-সেদ্ধ-রান্না সব রকমেই খাওয়া আবশ্যক।
বিশেষত লবণ ও কাঁচা মরিচের পানিতে
কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ করে কিংবা ভাপে দিয়ে খাওয়া যায়; তাছাড়া
কাঁচা পেঁপে স্লাইস করে ইফতারের প্লেটে দিয়ে দিলে
প্রত্যেকে দু’চার পিস করে খেয়ে ফেলা
যতটা না অমুখরোচক তারচে’ ঢের বেশি উপকারী। তবে পেঁপে কাটার পর ধোয়া উচিত নয়, তাতে
কাঁচা পেঁপের কষ ও পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে। আসলে যেকোনো সব্জি ও
ফল সাধারণত কাটার পর ধোয়া উচিত নয়, তাতে পুষ্টিগুণ কমে যায়। তাই সব্জি ও ফল ধুয়ে নিতে হবে কাটার পূর্বে।
কাঁচা পেঁপের ন্যায় কাকরোল, বরবটি,
শিম, গাজর ইত্যাকার সব্জিও স্লাইস করে লবণ-মরিচের পানিতে সেদ্ধ করে ইফতারে খাওয়া যায়।
অনভ্যাসের কারণে এটি কারো কারো
মুখরুচিতে বাধতে পারে, তবে এরূপ খাবার অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্য সচেতনদের ইফতারের প্লেটে কাঁচা
রসুন-পেঁয়াজ-আদা-কালোজিরা থাকা উচিত। বিশেষত
উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদরোগীদের নিয়মিত রসুন-পেঁয়াজ
খাওয়া অত্যাবশ্যক।
ইফতারে ডাব, মধুর শরবত এবং সেহরীতে দুধ উত্তম পানীয়। ইফতারে
চিনির শরবত ও বাজারের বোতলজাত শরবত ব্যবহার না করে বরং
আনারস, কাঁচা ও পাকা পেঁপে, তরমুজ,
ফুটি, জাম্বুরা, তেঁতুল,
কামরাঙ্গা, পেয়ারা, কাঁচা
বা পাকা আম ইত্যাকার মৌসুমী ফলের ঘরে তৈরি শরবত;
মাঠা বা দইয়ের শরবত এবং শাক-সব্জির জুস ও
স্যুপ অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। ফ্রুট জুসের চেয়ে ভেজিটেবল জুস ও স্যুপ অধিক নিরাপদ ও উপকারী। কারণ ভেজিটেবলের চেয়ে
ফ্রুটে চিনি বেশি থাকে।
আকাশচুম্বী দামের ফল ও সব্জি কেনার সামর্থ্য না থাকলে তাতে ক্ষতি নেই। লবণ-লেবু-গুড় ও চিড়ার শরবত অথবা শাক ও লতাপাতার
স্যুপ এমনকি ভাতের মাড় খুবই উপকারী
পানীয়। হাতের নাগালে থাকা এসব স্বাস্থ্যকর খাবারকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা কেবলই অন্যের অনুকরণে এবং ফ্যাশন, আবেগ ও
মোহের বশে বাঙালি সংস্কৃতির নামে
নিজেদেরকে রোগাক্রান্ত, অসুস্থ ও মানসিক বিকলাঙ্গ জাতিতে পরিণত করছি।
রমজানে শরবত ও অন্যান্য খাবারে চিনির পরিবর্তে গুড়, মধু বা
স্টেভিয়া ব্যবহার করা উচিত। কেমিক্যাল চিনি বা
রিফাইন্ড সুগার ক্যান্সারসহ শতাধিক রোগের
কারণ। তাই কেমিক্যাল চিনি শুধু রমজানেই নয়, কখনো
খাওয়া উচিত নয়। যদি খেতেই
হয়, তবে তা অর্গানিক চিনি বা লাল চিনি হতে পারে।
রোজায় শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে অস্থিরতা, মাথাব্যথা,
গ্যাস্ট্রিক, বুক ও হাত-পা
জ্বালাপোড়া, উচ্চ রক্তচাপ, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ
বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দিতে
পারে। তাই ইফতার ও তৎপরবর্তী সময়ে এবং সেহরীতে প্রচুর পানি, পানীয়,
তরল খাদ্য, সব্জি ও ফল গ্রহণ অত্যাবশ্যক।
ক্যাফেইনযুক্ত খাবার চা-কফি-কোলা, যাতে
ডাইইউরেটিকস থাকে বলে প্রস্রাবের পরিমাণ
বেশি হয়; ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এজন্য সেহরীর সময়ে চা-কফি-কোলা পান একেবারেই নিষিদ্ধ।
ভাজা-পোড়া বাহারী ইফতারের লালসা ত্যাগ করা স্বাস্থ্য সচেতনতার
পরিচায়ক। তৎপরিবর্তে অধিক পরিমাণে খেজুর, কিসমিস,
আলুবোখারা খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। খেজুর
দ্রুত গ্লুকোজে রূপ নেয় বলে ইফতারে খেজুর অত্যন্ত কার্যকর। তাছাড়া এটি সুন্নতও বটে। অথচ স্বাস্থ্যোপকারের বিষয়
বিবেচনায় না এনে আমরা অনেকেই ইফতারের
প্লেটে মাত্র ২/৩টা খেজুর নিয়ে হয়ত সুন্নত পালন করি। তাইতো প্রতিকেজি ৩০০/৪০০ টাকা করে রমজান মাসে যেখানে
১৫/২০ কেজি মাংস কেনা হয়, সেখানে ৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কেজির খেজুর কেনা
হয় মাত্র ২/৩ কেজি!
খাদ্য ও অখাদ্যের বহু উপাদানে তৈরি দোকান-রেস্তোরাঁর হালিমের ওপর রেড
ক্রস দেয়া উচিত। এমনকি বাসায় তৈরি হালিমের পরিবর্তেও
ভেজিটেবল স্যুপ খাওয়া শ্রেয়।
পেঁয়াজু-বেগুনি-কাবাব-চপ বা অনুরূপ ভাজা-পোড়া খাদ্যদ্রব্য রোজাদারের খালি পেটে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ছোলা-ডাল-বুট তেলে না
ভেজে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত।
তাছাড়া পেঁয়াজ, আদা, সরিষার তেল ও লবণ এবং সম্ভব হলে ধনে পাতা
বা পুদিনা দিয়ে মাখানো কাঁচা ছোলা অধিক খাওয়া যায়।
এক কথায় বেশি বেশি পানীয়, জুস, স্যুপ, ফল,
সব্জি স্বাস্থ্য-সচেতন রোজাদারের জন্য আদর্শ ইফতার হিসেবে গণ্য।
রোজায় বিশেষ খাবারের অথবা বেশি খাওয়ার দরকার নেই। হিসেবে নিতে হবে যে- ইফতারে ও সন্ধ্যেবেলা গ্লুকোজ পানি ও পানীয় ধরনের
খাবার এবং সেহরীতে আঁশজাতীয়
শক্ত কার্বোহাইড্রেট খাবার অধিক খেয়েছি কি না। এর চেয়ে অধিক বা ততোধিক আয়োজন করতে গিয়ে আমরা সর্ব বেগুণের গুণ ও
দাম এমনই বাড়িয়ে চলেছি যে, ১৫/২০ টাকা কেজির বেগুন রমজানে বিক্রি হয় ৮০
টাকায়। আমার জানা নেই- কোন্ স্বাস্থ্য
শিক্ষার কারণে রোজায় তেলে কড়া ভেজে বেগুনি-পিঁয়াজু-পাকোড়া-সমুচা খেতেই হবে! কেন যে প্রতিদিন ইফতারে
অত্যাবশ্যকভাবে পুদিনা কিনে পুদিনা বা ধনেপাতার
কেজি ১০০০ টাকায় বিক্রি করাতে হবে! ইফতারে অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাসের
কারণে ধনেপাতা এখন ধনীপাতা হয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান এ আবেগী ও হুজুগে বাঙালি-সংস্কৃতির পরিণতি সকরুণ ও ভয়ঙ্কর
বলে আমার কাছে মনে হয়। ইসলামে
অতিভোজকে নিরুৎসাহিত করা সত্ত্বেও আমরা কি খাদ্যোৎসবে মেতে অনৈসলামিক কাজ করছি না?
খাবার মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে,
এমনকি তার আচরণ
এবং ব্যক্তিত্বেও প্রভাব ফেলে। রোজা রেখে বা খাবার না খেয়ে কেউ মরে না, কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বা বেশি
খেয়ে অসুস্থতো হয়ই, এমনকি মৃত্যুও
ঘটে। ইফতারে পেট ভর্তি করে খেয়ে আবার ঘুমানোর পূর্বে জম্পেশ ডিনার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তিরমিজি হাদিস মতে- আদম
সন্তানরা যেন জাহাজের মতো পেট ভরাট না
করে। বাঙালি প্রবাদে আছে- ঊন ভাতে দুনো বল, বেশি
খেলে রসাতল।
এসব প্রবাদের সমর্থনে ৬ আগস্ট ২০১১ তারিখে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর সারোডোবের
বাসিন্দা ইনছান আলী’র সংবাদ বিশেষ
উল্লেখযোগ্য। দরিদ্র ইনছান আলী’র বয়স ৭০ পেরিয়েছে। কিন্তু ইফতারে শুধু পানি খেয়ে এবং সন্ধ্যায় ও সেহরীতে কোয়াটার ও
হাফ পেট খেয়ে তিনি এমনই সুস্থ
আছেন যে, শুধু ঈদ ছাড়া সুদীর্ঘ ২৮ বছর একনাগাড়ে রোজা রাখার
ফলে তাঁর তেমন কোনো রোগব্যাধি হয়নি। শুধু ইনছান
আলীই নয়, আরো বহু ব্যক্তিত্বই ‘আলী’
হয়ে আমাদের স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন, যাঁরা
প্রায় সারাবছর রোজা পালনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক
সিদ্ধির পাশাপাশি কর্মযোগী ও ধনাঢ্য হয়েছেন; বেশি
খেয়ে নয় বরং নিজ ভাগের খাবারটুকু অন্যদের সাথে শেয়ার
করে। আমার ঘনিষ্ঠ এরূপ দু’ব্যক্তিত্বের
নাম এ স্বল্প পরিসরে স্মর্তব্য- পিএইচপি গ্রুপ ও ইউআইটিএস’র
চেয়ারম্যান সুফী মিজানুর রহমান, মহেশপুর পৌর-চেয়ারম্যান এবং শতবর্ষী-কর্মযোগী জনাব মোঃ শফিকুল আজম খান।
মনে পড়ে, ছেলেবেলায় আমি যখন প্রথম প্রথম রোজা রাখতাম,
তখন দিনে ক্ষুধা লেগে কষ্ট
পাওয়ার ভয়ে সেহরীতে একেবারে দুধ-কলা পর্যন্ত ঠাসা পেট ভরে খেতাম। খাওয়ার পর অস্বস্তি লাগত এবং ঘুম আসতে দেরি হতো।
সকাল ১০/১১টা পর্যন্ত চলত এ অস্বস্তি।
খাবার খেয়ে এ অস্বস্তি ও বিড়ম্বনা তৈরির ছেলেমানুষীর কথা মনে পড়লে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার জন্য এখন কারুর
ব্যাকুলতা দেখলে হাসি পায়; বোকা বলে মনে
হয়। যেমন হাসি পায়- বীফ, মাটন, কাবাব, চিংড়ি,
বিরিয়ানি, কোলা, পেস্ট্রির প্রতি কারুর আসক্তি ও সাড়ম্বর
পরিবেশনা দেখলে। দুঃখিত যে- অন্যের আসক্তিপূর্ণ
খাবারে আমার অভক্তির কথা বলে ফেলার জন্য।
যথেষ্ট পরিমাণে ইফতারের পর ডিনারের প্রয়োজন থাকে না। নানা রকমের ইফতার আইটেম তৈরি ও বাহারী পরিবেশনার পর আবার ডিনার
আয়োজন করতে গিয়ে গৃহিণী এবং আয়া-বুয়াদের
গলদঘর্ম পরিশ্রম হয়, তাদের যথাযথ ধর্ম-কর্ম আর হয়ে ওঠে না। সন্ধ্যায় প্লেট ভর্তি ইফতার খেয়ে এবং মধ্যরাতে
সেহরীর ব্যবস্থা নিশ্চিত জেনেও
ডিনারের মানসিক আসক্তি যেন ‘শিশুদের পেটের ক্ষুধা নয়, মনের বা
চোখের ক্ষুধা’ -এর
ন্যায়। তাই পেটভর্তি ইফতারের পর তথা ঘুমানোর পূর্বে সামান্য স্যুপ, দুধ,
কাস্টার্ড বা ফল অথবা ইফতারে থেকে যাওয়া খাবারগুলোর অপচয় না করে সেগুলো খাওয়া যায় -যা সেহ্রীর পূর্বে অবশ্যই
হজম হয়ে যাবে।
ভুনা ও ফ্রাই করা মাংস, বেশি তেলে রান্না করা বা বেশি মসলাযুক্ত
খাবার, উচ্চমাত্রার সব ধরনের মিষ্টি, উচ্চ
চর্বিযুক্ত খাবার বা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার
এমনকি পেস্ট্রি বা কেকজাতীয় খাবারে রমজানে ট্রিপল রেড ক্রস এবং অন্য সময়ে সিঙ্গেল রেড ক্রস দেয়া উচিত।
বিভিন্ন দেশ ঘুরে বিভিন্ন জাতির খাদ্যাভ্যাস দেখে যতটুকুন বুঝেছি,
তাতে আমি মনে
করি- আমাদের খাদ্যাভ্যাস অবশ্যই বদলাতে হবে। ভারত, শ্রীলঙ্কা
ও বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশে মসলাদার ও
ভাজা-পোড়া খাদ্যের কদর বা অভ্যাস
নেই।
আমাদের এরূপ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন রোগের কারণও বটে।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ
অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেশের ৯৮% মানুষ
রোগের ঝুঁকিতে। এ রিপোর্ট অনুযায়ী ৯৮% পুরুষ এবং ৯৪% নারী পরিমিত পরিমাণে শাক-সব্জি ও ফল খায় না।
খাদ্য-সংস্কৃতি যেকোনো জাতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ওপর
জাতীয় স্বাস্থ্য, উন্নয়ন-অগ্রগতি,
সমৃদ্ধি ও মেধার বিকাশ নির্ভর করে; অসুখ-বিসুখ,
ফার্মেসী ও হাসপাতালের সংখ্যা নির্ভর করে। আমাদের দেশে একদিকে খাদ্য ব্যবসায়ে চলছে অনৈতিক সংস্কৃতি, অন্যদিকে
খাদ্য গ্রহণে কুঅভ্যাস এবং ভেজাল ও বিষ-সংস্কৃতির
প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগ-ব্যাধির আপাত উপশমে দিনদিন গড়ে উঠছে ঔষধের বিশাল শিল্প-কারখানা, অলি-গলিতে
জেগে উঠছে ফার্মেসীর পর ফার্মেসী, হাসপাতাল, ক্লিনিক
ইত্যাদি।
খাবারে বদভ্যাস আমাদের খাদ্য সংকটেরও অন্যতম কারণ। কারওয়ান বাজার, কাপ্তান বাজার, সায়েদাবাদ
বা মৌলভী বাজারের ন্যায় বড় বাজার থেকে ২০ কেজি কচু বা ১৫ কেজি
কুমড়া অথবা ১০ কেজি গাজর ১৫০ টাকায় কিনতে আমরা কুণ্ঠিত হই। অথচ প্রায় সে পরিমাণ টাকায় আধা কেজি মাংস বা ২ কেজি চাল
ঠিকই কিনি। আমরা ১৫/২০ টাকা কেজির
পেঁয়াজ কিনতে এবং পেঁয়াজ, রসুন, আদা ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও এগুলো বেশি খেতে কুণ্ঠিত; অথচ
৩০০/৪০০ টাকা কেজির মাংস বা ৫০ টাকা কেজির চাল বা
৮০০ টাকায় একটি ইলিশ ঠিকই কিনি। ৫০ টাকায় ১ কেজি চাল কিনলেও সে টাকায় ৫ কেজি আলু বা গাজর কিনতে বা খেতে আমরা
অভ্যস্ত নই!
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে ক্যাম্পাস পত্রিকার ‘নিয়মিত
কলাম- ৩৯’ আপনাকে সাহায্য করবে। দেখবেন, যেকোনো
বদভ্যাস পরিবর্তন বা Habit Control একেবারেই সহজ।
আমার মতে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের এবং প্রতিদিন ১০০ কোটি
মানুষের না খেয়ে থাকার
প্রধান দু’টি কারণ হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস এবং
খাদ্যের অপচয়। স্রষ্টা প্রত্যেক মানুষকেই পৃথিবীতে পাঠান
তার প্রয়োজনীয় খাদ্য-রসদের যোগান দিয়ে।
কিন্তু আমরা গাফিলতি ও খেয়ালের ভুলে খাদ্য সংকট তৈরি করে চলেছি এবং অন্যের ক্ষুধার জ্বালা বাড়িয়ে চলেছি; যা
রোজার আদর্শ এবং ধর্ম-দর্শনের পরিপন্থী।
তাই আসুন, এখন থেকে খাদ্যের অপচয় আর না করি; বরং
খাদ্যের সুঅভ্যাস তৈরির মাধ্যমে
রোজার আদর্শ সমুন্নত রাখি এবং সুস্থ চিন্তার স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে তুলি। রমজান মাসে ধর্মকর্মের পাশাপাশি অধ্যয়ন,
অনুশীলন ও পেশাগত কর্মের প্রতি
মনোযোগ এবং আত্মিক সাধনাকে সমুন্নত রেখে নিজের ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে
গতিশীল করি।