পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহাল করার দাবিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
জানা যায়, আগে এমবিবিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের তিনটি পরীক্ষা দিতে হতো। পরীক্ষাগুলোকে বলা হয় ‘প্রফেশনাল এক্সামিনেশন’। এ পরীক্ষার কোনো একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হলেও শিক্ষার্থীরা পরের প্রফেশনাল কোর্সে অংশ নিতে পারতেন। যে বিষয়ে খারাপ করতেন, শুধু সেই বিষয়ের পরীক্ষা দিলেই চলত। নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের আর পরের কোর্সে অংশ নিতে দেয়া হচ্ছে না। তাঁকে ছয় মাস বসে থেকে ওই একটি বিষয় পড়তে হচ্ছে। এতে তিনি সহপাঠীদের তুলনায় ছয় মাস পিছিয়ে যাচ্ছেন।
মানবন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রবর্তিত পদ্ধতিতে প্রতি বছর দেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে প্রায় দুই হাজার ইন্টার্নি চিকিৎসকের সংকট দেখা দেবে। অন্যদিকে সময় মতো বিএসএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় এর খারাপ প্রভাব পড়বে সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায়। শুধু তাই নয়, মেডিক্যাল কলেজগুলোর ছাত্রাবাসে আবাসন সংকট দেখা দেবে এবং সরকারের রাজস্ব খাতের ব্যয় বাড়বে। তাই তারা অবিলম্বে ক্যারি অন পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য এমবিবিএস কারিকুলাম প্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ঢাকা
মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় ২০১২ সালে প্রণীত নতুন কারিকুলামে এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষায় ‘ক্যারি অন সিস্টেম’ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীরা।
৩০ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সম্মেলনে সংগঠনটির মুখপাত্র স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তাজ মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, কারিকুলামে এমবিবিএস পেশাগত পরীক্ষা আছে ৩টি। একজন শিক্ষার্থী কোনো বিষয়ে উত্তীর্ণ না হলেও ৬ মাস পর অনুষ্ঠিত সাপ্লিমেন্টারিতে কৃতকার্য হলে তার শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে পড়তো না। কিন্তু ২০১২ সালের প্রণীত নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী-একজন শিক্ষার্থী প্রথম সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে তিনি তার শিক্ষাবর্ষ থেকে ৬ মাস পিছিয়ে যাবেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং অন্যান্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এসময় উপস্থিত ছিল।
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক করতে নতুন কারিকুলামে ‘ক্যারি অন সিস্টেম’ পুনর্বহালের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে ‘সম্মিলিত মেডিকেল শিক্ষার্থীবৃন্দ’-এর ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ, ইউএসটিসি মেডিকেল কলেজ, সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ, মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ ও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক মেডিকেল কলেজের কয়েক’শ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
বরিশাল
নগরীর সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সম্মিলিত মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন, মাসুদুর রহমান, মুরাদ হোসেন, সালাউদ্দিন কোরেশী প্রমুখ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে তারা সারা দেশে কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে হুশিয়ারি দেন।
রংপুর
নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশ নেন রংপুরের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী হাবিবা নাসরিন, সাগর, রোকনুজ্জামান প্রমুখ।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তারা দ্রুত ক্যারি অন সিস্টেম পুনর্বহাল করে শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক রাখার আহ্বান জানান। এতে নেতৃত্ব দেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ৫৫ পর্বের এমবিবিএস শিক্ষার্থী পল্লব পাল, রেহেন এমদাদ, জিম হোসেন, শাকিরা খাতুন, রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন ও সিরাজ প্রমুখ।
ফরিদপুর
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেন। এ সময় মেডিকেল শিক্ষার্থী মোস্তাকিম কবির, সুবীর কুমার দে, আবদুল আলিম, জান্নাতুল ফেরদৌস প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, ক্যারি অন পদ্ধতি পুনর্বহাল না হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন, রাজপথ অবরোধ, অনশনসহ কঠিন কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এতে কলেজের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
পটুয়াখালী
পটুয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। কর্মসূচিতে কলেজের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
কুষ্টিয়া
কলেজের (অস্থায়ী) কার্যালয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শতাধিক ছাত্রছাত্রী। তাঁরা ক্যারি অন পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে লেখা বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করেন। পরে তাঁরা বিএমডিসির সভাপতি ও কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেন।
যশোর
যশোর মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী ক্যারি অন পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেন। এ সময় ছাত্রলীগের মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি সাফাত বিন শাহ্, শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীর পক্ষে মোঃ ইমরান হোসাইন, আবদুল্লাহ শুভ, জেবা তাহমিন অনন্য প্রমুখ। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মাজহারুল ইসলাম আকন্দ, বেলায়েত রাজু, আরিফ সাকিল, আজমল হোসেন, আতিকুর রহমান আতিক, মিজানুর রহমান তানভীর, আঁখি, নিউটন হালদারসহ সাতক্ষীরা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মোঃ ইমরান হোসাইন।
নোয়াখালী
বেগমগঞ্জের চৌরাস্তা এলাকায় আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
পাবনা
ক্যারি অন’ সিস্টেম পুনঃবহালের দাবিতে পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ১ ঘন্টার কর্মবিরতি এবং বিশাল মানববন্ধন রচনা করে। পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে পাবনা মেডিক্যাল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন।
বগুড়া
মেডিকেল কলেজে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্যারি অন সিস্টেম বাতিলের প্রতিবাদে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি শুরু করেছে।
দেশব্যাপী ক্লাস বর্জন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস বর্জন শুরু করে।
আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে সেখান থেকে অবিলম্বে ক্যারি অন সিস্টেম বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একইসঙ্গে দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।