জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ছয় ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছে ৩০০। চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তির পর সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫০। সাতটি ব্যাচের জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক। কিন্তু রয়েছেন মাত্র দু’জন। নিয়োগপ্রাপ্ত চারজনের মধ্যে একজন শিক্ষাছুটি ও অন্য একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় ওই দুইজন শিক্ষক দিয়েই চলছে বিভাগটি।
৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় নতুন দু’জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ৩৫০ শিক্ষার্থীর জন্য চারজন শিক্ষক কতটুকু ভূমিকা রাখবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের প্রতিটি ব্যাচ এক থেকে দেড় বছর করে সেশনজটে পড়েছে।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদিত্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই মুহূর্তে আমরা যে অবস্থানে আছি তাতে মনে হয় না আগামী দেড় বছরের আগে লেখাপড়া শেষ করতে পারব। আমাদের বন্ধুরা (অন্য বিভাগের) লেখাপড়া শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেকে চাকরিও করছে। অথচ আমরা সেশনজটে পড়ে আছি।
পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগে চারটি ব্যাচে শিক্ষার্থী রয়েছে দেড় শতাধিক। নতুন শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির পর বেড়ে দাঁড়াবে ২০০। কিন্তু বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র তিনজন। অন্য দুইজন শিক্ষক শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। এতে করে ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের মুখে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্তিক রায় বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের শিক্ষক সংকট রয়েছে। বারবার দাবি জানিয়েও কোনো সমাধান হয়নি। কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাসই দিয়ে গেছে।
বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহমান বলেন, কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষকসহ আমাদের কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষক প্রয়োজন। অল্প শিক্ষক দিয়ে বিভাগটি চালানো কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি বাড়ছে। প্রশাসন থেকে সার্কুলার দেয়া হয়েছে। নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে, তবে এটি ত্বরান্বিত করলে ভালো হবে।
একই চিত্র গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা অধ্যয়ন বিভাগে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা বিভাগটিতে চার ব্যাচে ১৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন। এতে শিক্ষার্থীরা ছয় মাসের সেশনজটে পড়েছে।
এদিকে আইন ও বিচার বিভাগেও একই অবস্থা। চারটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছেন মাত্র পাঁচজন শিক্ষক। বাকিটা চলছে অতিথি শিক্ষক দিয়ে। এ ব্যাপারে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেশনজট দূর করতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে সিমেস্টার পদ্ধতি পরিবর্তন করে বর্ষ পদ্ধতি চালু করা হবে।
অন্যদিকে সংকট রয়েছে চারুকলা বিভাগেও। মোট তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র চারজন।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য চালু হওয়া বিভাগগুলোতেও শিক্ষক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষকের অভাবে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। চাপ সামলাতে একজন শিক্ষক পাঁচটিরও বেশি ক্লাস নিচ্ছেন। এর পরও শিক্ষকদের বাড়তি পরিশ্রমও বিফলে যাচ্ছে পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে। এ কারণে বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে শিক্ষক সংকটের জন্য শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় সভাপতিদের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছে। আবার অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা সেখানে বেশি সময় দেয়ার কারণে সেশনজট বাড়ছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, ভর্তি পরীক্ষাসহ ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ছুটি ও কিছু সাময়িক সমস্যার জন্য শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে। খুব শিগগিরই শিক্ষক সমস্যার সমাধান হবে।