দেশকে শতভাগ নিরক্ষরমুক্ত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্ব স্ব এলাকায় উদ্যোগ নিলে খুব দ্রুতই আমরা দেশকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করতে পারব।
সম্প্রতি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০১৬’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, নাগরিকসমাজ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশটা আমাদের। আমাদেরই এ দেশকে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারি। দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, সবাই মিলে আমরা এ দেশকে গড়ে তুলি।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর মাত্র দুই বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ থেকে বেড়ে ৬৫ শতাংশ হয়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ইউনেসকো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮’ লাভ করে বাংলাদেশ। বিভিন্ন উপ-আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিসহ সরকারের নানা উদ্যোগও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষ দৃষ্টিশক্তি থাকতেও এক ধরনের দৃষ্টিহীনতায় ভোগেন। তাই সবার মনের-জ্ঞানের চোখ খুলে দিতে, আপন ভালো-মন্দ বুঝে নিতে আমরা ব্যাপকভিত্তিক সাক্ষরতা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
সাক্ষরতার হার বাড়াতে নানা স্তরে বৃত্তি-উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী ভাতা ও বিনা মূল্যে বই বিতরণের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ পালিত হয়। আমরা গত সাত বছরে বিনা মূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করেছি।
২০২১ সালের মধ্যে শিক্ষা, অর্থনীতি, প্রযুক্তি সব দিক থেকেই দেশকে উন্নত করার ঘোষিত রূপকল্পের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু করা এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ তুলে ধরেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমছে মন্তব্য করে এ হার আরো কমাতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘মিডডে মিল’ চালু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়কার প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করাসহ নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা একটা মহৎ পেশায় আছেন। জাতির পিতা প্রায়ই বলতেন সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই। আপনারা হচ্ছেন সেই মানুষ গড়ার কারিগর।
ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে। বইপত্র কোনো সাজিয়ে রাখার বস্তু না, তোমাদের পড়তে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আগামীতে তোমাদের মধ্য থেকেই দেশের নেতা, প্রধানমন্ত্রী হবে। কাজেই সেভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফউজ্জামান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রুহুল আমিন সরকার বক্তব্য দেন।