বিশ্বের তরুণরা রাজনীতি বিমুখ ও উৎসাহিত না হওয়ায় বৈশ্বিকভাবে ৩০ বছরের কম বয়সী সংসদ সদস্য মাত্র এক দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বে ১২০ কোটি তরুণ ভোটার রয়েছে। যাদের ৫৭ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। কিন্তু সংসদ সদস্য মাত্র দুই ভাগেরও কম। যারাও বা সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই নগণ্য, যা খুবই হতাশাজনক। রাষ্ট্র যদি তরুণদের রাজনীতিতে আসার জন্য বা পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উৎসাহিত করে তাহলে এ বৈষম্য দূর হবে। তাই তরুণ সংসদ সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টেরিয়ানস’।
সম্প্রতি আইপিইউ সম্মেলনের চতুর্থ দিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। যুব সংসদ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে গত দুইদিন বৈঠক শেষে এ তথ্য তুলে ধরেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ২৬ বছর বয়সী উগান্ডার সংসদ সদস্য মাউরিন অসরো, আইপিইউ’র জেন্ডার পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের প্রধান জিইনা হিলাল এবং আইপিইউ’র মিডিয়া স্পোকসপার্সন জিন মিলিগান।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টেরিয়ানসের প্রেসিডেন্ট মাউরিন অসরো জানান, সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই নগণ্য, যা খুবই হতাশাজনক। আইপিইউ সম্মেলনে মাত্র ৩০ বছরের নিচে পার্লামেন্টারিয়ান রয়েছেন ১২ জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে চাইলেও তাদের নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। বিশেষ করে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। এছাড়া রাজনীতিচর্চার সুযোগ কম থাকা, অর্থের অভাব ও ভোটারদের আস্থার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, যুবকদেরকে অনেকে বিশ্বাস করতে পারেন না। প্রশ্ন তোলেন তারা পার্লামেন্টে গিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ কর্মে কতটা অংশ নিতে পারবে। এসব কারণে পার্লামেন্টে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে অনীহাও প্রকাশ করেন। তবে আইপিইউ সম্মেলন তরুণদের ভোটের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় করতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ সময় ১২৮টি দেশের সাংসদদের ওপর ‘ইয়ুথ পার্টিসিপেশন ইন ন্যাশনাল পার্লামেন্ট-২০১৬’ শীর্ষক একটি গবেষণা জরিপ উত্থাপন করা হয়। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ৩০ বছরের নিচে সংসদ সদস্য রয়েছেন ১ দশমিক ৯ শতাংশ। ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং ৪০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে ২৬ শতাংশ সংসদ সদস্য রয়েছেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকান দেশগুলোতে ৩০ বছরের নিচের বয়সি সর্বাধিক সংসদ সদস্য রয়েছে। বৈশ্বিকভাবে তরুণ সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরুষ ও নারী অনুপাত হচ্ছে ৬০:৪০। মাত্র ৯টি দেশের সাম্প্রতিক নির্বাচনে ৪৫ বছরের নিচের বয়সি ৫০ শতাংশের অধিক নির্বাচিত হয়েছেন। আবার বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশের নিম্নকক্ষে কোনো ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান নেই।
নিজের দেশের বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি তুলে ধরে মাউরিন অসোরু জানান, ১৮ বছর বয়সে সবাই প্রাপ্তবয়স্ক হয়। সে ভোটাধিকার পায়, এ সময় কোনো অন্যায় করলে তাকে বিচারের আওতায় এনে প্রয়োজনে জেলেও পাঠানো হয়। কিন্তু একই বয়সে কাউকে সংসদে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না, যা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, সুখের বিষয়, প্রায় সব দেশে দলগুলোর মধ্যে একটি ইয়ং উইং থাকে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে তরুণরা নিজেদের তৈরি করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে নিতে পারে।