প্রচন্ড ঘাড়ব্যথা আর মাথাধরা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলেন। বললেন সমস্যার কথা। বিজ্ঞ চিকিৎসক খসখস করে লিখে দিলেন প্রেসক্রিপশন। তাতে একগাদা ওষুধের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে টেনশন উপশমকারী একটা অ্যান্টিডিপ্রেজ্যান্টও। খান এবার রুটিন মেনে। কাজ হলেও হতে পারে। সাম্প্রতিক এক গবেষণার সূত্র ধরে গবেষকরা বলেছেন, টেনশন কমানোর জন্য উপশমকারী ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। নিয়মিত ধ্যান করার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। অ্যান্টিডিপ্রেজ্যান্টের চেয়ে কোনো অংশেই কম কাজ করবে না ধ্যান বা গভীর চিন্তা। উপশমকারী ট্যাবলেট না খেয়ে আপনি বরং আধঘণ্টা দুনিয়ার সবকিছু ছুটি দিয়ে নিজের মধ্যে ডুব দিন। ভাবুন, আপনি হেঁটে যাচ্ছেন একটি ফুল বিছানো পথ দিয়ে, ফুলের গন্ধে আপনার মন আমোদিত কিংবা এ রকম কিছু আনন্দের কথা কল্পনা করুন।গবেষকরা বলেছেন, নিয়মিত মেডিটেশন আপনাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলবে। দিনের যে কোনো সময়ে মাত্র আধঘণ্টা ধ্যানে বসুন। সব দুশ্চিন্তা, চাপ, ব্যথা জোর করে একপাশে রেখে দিন। ভাবুন, আপনি একজন মুক্ত মানুষ, দারুণ সময় কাটাচ্ছেন- দেখবেন, এরপর সেই কল্পনা বা চিন্তার সময়টাই আপনার জন্য সারাক্ষণ সত্য হয়ে দেখা দেবে। গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। মেডিটেশন বা ‘গভীর ধ্যান’ নামক প্রক্রিয়াটি প্রাচ্যের ঐতিহ্য হিসেবে চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকে। ৩০ বছর ধরে প্রতীচ্যের মানুষও ঝুঁকতে শুরু করেছে এর দিকে। বস্তুবাদী দুনিয়ায় প্রবল প্রতিযোগিতামূলক দৈনন্দিনতায় আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা মানুষ যোগব্যায়ামের কাছেই এখন আশ্রয় খুঁজছে। তাই যে কোনো সমস্যা বা রোগ-বালাইয়ে ধন্বন্তরী হিসেবে এতদিন ধরে মেনে আসা অ্যালোপ্যাথিককে একপাশে রেখে ধ্যান বা নিবিড় চিন্তাতেই স্বস্তি বা শান্তি খোঁজার এই চেষ্টা। বাল্টিমোরের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মাধব গয়াল বলেন, অনেকের অবশ্য একটা ভুল ধারণা আছে মেডিটেশন নিয়ে। তারা মনে করে, কেবল চুপচাপ বসে থাকাটাই হচ্ছে মেডিটেশন। আসলে তা নয়। এটা হলো মনকে সংহত করার উদ্দেশ্যে চর্চিত একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া। বিভিন্নজন নানাভাবে এটি করতে পারে। তবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা অনেক বেশি কার্যকর করা যায়।