১. অনলাইন কর্মীরা একটি ভার্চুয়াল সাহায্যকারী খুঁজে নিন
অনলাইন সাহায্যকারী ইন্টারনেটে আপনার ব্যয় করা সময় কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এতে আপনার স্ক্রিন টাইম কমবে, যা আপনার আসক্তির মাত্রা কমিয়ে আনবে। এই পদ্ধতি কোনো সমাধান দিবে না সত্য, কিন্তু অনলাইন কর্মীদের কর্মহীন অবস্থায় ইন্টারনেট আসক্তির মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। অনলাইন সাহায্যকারী আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারকে একটা বাস্তবসম্মত কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসবে, যা আপনার ইন্টারনেট আসক্তির মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দিবে।
২. ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা নির্ধারণ করুন
ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করুন। দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের মাত্রা নির্ভর করে আপনার নির্ধারিত সীমানা মান্য করার উপর।
নির্ধারণ করুন এখন থেকে আপনি দিনে কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করবেন, কেন ব্যবহার করবেন, কী কী কাজ ব্যবহার করবেন? এসব কিছু আগে নির্ধারণ করুন। তারপর কাজে নেমে পড়ুন। পরিকল্পনা করার পর কোনোক্রমেই পরিকল্পিত সীমারেখা অতিক্রম করবেন না। তাহলে খুব দ্রুতই আপনার ইন্টারনেট আসক্তির মাত্রা কমে আসবে।
৩. পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে টেনে নিন
ইন্টারনেট আসক্তি নিশ্চয়ই আপনাকে পরিবার এবং বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে? সুতরাং ইন্টারনেট আসক্তি কমাতে ইন্টারনেটকে দূরে ঠেলে পরিবার ও বন্ধুকে কাছে টেনে নিন। আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলে অভিভাবকদের সঠিক তথ্য দিন। নিজের ইন্টারনেট ব্যবহারের সময়সীমা নিয়ে পরিবারের কাছে দায়বদ্ধ থাকুন। দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের নির্ধারিত সময়সীমা পার করার পর সম্পূর্ণভাবে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবকে সময় দিন। এরপর থেকে আর কখনোই ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে পরিবারের সাথে মিথ্যাচার করবেন না। মনে রাখবেন এই মিথ্যাচার নিজের সাথে প্রবঞ্চনার শামিল।
৪. অন্যদের কম্পিউটার ব্যবহারের অনুমতি দিন
আপনি নিশ্চয়ই এতদিন নিজের কম্পিউটার কাউকে ব্যবহার করতে দেননি! কম্পিউটারের সকল পাসওয়ার্ড গোপন রেখেছেন। এবার নিজের ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে অন্যদের কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ দিন, এমনকি কম্পিউটারের সকল পাসওয়ার্ড তাদের দিন।
যখনই আপনি পরিবার বা আপনার সাথে থাকা মানুষদের আপনাকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী করে তুলতে পারবেন তখনই আপনার কম্পিউটারের সকল পাসওয়ার্ড তাঁদের হাতে দিয়ে দিন। এবং এমনকি তাদের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার অনুমতি দিন। আপনার ইন্টারনেট মোডেম বা রাউটার, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ পরিবারের অন্যদের হাতে দিয়ে দিন।
একমাত্র আত্মবিশ্বাসীদের জন্যই আমি এই কাজগুলো করার পরামর্শ দিতে চাই। আত্ম উৎশৃংখল অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। একবার অন্যের হাতে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ দিলে আপনি চাইলেই ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে পারবেন না, যা ধীরে ধীরে আপনার ইন্টারনেট আসক্তির মাত্রা কমিয়ে আনবে।
৫. আপনার রুটিন পরিবর্তন করুন
ইন্টারনেট আসক্তি কমিয়ে আনার আরেকটি মোক্ষম উপায় হলো দৈনন্দিন রুটিন পরিবর্তন করা। আপনার যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ইমেইল চেক করার অভ্যাস থাকে, বা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরেই ইন্টারনেটে বসার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন, তবে শুরুতে এটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। ইমেইল চেক করে নয়, আপনার প্রতিটি সকাল শুরু হোক অন্য কিছু দিয়ে।
দিনের শুরুতেই কম্পিউটারের কাছে না গেলে এটি ব্যবহারের আসক্তি থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিদিন সকালের প্রয়োজনীয় কাজ করুন। নিজের পরিবারকে পর্যাপ্ত সময় দিন। এরপর ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছুটা সময় বের করুন। এক কথয় ইন্টারনেটের চেয়ে বাস্তব জীবনের মানুষগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিন।
৬. বিনোদনমূলক উদ্দেশ্যে কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ করুন
যেহেতু আপনি ইন্টারনেট আসক্ত তাই এই আসক্তি দূর করতে আপনাকে বিশেষ কিছু করতে হবে। ব্যবসায়িক বা পেশাদারী কাজের বাইরে বিনোদনমূলক কোনো কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কম্পিউটার ব্যবহার করে বিনোদিত হওয়ার ছেলেমানুষী আবেগ পরিহার করার চেষ্টা করুন। অন্তত কয়েক মাসের জন্য কম্পিউটার গেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।
ইন্টারনেটের অলিগলিতে খোঁজ করা বিনোদন বাস্তব জীবনে খুঁজে নিন। সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট জগত থেকে বের হয়ে রক্ত মাংসের মানুষের সাথে বাস্তব জীবনের আনন্দ উপভোগ করুন।
৭. অগ্রগতি পরিমাপ করুন
ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে প্রচেষ্টা শুরু করার পর থেকে ক্ষণে ক্ষণে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন আপনি ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে চেষ্টা করছেন। ধাপে ধাপে নিজের অনলাইনে ব্যবহৃত সময়ের চেয়ে বাস্তব জীবনে ব্যবহৃত সময়ের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলুন। তুলনামূলকভাবে অনলাইনে পূর্বের তুলনায় কতটা সময় দিচ্ছেন তা পর্যালোচনা করুন। চেষ্টা করুন সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এবং পর্যায়ক্রমে আরো কমিয়ে আনতে।
আপাতদৃষ্টিতে বিচার করলে, এই পরামর্শগুলো পড়ে আপনার মনে হতে পারে আমি আপনাকে কর্মহীন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। না, মোটেও তা নয়। আপনি যদি ইন্টারনেট আসক্তি দূর করতে এখনই প্রচেষ্টা শুরু না করেন তবে অদূর ভবিষ্যতে জীবনে অনেক বড় বিপর্যয় নেমে আসবে, যা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যহানি ঘটাবে, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে অসুখী করে তুলবে।
সুতরাং আসক্তি দূর করতেই হবে। আর এই কাজে শুরুতে আপনাকে একটু বেশি ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।